somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাহেলা (দ্বিতীয় পর্ব)

২৮ শে মে, ২০০৭ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাহেলা প্রবেশ করলো তার নিজের নতুন সংসারে। তার স্বামী আরমান অনাথ। এক সময় অবস্থাসম্পন্ন পরিবার ছিলো যার চিহ্ন রূপে রয়ে গিয়েছে বিশাল বাড়িটা। একমাত্র বোনটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে গত বছর। খালি বাড়িতে রাহেলা একেবারে নিজের মত করে শুরু করলো তার সাধের সংসার। বিয়ের ঠিক পরের কটা দিন কেটে গেলো স্বর্গের মত সুখে।

কটা দিন, মাত্রই হাতে গোনা কটা দিনই। এরপর রাহেলার স্বপ্নের হ্যান্ডসাম নায়কের ভিলেনের মত রূপ বেরিয়ে এলো। পারিবারিক ব্যবসা করছে বলে যে কথা বিয়ের আগে বলেছিলো আরমান তার সবটাই মিথ্যা বলে জানা গেলো। সেই সাথে শুরু হলো কিছুদিন আগে বড় ভাইয়ের মুখে শোনা কথাগুলোর বাস্তবায়ন। অনেক রাতে মদ্যপ হয়ে বাড়ি ফেরা, কখনও বা না ফেরা, খারাপ পাড়ায় যায় বলেও শোনা যায় মানুষের মুখে। সবটা রাহেলা বিশ্বাস করে না। অনেক রাত অবধি একলা ঘরে ভয়ে ভয়ে স্বামীর জন্যে অপেক্ষা করে। এক সময় শ্বশুরের রেখে যাওয়া ব্যাংক ব্যালেন্স ফুরিয়ে যেতে থাকে। একে একে ঘরের জিনিস বিক্রি করেও সামলানো যায়না নিত্য দিনের চাহিদা।

দিনের পর দিন রাহেলা চেষ্টা করে যায় স্বামীকে শোধরাবার। কিন্তু দিনগুলোই কেটে যায় কেবল, বদল হয় না কিছুই। সব দেখে শুনে রাহেলা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, বিশ্বাস হয় না সত্যি এমন ঘটে চলেছে তার জীবনে। আরও কিছু দিন যায়, এরই মাঝে ফুটফুটে এক মেয়ে জন্ম নেয় তাদের ঘরে। রাহেলা তাকে বুকে চেপে রাখে। সব ভুলে তাকে অবলম্বন করে বাঁচতে চায়। কিন্তু সেই অবলম্বনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নতুন অশান্তি। কেন? না, সে যে মেয়ে! হোক শিশু, মেয়েমানুষ তো!

মেয়ের বয়স বাড়ে - এক বছর, দুই বছর করে তিন বছর, কিন্তু বাড়ে না শরীর। অপুষ্টিতে রুগ্ন হয়ে যাওয়া ছোট্ট শরীর। রাহেলা আর্তনাদ করে স্বামীর কাছে বলে,

-- একটা কিছু কর, এইভাবে বসে থেকে থেকে না খেয়ে না দেয়ে আমাদের হয়তো আর কিছুদিন জীবন কেটে যাবে, কিন্তু এই শিশুটার কথা ভাবো, সে আমাদের সন্তান’!

আরমানের মদের গন্ধওয়ালা মুখ থেকে অদ্ভুত কিছু শব্দ বেরোয় জবাবে। অস্ফুটে বলে,

--হুঁ ... সন্তান ... মেয়ে বাচ্চা দিয়ে আমার তো কোন কাজ নেই...তোমার থাকলে তুমিই কাজ করে খাওয়াও না তোমার মেয়েকে ।

রাহেলার মুখে কথা সরে না। দিন দিন কতখানি অমানুষ হয়ে উঠেছে তার স্বামী স্পষ্ট বুঝতে পারে। নিজের জন্য নয়, কোলের শিশুটার কচি মুখের দিকে তাকিয়ে হাহাকার করে উঠে তার বুকের ভেতরটা। বড় অভিমান হয় নিজের ওপর। কেন বাবা-মা’র কথা না শুনে সে বিয়ে করেছিল এই অমানুষটাকে? কেন তার আর পড়ালেখা করা হলো না? যে মেয়ের জন্য পাগল হয়ে ছিল এত মানুষ, আজ তার জীবনের এই দশা! রাহেলার চোখ থেকে ক্রমাগত অশ্রু ঝরে পড়তে থাকে। শত শত প্রশ্নে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। নিজের হাতে একটা টাকা নেই। রাহেলা বাস্তবিকই কি করবে খুঁজে পায় না। হঠাত মনে পড়ে বাবার বাড়ি থেকে চলে আসবার সময় নিয়ে আসা মায়ের কিছু গয়নার কথা, নিজের ছোট্ট ট্রাংকটায় তালা মেরে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। দৌড়ে ট্রাংক খুলেই থম হয়ে যায়। নেই!

(চলবে)
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×