somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের কবলে শের-ই-মহীশূর টিপু সুলতান..

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের কর্ণাটকে টিপু সুলতানের ( (জন্ম: ২০ নভেম্বর, ১৭৫০ - মৃত্যু: ৪ মে, ১৭৯৯) জন্মবার্ষিকী পালন করার ঘোষণা দিয়েছিল কংগ্রেস শাসিত কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া।কিন্তু রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করে গতকাল হিন্দুতভা,বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলসহ বিজেপির অন্যান্য উগ্র সংগঠন।তারা সহিংসতা চালায় কর্ণাটকে।পুলিশের সাথে সংঘর্ষ চলাকালে দৌড়ে পালাতে গিয়ে মারা যায় একজন।

বিজেপি যে কতটা উগ্রপন্থী তা এ ঘটনা থেকেই বুঝা যায়।যেই টিপু সুলতান তাদের মাথার তাজ হয়ে থাকার কথা আজ তারা শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়!

‘আজ থেকে গোটা হিন্দুস্থান আমাদের’ কথাটি বলেছিলেন জেনারেল হার্স যেদিন হিন্দুস্থানের বীর সেনানী টিপু সুলতান শাহাদাত বরণ করেছিলেন।

দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক ছিলেন টিপু সুলতান৷ পিতা হায়দার আলী মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন৷টিপু সুলতান ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করেন। তিনি তাঁর শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন।ইংরেজরা একমাত্র তার প্রতিরোধের কারণেই গোটা হিন্দুস্তান দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

মিসাইল প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার করেন টিপু সুলতান। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা এই মিসাইল নকল করে কংগ্রিভ মিসাইল তৈরি করে টিপুর বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেছিল। আর আজকের আধুনিক মিসাইল তারই ধারাবাহিকতায় তৈরি।



ব্যক্তিজীবনে টিপু ছিলেন ধার্মিক খোদাভীরু একজন মানুষ।তার রাজ্যে মাদক দ্রব্য , বেশ্যাবৃত্তি নিষিদ্ধ ছিল।তার শাসনামলে সমাজে ন্যায়বিচার ছিল।মহীশুর রাজ্যের সর্বত্র ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে প্রজাকূলের নিকট তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ, আস্থাভাজন নৃপতি হিসেবে শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন।ধার্মিক ও সাহত্যানুরাগী এ মহান অধিপতির ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ভাষায় লিখিত ১৮৮১টি পাণ্ডুলিপিসহ প্রায় দুই হাজার বইয়ের সংগ্রহ ছিল।মহীশুর সাম্রাজ্যের পতনের নয় বছর পূর্বে ১৭৯০ সালে একজন বিশিষ্ট ইংরেজ তার পিতার নিকট লিখিত পত্রে উল্লেখ করেছেন যে, “মহীশুর রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা সর্বাধিক সহজ সরল- এখানকার শাসন ব্যবস্থায় অত্যন্ত কঠোর ও নিপেতার সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায়বিচার।”

মহীশুর বাহিনীর সাথে ইংরেজ বাহিনীর শেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৭৯৯ সালের মে মাসে।বেঈমান মন্ত্রীদের বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি পরাজিত হন।তাকে আত্মসমর্পণ করতে পরামর্শ দিলে তিনি বলেন,‘আমার কাছে সিংহের একদিনের জীবন শিয়ালের শত বছরের জীবনের চেয়ে উত্তম।’।বীরবিক্রমে যুদ্ধ করার এক পর্যায়ে এক ইংরেজ সৈনিকের গুলিতে সুলতান টিপু শাহাদাত বরণ করেন, সেই সাথে হিন্দুস্তানের আযাদীর সূর্যও অস্তমিত যায়।



টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে উগ্র হিন্দুরা যে অভিযোগ করে তা হল তিনি জোর করে ধর্মান্তরিত করছেন।কিন্তু এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।মহীশুর গ্যাজেটের সম্পাদক শ্রীকান্ত বলেন,'প্রায় ১৫৬ টি মন্দির টিপু সুলতানের আমলে অনুদান পেত।তিনি নানজাগুদের শ্রীকান্তেশ্বরা মন্দির এবং শ্রীরঙ্গপত্তমের শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দিরে বহু উপঢৌকন দিয়েছেন।এ ছাড়া, কাঞ্চির মন্দিরকে ১০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দান করেছেন টিপু সুলতান। মেলুকোতে মন্দিরের দুই দল পুরোহিতের মধ্যে বিবাদের সুরাহাও করেছেন তিনি।

মুসলিম জাতি হাজার বছরের উপর ভারত শাসন করেছে।বর্তমানে ভারতের ৮০% জনগোষ্ঠী অমুসলিম।যদি প্রতাপশালী এই মুসলিম শাসকগণ জোর করে ধর্মান্তর করত তাহলে এই ভূখণ্ডে অন্য ধর্মালম্বিদের খুজে পাওয়ায় কঠিন হয়ে যেত!টিপু সুলতানরাই ভারতকে রক্ষা করার জন্য জীবন উৎসর্গ করে ব্রিটিশ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল অথচ আজ এই ভারতীয় উগ্রপন্থীরাই এই মহান বীরের নাম নিশানা মুছে ফেলে দিতে চায়! বিজেপি চাইছে ইন্ডিয়ার ইতিহাস থেকে মুসলিমদের নাম মুছে দিতে কিন্তু যে মাটির প্রতিটি কণিকায় মুসলিম শাসকদের ইতিহাস লিখা সেখান থেকে কি এত সহজে মুসলিমদের ইতিহাস মুছে ফেলা সম্ভব!

সুত্রঃ
- উইকিপিডিয়া
- সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
- মাসিক আল কাউসার
- রেডিও তেহরান
- টুইটার
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩২
১২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×