মেয়েকে নিয়ে Aloha ক্লাশে যাচ্ছি।
সপ্তাহে দুই দিন ক্লাশ। একদিন সুরভি নিয়ে যায়। একদিন আমি নিয়ে যাই। রিকশা করে বাপ বেটি যাচ্ছি। পরী পাশে থাকলে দুনিয়ার কোনো চিন্তা আমার মাথায় থাকে না। কুটিল জটিল দুনিয়াটাকে বেশ ভালো লাগে। পরী দুই হাত নেড়ে নানান রকম গল্প করছে। আমি মেয়ের গল্প মুগ্ধ হয়ে খুব মন দিয়ে শুনছি। বারবার মনে হয় জীবনটা অনেক আনন্দময়।
হঠাত পরী বলল, আমি একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করি?
আমি বললাম, কর।
পরী বলল- ধরো, তুমি দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট বিস্কুট কিনলে। প্যাকেটের উপর যে জিনিসটা ফ্রি লেখা ছিল সেটা দোকানে থাকা স্বত্তেও দোকানদার তোমাকে দিলো না। তুমিও কিছু বললে না। জিনিসটা কি?
মেয়ের ধাঁধা শুনে আমি অবাক! এই ধাঁধা পরী কোথা থেকে শিখলো?! অদ্ভুত সব ধাঁধা পরী প্রায়ই জিজ্ঞেস করে। আমি ধাঁধার উত্তর দিতে পারি না।
আসলেই সারাদিন পরী ভীষন ব্যস্ত।
মেয়ের সাথে আমার গল্প'ই করা হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কুলে চলে যায়। স্কুলে দূরে। সেই গুলশান- ১। স্কুল থেকে রাস্তার জ্যাম পার হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যায়। দুপুরে ভাত খেয়ে যায় Aloha ক্লাশে। এমন কি ছুটির দিনেও মেয়েকে পাই না। শুক্রবার, শনিবার থাকে তার শিশু একাডেমি। সন্ধ্যায় যায় আরবী ক্লাশে। আর বাসায় যেটুকু সময় থাকে স্কুল, শিশু একাডেমি আর Aloha ক্লাশের হোমওয়ার্ক করতে করতেই সময় শেষ। গল্প'ই করা হয় না। তাই রিকশায় করে Aloha ক্লাশ পর্যন্ত যাওয়াটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। কিন্তু অল্প একটু রাস্তা। কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
আজ পরীকে নিয়ে বের হয়েছি।
রিকশায় করে যাচ্ছি। মেয়ে নানান গল্প করছে। হঠাত মেয়ে বলল- দেখো, লোকটার শার্ট কত জায়গা দিয়ে ছেঁড়া। আমি ভালো করে রিকশাওয়ার শার্টটা লক্ষ করলাম। আসলেই অনেক জায়গা দিয়ে লম্বা করে ছেঁড়া। রিকশাওয়ালাদের শার্ট ময়লা থাকে, বা শার্ট ছোট থাকে অথবা ছেঁড়া থাকলেও এত জায়গা দিয়ে ছেঁড়া থাকে না। আমার এবং মেয়ের বেশ মন খারাপ হলো। আমি মেয়েকে Aloha ক্লাশে দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বললাম- আমার মোবাইল নম্বরটা রাখো। সন্ধ্যায় বাসায় এসো। আমি তোমাকে কয়েকটা শার্ট দিবো।
রিকশাওয়ালা খুব খুশি হলো।
সন্ধ্যা হবার আগেই রিকশাওয়ালা আমাকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলো।
আমি বললাম, এত বার ফোন দিচ্ছো কেন?
আমি তোমাকে বলেছি সন্ধ্যায় বাসায় আসতে। তাছাড়া আমার বাসা তুমি চিনো। আমার বাসার সামনে থেকেই তো তোমার রিকশায় উঠলাম।
যাই হোক, সন্ধ্যায় রিকশাওয়ালা আবার ফোন দিলো।
আমি বললাম, বাসার সামনে এসেছো?
জ্বী, এসেছি।
আমি বাসা থেকে বের হয়ে দেখি কোনো রিকশা নেই।
আমি ফোন দিলাম। বললাম, তুমি তো বাসার সামনে নেই।
রিকশাওয়ালা বলল, স্যার আপনার বাসা হারায়ে ফেলছি। মনে করতে পারছি না।
আমি বললাম, তুমি কোথায় আছো বলো? আমিই আসছি।
গিয়ে দেখি রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে তিনটা শার্ট দিলাম। শার্ট পেয়ে খুব খুশি হলো।
শার্ট তিনটাই নতুন।
কালার পছন্দ না হওয়াতে আমার পড়া হয়নি। প্রায় এক বছর ধরে ঘরে পড়েছিল। তাই রিকশাওয়ালাকে দিয়ে দিলাম। শার্ট হাতে নিয়ে রিকশাওয়ালার চোখ মুখ আনন্দে ঝলমল করে উঠল। রিকশাওয়ালার আনন্দ দেখে আমার নিজেরই খুব ভালো লেগেছে। রাত এগারোটায় রিকশাওয়ালা আমাকে আবার ফোন দিলো। বলল, শার্ট তিনটা তার খুব পছন্দ হয়েছে। এত দামী শার্ট সে কখনও পড়েনি। আমার প্রতি সে খুব খুশি। এবং তার গায়ে শার্ট গুলো খুব মানিয়েছে। সে আমকে এক কাপ চা খাওয়াবে। চা আমাকে খেতেই হবে। অন্য কোনো উপায় নাই। যদি চা না খাই তাহলে এই শার্ট সে কোনো দিন পড়বে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১২