আমরা মুভি বলতে নাচে গানে আর ক্রাইমে ভরপুর এমন কিছু কে বুঝি।
কিন্তু একটা ভালো সিনেমা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। আজ আপনাদের সেই রকম একটা মুভির সাথে পরিচয় করে দিব। অনেকেই আছেন যারা এই ধরনের মুভির ভক্ত। সমস্ত মুভি পাগল লোকজন এই মুভি দেখে ফেলেছেন। এই মুভি না দেখাটা অন্যায়। ''মৃত্যুর আগে যে ১০০ মুভি দেখতেই হবে''- আমি একটা তালিকা করেছি। সেই মুভি নিয়ে পোষ্ট গুলো সামুতেই পোষ্ট করেছি ধারাবাহিকভাবে। যাই হোক, এখন মুভির কথাটা বলি।
'চিলড্রেন অব হেভেন'।
Children of Heaven মুভিটি ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। অসাধারন একটি সিনেমা। দূর্দান্ত। অসাধারন ইরানী মুভি। এই মুভিটা আমি অসংখ্যবার দেখেছি। আরো অনেকবার দেখবো। ইরানি সিনেমার কদর বিশ্বজুড়ে। মুভিটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন মাজিদ মাজিদি। প্রতিভাবান একজন মানুষ। 'চিলড্রেন অব হেভেন' তার প্রথম মুভি। ইরানের একটি পরিবারের ছোট দুই ভাইবোনের জুতা হারানোর কাহিনি নিয়ে সিনেমাটি তৈরি হয়েছে। ১৯৯৮ সালে বিদেশী ভাষার ছবি হিসেবে অস্কার পুরুস্কার জিতে নেয় মুভিটি। দরিদ্র ভাইবোনের দুরন্ত কিন্তু মানবিক ভালোবাসার গল্প। পাশাপাশি পুরো ছবিতেই ছড়িয়ে আছে হাসি, কান্না, মজা, রোমাঞ্চ আর টান টান উত্তেজনা। গল্পের জাদুতে মলিন জুতো হয়ে উঠেছে রঙে রঙিন, দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে হয়ে উঠেছে সব মানুষের কাহিনি।
ইরানের রাজধানী তেহরানের শহরতলির দরিদ্র পাড়ায় একটি পরিবার থাকে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আলী ও জারা নামে দুই ভাই বোন। আলীর বয়স ৯ বছর। জারার বয়স ৬ বছর। আলীদের সংসার অর্থ কষ্টে জর্জরিত। প্রায় ৫ মাসের বাসা ভাড়া বাকী পড়ে আছে। এছাড়াও মুদি দোকানের বাকী টাকাও দেওয়া হচ্ছে না কয়েক মাস ধরে। অসু্স্থ আলীর মা সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকে। আলী তার বোনের ছেঁড়া জুতো মুচির কাছে নিয়ে যায় ঠিক করতে। জুতো সারাই করে আলুর দোকানে যায় আলু কিনতে। তখন ঘটনা চক্রে ছোট বোন জারার জুতো হারিয়ে ফেলে। এইভাবে মুভির কাহিনি শুরু হয়। ছোট ছোট দুই বাচ্চা আলী আর জারা চমৎকার অভিনয় করেছে। মুগ্ধ করার মতোন অভিনয়।
ভুল করে ময়লা সংগ্রহকারী জুতোর প্যাকেটটা ময়লার ভ্যানে তুলে নেয়। জাহরার আর কোন জুতো নেই। স্কুলে যাবার জন্য তার জুতো দরকার। তাদের পরিবারটি অতিশয় দরিদ্র। বাবার সাধ্য নেই এখন জুতো কিনে দেয়ার। শেষমেশ আলীর কেডস জুতো জোড়াই ভাই-বোন ভাগাভাগি করে পড়ে। জাহরার স্কুল সকালে, আলীর দুপুরে। স্কুল ছুটি হলেই জাহরা প্রাণপন দৌড়ে বাড়ীর দিকে আসে। পথে অপেক্ষা করে ভাই আলী। বোন এলে সেই একজোড়া জুতোই সে পায়ে গলিয়ে স্কুলের দিকে দৌড় দেয়। তার প্রতিদিন দেরী হয়ে যায়। স্কুলে সে বকা খায়।
একদিন স্কুলে এক দৌড় প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতে তৃতীয় হলে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে এক জোড়া নতুন জুতা। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইল আলী। পুরস্কারটা পেলেই সব সমস্যার সমাধান। তৃতীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য একদল ছেলের সঙ্গে মরিয়া হয়ে দৌড়াতে শুরু করে সে। কিন্তু দৌড় শেষে ভীষণ এক অবুঝ কান্নায় ভেঙে পড়ে আলী। কারণ তৃতীয় নয়, প্রথম হয়েছে আলী। এ দৃশ্যে সবাই হতবাক। কিন্তু তারা তো জানে না, সে পুরস্কার হিসেবে শুধু জুতোই চেয়েছে, অন্য কিছু নয়!
মুভিটি আমি প্রথম দেখি বিটিভিতে।
সেসময় দারুন সব বিদেশী মুভি দেখাতো বিটিভিতে। তাও আবার বাংলায় ডাবিং করে। ভাষা বুঝতে একটুও সমস্যা হতো না। এই মুভিটি আমি প্রতি বছর দুইবার করে দেখি। একটুও বিরক্ত লাগে না। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজে ৮.৩ রেটিং প্রাপ্ত মুভিটিতে প্রায় ৫০ হাজার এর মতো ভোট পড়ে। ১.৬ মিলিয়ন বাজেটের চিলড্রেন অব হ্যাভেন মুভিটি বক্স অফিসে ১৮৮ মিলিয়ন আয় করে।
কিছু মুভি আছে মন ভালো করে দেয়। মুভি শেষ হলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা যায়। মুভিটিতে ক্যামেরার কাজ ছিল অসাধারণ। এমন কিছু দৃশ্য আপনি দেখবেন যা ছিল সত্যিই ইউনিক। এই মুভি নিয়ে একবার কথা শুরু করলে আর শেষ করতে ইচ্ছা করে না। তবে শেষ করতেই হবে। আপনাদের ধৈর্যের বাঁধ হয়ত ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর তাই কথা বাড়াবো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪৮