পার্কে প্রথম দিন।
বেশ কিছুদিন ধরে আমি অসুস্থ।
নিজের অসুস্থতার কথা বলতে ভালো লাগে না। তাই বাসার কেউ জানে না। গ্যাস্ট্রিক চরম আকার ধারন করেছে আমার। গ্যাস্ট্রিক মনে হয় বাংলাদেশের সবারই আছে। এটা জাতীয় রোগ। আমার ধারনা আমার গ্যাস্ট্রিক ছাড়িয়ে আলসারে পরিনত হয়েছে। গত দশ দিন ধরে কিডনী যেখানে থাকে সেখানে ভীষন ব্যথা। দুই কিডনীতেই ব্যথা। চোখ মুখও বেশ ফুলে গেছে। পরশু রাতে এমন ব্যাথা শুরু হলো! সাথে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা দিলো। মনে হচ্ছে পেটের ভেতরের খাবার গুলো গলার দিকে কিক মারছে। গলা বুক জ্বলছে ভীষন। সাথে কিডনীর কাছে ব্যথা তো আছেই। ঠিক মতোন নিঃশ্বাসও নিতে পারছিলাম না। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পাশেই সুরভি গভীর ঘুমে। বেচারি ঘুমাচ্ছে। আরাম করে ঘুমাক।
মনে হচ্ছিল আমার সময় শেষ।
মরে যাচ্ছি। ভাবলাম সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিই। হাতে সময় বেশি নেই। তখন রাত সাড়ে তিনটা। ঘরের দুরজা খুলতেই সুরভি বলল, কই যাও? আমি বললাম, কোথাও যাই না। এমনি। সুরভি কঠিন গলায় বলল, চুপ করে ঘুমাও। অনেক জ্বালাতন করো তুমি। আমি একটা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে বিছা্নায় এলাম। সুরভি ভেবেছে আমি সিগারেট খেতে ছাদে যাচ্ছিলাম। বোকা মেয়েছেলে। রসিকে মনে করে সাপ। স্বামী মরে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নাই। চোখে ঘুম নাই আমার। শুধু এপাশ আর ওপাশ করছি। মনে মনে ভাবছি সকাল পর্যন্ত যদি বেচে থাকি তাহলে সকালেই ডাক্তারের কাছে যাবো। অসুখকে আর অবহেলা করবো না। ভালো একজন ডাক্তার দেখাবো। ভিজিট বেশি নিক সমস্যা নাই। আরো কিছু দিন বেচে থাকাটা আমার জন্য খুব দরকার।
শেষ কবে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি আমার মনে নেই।
আমি একেবারেই ডাক্তারের কাছে যাই না। গত দশ বছরে কোনো ডাক্তার দেখাই নি। ছোট খাটো সমস্যা হলে ফার্মেসীকে থেকে ওষুধ এনে খেয়েছি। অবশ্য দাতের ডাক্তারের কাছে বেশ কয়েকবার যেতে হয়েছে। যাই হোক, সকাল পর্যন্ত বেচে গেলাম। ধন্যবাদ ঈশরকে। বাসা থেকে বের হলাম- ডাক্তারের কাছে যাবো। কিন্তু চলে গেলাম রমনা পার্কে। পার্কে গিয়ে বেশ ভালো লাগলো। অনেকক্ষন হাটলাম। পার্কে বেশ কিছু কুকুর দেখলাম। এরা সব সময় পার্কেই থাকে। এরা খায় কি? পার্কে তো গাছ আর ঘাস ছাড়া কিছু নেই। যাই হোক, চারিদিকে গাছপালা বেশ ভালো লাগে। বেশ মিষ্টি রোদ। সেদিন আর ডাক্তারের কাছে যাওয়া হলো না আমার। ভাবলাম, পরের দিন যাবো। পরের দিনও ডাক্তারের কাছে না গিয়ে রমনা পার্কে চলে গেলাম। হাটলাম। ঘুরলাম।
আমার শরীর যে এত খারাপ বাসার কেউ জানে না।
বাসার সবাই পিঠা বানাতে ব্যস্ত। গত তিন ধরে সবাই পিঠা বানানো নিয়ে ব্যস্ত। আমার দিকে খেয়াল করার সময় কারো নেই। আর নিজে থেকে নিজের অসুস্থতার কথা বলতে ভালো লাগে না। এদিকে আমার চোখ মুখ ফুলে গেছে। পেট ফুলে আছে। যাই হোক, বাসায় মেহমান আসবে। পোলাউ রান্না করছে। রোস্ট করেছে। হাসের মাংস। ইলিশ মাছ ভাজা। সবজি আর চিংড়ির মালাইকারী। আমি বললাম, সুরভি এসব আমি খাবো না। আমাকে ভাত দাও আ্লু ভর্তা দিয়ে। আমার কথা শুনেই সুরভি রেগে উঠলো। বলল, তোমার এইসব ঢং আর ভালো লাগে না। বাসার সবাই খেলো কিন্তু তুমি খাবে না। পারবো না আমি ভাত আর আলু ভর্তা করতে। ফ্রিজে লাড্ডু ছিলো, দুটা লাড্ডু খেয়ে ঘুমিয়ে গেরলাম।
চলছে মুজিববর্ষ।
প্রতিটা মন্ত্রনালয়ের ব্যাপক আয়োজন মুজিববর্ষ নিয়ে। কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ। আমাদের দেশে টাকার অভাব নেই। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে যদি এই একটা বছর বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে যেতে তাহলে খুব ভালো হতো। অথবা দশ লাখ বেকার চাকরী পেত। অথবা যারা রাস্তায় ঘুমায় তাদের মাথার নিচে যদি ছাদ পেত। অন্তত একটা বছর। চলছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন তোড়জোর। পুরো ঢাকা শহর এখন পোস্টারের নগরী হয়ে গেছে। অলি গলিও বাদ নেই। যারা মেয়র পদে দাড়াচ্ছে তারা নাকি ঢাকা শহর সুন্দর করবে, পরিচ্ছন্ন করবে। মেয়র হওয়ার আগেই তো তারা ঢাকা শহর নষ্ট করে দিচ্ছে। যাই হোক, আমার শরীরের অবস্থা যেমন ভালো না, তেমনি দেশের অবস্থাও ভালো না। হে হে…
সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
পার্কে ২য় দিন।
পোস্টারের নগরী।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২০