যারা মিউজিক কালেকশান করেন বা গানের সাথে মোটামুটি কিছুটা সখ্যতা আছে তারা খুব সম্ভবত "ফ্ল্যাক" ফরম্যাটের স্যাথে বেশ ভালোভাবেই পরিচিতি। ৯০'এর দশক থেকে এমপিথ্রি ফরম্যাটের এক চেটিয়া বাজার থাকলেও হালে "ফ্ল্যাক" ফরম্যাটের দিকে অনেকেই ঝুঁকেছেন। মূলত এমপিথ্রির তুলনায় ফ্ল্যাক অনেক বেশী উন্নত মানের মিউজিক সংরক্ষণ করতে পারে বলেই হয়তো ধীরে ধীরে ফরম্যাটটি বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। পাশাপাশি হাতের নাগালে উন্নত কম্পিউটিং প্রযুক্তি এবং তথ্য সংরক্ষণ এর স্পেস ক্রয় সীমার মধ্যে চলে আসাতে অনেকেই মিউজিক ফ্ল্যাক ফরম্যাটেই সংরক্ষণ করছেন।
প্রযুক্তিটি ওপেন সোর্স হওয়াতে পুরো ব্যাপারটাই বেশ সবার কাছে সমাদৃত হচ্ছে। সিডি থেকে মিউজিক এমপিথ্রিতে কনভার্ট হলে মিউজিকের গুণগত মান অনেকটাই হারিয়ে যায়। তবে ফ্ল্যাকে সিডি মিউজিক এর মান প্রায় শত ভাগ (৯৯.৯৯৯%) অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হলেও সংরক্ষনের জন্য অনেক বেশী স্পেস প্রয়োজন হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সাধারণত সিডি মিউজিক শতভাগ অক্ষুন্ন রেখে (কম্প্রেস না করে) ওয়েভ ফাইলে যদি একটা ট্র্যাকের জন্য ৫০ মেঃবাঃ প্রয়োজন হয়, সেখানে ফ্ল্যাকে প্রায় ২৫ মেঃবাঃ প্রয়োজন পড়ে। সফটওয়্যার ব্যবহার করে, আপনি আপনার কম্পিউটারের পাশাপাশি স্মার্টফোনেও এই ফরম্যাটের মিউজিক উপভোগ করতে পারেন।
মূলত হাই-রেজ মিউজিক এর জন্য ফ্ল্যাক সবচেয়ে উপযোগী ফরম্যাট হলেও, ভালো হার্ডওয়্যার প্রয়োজন পড়বে সত্যিকার অর্থে হাই-রেজ মিউজিক উপভোগের জন্য। একটা মধ্যম মানের কম্পিউটারেও হাই-রেজ মিউজিক বাজানো সম্ভব হলেও আমি এর পক্ষে নই, কারন সে জন্যে ডেডিকেটেড হার্ডওয়্যার বেশীরভাগ কম্পিউটারে নেই। ডেডিকেটেড হার্ডওয়্যার বলতে ফ্ল্যাক সার্পোটেড উন্নত মানের ড্যাক, এম্পলিফায়ার এবং স্পিকার। খরচের ব্যাপার অবশ্যই।
একটা মোটামুটি মানের হাই-রেজ স্টেরিও কিনতে গেলে কম করেও হলেও ৫০ হাজার টাকার নিচে চিন্তা করা যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্যানাসনিক এর এস-সি পিএমএক্স ৯ স্টেরিও ব্যবহার করছি। যেটা স্বল্প দামে মোটামুটিভাবে ভালো মানের স্টেরিও। যদিও এর চেয়েও শতগুন ভালো প্লেয়ার রয়েছে, দিন শেষে সেটা ব্যবহারকারীর টেস্ট এবং আর্থিক ব্যপারগুলোর উপর নির্ভর করছে। আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু মাইকেলও আমার এই স্টেরিও কেনার পক্ষে ছিলোনা, শুধু দামের কারনে। কিন্তু ঐ যে বললাম, ব্যাপারটা ব্যক্তিগত ভালোলাগার বিষয়। প্লেয়ারটির ছোট্ট একটা ছবি শেয়ার করছি।
প্লেয়ারটির ব্যাপারে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন আরো জানার জন্য।
বলছিলাম ফ্ল্যাক এর কথা। আগেও বলেছি, গত বছরে দেশে গিয়ে অনেক বাংলা গানের সিডি আর কিছু এ্যালবাম ওয়েভ আকারে রিপ করে নিয়ে এসেছি। মূলত ফ্ল্যাক ফরম্যাটে উপভোগ এবং সংরক্ষন করার তাগিদেই এটা করা।
আপনারা যারা দেশে বাংলাদেশী মিউজিক কালেকশান করছেন, তাদের ব্যাপারটা ভেবে দেখার অনুরোধ থাকবে। অনলাইনে কয়েকটা দোকান থেকে আমি প্রায়ই ফ্ল্যাক মিউজিক কিনে থাকি শুধুমাত্র গুনগত মানের কথা চিন্তা করে। ফ্ল্যাক হাইরেজ মিউজিক সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম হলেও সিডি থেকে সংরক্ষণ করাও বেশ সহজ। মূলত ওয়েভ ফাইলে মেটাডেটা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না বলেই ফ্ল্যাক কে নেক্সট বেস্ট থিং বলা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে আমি প্রায় দুই সহস্রাধিক এ্যালবাম কালেকশান করেছি শুধু আর্কাভিং করার উদ্দেশ্যে যেগুলো মূলত ব্লু-রে ডিস্কে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
স্ট্রিমিং সার্ভিস যেসম ইউটিউব, স্পটিফাই, আইটিউনস যেটাই হোক না কেন, হাইরেজ মিউজিক বা সিডি সমমানের মিউজিক কখনোই অনলাইনে উপভোগ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অন্তত আপাতত তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন না থাকলে এমপিথ্রিও আপনার কাছে যথেষ্ট উপভোগ্য মনে হতে পারে। দিন শেষে ব্যাপারটা পুরোটাই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়, তবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে ফ্ল্যাক এর মত উচ্চ মান সম্পন্ন মিউজিক আর্কাভিং মাধ্যম আপাতত নেই বললেই চলে। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৮