প্রথমেই বলে নিই- আমি আমার দেশটাকে অনেক ভালোবাসি।
বাংলাদেশ নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। ৭১ সালে আমরা পেরেছি। এখন কেন আমরা পারো না। কেন সব কিছু থেকে পিছিয়ে পড়বো। এর জন্য দায়ী কারা? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একবার খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ''সবাই পেয়েছে তেলে খনি, সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরে খনি''। আমাদের দেশে যে সম্পদ আছে- সেই সম্পদ দিয়ে সমস্ত দেশের মানুষ সুন্দরভাবে তিনবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে। কি সুন্দর আমাদের দেশ! তবে কেন আজ দেশের এই অবস্থা? এই আধুনিক যুগে এসেও কেন আজকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়ে? দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে তবে কেন আজও মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। একজন মা তার সন্তানকে কোলে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে? সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে বড় বড় পদে যারা আছে- সব শালা চোর হ্যায়। পাজারো গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়। স্বপরিবারে বিদেশ ঘুরে আসে। আর সামান্য মসজিদ থেকে জুতা চোর বা পকেটমারকে স্তাহে সাথে দশজনে মিলে মেরে ফেলে। বড় বড় চোরদের সালাম দেয়।
খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, পাল্টা হামলা, আইনের অপব্যবহার, বেকারত্বসহ রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার অপব্যবহারে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ। আর এগুলোই আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা। বছরের পর বছর একই অবস্থা। কোনো আশার আলো নেই। অথচ এবং আল্লাহর রহমতে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে চলে গেছে। বাংলাদেশের মানূষদের বিবেক নেই। অতি ভালো একজন মানুষ রাস্তায় বের হলে নিষ্ঠুর হয়ে যায়। নোংরা মনের অধিকারী হয়ে যায়। একজন ভদ্র শিক্ষিত মানুষ রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হলে অমানূষ হয়ে যায়। সে অযথা হর্ন দিবে। ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দিবে আর এই কাজ করতে তাদের একটুও লজ্জা হয় না। তাদের দেখে আমার লজ্জা হয়। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি- ''হে প্রভু তো ওদের মানুষ বানাও''। সভ্য ভদ্র আর মানবিক বানিয়ে দাও। অনিয়মটাই দেশের নিয়ম হয়ে গেছে। এমন ভাব তাদের যেন অনিয়ম করাটাই বিরাট বাহাদুরি। দাদা, নানার মুখে শুনেছি একসময় আমাদের দেশের মানুষ কত সহজ সরল ভালো মানুষ ছিলেন। আর এখন ভয়ানক জটিল আর কুটিল। সামান্য একজন সরকারী পশু হাসপাতালের ডাক্তারও কোটি কোটি টাকার মালিক।
প্রতি বছর একবার করে অবৈধ স্থপনা, ফুটপাত ও নদীর পাড় উচ্ছেদ অভিযান চলে। পত্রপত্রিকায় খুব লেখালেখি হয়। এরপর সারা বছর আর কোনো খোঁজ খবর নাই। আবার দখল। এই দখলটা কারা করে। সরকার দলীয় লোকজনই করে। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গে। অসংখ্য গ্রাম ডুবে যায়। কিছু লোকজন হায় হায় করে। নদীতে ঘর বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করে। সরকার সমবেদনার কথা বলে টিভিতে। ব্যস এই পর্যন্ত। আজ পর্যন্ত কোনো সরকার নদী ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী সমাধান নিলো না। কিন্তু নেতাদের কত বড় বড় কথা! গত দশ বছরে স্বাস্থমন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী, রেল মন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী দেশের জন্য কি কি কাজ করেছে? এই হিসাব কেউ রেখেছে? সরকারী হাসপাতাল থেকে আজও দালাল দূর হলো না। আজও সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় রোগী শুয়ে থাকে। এই ঢাকা শহরের নগর পিতা। তিনি কি কি উন্নয়ন করলেন নগরের? ফুটপাত ভাঙ্গা। ফুটপাত দখল। কিছু দিন পর পরই চলছে খোড়াখুড়ি। একবার তিতাস, একবার ওয়াসা, একবার সিটি করপোরেশন। এক রাস্তা তিন বার চার বার ভাঙ্গা হয়। সমন্বয়ের বড্ড অভাব। ভাঙ্গা রাস্তা ঠিক করা হয় না, বছরের পর বছর। অথচ ভালো রাস্তা, আবার নতুন করে করা হয়। ভালো ফুটপাত ভেঙ্গে আবার নতুন করে করা হয় অথচ ভাঙ্গা ফুটপাত বছরের পর ঠিক করা হয় না।
ঢাকা শহরে যতো জলাভূমি ছিল গত ৪০ বছরে তার ৭৫ শতাংশ হারিয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনী লোকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এরা কিভাবে ধনী হলো সেই খোঁজ কেউ নিয়েছে? খোঁজ নিলে নিশ্চয় জানা যাবে এই সমস্ত ধনীরা সরকারের কাছের লোকজন। অথবা ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়ায় থাকা লোকজন। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো উন্নত দেশে কিভাবে পূরণ করা হচ্ছে? আমাদের দেশে ধনী আরো ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্ররা হচ্ছে দরিদ্রতর। এই অবস্থায় মধ্যবিত্তের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। অতি ধনীরা সরকারেরই সৃষ্টি, সরকার তাদের সৃষ্টি করছেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। পুঁজিবাদী শোষণের এটাই নীতি। বাংলাদেশের বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি। দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে অনেকেই প্রায়ই বলে, ‘আমি অমুক দলের নেতা, আমি অমুক পদপ্রাপ্ত, আমার বাবা অমুক দল করে। গ্রামের মাথারাও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের জিম্মি করে রাখে। আসলে, রাজনীতি করা মানুষদের ক্ষমতার দাপট দেশ ও দশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫১