ছোটবেলা থেকেই আমার নায়ক হবার ইচ্ছা ছিলো।
লাল শার্ট, জিন্স প্যান্ট আর কেডস পরে থাকতাম সারাক্ষণ। মাথার লম্বা চুল গুলো উলটো করে আচড়াতাম। বেশ লাগতো আমাকে দেখতে। নিজেকে আয়নায় দেখে নিজেই মুগ্ধ হতাম! সেই দিন গুলো খুব সুন্দর ছিলো আমার। সেই দিন কি আবার ফিরে আসবে কখনও? মাথায় কমপক্ষে পাঁচটা সাদা চুল আছে। মাঝে মাঝে উকি ঝুঁকি দেয়। ফালাই না। মায়া লাগে।
একদিন সুন্দর ঝলমলে দিনে-
রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে চা সিগারেট খাচ্ছি। বেশ ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা রাস্তার পাশের দোকান গুলোর চা ভালো হয় না। এই চা টা বেশ ভালো হয়েছে। চিনিও ঠিক আছে। ইচ্ছা হলো আরেক কাপ চা নিবো। যেহেতু আমি বাংলা সিনেমার নায়ক ভাবি নিজেকে তাই মাঝে মাঝে আমার আত্মবিশ্বাস এবং সাহস খুব বেড়ে যায়।
আমি চা সিগারেট শেষ করতে পারলাম না।
আমার চোখের সামনে একটা লোক একজন মেয়ের হ্যান্ডব্যাগ কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে চেপে পালিয়ে যাচ্ছিলো। মেয়েটা অসহায়ভাবে চ্যাচামেচি করছিলো। কান্না করছিলো। আমার খুব মায়া হলো। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। মাথা ভরতি চুল। চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। হাত ভরতি চুড়ি। আমি আর থাকতে পারলাম না। পাশেই অন্য কার একটা মোটরসাইকেল রাখা ছিলো, লাফিয়ে সেটায় উঠে পড়ে তাড়া করলাম চোরটাকে।
আমি খুব ভালো মোটরসাইকেল চালাতে পারি।
উঁচু-নিচু রাস্তা, চোরটা যত স্পিড দিচ্ছে, আমিও তত স্পিড বাড়াচ্ছি। চোরটা ট্র্যাফিকের লাল বাতি মানছে না, আমিও মানছি না। রাস্তার সব লোক অবাক হয়ে আমাদের দেখছে। আমি চোরটাকে ধরবোই, লুকাবে কোথায়! খানিক পরে দেখি, রাস্তাটা অনেক উচু থেকে খাড়া নেমে গেছে, সামনেই একটা খাল বা পুকুরের মতো। এত স্পিডে চালাচ্ছি যে থামাবার উপায় নেই। সোজা গিয়ে খালে পড়তে হবে। তখন চোরটাকে ধরা যাবে ঠিকই, কিন্তু মেয়েটার হ্যান্ডব্যাগটা যদি ডুবে যায়! তাই শেষ মুহুর্তে আমি মোটরসাইকেলের ওপর দাড়িয়ে উঠে ঝাপিয়ে পড়লাম চোরটার ঘাড়ের ওপর।
মেয়েটাকে তার বাসায় পৌঁছে দিলাম।
মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকালো! আমি মেয়েটার দিকে ভালোবাসা নিয়ে তাকালাম। ব্যস হয়ে গেলো। আপনারা হয়তো ভাবছেন, একদম সিনেমার মতোন কাহিনী! মাঝে মাঝে জীবনের গল্পগুলো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দেয়। আড়াই বছর পর মেয়েটাকে বিয়ে করে আমার বাসায় নিয়ে এলাম। মেয়েটার নাম সুরভি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:২৫