ভিখারি মেয়েটি প্রতি সপ্তাহেই একবার আসে।
আজ দেখি কোলে একটা বাচ্চা। বিরামহীন কেঁদেই যাচ্ছে।
আমি অফিস রুম থেকে বাইরে এসে দাঁড়ালাম।
জানলাম,পেটে ক্ষুধা তাই শিশুটি কাঁদছে।
কাজের ছেলেটিকে দিয়ে প্লেটে করে বাচ্চাটাকে কিছু খাবার দিলাম।
মাদুর পাতা বারান্দায় বসে মা শিশুটিকে খাওয়াচ্ছে। চোখে পানি চলে আসার মতো অপরুপ সে দৃশ্য।
এবার আমি জানালাপানে ওদের দিকে চেয়ে রইলাম।
কিন্তু ছেলেটির যে কান্না থামেই না।
ভিখারি মেয়েটির কাছে জানতে চাইলাম, ও এখনো কাঁদছে কেন?
মেয়েটি বললো- আমার পেটেও যে ক্ষুধার যন্ত্রনা,
তাই মা"কে না দিয়ে যে ও কিছুই খাবে না।
তাই কান্না দিয়েই মায়ের জন্য খাবার চাইছে।
আমি বললাম, তুমি নিজেই তো আমার কাছে দু জনার খাবার চাইতে পারতে।
মেয়েটি বললো- রাতে শিশুটি না খেয়েই ঘুমিয়েছিলো। আর অল্প কিছু খাবার ছিলো, আমি আর সহ্য করতে না পেরে তা নিজেই খেয়েছিলাম।
তাই দুপুরে আমি খাবারটুকু না খেয়ে ,রাতে যে আমার শিশুটি না খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলো সেই যন্ত্রণার উপশম করছিলাম। ভিখারী মাতার চোখে দেখি অশ্রুকণা।
হার্টসফিল্ড এয়ার পোর্টের ডিপার্টচার লাউন্জে বসে আমার সহযাত্রী ৬৮ বছরের বৃদ্ধা ডরোথি যখন জন্মদিনে তার সন্তানের কাছ থেকে প্রাপ্ত বার্থডে উইশ কার্ড দেখাচ্ছিলো, আর পরম পরিতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছিলো জন্মদিনের শুভেচ্ছা কার্ডের স্পর্শে -তখন বাংলার এক নিভৃত ব্যাথাতুর মা'য়ের গল্প আমি পাশ্চাত্যের এক মায়ের কাছে এভাবেই পোঁছে দিয়েছিলাম। তারপর দেখেছিলাম -বৃদ্ধা ডরোথির চোখে ও হৃদয়ে দহন লাগা অশ্রুকনা।
বুঝেছিলাম শুধু হাজারো ব্যবধানের মাঝে সব মায়েদের অশ্রুসজল চোখ সবসময়, সব জায়গায় , সব মুহুর্তে একি রকমই হয়।