একটা সময় মরতে তাকে হতই হয়ত। ক্ষিদের জ্বালায়, নয়ত বখাটেদের অত্যাচারে আত্মহত্যায়। নয়ত নিজের পেটের ক্ষিদে নেভাতে আরেকজনের শরীরের ক্ষুধা মেটানোর পয়সায়, প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে।
অথবা বাঁচার ছোট্ট একটা স্বপ্ন হয়ত বাকি ছিলো তার। সেলাই মেশিনের সাথে সাথে মেশিন হয়ে যাওয়া হাত দু'টোর দিকে কখনও তাকানোর অবকাশ কি পেতো সে? যদি পায় বা নাও পায়, সেই হাতেই উঠে আসার কথা তার সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল--বেতনের সামাণ্য ক'টা টাকা। আসমা আক্তারের বেঁচে থাকার খড়কুটো।
-----------------------------------------------------
গতকাল গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত নারী শ্রমিক আসমা আক্তার পুলিশের গুলিতে মরেছে নাকি ছুটোছুটি করতে গিয়ে বাসচাপায়--এই নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশের কথার মাঝে আছে দ্বিমত। প্রশাসন আর তার চাকরের ক্ষমতায় সাধারণের মৃত্যুও বড় তুচ্ছ হয়ে যায়, সে নিজের দোষে মরেছে কিনা সেই তর্কের সামনে।
অথবা রাজশাহীর ছোট বনগ্রাম এলাকার মজনু-- সে কি মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হবার পর বিচারের অধিকারটুকুও পেতে পারে না? পারে না, আমাদের মহাপরাক্রমশালী র্যাব বাহিনীর হাতে পিটুনি খেয়ে মরে যাবার জন্যে এদেশের মানুষের আজ আর বিচারের প্রয়োজন হয় না। বেঁচে থাকার মত সামাণ্য মৌলিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনের দিন এটা নয়!
-----------------------------------------------------
ভাস্কর চৌধুরীর কবিতা,"আমার বন্ধু নিরঞ্জন" থেকে লিখছি---
" মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না ৷
মানুষ এত বড় যে ,
আপনি যদি 'মানুষ ' শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ' মানুষ' -
তো আপনি কাঁদবেন।
.
.
.
তুমি দুষ্কৃতি মারো , বান্গালী মারো ,
হিন্দু-মুসলমান মারো , গেরিলা - তামিল মারো ,
এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন
ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে ৷
বড়ই করুণ এবং বড়ই দু:খজনক
শক্তির স্বপক্ষে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ করে
উল্লাস কর না কেন
মনে রেখো মানুষই মরেছে।"
"কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি"....সুকান্ত সেই কবে কবিতাকে ছুটি দিয়ে হারিয়ে গেলেন। তারপর পদ্মার পানি বইতে বইতে শুকিয়ে চর হলো, তবু কবিতার ছুটি ফুরলো না। তাই বুঝি অত বছর আগের শেখা "মানুষ" শব্দটি বুকে আর কাঁপন ধরায় না। এত তুচ্ছ শব্দ উচচারণ করে আজ আর আমরা কাঁদি না!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৫:৫৯