আমাদের সামু ব্লগের ব্লগার পদাতিক চৌধুরী।
তার ভালো নাম তাইমূর চৌধুরী। দাদা সময় সুযোগ পেলেই তার পরিবার নিয়ে খুব ঘুরে বেড়ান। তার ছেলের নাম শ্রন্থন (মেঘ)। খুব সুন্দর নাম। শ্রন্থন চমৎকার কবিতা লিখে। দাদার চমৎকার সুখী পরিবার। প্রায় দুই বছর ধরে দাদা সামুতে আছেন। ব্লগে চমৎকার নিরপেক্ষ মন্তব্য করেন। তার মরীচিকা নামের ধাবাহিকটি ব্লগে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মরীচিকা অলরেডি ৩২ পর্ব লিখে ফেলেছেন। দাদা থাকেন পশ্চিম বঙ্গের বারাসাত এলাকায়। অতি সজ্জন ব্যাক্তি। সামু ব্লগেই তার সাথে আমার পরিচয়। আমি কোলকাতা যাওয়ার আগেই দাদাকে জানিয়ে রেখেছিলাম। ঢাকা থেকে কোলকাতা আসার সময় বাস বারাসাত দিয়েই আসে। আমাদের বেনাপোল থেকে বারাসাতের দূরত্ব ৫৮ কি মি। বনগাঁ রেলস্টেশন বারাসাতের কাছেই। বারাসাত থেকে কোলকাতা আসতে হলে লোকজন সাধারন ট্রেনে করেই আসে। বারাসাতের জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ।
ইন্ডিয়ার বর্ডারে পা রাখা মাত্র দাদার ফোন।
পাঁচ দিনে প্রচুর ম্যাসেজ দিয়েছেন। ফোন দিয়েছেন। নানান রকম দরকারী তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন। তার ওখানে যাওয়ার জন্য, থাকার জন্য খুব বলেছেন। বারবার বলেছেন। কিভাবে আসবো বিস্তারিত সব বলেছেন। অসংখ্য বার বলেছেন। খুব আন্তরিকতার সাথেই বলেছেন তার কাছে যাওয়ার জন্য। আমার দূর্ভাগ্য দাদার বারাসাতে যেতে পারি নি। তবে মিথ্যা বলব না, আমার ইচ্ছা ছিল যাওয়ার। খুব ইচ্ছা ছিল। এমন কি দাদা যতবার বলেছে আসার জন্য- আমি বলেছি, জ্বী দাদা আসবো। আমি অবশ্যই যেতাম। কিন্তু ব্যাটে বলে লাগে নি। সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। তবে দাদাকে আমি বুঝিয়ে বলেছি। আশা করি উনি রাগ করেন নি। দাদা সহজ সরল ভালো মানুষ। আমার ধারনা দাদা তার স্কুলে একজন সেরা শিক্ষক। জনপ্রিয় শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীরা তাকে অনেক পছন্দ করেন। দাদা আমাকে এবং সুরভিকে অবাক করে দিয়ে বারাসাত থেকে কোলকাতায় চলে এলেন। শুধু মাত্র আমাদের সাথে দেখা করার জন্য। বারাসাত থেকে কোলকাতা দূরত্ব অনেক।
দাদার পরিবার।
দাদা যখন এলেন-
বিকেল প্রায় তখন শেষ। নিউ মার্কেটে বিরাট ভিড়। হাজার হাজার মানুষ চারিদিকে। দাদা ক্লান্ত। কারন দাদা তার স্কুলে ক্লাশ নিয়ে তারপর বারাসাত থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ এবং শিয়ালদহ থেকে বাসে নিউ মার্কেট। সুরভি আর আমি নিউ মার্কেটে কেনা কাটা করছিলাম তখন। নিউ মার্কেটে এত এত মানুষের ভিড়ে দাদা এবং আমি দুজন দুজনকে মুহুর্তের মধ্যে চিনে ফেললাম। যেন আমাদের বহুবার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে আগে। দাদা আমাকে দেখেই খুব মিষ্টি একটা হাসি দিলেন। হাসি দেখেই মনটা ভরে গেল। আমি সুরভির সাথে দাদার পরিচয় করিয়ে দিলাম। দাদা বললেন, পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার নেই। আপনাদের ব্লগের সবাই চিনে। যাই হোক, আমার চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছিল। আমাদের যেখানে দেখা হলো, তার পাশেই একটা চায়ের দোকান ছিল। দাদা তিনটা চায়ের অর্ডার দিলেন। অর্ডার দেওয়ার আগে বললেন, সামনে এক দোকানে ভালো বিরানী হয় সেখানে আমরা বিরানী খেতে যাবো।
আমরা চা খেলাম মাটির ভাড়ে।
খুব ভিড়। ঠিকভাবে দাঁড়ানো যাচ্ছিলো না। দাদা আমাদের এক মার্কেটের ভিতরে নিয়ে গেলেন। সেখান ভিড় বেশ কম। সেখানে দাঁড়ি প্রায় এক ঘন্টা আমাদের তুমুল আড্ডা হলো। দাদা তার পরিবারকে নিয়ে এই মার্কেটেই কেনাকাটা করেন। দাদা হাসি খুশি প্রানবন্ত মানুষ। কোনো অহংকার নেই। দাদার সাথে কথা বলে মনেই হলো না যে আজই তার সাথে প্রথম দেখা। সুরভিও দাদার সাথে অনেক কথা বললেন। তারপর আমরা নানান রকম কথা বলতে বলতে নিউ মার্কেটের অনেক রাস্তা এলোমেলো হাঁটলাম। নিউ মার্কেটে যত খাবার পাওয়া যায় তার সব গুলো খাওয়ার জন্য দাদা আমাদের খুব অনুরোধ করেছেন। কিন্তু খেতে পারি নি। কারন সেদিন দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম বিকেলে। তাই পেট ছিল ভরা। ভরা পেটে তো কিছু খাওয়া যায় না। যাই হোক, অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে। দাদার আবার সেই বারাসাত ফিরতে হবে। অনেক দূর। আমি বললাম, দাদা আমাদের বিদায় দেন। অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে আপনার। আপনি অনেক দূর যাবেন। তারপর আমি আর সুরভি দাদাকে হাসি মুখে বিদায় দিলাম। এবং কথা দিলাম, এরপর কোলকাতা এলো অবশ্যই বারাসাত উঠবো। হোটেলে উঠবো না। দাদা চলে যাবার পর সুরভি বলল, তাইমূর দাদা তো খুব ভালো। চমৎকার মানুষ।
আজ লেখা এখানেই শেষ করছি।
যদিও লেখার অনেক কিছু আছে। দাদার সাথে দুই আড়াই ঘন্টা আড্ডা হয়েছে। আমার হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ ছিল। দাদা হুট করে একটা বড় ব্যাগ কিনে ফেললেন। তারপর বললেন, এটার ভিতরে সব গুলো পেকেট রাখুন। এক ব্যাগে সব পেকেট হয়ে গেল। ব্লগারদের জানিয়ে রাখি। দাদা বারাসাতে বাড়ি করছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে তার বাড়ি কমপ্লিট হয়ে যাবে আশা করি। মোবাইল বের করে দাদা তার বাড়ির ডিজাইনও দেখিয়েছেন। চমৎকার নকশা। বাড়িটি সেই রকম হবে। ও আরেকটা কথা ভুলে গেছি দাদার ছেলে মেঘ আমাদের অপেক্ষায় ছিল। আমাদের দাদার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। অথচ মেঘের সাথে দেখা হলো না। সুভ্রা ভাবীর সাথেও দেখা হলো না। ভাগ্য এতটাই খারাপ যে, কোলকাতা থেকে ঢাকা ফেরার পথে আমাদের বাস বারাসাত দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। দাদা বারাসাতে অর্কিড রেস্টুরেন্টে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অথচ আমাদের বাস গেছে অন্য জায়গা দিয়ে। রাস্তার জ্যামের কারনে। দাদা, শুভ্রা ভাবী আর মেঘ ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুক এই কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০৬