ঈশ্বর মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে কানে কানে বলে দিয়েছেন, বাবারা লাইনে থাকিস। আর মানিয়ে চলিস। যত দ্রুত মানিয়ে চলা শেখা যায় তত শান্তি। সমাজে বাস করতে হলে- সঠিক লাইনে থাকতে হয়, মানিয়ে চলতে হয়। বাপ ছেলেকে মানিয়ে চলে, প্রেমিক প্রেমিকাকে মানিয়ে চলে, অফিসে সহকর্মীর সাথে মানিয়ে চলতে হয়। লাইনে থাকতে হয়। মানুষের জীবনটাই মানিয়ে চলার জীবন।
মাঝে মাঝে মনে হয়, বোধহয় ঈশ্বর চান না সব মানুষ ভালো থাকুক। সুখ শান্তিতে জীবন যাপন করুক। মানুষকে দুঃখ কষ্ট আর অশান্তিতে না রাখলে তার ভালো লাগে না। মানুষ ভালো থাকলে, শান্তিতে থাকলে ঈশ্বরের কথা ভাববে না, তাই হয়তো- ঈশ্বর মানুষকে দুঃখ-কষ্ট দিয়ে ভরে রাখে। দিন শেষে ঈশ্বরেরও অনেক কিছু মানিয়ে চলতে হয়।
এই সমাজে নারী জাতি সবচেয়ে বেশি মানিয়ে চলতে জানে। তবে, আশার কথা হচ্ছে এ যুগের মেয়েরা বুদ্ধিমতী ও প্রতিবাদী। বিয়ের পর ছেলেমেয়ে দু'জনকেই মানিয়ে চলতে হয়। একজন আরেকজনের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি না থাকলেও সমাজের ভয়ে মানিয়ে চলতে হয়। সন্তান দুনিয়াতে এলে তার সাথেও মানিয়ে চলতে হয়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, পরিচিত-অপরিচিত, অফিস, ফেসবুক, ব্লগ সব কিছু মানিয়ে চলতে হয়।
রাজনীতিবিদদের সবচেয়ে বেশি লাইনে থাকতে হয়। তাদেরও মানিয়ে চলতে হয়। প্রতিটা মানুষকে ঘরে বাইরে, অফিস আদালতে, বাসে, ফুটপাতে সব জাগায় মানিয়ে চলতে হয়। মানিয়ে চলতে চলতে মানুষের জীবন শেষ। বড় বড় জ্ঞানী ব্যাক্তিরা বারবার বলে গেছেন, বাবা'রা লাইনে থাকিস। মানিয়ে চলিস। তবেই জীবনে সুখ শান্তি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ধরে নিলাম, একজন মানুষ বড়জোর সত্তর বা আশি বছর বাঁচে। আশি বছর কিন্তু খুব বেশি সময় না। আশি বছরে রোজার ঈদ পাওয়া যাবে আশিটা, জন্মদিন পাওয়া যাবে উনআশিটা। মরে যাবার পর আমাদের আর পৃথিবীতে থাকা সম্ভব না। এটাই চরম সত্য। অথচ এই ছোট্র জীবনে কত ঝামেলা আর সমস্যা আমাদের। কত অশান্তি। লেখাপড়া, ডিগ্রী, চাকরী, সাফল্য, বিয়ে, চিকিৎসা, মামলা, হুমকি-ধামকি আরও কত কি!
সমস্যা হলো, কেউ মানতে চায়, কেউ বুঝতে চায়- একদিন আমি থাকবো না। কেউ মারা গেছেন, তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কবর দিতে, এই দৃশ্য দেখেও আজকাল মানুষ ভাবে না আমাকেও এভাবে চলে যেতে হবে। হাতে সময় খুব কম। তাই শুদ্ধ হই, ভালো হই। স্বচ্ছ আর পবিত্র হই। পৃথিবীতে থাকা স্বল্প সময়টুকু মানিয়ে চলি, লাইনে থাকি।
আমরা বেড়াতে চাই দেশে বিদেশে। অথচ আমরা ভাবি না, মাত্র আশি বছরের জন্য আমরা পৃথিবীতে বেড়াতে এসেছি। বিদেশে বেড়াতে গেলে, ভিসার মেয়াদ শেষ হলে চলে আসতে হয়। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের ভিসা শেষ হলে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই দুনিয়াতে ভিসা থাকা অবস্থায় ঈশ্বরের উপদেশ গুলো মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবেই মানিয়ে চলা সম্ভব। লাইনে থাকা সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৩