-এক্সকিউজ মি....?
-........
-আপনি এখানে কি করছেন.. ?
-মশা মারি।চশমা দিয়াও কি চোখে দেখেন না নাকি....??
-না মানে... এত রাতে বসে আছেন....
এবার আমি খানিকটা বিরক্তির চোখে মেয়েটির দিকে তাকালাম।এত রাতে তো.......
-দেখুন,আপনি আমাকে যা ভাবছেন আমি তা না।
-আমি কি ভাবছি না ভাবছি সেটা জানার দরকার নাই।আপনি বিরক্ত করছেন কেন!!!?
-আসলে আমার একটু সাহায্য দরকার।অনেক রাত হইছে তো...
-এত রাতে বের হইছেন কেন তাহলে...?রাস্তা মাপেন
মেয়েটা নিঃশব্দে চলে গেল।আমার কানে শুধু এটাই বাজতে থাকলো,"আপনি আমাকে যা ভাবছেন আমি তা না।"
আমি যে সচরাচর রাতে বাইরে বসে থাকি এমন না।অনাস পাশ করেও কোনো চাকরি পাচ্ছি না।ভাল কোয়ালিফিকেশন থাকা সত্তেও চাকরি হচ্ছে না।বাবা ছোটকালেই মারা যায়।মা বেচে আছে,গ্রামের বাড়ি থাকে।এত দিন টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতাম।আজকে তাও গেল।
তাই উপার না দেখে রাস্তায় বসে ছিলাম।কখন যে ১ টা বেজে গেছে খেয়ালই নেই।বাসায় ফিরে যাওয়ারও কোনো তাড়া নেই।
কিন্তু মেয়েটা এত রাতে বাইরে কি করছে।হেল্প করা কি উচিত হবে...!!!?
-এই যে কানা.....
-এই!!!কে কানা..?
-সরি,চাশমিস.....
-বলেন....
-এত রাতে বের হয়েছেন কেন....?
-সেটা তো আপনার জানার দরকার নেই...
-আপনি হেল্প চাইলেন একটু আগে।বিস্তারিত জানতে পারলে হেল্প করতে সুবিধা হত।
-তেমন কিছু না।আমাকে একটু থাকার আশ্রয় দিতে পারবেন...?
মেয়েটির এমন আবেগময় অনুরোধ দেখে বিস্মিত হলাম
-দেখেন,আমি তো ব্যাচেলর আর আপনি....
-আমি জানি আপনার দারা আমার কোনো ক্ষতি হবে না।
-এত সিউর কিভাবে...?
-সেটা আপনার না জানলেও চলবে
-অকে।খাওয়া দাওয়া হয়েছে কিছু...?
-না।
-আচ্ছা চলেন কিছু খেয়ে আসি।
রাস্তার নিয়ন বাতির আলোয় মেয়েটাকে অন্যরকম মানবী লাগছে।এতক্ষন ভাল করে না তাকালেও এখন ভাল করে দেখলাম।মোটামুটি একটা ছেলেকে কাইত করার কেপাবিলিটি মেয়েটির মদ্ধে বিদ্যমান।পাশাপাশি হাটছি,মনে হচ্ছে আমরা অনেক দিনের পরিচিত
এখানে একটা হোটেল আছে যা অনেক রাত পযন্ত খোলা থাকে।আমি খাবারের অডার করলাম
-আরে!!!আমরা তো এখনো পরিচিত হলাম না।আমি Bstr....
মেয়েটি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকালো।তারপর ফিক করে হেসে দিল।সে এক অপরুপ হাসি।
-হিহি....Bstr!!!!!!ফানি তো...
-ফানির কি হল।নাম হতে পারে না এরকম....
-আচ্ছা,বুঝলাম।আমি লামিয়া।
এভাবে কিছুক্ষন কথা হল।তারপর আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
আমার বাসা বলতে ছোট একটা ঝুপড়ি।ছাদে একটা রুম পেয়েছি পানির দামে।বাড়িওয়ালা ভাল লোক।কিন্তু সাথে আবার মেয়ে নিয়ে আসলাম।কে জানে কি হয়।
-ইয়াক!!!!!ঘর এমন নোংরা কেন...?
-ব্যাচেলর বলে কথা।আচ্ছা আপনি বিছানায় ঘুমান,আমি নিচেই ঘুমাই
বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে শুয়ে পরলাম।
সকাল হতে হতেই উঠে পরলাম।আমার আবার তাড়াতাড়ি উঠার অভ্যাস।মেয়েটার দিকে চোখ দিতেই আমি অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম।
সকালের এক টুকরো রোদ মেয়েটার মুখের উজ্জলতাকে আরো উজ্জল করেছে।কেমন এক শিশুসুলভ চেহারা।আমি আর বেশিক্ষন তাকালাম না।বাইরে বের হলাম নাস্তা আনার জন্য।হাতে যদিও তেমন টাকা নাই।
নাস্তা নিয়ে ফিরে দেখি লামিয়া ঘুম থেকে উঠেছে।
-কি ব্যাপার,একা রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলেন..?
-না মানে....নাস্তা আনতে গিয়েছিলাম।
-ও
অতঃপর নাস্তা শেষ করলাম।মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করা উচিত কোথায় যাবে।
-আচ্ছা লামিয়া,এখন কোথায় যাবেন...?বাসায় গেলে আপনাকে চলেন দিয়ে আসি।
-আপনার কি মনে হয়!!!বাসায় গেলে কি এখানে থাকতাম....?
-তবে....?
-আপনি কোথায় যাবেন....?
-আমি গ্রামের বাড়ি যাব।মার কাছে।
-ওয়াও!!!!!গ্রাম।আমাকেও নিয়ে চলেন না প্লিজ....
-মানে কি!!!!!!
-অদ্ভুদ!!!!একটা মেয়ে নিজ থেকে আপনার সাথে ঘুরতে যেতে চাইছে।আর আপনি কি না.....
-দেখেন....
-কোন দেখা দেখি নাই.....চল তো।
যাহ!!!!এই মেয়ে তো আমাকে পাগল করে ফেলবে।এই জন্য মেয়েদের ঝামেলায় জড়াতে নাই।
ট্রেনের দুইটা টিকেট কিনলাম।আমি টেনশন করছি মাকে নিয়ে।মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি তার উপর আবার সুন্দরি......কে জানে কি বলে।আর এই মেয়েটাই বা কে।নিজের পরিচয় এখনো দিচ্ছে না।
ট্রেন ছেড়ে দিছে।লামিয়া বাচ্চাদের মত বাইরে তাকিয়ে আছে।
-কি ব্যাপার!!!!মুখ টা পেচার মত করে রাখছো কেন!!!!
-দেখো....তোমার পরিচয় আমি এখনো জানি না।তোমার বাবা মা নিশ্চয়ই চিন্তা করছে।আর তুমি আমার সাথে যাচ্ছ।তাও অচেনা এক লোকের সাথে।আর....
-এই থামো।মুডটা ভালো আছে।খারাপ করো না,ওকে...?
আমি চুপচাপ বসে রইলাম।কি ঝামেলায় পরলাম রে বাবা!!!!!!
বাসায় ঢুকতেই মা বড় বড় চোখে তাকালেন।
-স্লামাইকুম আন্টি.....
-ওয়ালাইকুম সালাম।কে তুমি মা...?
-আন্টি আমি লামিয়া।ওর ফ্রেন্ড
আমি হতবাক হয়ে রইছি।কি বলে এই মেয়ে।আর মাও দেখি পুরো পটে গেছে।
দুপুরের খাবার শেষ করারা পর বাইরে এসে দাড়ালাম।চাকরি নাই,কিছু নাই।কিভাবে চলবো
-আন্টি কে কিন্তু আমার দারুন পচ্ছন্দ হয়েছে।
-মানে কি!!!!!!
-উফ!!!!তুমি এত মানে মানে করো কেন..?
-লামিয়া,তোমার পরিচয় কিন্তু আমি এখনো জানি না।
-আরে বাবা!!!!জানবা তো।আমি তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না।আমি থাকাতে কি তোমার অসুবিধা হচ্ছে নাকি!!!!
-না তা নয়....কিন্তু....
-তাহলে অফ যাও.....
ঠিকই।লামিয়া আসাতে বাড়ির মধ্যে আনন্দ ফিরে এসেছে।সবাইকে হাসাচ্ছে,নিজে হাসছে।আমি যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।আর আস্তে আস্তে আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি।
ভালই যাচ্ছিল দিন।কিন্তু হঠাৎ একদিন বিকালে লামিয়া বলল
-আমার চলে যেতে হবে।আর্জেন্ট......
-কি হইছে...কোনো সমস্যা....?
-সময় নাই।প্লিজ আমাকে একটু রেলস্টেশন এ দিয়ে আস।
বাসার সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমার সাথে চলল।দিয়েও আসলাম স্টেশনে।তখনি কেমন যেন একটা চোট অনুভব করা শুরু করলাম।
-তোমাকে অনেক মিস করবো।(লামিয়া)
-আর কি দেখা হবে....?
-হতেও পারে....
ট্রেন ছেড়ে দিছে।ওহ শিট!!!!লামিয়ার নাম্বারই তো নেওয়া হয়নাই।
-লামিয়ায়ায়া......তোমার নাম্বার টা.....
-এতক্ষনে মনে পড়ছে...০১৭১৮২৯১৬.....
ট্রেন চলে গেসে।আমার কেন যেন মনে হল ডিজিট ভুল উঠাইছি।উফ!!!আমিও ওর সাথে যেতাম।এতলিস্ট বাসা টা তো চিনতাম।
বাসায় এসেই কেমন শুন্যতা অনুভব করা শুরু করলাম।আমি বুঝতে পারলাম I am loving with her.....
পরের দিন আমিও ঢাকা চলে আসলাম।নিজের ইচ্ছায় আসি নাই,চাকরির একটা অফার পেয়েছি।কিন্তু কেন যেন জয়িন করতে ইচ্ছা করতেছে না।বাট তারপরও করতে হবে।
লামিয়া যে নাম্বার টা আমাকে দিয়েছিল তাতেও ট্রাই করেছিলাম।কিন্তু অন্য এক লোক ধরেছিল।তাই ধরেই নিয়েছি লামিয়া আমার লাইফ থেকে হারিয়ে গেছে।
আমি যে অফিসে জয়িন করেছিলাম,ওইখানে একটা মেয়ে স্টাফ ছিল।অন্নেক কিউট।মেয়েটার সাথে হালকা কথা বলতাম।আমার তেমন আগ্রহ না থাকলেও মেয়েটার চরম আগ্রহ ছিল।নাম তিয়ানা
অফিস আওয়ার শেষে বাসায় যাচ্ছিলাম।হঠাৎ তিয়ানা ডাকল
-এই যে মি......
-Bstr....আর কত বার বলতে হবে....?
-মনে রাখতে পারি না।
-বল,কি জন্য ডেকেছো??
-না মানে কফি খেতে ইচ্ছে করছিল....
-তো...?
-চলেন খেয়ে আসি....
-আমার তা ইচ্ছা করছে না।
-আজিপ তো....আমার সাথে খেলে কি হবে...?
-উফ!!!!ওকে চল
তিয়ানা আর আমি রিক্সায় উঠলাম।আমি বুঝতে পারছি এই মেয়ে কেন আমার পিছে লেগেছে।ও কথা বলছে আর আমি শুধু হ্যা আর না এর মধ্যে উত্তর দিচ্ছি।
সিগন্যাল এ অনেকক্ষন যাবৎ আটকে আছি।কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিবে।হঠাৎ আমার চোখ একটি গাড়ির দিকে গেল।আরে!!!!!!!লামিয়া।
লামিয়ায়ায়া........
ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে।গাড়ি চলতে শুরু করে দিসে।আমি রিক্সা থেকে লাভ দিয়ে নেমে দৌড় দিলাম।কিন্তু পারলাম না।টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে গেলাম।
তিয়ানা ছুটে আসল আমার কাছে
-কি হইসে!!!!!এমন পাগলের মত ছুটছিলে কেন!!!?
-না কিছু না।চল
বাসায় চলে আসলাম।লামিয়াকে এতদিন পর দেখেও কিছু করতে পারলাম না।
এদিকে অফিসে কাজের অবহেলার কারনে অফিস থেকেও রিজেক্ট করে দিল।আমি আবার সেই আমি হয়ে গেলাম।
কিন্তু তিয়ানা আমার বাসায় আসত।নতুন চাকরির ব্যবস্থাও করেছিল।কিন্তু আমি না করে দিয়েছি।কারন লামিয়াকে না পেলে আমার কোন কিছুতেই মন বসবে না
-মেয়েটাকে কি তুমি খুব লাইক করো....?(আবেগময় কন্ঠে)
-কোন মেয়ে...?
-মেয়েতো একটাই।যাকে তুমি লাইক করো।
-হুম।
-ওকে কিভাবে পাবে...?
-যানি না।বাট সিউর পাব।
-অল দা বেস্ট।
প্রতি রাতে এখন বের হই।যদি লামিয়ার সাথে দেখা হয়।ওর সাথে তো রাতেই দেখা হয়েছিল
আজও নিরাশ হলাম।পেলাম না কোথাও।তাই ফুটপাতে বসে আছি
-এক্সকিউজ মি.....
আমি চরম রকমের ধাক্কা খেলাম।লামিয়া.....
-লামিয়া......
-আপনি এখানে কি করছেন....
এত কস্টের মধ্যেও হেসে দিলাম
-মশা মারি।চশমা দিয়েও দেখেন না নাকি!!!!
লামিয়ার চোখেও পানি....
-এতদিন কোথায় ছিলে....!!!জানো তোমার জন্য প্রতি রাতে রাস্তায় বের হয়ে তোমাকে খুজেছি!!!তোমার জন্য কাজে মন বসাতে পারি নি
-ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম কেন তাহলে!!!!
-আরে ডিজিট ভুল শুনছিলাম।তাই আর যোগাযোগ করতে পারিনি।
-গাধা
লামিয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না।আমাকে জড়িয়ে ধরেই কেদে দিল।
-আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি খুব সুখে ছিলা,তাই না!!!!
আমি ওর কানে কানে বল্লাম
-ভালবাসি।
-শুনি নি....
-অদ্ভুদ!!!!চোখের সাথে কি কানও গেল নাকি!!!!
-হু।এই মেয়েকেই তোমার ভালবাসতে হবে।
-অকা।কিন্তু আমি তোমার পরিচয় এখনো জানি না।
-জানতে হবে না।আমি মিসটেরিয়াস মেয়ে
বলেই আমার আরো কাছে আসল....
অতঃপর...........
অতঃপর........
তারপর না জানাই বেটার।আমাদের কাহিনি আমাদের মাঝেই থাক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৫