somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিচারনঃ বাবা'কে মনে পড়ে

১৩ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ দু'মাস হলো, বাবা চলে গেছেন। এর মাঝে টুকিটাকি মন্তব্য করা ছাড়া সামুতে কোন লিখা হয়নি, আর আমার ব্যক্তিগত ব্লগেও কিছু লিখা হয়নি। গতকাল রাত থেকেই শুধু বাবার কথাই মনে পড়ছে। সারাটারাত ঘুমুতে পারিনি। ভোর সকালে কিছু খেয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, লাভ হয়নি। ফজর বা দুহুরের নামাজও পড়া হয়নি। দুপুর গড়িয়ে এখন পড়ন্ত বিকেল। ভাবছি গোসলটা করে নামাজটা পড়বো।

আসলে কোন কিছুতেই কোন উৎসাহ পাচ্ছিনা। বড় ভাই, মা আর স্ত্রীর সাথে কথা হলো, আমার অবুঝ ছেলেটাও শুধু ফোনের দিকে তাকিয়ে গো গো করছে, এই হাসছে, এই কাঁদছে আর মাঝে মাঝে চিৎকার দিচ্ছে। তার অব্যক্ত ভাষা বোঝার সাধ্য আমার নেই, তবুও ওর দিকে তাকিয়েই আমি নিজেকে আমার বাবার স্থানে দেখছি, বোঝার চেষ্টা করছি। সন্তানের প্রতি বাবা-মা'র এই অদৃশ্য টান, এই ভালোবাসা বোঝানোর মতো কোন ভাষা সম্ভবত এখনো তৈরী হয়নি। কি দুর্নিবার মায়া, কি এক প্রচন্ড মমতার বাঁধনে বাবা-মা সন্তানকে আগলে রাখেন, সেটা নিজে বাবা না হলে হয়তো বোঝা সম্ভব হতো না। বাবা বেচে থাকতে শুধু বলতোঃ

"আরে বাড়িয়া বুঝবি বুঝবি, নিজে বাবা হইলে বুঝবি।"

ছোট বেলায় বাবার বলা এই কথাটা এখন দিনের আলো মতো পরিস্কার বুঝতে পারি। শুধু অনুতাপ করি, আর ক'টাদিন আগে যদি বুঝতে পারতাম! প্রবাসে আসার জন্য যেদিন বাবা এয়ারপোর্টে আমাকে প্রথম বিদায় দিতে এলেন, সেদিন তার লাল চোখ দেখে বুঝতে বাকি ছিলোনা বাবা ঠিক কতটা ভালোবাসতেন আমাদের। সালাম করে বিদায় নেয়ার সময় মাথায় হাত বুলিয়ে বাবা বলেছিলেনঃ

"এখন তুমি বড় হইছো, দূরের দেশে যাইতাছো, ভালো-মন্দ বুইঝা চইলো, নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাইখো।"

হয়তো বাবা আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না, তবুও বলছি, বাবা আমি বড় হতে চাইনা, আমি আবার তোমার আদর-শাসনের সেই ছোট্ট ছেলেটিই থাকতে চাই। আমি চাই তুমি আমাকে সেই আগের মতো স্কুলের টিফিনের জন্য দু'টো টাকা দাও। আমি চাই, আমি অসুস্থ হয়ে গেলে, আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাও, অফিস থেকে বাসায় ফিরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেখ আমার জ্বর বেড়েছে না কমেছে। বাসায় আসার সময় আমার জন্য তরমুজ কিনে নিয়ে আসো।

প্রবাসে আসার পর থেকে পরিবারের সাথে ঈদ করা হয় নি, তার ১৩ বছর হতে চলছে। ছোট্ট বেলায় বাবার কাছে ঈদের জন্য টাকার বায়না ধরতে ইচ্ছে করে খুব, গ্রামারে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ঈদের নামাজ শেষে বাবার কাছ থেকে চকচকে নোটের বান্ডিল খুলে সালামি পেতে ইচ্ছে করে।

বাবা, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাও? নাকি তুমি ঘুমিয়ে থাকবে অনন্তকাল ধরে, এই পৃথিবীর সবকিছু লন্ডভন্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত? তোমার ছেলেতো বুড়ো হয়ে যাচ্ছে বাবা। তোমার মতো আমারওতো এখানে-সেখানে দাঁড়ি-গোঁফ এর রং বদলে যাচ্ছে। তোমার মতো আমারও নিজের সন্তান হয়েছে, আর ক'দিন পরেই তোমার দেখে যাওয়া নাতি বড় হয়ে আমার কাছেও ঈদের সালামি চাইতে আসবে। আমি কার কাছে সালামি চাইবো?

খাবারের টেবিলে তোমার চেয়ারটা এখনো আছে, ঐ চেয়ারে আমি বসতে পারি না বাবা। তোমার পানির গ্লাস, তোমার চশমা, তোমার জন্য আমার বিয়েতে কেনা পাঞ্জাবি, তোমার ফতুয়া সবকিছু মা সযত্নে গুছিয়ে রেখেছে। বাড়ির উঠোনে তোমার বসার জায়গাটা মা প্রতিদিন নিজে ঝাড়ু দিয়ে রাখে। কাজের বুয়া ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করলেও মা শোনেনা।

তোমার মনে আছে? ঐ যে, তুমি একদিন বড় বোয়াল মাছ খেতে চাওয়ার কথা অনেক পীড়াপীড়ির পর মা'কে বলেছিলে? প্রবাসী ছেলে কষ্ট করে গুনে গুনে বাড়ি খরচের টাকা পাঠায় বলে নিজের ইচ্ছের কথাও তুমি বলোনি! মা-ই আমাকে সাহস করে বলেছিলো বলেই না আমি সাথে সাথে আবারও টাকা পাঠিয়েছিলাম। মা বলেছিলো, তুমি নাকি শোনার পর মা'র উপর ভীষণ রাগ করেছিলে! মাছ খেয়ে নাকি তুমি আমার জন্য অনেক দোয়াও করেছিলে আর কান্নাও করেছিলে? আমি তোমাদের সন্তান হিসেবে কি এতটুকুও করতে পারি না?! তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আমি এখন আর বোয়াল মাছ খেতে পারি না বাবা।

তোমার সাথে শেষ যে'দিন কথা হলো, তোমার মনে আছে তুমি আমাকে বলেছিলে, যেন বড় ভাই, মা, ভাবী সবার সাথে মিলে চলি, যেন বড় ভাইয়ের বিপদে এগিয়ে আসি, যেন নিজের শরীরের যত্ন নেই? আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম, আমি তোমার কথা রাখবো বাবা। কিন্তু তুমিতো তোমার কথা রাখোনি, তুমিতো আর এখন আমার জন্য দোয়া করোনা, সাহস দিয়ে দিয়ে বলোনা, তোমার জন্য দোয়াতো অবশ্যই করি।

তুমি কোথায়? আমার কথা কি তুমি শুনতে পাচ্ছো? হয়তো পাচ্ছো, হয়তো পাচ্ছোনা। যে চির নবান্নের দেশে তুমি আমাদের ফেলে চলে গেলে, সেখানে তুমি ভালো থেকো। জীবনের সব আয়োজন ফেলে তুমি মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে অনেক শান্তিতে থাকো, এই দোয়াই করছি প্রতিটা ওয়াক্তে। আরতো মাত্র ক'টা দিন, আমিও আসছি বাবা। এর পর কিন্তু তুমি আর আমাদের ছেড়ে যেওনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ২:৩৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×