somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও পাখি তুই কান্দিস না

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসার জন্য ভুবনবিখ্যাত তাজমহল গড়ার নজির রেখেছে মানুষ। কবি বলেছেন জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বাঁধার কথা। কিন্তু প্রিন্স আর প্রিন্সেসের ভালোবাসার মূল্য দেবে কে? মালিকানার দ্বন্দ্বে পড়ে ভেঙে যেতে বসেছে প্রিন্স আর প্রিন্সেসের ভালোবাসার সংসার।
প্রিন্স আর প্রিন্সেস খুবই দুর্লভ এক জোড়া ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখি। ওদের নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রিন্স পুরুষ ও প্রিন্সেস নারী। দুটি পাখির মালিক দুজন। ঘটনাক্রমে মিলন ঘটেছিল প্রিন্স আর প্রিন্সেসের। সংসারে তাদের বাচ্চাও এসেছে। বয়স ১৫, আর সংসার তিন বছরের। এখন গোল বেধেছে তাদের মালিকানা নিয়ে।
নির্বাহী হাকিমের নির্দেশে ৩ জানুয়ারি প্রিন্সকে নিয়ে যান তার মালিক। এই বিরহে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে প্রিন্সেস। অবশেষে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে তাদের সংসার রক্ষার বিষয়টি। আদালত গতকাল রোববার আরেক আদেশে ১০ জানুয়ারি বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে হাজির হয়ে শুনানিতে অংশ নিতে বলেছেন। কিন্তু তার আগে কি প্রিন্স-প্রিন্সেসের দেখা হবে না?
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী বরুণ বিশ্বাস বলছেন, মালিকদ্বয়ের বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রিন্স-প্রিন্সেস দম্পতিকে একত্রে অর্থাৎ আগের স্থানে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এরপর ১০ জানুয়ারি শুনানির দিন প্রিন্সকেও আদালতে হাজির করতে হবে।
তবে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানান, আদেশটি বোধগম্য না হওয়ায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে আজ সোমবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পুলিশের এই বক্তব্য খণ্ডন করে বরুণ বিশ্বাস বলেন, আদালতের রায় খুবই স্পষ্ট যে বিবাদীর জিম্মায় ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পাখিটি থাকবে। কিন্তু পুলিশ এর ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রিন্সেস খাওয়া বন্ধ করেছে। ওর কোনো ক্ষতি হলে এর দায় পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে বলেও জানান তিনি।
পাখি দুটির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরে সমঝোতা ও আপসরফার চেষ্টা করে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর কলাবাগান থানায় গত বছরের ১২ আগস্ট ও ৫ সেপ্টেম্বর পাখিটির মালিকানা নিয়ে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ এই বিরোধ নিষ্পত্তি করতে না পারায় দুই পক্ষই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
ঘটনা যেভাবে শুরু: সিঙ্গাপুর-প্রবাসী মোহাম্মদ ইকরাম সেলিম ১৯৯৭ সালে সিঙ্গাপুর থেকে একটি ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখি আনেন। এর নাম দেওয়া হয় প্রিন্স। তখন ওর বয়স ছিল তিন মাস। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে ইকরাম সেলিমের প্রায় এক বিঘা জমির ওপর বাড়িতে পাখিটি বিচরণ করত। একপর্যায়ে ইস্কাটনের বাড়ি বিক্রি করে বারিধারায় চলে যায় ইকরাম সেলিমের পরিবার। বিদেশে চাকরি, বাড়ি বিক্রি এবং নতুন বাড়ি তৈরির ঝামেলার মধ্যে পাখিটির যত্ন নেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, ভাড়া বাসায় প্রিন্স তীব্র স্বরে চিৎকার করছিল। ওই আঁটসাঁট পরিবেশ তার উপযোগী ছিল না। পরিচিত একজনের মাধ্যমে ইকরাম সেলিম হাতিরপুলে আবদুল ওয়াদুদের কাছে পাখিটি নিয়ে যান। তিনি পাখিটি লালন-পালনের অনুরোধ জানালে ২০১০ সালে ওয়াদুদ এই দায়িত্ব নেন।
গত প্রায় তিন বছর প্রিন্স ওয়াদুদের কাছেই ছিল। তিনি ওর সঙ্গী খুঁজে এনেছেন। জোড়া তৈরির জন্য প্রথমে একটি ম্যাকাও পাখি বিদেশ থেকে আনেন। কিন্তু সেটিও ছিল পুরুষ পাখি। জোড়া তৈরির বদলে পাখি দুটি সারাক্ষণ মারামারি করত। একপর্যায়ে নতুন পুরুষ পাখিটি মারা যায়। দ্বিতীয়বার আনা পাখিটিও ছিল পুরুষ। মারামারিতে সেটিও মারা যায়। তৃতীয়বার আনা ম্যাকাওটি ছিল নারী। তার নাম রাখা হয় প্রিন্সেস। এরপর তারা জোড়া বাঁধে। ম্যাকাও দম্পতির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়। ওরা ডিম দেয়। বাচ্চা ফোটে। ম্যাকাওয়ের বাচ্চা ফোটানোর এ ঘটনা বাংলাদেশে ছিল প্রথম। এরপর আরও চারটি বাচ্চা ফুটেছে।
আবদুল ওয়াদুদ জানান, বছর খানেক আগে ইকরাম তাঁর পুরুষ পাখিটি (প্রিন্স) ফেরত চান। জবাবে তিনি জানান, প্রিন্স-প্রিন্সেসের সংসার তিনি ভাঙতে দেবেন না। তা ছাড়া, এই পাখির পেছনে তিনি ১২-১৩ লাখ টাকা খরচ করেছেন। তিনি ইকরামকে পাখির বাচ্চা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু ইকরাম তাতে সম্মত হননি। ওয়াদুদ বলেন, ‘ইকরাম পাখিটি লালন-পালন করতে না পেরে আমাকে দিয়েছিলেন। আমি লালন-পালন করে, জোড়া বেঁধে ওদের বংশবিস্তার করানোর পর এখন পাখিটি ফেরত চাইছেন। আদালতের নির্দেশে প্রিন্সকে ফেরত দেওয়ার পর ওর সঙ্গী খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পাখি গবেষক হিসেবে আমি এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। এ জন্য আদালতের কাছে পাখির সংসার রক্ষার আবেদন জানিয়েছি।’
ইকরাম সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রিন্সকে লালন-পালন করতে দিয়েছি। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা না করে জোড়া তৈরি করেছেন। নয়-দশ মাস ধরে তিনি পাখিটি ফেরত দেবেন-দিচ্ছেন বলে ঘোরাচ্ছেন। এরপর বলছেন পাখির বাচ্চা নিতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিজ বাড়ি পরিবর্তন করে ভাড়া বাড়িতে ওঠায় এবং লালন-পালনের পরিবেশ না থাকায় আমি পাখিটি সরল বিশ্বাসে দেখভাল করতে দিয়েছিলাম। কথা ছিল, আমি চাইলে পাখিটি ফেরত দেবেন।’
ঢাকায় পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্লু গোল্ড ম্যাকাও পাখি জোড় বাঁধলে সাধারণত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকে। এদের আয়ু ৫০ থেকে ৬০ বছর। বাংলাদেশে কয়েক জোড়া পাখি আছে।
হাতিরপুলে আবদুল ওয়াদুদের মিনি চিড়িয়াখানায় পাখি দুটির দেখভাল করেন মো. মুকুল মিয়া। তিনি জানান, ওদের বাদাম, শসা, আঙুর, আপেল, গাজর, খেজুরসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। পাখির আচরণ সম্পর্কে মুকুল জানান, হাত মেলাতে বললে ওরা পা এগিয়ে দেয়। মাঝেমধ্যে খুব জোরে ডাকে। মানুষের কথা ওরা বুঝতে পারে।

Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×