somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বিনয় কাকা।

০৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিনয় কাকা, আমার বন্ধুর কাকা সে সূত্রে আমারও কাকা। বয়সের ব্যবধান যদিও অনেক তবুও আমার সাথে একটা ভাল বন্ধুত্বের সর্ম্পক্য তৈরী হয়ে যায় খুব অল্প সময়ে। আমার দেখা মতে খুবই বিচক্ষণ জ্ঞানী, বিদ্বান, পণ্ডিত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ সজ্জন, নিরহঙ্কার, শালীন, ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন এই বিনয় কাকা। বিজ্ঞানের ছাত্র বিনয় কাকা সর্ব বিষয়ে তিনি পড়াশেনা করতেন। ইতিহাস,রাজনীতি, অর্থনীতি,সমরনীতি এতো সুন্দর বিশ্লেষণ আমি আর কারো কাছে শুনিনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির এক সময়ের তুখোড় ছাত্র ছিলেন এই বিনয় কাকা। বিজ্ঞানের ছাত্র বিনয় কাকা সর্ব বিষয়ে বক্তৃতা দিতে পারতেন। বিজ্ঞানের কঠিন বিষয় গুলো খুবই সহজ করে বোঝানোর ক্ষমতা আমি তার মাজে যেভাবে দেখেছি তা অন্য কারো মাজে দেখিনি। এসব গুনাবলীর কারনে হয়তো খুব অল্প সময়ের মধ্যে কখন কাকা হতে ভাল বন্ধু হয়ে গেছি টের পাইনি।
এক সময় একসাথে চলেছি আমি আর বিনয় কাকা, এতো ভাল রেজাল্ট থাকার পরেও কোনদিন চাকুরী বা ব্যাবসার চিন্তা করেননি। ছন্নছাড়া জীবন তার ভালো লাগতো। পকেটে অনেক সময় টাকা থাকত না কিন্তু মুখ দেখে বুজার উপায় ছিলনা। সারাদিনের রুটিন মাফিক লাইব্রেরিতে বই পড়া,বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে ঘুরে অনাথ অভাবী বাচ্চাদের ফ্রিতে পড়াতেন, বই কিনে দিলেন এই বিনয় কাকা। এসব কাজের পরে সময় থাকলে প্রেমিকার সাথে সময় কাটাতেন। আমি তার সাথে ঢাকার অনেক বস্তিতে গিয়েছি। মাঝে মাঝে তার প্রেমিকা আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তার জ্ঞানগর্ভ কথা শুনতাম। একবার কানাডার নামকরা এক ইউনিভার্সিটিতে তার স্কলারশিপে পড়ার সুযোগ হলো। তিনি ইচ্ছে করেই কানাডায় গেলেন না। তারপর তার প্রেমিকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হলেন। একবার শুনলাম বিনয় কাকার প্রেমিকার পরিবার হতে কঠিন চাপ দেয়া হলো, ধর্ম বদল করে বিয়ে করার জন্য কারন তার প্রেমিকা ছিলেন মুসলিম। তিনি ধর্মের কথা শুনে ঠান্ডা মাথায় ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সে সবার সামনে বুক উচিয়ে বলে দিতেন আমি ধর্মনামের ফাজলেমিতে বিশ্বাসি নই। ধর্ম নিযে তার প্রেমিকার কখনও মাথা ব্যাথা ছিলনা।মাঝে মাঝে আমি ধর্মকথা উঠালেই বলতো আমি ধর্ম ধর্ম করে সবার থেকে দুরে। এ ধর্মের কারনে মায়ের সাথে দেখা হয় না। আমি ৫ বছর নিয়মিত ভেদ পুরান কোরান বাইবেল সহ অনেক ধর্মগ্রন্থ পড়েছি,এগুলো গল্প ছারা কিচ্ছু নেই। সব অর্থব গুলো ধর্ম ধর্ম করে। বিশ্বাস কর রাব্বী যদি ধর্মগুলো মানুষ বুজে পড়তো তাহলে মন্দির মসজিদ গুলোতে মানুষ খুজে পাওয়া যেতো না মোমবাতি জ্বালানোর জন্য।

তারপর আমিও দেশের বাইরে চলে যাই, প্রথম প্রথম চিঠি লিখতাম উনিও যথা সময়ে উত্তর দিতেন। এরপরে অনেক দিনের গ্যাপ, কয়েক বছর পরে হঠাৎ একটা চিঠি পেলাম কানাডা থেকে। বিনয় কাকা ও তার বান্ধবী চলে গেছেন কানাডাতে তারপর ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে। কিছুদিন পরেই বিনয় কাকা বললেন, কানাডাতে তার একটুকুও ভাল লাগে না। একদিন শুনলাম বিনয় কাকা দেশে চলে আসছেন তার প্রেমিকাকে কানাডাতে একা রেখে। তার অনেকদিন পরে আমি দেশে চলে আসলাম। খুজে বের করলাম বিনয় কাকাকে। সেই আগের মতো ছন্নছাড়া জীবন চলছে। অনেক কথা হলো অনেক বছরের না বলা কথা, কথা বলতে বলতে আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটি পুরোটা ঘুরলাম। তবুও কথা যেন শেষ হয়না। আজন্ম সমবন্টন বিশ্বাসী বিনয় কাকা নিজের দলীয় নেতাদের আচ্ছা করে বকা দিলেন। কেমন জানি একটা ক্ষোভ কাজ করছে বিনয় কাকার মনে। ইতিমধ্যে বিনয় কাকার পিতৃ বিয়োগ হয়েছে এবং ভাই বোনেরা মাকে নিয়ে ভারতের বর্ধমানে স্যাটল হয়েছেন কিন্তু তিনি কখনও এ দেশ ছেড়ে যেতে চাইতেন না। আমি কয়েকবার তার সাথে ভারতের বেশ কয়েক জায়গাতে ঘুরেছি কিন্তু ভারতে স্থায়ী হবেন এমন চিন্তা করতেন না। আমি মাজে মাজে বলতাম সবাই চলে গেছে আপনিও চলে যান, বলতো ধর্মান্ধ মালোয়ানদের সাথে আমি থাকিনা আবার যদি আমি বলতাম ধর্মান্ধ মোসলমানদের সাথে কিভাবে আছেন? বলতো আমি ধর্মান্ধ মুসলিমদের সাথেও থাকিনা। এরপরে দেখা খুব কম হতো একদিন দেখা করতে বললেন, গিয়ে দেখি তিনি একেবারেই ভারতে চলে যাবেন সিন্ধান্ত নিয়েছেন। বিদায় দিয়ে চলে আসলাম খুব খারাপ লাগলো, তবে এই ভেবে ভাল লাগলো যে আত্বিয়দের কাছে থাকবে। চলে যাওয়ার মাস ৪/৫ পরে একদিন কথা হলো দিল্লি গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। দেখা করে যেতে বললো। এর ২/৩ মাস পরে তিনি আবার বাংলাদেশে চলে আসলেন। দেখো হলো বলল ভারতে ভাল লাগেনা এখানেই থাকবে। এ কথা শুনে ভারতে যাওয়ার সময় যতোটা না কষ্ট হয়েছিলো এসে পরায় এর চেয়ে বেশী কষ্ট পেলাম। কারন তিনি আবার ছন্নছাড়া জীবনে ফিরে যাবেন। বিয়ে সংসার কররেননা কি হবে এ ভেবে খুব খারাপ লাগল। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো এটা সেটা নিয়ে কথা হতো। ভারত ও বাংলাদেশের সরকারি সিস্টেম নিয়ে গালাগালি করতেন। এর কিছুদিন পরে তিনি ফোন দিয়েছেন ভারত থেকে, বললো চলে এসেছি, কোলকাতা আসলে যেন ফোন দেই দেখা করি। এরপর অনেকদিন কেটে গেছে তার নাম্বার চেন্জ করেছে যোগাযোগ নেই করো সাথে। বছর পাচ আগে অনেক চেষ্টা তার একটা মোবাইল নাম্বার জোগার করে ফোন দিলাম। ফোন পেয়ে মহা খুশি। জানতে চাইলে বললো যে, সে বিহারে আছেন। রাজধানী পাটনা হতে ৩০০ কিলোমিটার দুরে সরকার হতে বেশ কিছু জায়গা লিজ নিয়ে সেখানে আদিবাসি লোকজন নিয়ে চাষাবাদ করেন, আর আদিবাসি বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল করেছেন সেখানে তিনি শিক্ষা দেন এবং চাষাবাদ করে খুবই ভাল আছেন্। বেশ টাকা পয়সাও একাউন্টে আছে। আমি যেনো সত্ত্বর পাটনা যাই দেখা করি। আমি খুবই খুশি হলাম তার এ উন্নতির খবর শুনে। একবার ইন্ডিয়ার পত্রিকায় ছবিও ছাপা হয়েছিলো। আমি যাই যাচ্ছি করে কোলকাতা যাই, দিল্লি যাই,চেন্নাই, বোম্বেও যাই বিহার আর যাওয়া হয়না। আবার অনেদিন যোগাযোগ বিহীন। নাম্বার নেই, আগের নাম্বার কাজ করছেনা। অনেক চেষ্টা করলাম বন্ধুর মাধ্যমে কোন নাম্বার বা ঠিকানা পেলাম না আর যাওয়া হলোনা।
গতরাতে অষ্ট্রেলিয়া হতে বন্ধুর ফোন পেলাম, বিনয় কাকা মারা গেছেন। গত সন্ধ্যা ইন্ডিয়া সময় ৭ টায় স্টোক করেছিলেন। মেডিকেলে ঘন্টা ২ আই সি ইউতে ছিলেন তারপরে মারা গেছেন। আরো শুনলাম মারা যাওয়ার আগে তিনি নিজের দেহটা মেডিকেলে দান করে গেছেন। খুবই কষ্ট লাগলো আজন্ম দুঃখি মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া বিনয় কাকার জন্য। স্বর্গ নরক অবিশ্বাসী বিনয় কাকা যেখানে থাকুন ভাল থাকুন। শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়- চির বিদায় বিনয় কাকা।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৩ ভোর ৬:০১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×