এমন কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠান আছে যে, ঘুষ লাগে না?
কোনো কাজে সরকারী প্রতিষ্ঠানে গেলে তারা গুরুত্ব নিয়ে কাজ করে দেয়, অথচ ঘুষ খায় না- এটা আমাদের দেশে সম্ভব না। সেদিন চায়ের দোকানে একজনকে বলতে শুনলাম- সরকারী অফিসের দাড়োয়ান-পিয়ন থেকে শুরু করে এমন কেউ নাই যে ঘুষ খায় না! পত্রিকাতে প্রায়ই চোখে পড়ে- ''স্বাস্থ অধিদপ্তরের সীমাহীন দূর্নীতি, 'শিক্ষা অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হয়', 'ভূমি অফিসের ৩য় শ্রেনীর কর্মচারী কোটি কোটি টাকার মালিক', রাজউকের অমুকের ঢাকা শহরে চারটা বাড়ি' ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দূর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন। এর আগে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারী প্রতিষ্ঠানেই বেশি দূর্নীতি হয়। এক লাইনের একটা গল্প বলি-''এক পোকা আমের ভেতর থেকে বের হয়ে বলছে, ভাই ভাই আম খেতে কেমন?'' ভেবে দেখিন, যে পোকা থাকে আমের ভেতর সে প্রশ্ন করছে- আম খেতে কেমন? ঠিক তেমনি চারপাশে দূর্নীতি হচ্ছে। আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দূর্নীতি বন্ধ করা খুব কঠিন হবে। তবে আমার বিশ্বাস শেখের বেটি এটা পারবেন। পারা উচিত। দেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে দূর্নীতি বন্ধ করতেই হবে।
আজ দেখলাম ফার্মগেটে ফুটপাতে এক লোককে ঘিরে আছে বেশ কয়েকজন। লোকটা বিজ্ঞ লোকের মতোন চোখ-মুখ খিচিয়ে কথা বলছেন। সবাই হা করে তার কথা শুনছে। লোকটির কথা খুব মন দিয়ে শুনে তারা- দাত ব্যাথা, কোমর ব্যাথা, যৌন্য সমস্যার ওষুধ নিয়ে যাচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত, বেকার, বিদেশ যাওয়া নিয়ে সমস্যা, জমি নিয়ে সমস্যা, ইত্যাদ সমস্যাগ্রস্ত লোকদের পাথর সহ আংটি দিচ্ছে। আমরা সবাই জানি এসব ভাওতাবাজি। ১০০% ভাওতাবাজি। তবুও তাদের কাছে অসংখ্য মানুষ যায় আর প্রতারনার শিকার হয়। এরা গুলিস্তান, ফার্মগেট, কাওরানবাজার, গাবতলী, সদরঘাট ইত্যাদি এলাকায় রাজার হালে ব্যবসা করে। ধরে নিলাম সাধারন মানুষ বোকা তাই তারা ওদের কাছে যায়। আর প্রতারনার শিকার হয়। সরকার কেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না? অথবা সিটি করপোরেশন কেন ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না? যদি সরকার বা সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা নিতো তাহলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রতারনার হাত থেকে বাঁচতো। যুগ যুগ ধরে দুষ্টলোকেরা মানূষদের বোকা বানিয়ে কারি কারি টাকা কামাচ্ছে। খুব দুঃখ লাগে স্বাধীনতার এত বছরও এদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয় না। কিন্তু সরকারের উচিত এদের পাছায় মোটা লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে কারাগারে পাঠানো।
বিভিন্ন জায়গা দেখা যায়, বাসে, দেয়ালে লেখা থাকে 'জরুরী নিয়োগ' বিজ্ঞপ্তি। অমুক অমুক পদে জরুরী ভিত্তিতে সাতজন লোক লাগবে। কোনো অফিসের নাম- ঠিকানা লেখা থাকে না। শুধু মাত্র একটা মোবাইল নম্বর দেওয়া থাকে। এই মোবাইল নম্বরেই যোগাযোগ করতে বলা হয়। যারা চাকরি দিবে কেন তাদের অফিসের ঠিকানা থাকবে না? শুধু লেখা থাকে মিরপুর-১০ বাস স্ট্যান্ড, সায়দাবাদ ওভার ব্রীজের কাছে, গাজীপুর চৌরাস্তা। এইসব ভন্ডরা কোনো দিনও চাকরি দেয় না। বরং চাকরি দেবার নাম করে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। এই আধুনিক যুগে এসেও এরা এই ব্যবসা আরামে করে যাচ্ছে। কারন দেখার কেউ নেই, বলার কেউ নেই। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। কেন সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না? ফোন নম্বর তো দেওয়াই আছে। এদের গ্রেফতার করলে প্রতিদিন অসংখ্য লোক বেঁচে যায়। মানুষের চাকরি না থাকলে মানুষ পাগলের মতো হয়ে যায়। তখন এরকম বিজ্ঞাপন দেখলে মানুষের মাথা কাজ করে না। সে দৌড় লাগায়। ফলাফল শূন্য। যুগ যুগ ধরে এরা প্রতারনা করেই যাচ্ছে।
ফুটপাত দিয়ে আরাম করে হাঁটা যায় না।
দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। কত সরকার যায়-আসে। কত মেয়র যায় আসে। অথচ কেউ আজ পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পারলো না। এখন প্রতিটা অলি-গলিতে মাছ আর সবজির বাজার বসে নিয়মিত। পুলিশ এসে তাদের পাওনা নিয়ে যায় নিয়মিত। এদিকে চিপা গলির ভেতর সাধারন মানুষের ভোগান্তি চলে সারাদিন। কেউ দেখার নেই। কেউ কিচ্ছু বলার নেই। সমাধানের জন্য যদি পুলিশ দিয়ে সম্ভব না হয় তাহলে আর্মি নামানো হোক, তবু সুন্দর ফুটপাত চাই। পুলিশ হকারদের কাছ থেকে টাকা না খেলেই ফুটপাত পরিস্কার রাখা সম্ভব। সিটি করপোরেশন অফিসে ট্রেড লাইসেন্স করতে গেলে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা এক্সট্রা দিতে হবেই। যুগ যুগ ধরে এই নিয়ম চলছে। কোনো মেয়র এর সমাধান করতে আজও পারেনি। পাসপোর্ট করতে গেলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য টাকা লাগবেই। টাকা না দিয়ে কোনো উপায় নাই। এটা আজও বন্ধ হয়নি। কেউ পারলো না এটা বন্ধ করতে। সরকারী হাসপাতাল থেকে আজও দালাল দূর হলো না। অথচ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে চলে গেছে। ভিআইপিদের জন্য রাস্তায় আটকে থাকতে হয় লম্বা সময়- স্বাধীনতার এত বছর পরও এর সমাধান হলো না। জনগনের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।
আসলে আমাদের দেশে সমস্যার শেষ নেই।
সমস্যা গুলো বলতে শুরু করলে- শেষ হবে না। আলিফ-লায়লার গল্পের মতোন চলতেই থাকবে। প্রতিদিন সকালে লক্ষ লক্ষ অফিসগামী লোকদের অফিসে যাওয়ার জন্য বাসে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। আবার বাসায় ফেরার পথে যুদ্ধ। কে রাখে এই খবর? বাজারে গেলে যুদ্ধ করতে হয়। খাদ্যে ভেজাল অব্যহাত আছেই। সব কিছুই আজকাল নকল হয়। তেল থেকে শুরু করে স্লো পাউডার, ক্রীম, শ্যাম্পু- কোনো কিচ্ছু বাদ নেই। বিশেষ করে হোটেল গুলোতে পচা মাছ আর সবজী রান্না হয়। রাতের অন্ধকারে মহিষ হয়ে যায় গরু। ভেড়া হয়ে যায় ছাগল। মানুষ বাধ্য হয়েই হোটলের খাবার খায়। এসব বিষয়ে নজর দেওয়ার কেউ নেই। বছরের পর বছর ধরে চলছে এসব অনিয়ম। এসবের স্থায়ী সমাধান কি কোনোদিন হবে? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? সমস্যা গুলো দূর করার দায়িত্ব কে নিবে? সত্যিকার অর্থে দেশ উন্ননের মহাসড়কে চলে গেলেও আমরা দেশের সাহদারন জনগণ ভালো নেই। আমরা বাসে দুঃখী, বাজারে দুঃখী, অফিসে দুঃখী, রাস্তায় দুঃখী, খাওয়ায় দুঃখী, এমন কি আমরা প্রেম-ভালোবাসায়ও দুঃখী। সব জায়গায় একজন আরেক জনকে ঠকানোর জন্য ওৎ পেতে বসে আছে। তাহলে কি এই দেশে জন্ম নেওয়াটাই আমাদের পাপ?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:০২