somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

মেয়েটা মায়াবতী ছিল

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিকেল প্রায় শেষ। সন্ধ্যা নেমেছে। আকাশ ভরা মেঘ।
কাওরানবাজার থেকে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছি। প্রচন্ড মাথা ধরেছে। খুব চেষ্টা করলাম মাথা ধরাকে পাত্তা না দিতে। পাত্তা না দেওয়ার কারণে মাথাধরা যেন আরও বাড়ল। মাথাধরা কমানোর জন্য আমি একটা ওষুধের দোকানে ঢুকে পড়লাম। চারটা নাপা কিনব। দু'টা খেয়ে দু'টা ভবিষ্যতের জন্য পকেটে রেখে দিব।

দীর্ঘদিনের অভ্যাস যে-কোনো দোকানে ঢোকার আগে দোকানের নাম পড়ি। মাঝে মাঝে সুন্দর সুন্দর নাম চোখে পড়ে। তখন বেশ মজা লাগে। একবার নিকুঞ্জ'তে একটা স্টেশনারি দোকানের নাম পেয়েছিলাম- 'ফেসবুক'। আরেকবার মিরপুরে একটা রেস্টুরেন্টের নাম পেয়েছিলাম- 'শ্বাশুড়ির দোয়া'।

যাই হোক, ফার্মেসিতে ঢোকার আগে চট করে নামটা দেখে নিলাম। নামটা বেশ অদ্ভুত 'সরস্বতী' ড্রাগ হাউজ। সাইন বোর্ডে হাস্যমূখী সরস্বতী'কে হাসের উপর বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে আবার তানপুরা। বিদ্যার দেবী মনে হয় গান-বাজনাতেও পারদর্শী।

চারটা নাপা'র দাম আট টাকা। মাথাধরা নামক অতি যন্ত্রনাদায়ক রোগের জন্য খুব সস্তা চিকিৎসা। দোকানদারকে পানি দিতে বললাম। সে পরিস্কার গ্লাসে পানি এনে দিল। সাথে সাথে দু'টা ট্যাবলেট খেয়ে নিলাম। ওষুধের দাম দিতে গিয়ে আমি প্রচন্ড অবাক। মানিব্যাগ নেই। পকেটমার হয়নি জানি। সকালে ভুলে বাসায় রেখে এসেছি। ওষুধ দু'টা গিলে না ফেললে ফেরত দেয়া যেত। খুব লজ্জার মধ্যে পড়লাম। কী করবো বুঝতে পারছি না। এদিকে দোকানদারটা যেন কেমন-কেমন করে তাকাচ্ছে।

ফার্মেসীর ভেতরে ছোট্র একটা ঘর। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মেয়ে ব্যাপারটি লক্ষ করছিলেন। মেয়েটি একটুও সাজেনি, সাজ বলতে শুধু চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। তাতেই মেয়েটাকে দারুন সুন্দর লাগছে। মেয়েটি এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলল, আপনি একটু এদিকে আসবেন? আটটা টাকার জন্য কঠিন কিছু কথা শুনতে হবে কিনা বুঝতে পারছি না।

আমি মেয়েটির ঘরে ঢুকলাম এবং খুব বিনীতভাবে বললাম, সিস্টার এই মুহূর্তে ট্যাবলেটের দাম দিতে পারছি না। কাল সকালে এসে দিয়ে যাব। প্লীজ ট্রাই টু আন্ডারসটেন্ড।

মেয়েটি সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে বলল, আমি একজন ডাক্তার। সামান্য চারটে ওষুধের দাম দিতে না পারায় আপনি এ-রকম করছেন? ভাই, আপনি আরও দুই পাতা ট্যাবলেট নিয়ে যান। এর দাম আপনাকে দিতে হবে না। আর শুনুন আপনি আমার সামনের চেয়ারটায় বসুন। চা দিতে বলছি, গরম চা খান, মাথা ধরাটা কমবে।

বাচ্চা একটা মেয়ে, বলে কিনা সে ডাক্তার! আমি ডাক্তারের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম! দিনকাল পালটে গেছে, প্রিয়জনদের কাছ থেকেই ভালো ব্যবহার পাওয়া যায় না, আর এই মেয়ে নিতান্ত'ই অপরিচিত একজন। আমি বললাম, আপনার নামটা জানতে পারি?
ডাক্তার মেয়েটি বলল, অবশ্যই জানতে পারেন। আমার এমনই নাম যে একবার শুনলে জীবনেও ভুলবেন না। আমার নাম- 'বালি'।
আমি অবাক হয়ে বললাম, বালি?
ডাক্তার মেয়েটি বলল, হ্যাঁ বালি। দুষ্ট করছি না। আসলেই আমার নাম বালি। আমার জন্ম হয়েছিল- ইন্দোনেশিয়ায়। আমার ভালো নাম অহনা।

আমি অহনা'র দিকে খুব মন দিয়ে তাকালাম। কি সুন্দর গায়ের রঙ, চোখ, মুখ! বয়স ২২/২৩ এর বেশি হবে না। মাথা ভরতি চুল ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। দেখতে ভালো লাগছে।
অহনা- বলল, আপনার মাথাধরার অবস্থা কী?
আমি বললাম, একটু কমেছে।
অহনা বলল, এক মিনিটের জন্য চোখটা বন্ধ করবেন?
আমি বললাম, কেন?
আপনার কপালে আর চোখে একটা মলম লাগিয়ে দিব। চীন দেশের মলম। নাম ড্রাগন মলম। লাগাবার তিন মিনিটের মধ্যে মাথা ধরা চলে যাবে।
আমি চোখ বন্ধ করলাম। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। মেয়েটি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে চোখের পাতায় আর কপালে মলম লাগিয়ে দিল। খুব আরামদায়ক ম্যাসেজ। মুহূর্তের মধ্যেই আমার তন্দ্রাভাব এলো। এবং ম্যাজিকের মতো মাথা ব্যাথা ভেনিশ হয়ে গেল।

চা এলো। চায়ের সাথে নান রুটি আর শিক কাবার। খাবার দেখে মনে পড়লো দুপুরে কিছু খাইনি। যেহেতু আমি খুব ছোট মাপের মানুষ, এই রকম আদর আপ্যায়নে অভ্যস্ত নই। তাই কিছুটা অস্বস্থি লাগলো।

আমি খেতে খেতে ডাক্তার অহনার ঘর খুটিয়ে- খুঁটিয়ে দেখছি। সুন্দর করে সাজানো ঘর। পায়ের নীচে নরম কার্পেট। দেয়ালে একটা বাঁধাই করা ছবি। ছবিটা নিশ্চয়ই অহনার ছোটবেলার। ফ্রক পরা অহনা দুইহাত দিয়ে একটা বারবি পুতুল বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। টেবিলের উপর দু'টা বই। একটার নাম 'হিউম্যানিজন' আরেকটার নাম- তিথিডোর। দু'টা বই'ই আমার পড়া।

If you never have a dream,
You will never have a dream.
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:৪০
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×