দ্বিধাগ্রস্ত এক শকুন এসেছে আজ আমার আঙিনায়।এক টুকরো নর মাংসের স্বাদ পাবে বলে ঘাপটি মেরে বসে আছে উঠোনের এক কোণে।আমি তাকে চিনিনা,আমি তাকে জানিনা,আমি তাকে ছুঁতে পারি না।সে বাস করে এক অতৃপ্ত অন্তরাত্মার মাঝে।যে আত্মাকে আমি পুড়িয়ে ফেলেছি শত সহস্র বছর আগে চন্দন কাঠের আগুনে।হয়তো আগুন তাকে পোড়াতে পারে নি,পুড়তে গিয়ে আগুন শীতল হয়ে গেছে,হারিয়েছে তার তীব্রতা।তাই সে আবার ফিরে এসেছে,ফিরে এসেছে আমাকে ভয় দেখাতে,ফিরে এসেছে প্রতিশোধ নিতে,ফিরে এসেছে তার স্বকীয় রুপে।
নির্মেঘ এক শারদ প্রভাতে তাকে দেখেছিলাম গাছহীন অরন্যের নির্জন প্রান্তরের কোন এক স্রোতস্বিনী জলধারায়। ঘনকালো চুলের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল তার মায়াকাজল আঁখিজোড়।সরু হয়ে যাওয়া স্নিগ্ধ জলধারায় সে ব্যাস্ত রেখেছিল নিজেকে শ্বেত শুভ্র বরফ স্নানে।আমি তখন আঁখি যুগল মেলে ধরি তার স্নানায়িত অধরে।সে তার বাহুদ্বয় প্রসারিত করে উন্মুক্ত নয়নে এদিক পানে তাকিয়ে উদাস হয়ে যায়,আর আমি তার আঁখি সাগরে ডুবে যেতে লাগি।ডুবে যেতে লাগি তলহীন সাগরে গভীর থেকে আরো গভীরে,তল থেকে আরো গভীর অতলে।
আজও ভুলি নি সে দুটি চোখ।আজ ও ঘুমের ঘোরে আমার মনের মান মন্দিরে অগ্ন্যুৎপাত জ্বেলে দিয়ে যায় ও দুটো চোখ।সুখস্বপ্ন দেখাতে এসে দুঃস্বপ্নের মায়াজাল বুনে দিয়ে যায় ঐ মায়াকালো দুটো চোখ।আমাকে ঘুমুতে দেয় না,আমি ঘুমুতে পারি না,আমি ঘুমুতে পারি না।
আমার সকাল শুরু হয় ঐ কালো দুটো চোখের অভিশাপ কুড়িয়ে।আমার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়,বিকেল গড়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা গড়ে রাত,আমি অভিশাপ কুড়োতেই থাকি,পোড়াতে থাকি কারোর এক বুক জ্বালার আগুন।সে আগুনে পুড়ে আমি ছাই হয়ে যাই,আমি স্তব্ধ হয়ে যাই,আমি পাষণ্ড হয়ে যাই।হিমালয় থেকে আগত বাতাস আমায় অভিশাপ দেয়,সাইবেরিয়া থেকে পথ হারিয়ে ফেলা পাখির দল আমায় অভিশাপ দেয়।অভিশাপ দেয় রাজ বাগানে না ফোটা কোন অচেনা ফুল,কোন অচেনা নদীর জল।আমি অভিশাপ কুড়োতেই থাকি,কুড়োতেই থাকি,কুড়োতেই থাকি।
কিন্তু তাতে আমার কি?কি এসে যায় আমার?
আমি তো তাকে হারিয়েছি সে হারাতে চেয়েছে বলে।আমাকে এখন শকুনের ভয় দেখিয়ে লাভ কি?আমার যে এখন আর কোন কিছুতেই ভয় নেই,কোন পাওয়ার ভয় নেই,কিছু হারাবার ভয় নেই।আজ আমি নিকৃষ্ট, দিকভ্রান্ত এক সরিসৃপ হয়ে বেঁচে আছি।বেঁচে আছি না পাওয়ার,পেয়ে হারাবার এক বুক জ্বালা নিয়ে।জীবিত থেকেও মৃত আমি আজ।আজ আর কোন মায়া কাজল চোখ আমায় টানে না,কোন প্রসারিত বাহু যুগল আমায় কোন শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে না।তাই আজ কোন শকুনে আমার ভয় নেই,ভয় নেই তীব্র কোন নিন্দিত শব্দে।আজ আমি পরাধীন, আজ আমি স্তব্ধ,আজ আমি রিক্ত,বড় রিক্ত,বড় বেশী রিক্ত,বড় বেশী রিক্ত।