বলতে গেলে আমরা ব্লগের একেবারে আদুভাই। ব্লগের একেবারে শুরু থেকেই আমাদেরও শুরু হয়েছিলো ব্লগের সাথে পথচলা। দুনিয়াব্যাপি বাংলাভাষী ব্লগাররা এক সময় এই প্রিয় ব্লগটিকে মুখরিত করে রেখেছিলো। বলতে গেলে ব্লগের স্বর্নযুগ ছিলো ব্লগারদের ফেসবুক সেলিব্রেটি হওয়ার আগ পর্যন্ত।
এই ব্লগের মাধ্যমেই সেই বারো বছর আগে পরিচয় হয়েছিলো- প্রিয় আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সাথে। যিনি মুক্ত মানব নিক নিয়ে ব্লগ লিখেন।
বলতে গেলে উনি এখন আমাদের একেবারে পারিবারিক বন্ধু। "বিহঙ্গ" নামেই তিনি এখনো আমাকে ডাকেন। বিহংগ হারিয়ে "খেয়াঘাট" নিক থেকেই লিখতাম মাঝে মাঝে। এখনো খেয়াঘাট নিকটি আছে।
ব্লগ থেকে প্রকাশিত দুটো ম্যাগাজিনে আমার দুটো লেখা এসেছিলো। সেই সুখের স্মৃতি ভোলার নয়। যদিও বা জাতীয় পত্রিকায় আমার প্রথম একটি কবিতা ছেপেছিলো যখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম।
"যায়যায়দিনের'বিশেষ সংখ্যায় লেখার জন্য শ, দুশ, তিনশত টাকা করে দিতো। টাকা পাঠানোর মানিঅর্ডারগুলো এখনো আমার কাছে আছে।
পত্রিকায় লেখা পাঠানোর পর মাস চলে যেতো। আর অধীর আগ্রহ বসে থাকতাম ছাপার অক্ষের নিজের লেখাগুলো দেখার জন্য। কিন্তু ব্লগ এসে সবকিছু একেবারে বদলে দিলো।
মুহুর্তেই লেখাগুলো ব্লগের সামনের পাতায় চলে আসে। পত্রিকায় লেখা পাঠানোর মতো আর কোনো ঝামেলা নেই। মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য, দল, কোন্দল, দেশপ্রেম, ঝগড়া সবকিছুই ব্লগের পাতায় চলতে থাকে।
আমাদের সে সময় ব্লগ তুমুল জনপ্রিয় ছিলো দুটো নিক- একটা হলো রাশেদ আরেকটা হলো চিকন মিয়া।
রাশেদ জনপ্রিয় হয়েছিলো শুধু কমেন্ট করেই। এমন কোনো পোস্ট ছিলোনা যেখানে রাশেদের কমেন্ট থাকতো না। আর চিকন মিয়ার নিক জনপ্রিয় হয়েছিলো তার নিকের চেহারা এবং ঘন ঘন পেলাস বলার জন্যই।
ব্লগারদের নিয়ে একবার একটা বিশেষ অনুষ্ঠান হলো। সেখানে ব্লগার সুখি মানুষ অনেক ব্লগারদের ছবি পোস্ট করেছিলেন। তখনই নিকের সাথে বাস্তবের মানুষগুলোর চেহারা মিলিয়ে দেখার কী এক আগ্রহ।
একদিকে ত্রিভূজ ব্লগ আরেকদিকে এটিম ব্লগারদের দ্বন্দ্ব খুব উপভোগ্য ছিলো। ব্লগার আইজুদ্দিন, ব্লগার আরিফ জেবতিক, অমি রহমান পিয়াল ইনারা নেতাগোছের ব্লগার ছিলেন।
কালপুরুষ শুধু রোমান্টিক কবিতা লিখতেন। উনাকে নিয়ে মাঝে মাঝে নানা কথা চলতো। কেউ কেউ লুলপুরুষ নামে ডাকতো। যদিও উনাকে আমার খুব একজন স্বজন মানুষই মনে হয়েছে।
ব্লগার আব্দুর রাজ্জাক শিপন- ভালো লাগা প্রিয় কবিতা- নামে সিরিজ লিখতেন। আর ব্লগার মামুনুর রশীদ প্রতি মাসে ভালো লেখাগুলো নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট করতেন।
খুব চমৎকার গল্প লিখতেন ব্লগার আকাশচুরি আর ব্লগার মুস্তাফিজ রিপন। মাঝে মাঝে উনাদের আমি ফেসবুকে তালাশ করি। কিন্তু খোঁজে পাইনা।
ব্লগের মাধ্যমেই একটা অদৃশ্য হৃদিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো ব্লগার মুকুল, সাজি, আইরিন সুলতানা, চতুর্ভূজ, ফারহান দাউদ , মেহরাব শাহরিয়ার, শিহাব, চিটি( উনি আর আমি একই স্কুলের) শফিউল আলম ইমন, বিবর্তনবাদী, মোহাম্মদ আব্দুল হাক, পলাশমিয়া, এরশাদ বাদশা, তামিম ইরফান, সুরভিছায়া, অজানা অচেনা ( মনে হয় এখনো ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন) রুখসানা তাজিন, মনিরা সুলতানা( আমরা প্রিয় একজন আপু- এখনো ফেসবুকে মিথস্কিয়া হয় নিয়মিত) , একরামুল হক শামীম, প্রণব আচার্য্য ,ভাস্কর চৌধুরী ,সন্ধ্যাপ্রদীপ, স্বাপ্নিক, অহনা, মৈথুনানন্দ, নাজিরুল হক, সারিয়া তাসনিম, মানব মানিক, মোসতাকিম রাহী, গিফার, উত্তরাধিকার, মিরাজ, রাতমুজুর, দিনমুজুর , মাহমুদুল হাসান, শের শায়রী, আমি, তুমি, আমরা, সারওয়ার চৌধুরি, বিদ্রোহী ভৃগু, নতুন, সায়েদা, সহেলি, রুহি , সাবরিনা সিরাজি সহ আরো প্রিয় অনেক ব্লগারদের সাথে। অনেক প্রিয়জনদের নাম এখন আর মনেও আসছেনা। সবকিছু কেমন যেন ধূসর হয়ে যাচ্ছে।
বাস্তবজীবনে ব্লগার সুখি মানুষ আর শিহাবের সাথে দেখা হয়েছিলো ঢাকা আর সিলেটে। অসাধারণ মনের দুজন মানুষ।
"জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন তবে জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার দুনয়ন " এর ইমন জুবায়ের ভাইয়ের হঠাৎ করে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাওয়া ছিলো ব্লগের জীবনে বিশাল এক শূণ্যতা।
কত স্মৃতি , কত হাসির, কত আনন্দের, কত বেদনার সেই ব্লগ। সবাই কেমন আছেন, কোথায় আছেন তাও আর জানিনা। তবে বিশ্বাস করি- সবাই হয়তোবা অন্তরাল থেকেই মাঝে মাঝে এখানে উঁকি দিয়ে যান। কারণ- এ এক অদ্ভূত সম্পর্ক। এ এক মায়ার জাল। এই জাল কি কেউ বেঁচে থাকলে ছিন্ন করতে পারে।
এখনো খেয়াল করি- নতুন ব্লগাররা আসেন। নতুন উন্মাদনয়া মুখরিত হন। একজনের সাথে আরেকজনের সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার আস্তে আস্তে জীবনের নানা চড়াই উৎরাইয়ে অন্যদিকে চলে যান। ধীরে ধীরে পুরানো হয়ে যান।
এই সামহুয়ারইন ব্লগ যেন বাংলা ব্লগের এক বৃক্ষের মতো। যেখানে গাছের নতুন পাতা আসে পুরাতন পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়। তবে এর শিকড় সবসময় ঠিকই থাকে। যে শিখর শক্তকরে প্রোথিত করে রেখেছেন ব্লগার জানা আর অরিল।
আর নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন ব্লগার কাল্পনিক ভালোবাসা।
আজ এতোদিন পর এই "বিহংগ" টেকনিকাল কয়েদখানা থেকে মুক্তি পেলো কাল্পনিক ভালোবাসার সহযোগিতায়। উনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। হুট করে কত স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। সব এক নিঃশ্বাসে এখানে নিংড়ে দিলাম।
শুভকামনা রইলো সবার জন্য।
নতুন বছরের জন্য রইলো আগাম শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:৫০