আমাদের মনে ইচ্ছার রংধনুর যে ছুটেচলা তা আলোর গতিবেগের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সময়ের সাথে সাথে এই রংধনু, রংধনুর সাতরংকে ছাড়িয়ে কল্পনার আরও অনেক রঙের সৃষ্টি করে। কিন্তু আমাদের আবার ফিরতে হয় আমাদের চেনা জগতে। সাদাকালোর জগতে। অন্য সবার মত আমার ইচ্ছার রংধনুটাও মাঝে মাঝে বর্ণিল হয় কল্পনার হরেক রঙ দিয়ে। তাইতো কল্পনায় আমি কখনও কবি, কখনও লেখক, কখনওবা বিদ্রোহী। কিন্তু সেইতো ফিরে আসি নিজের চেনা জগতে। সত্যি কথা বলতে কি মাঝে মাঝে বাস্তবতা এবং নিজের সামর্থ্যকে ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছা করে। লেখক কিংবা কবি হতে। যদিও অনুভব করতে পারি ব্যাপারটা খুব একটা সহজ নয়। তবুও ইচ্ছার এই ছুটে চলা থামাতে পারিনা। তাই মাঝে মঝেই ইচ্ছার এই জঞ্জালকে কুড়িয়ে আনি। কল্পনা করতে যেহেতু বাঁধা নেই তাই সেখানে কখনও আমি কবি। কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে লেখক কিংবা কবি হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে নয় লেখার ইচ্ছায়ই কাগজ কলম নিয়ে বসে পরি। মাঝে মাঝেই এই পৃথিবীর ধূলোবালি থেকে অনেক দূরে সরে যাই। যেখানে আমি মানুষগুলোকে নিখুত জানি। যেখানে রাগ, লোভ, ঘৃণা অহংকার নেই। হোক না সেটা আমার কল্পনার অন্য কোন গ্রহ। তবে আবার ফিরে আসি নিজের মাঝে, নিজের পৃথিবীতে, নিজের জগতে। কল্পনায় চলে যাওয়ার আনন্দে কিংবা ফিরে আসার দুঃখে ভাবি এ পৃথিবীতে তো আমি একা নই। তবে কেন একা ছুটে চলা, একার জন্য ছুটে চলা।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখ আমাকে সারাজীবন একাই চলতে হবে। না না তুমি রাগ কর না!! এ আমার অভিযোগ নয়। একা আমি ভালই থাকবো। আমি আমার কল্পনার সংসার নিয়ে ভালই থাকব তুমি দেখে নিও। আমি জানি তুমি হয়তো ডাকলে সাড়া দেবেনা। কিন্তু তুমি আছো ভেবে আমি না হয় তোমাকে ডাকবো না। আমার প্রাপ্তি শূন্য হতে পারে, আমার কল্পনার রঙ যে বহুরূপী। আমার শূন্য চোখে দ্বিধার খেলা থাকতে পারে। আমি না হয় আমার ভেতরের বাহিরের চাওয়া-পাওয়াগুলোকে নিয়ে সেই শূন্য চোখে মিথ্যে অন্ধকারে মেতে থাকবো। আমার বুকে বিভিন্ন রঙের স্মৃতিগুলো হরেকরকমের অনুভূতি দিয়ে জোনাকীর আলো বিলাবার মত করে অনুভূতি বিলিয়ে যাবে। সাহসী হলে অনেক আগেই এই ভবলীলা সাঙ্গ করে সরে পরতাম। কিন্তু আমি যে বড় দূর্বল, ভীতু। একটু অন্যভাবে বলতে পার, The merciless, the greedy, the insatiable, the murderous. অজ্ঞান উদাসীনতায় ভাসমান স্বপ্নখন্ড। Hanging in dreams, as it were upon the back of a tiger. বাঘের পিঠে স্বপ্ন দেখা। শ্রীকান্তের একটা গান শুনেছ, “স্মৃতির বেড়া বাঁধবে যখন পাথর হয়ে আমার মন, বন্ধু তোমায় বলি শোন, বুকের জ্বালা সয়ে যাবো। অশ্রু ভেঁজা কোন দিনে যন্ত্রনা নিয়েছে কিনে, অনেক দূরে তবু কাছে হয়তো একদিন হারিয়ে যাবো, মেঘলা রাতে লুকিয়ে থেকে রূপোর আলোয় জোৎস্না পাবো।”
আমি সেই জোৎস্নার অপেক্ষায় আছি কিনা জানিনা। তবে তোমাকে ভুলাতে পারবোনা। তোমার হয়তো মনে নেই বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, জোৎস্না গায়ে মেখে দিনের পর দিন রাতের পর রাত তোমার সামনে নতজানু হয়ে তোমাকে আমি আমার করতে চেয়েছিলাম। দুচোখ বুঁজে তোমার হাতে সঁপে দিয়েছিলাম আমাকে, আমার ভালবাসাকে। সেই বন্ধ দুচোখ আর খুলে দেখা হয়নি। উন্মুক্ত রয়ে গেছে হৃদয়ের সকল দরজা। আমার দরজার ফাঁক গলে অভাব, মায়া, বিদ্বেষ, ঘৃণা, ভালবাসা প্রবেশ করে। আবার অন্য পাশের খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। তাইতো নিজেকে কখনও স্থির করতে পারিনি। তাই আমি কখনও তোমার প্রেমিক, কখনও অভাবী। কখনওবা সেই তোমার কাছেই আমি ঘৃণিত কেউ। আবার কখনওবা তুমি শুনতে পাও তোমার প্রতি আমার বিদ্বেষের সুর।
দরজার বাইরের রঙ্গিন পৃথিবী
ঘরের ভেতর তুমি আমি।
তুমি কি চেয়েছিলে?
বর্ণিল আকাশের অন্য রঙগুলো?
না তা কি করে হয়!
নীল দেয়ালের ঘরইতো তুমি চেয়েছিলে।
নীল রঙের পর্দা,
তোমার বিছানার পাশে কিছু বই।
এইগুলোইতো চেয়েছিলে।
দেখ-
আমার ঘরে কোন এস্ট্রে নেই।
কিন্তু বারান্দায় ফুটেছে
তোমার দেয়া অর্কিড।
তোমায় সাথে নিয়ে কেনা
সেই দুটো রকিং চেয়ার
আমি মাঝে মাঝেই দুলিয়ে দেই।
তোমার দেয়া হালকা নীল রঙের
চায়ের মগ দুটোয় চা বানানো হয়নি।
কে বানিয়ে দেবে বল?
পৃথিবীর কে খবর রাখে?
আমার চায়ের বড় তৃষ্ণা!
এখন শুধু আমার চায়েরই তৃষ্ণা নয়। রবি ঠাকুরের গানের ভাষায় তৃষ্ণা এখন বক্ষ জুড়ে। কি লিখেছি জানিনা। কোথাও তোমাকে ভালবাসি একথাটি কি স্পষ্ট করে লিখেছি??? মনে হয়না। থাক লিখে আর কি হবে??? নাইবা জানলে কেউ একজন তোমাকে আজীবন ভালবেসে যাবে। তাতে তোমার কি আসবে যাবে। তোমার বানানো চায়ের স্বাদতো এখন একজনের খুব তৃষ্ণা মেটায়। তোমার ঘরের রঙটাওতো নীল। তবে তোমার ঘরের বারান্দায় রকিং চেয়ারদুটো প্রতি মাঝ রাতেই পৃথিবীর ঘুর্ণনের সাথে পাল্লা দিয়ে দোলে, তোমার হাসির শব্দে থেমে যায় সেই দোল। চারটি হাত তুলে নেয় দুটো চায়ের মগ। আবার দুলতে থাকে। আমি দূরের কোন এক বারন্দা থেকে দেখে যাই একটি একটি জলন্ত আগুনের উঠানামা। আবার দুলতে থাকে। তবে সেখানে একটা জিনিসের অভাব আমার খুব চোখে লাগে। দুটো অর্কিড!! আমি ঠিক পাঠিয়ে দেব। আমার বারন্দার দুটোই আমি পাঠিয়ে দেব। তোমার দেয়া অন্য কিছুই আমি তোমাকে ফেরত দেবনা। শুধু এই অর্কিড দুটো ছাড়া। কারন তোমার ভালবাসার কাছে আমি পরাজিত। তবুও আমি ভাল আছি। একা আমি ভালই থাকবো।