somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

শিশুদের জন্য গল্প

১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আবু সালামের বয়স সাত বছর।
প্রায় রাতেই তার ঘুম আসে না। সে বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। স্কুলে ভরতি হয়েছে। লেখাপড়ায় আবু সালাম খুব ভালো। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে ভালোবাসেন। অনেক রাত পর্যন্ত সে দুই হাত মাথায় পেছনে রেখে, পায়ের উপর পা দিয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। নানান জটিল সব বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। পাশের রুমে বাবা মা গভীর ঘুমে। কিন্তু তার ঘুম আসে না। এখন রাত দুইটা অথচ চোখে একফোটা ঘুম নেই। তার মোবাইল থাকলে ভালো হতে। ফেসবুকিং করতে পারতো। টিকটক করতো। অথবা গেমস খেলতো। তাহলে রাতে ঘুম না এলে সমস্যা হতো না। বাবা মা মোবাইল দেন না। মোবাইল হাতে পেলে বাচ্চারা নাকি খারাপ হয়ে যায়। আবু সালামের ধারনা, আসলে বাপ মা পোলাপানের সমস্যা গুলো সঠিক বুঝে না। নিজেদের পন্ডিত মনে করেন। সে তার বাচ্চাদের মোবাইল কিনে দেবে।

আবু সালামের মনে হলো-
কেউ একজন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে কে জানালার পাশে? চোর নাতো? আবু সালাম সাহসী। সে জানালার কাছে গেলো। সেখানে একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবু সালাম বলল, এই মেয়ে তুমি কে? মেয়েটা বলল, আমি আকাশের পরী। এই দেখো আমার ডানা, আমি উড়তে পারি। আবু সালাম বলল, তুমি আমার জানালার কাছে কি করছো? আসো ঘরে আসো। পরী ঘরে এলো। আবু সালাম বলল, কি খাবে? পরী বলল, তুমি বুঝলে কি করে আমার ক্ষিধে পেয়েছে? আবু সালাম বলল, আমি বুঝি। এসব বুঝা যায়। আবু সালাম চুপি চুপি রান্না ঘরে গেলো। ভাগ্যিস মা রাতে তেহারি রান্না করেছিলেন। কিছু বেঁচে গিয়েছিলো। আবু সালাম ওভেনে তেহারি গরম করে নিয়ে এলো। পরী বলল, আমরা তো মানুষ না। পরী। এসব খাবার আমরা খাই না। আবু সালাম বলল, ফল খাবে? পরী বলল, হ্যা ফল খাওয়া যেতে পারে। ফ্রিজে আপেল ছিলো। একটা আপেল ধুয়ে পরীর হাতে দিলো। পরী বলল, এই আয়নাটা তোমার কাছে রাখো। তুমি চাইলেই এই আয়নাতে আমাকে দেখতে পাবে। রাতে তোমার ঘুম না এলে- আমি এই আয়নায় আসবো। অনেক গল্প করা যাবে।

রাত তখন সোয়া তিনটা।
পরী বলল, এবার আমি যাই। তুমি ঘুমাও। সকালে তোমার স্কুল আছে। আবু সালাম বলল, আর কিছু সময় থাকো। ভালো লাগছে তোমার সাথে গল্প করতে। পরী বলল, না অনেক দেরী হয়ে এগছে। মা রাগ করবে। আমি যাই। আবু সালাম বলল, তুমি কোথায় থাকো? তোমার বাসা কই? পরী বলল, আমার বাসা আকাশে। মেঘের উপরে আমাদের বাড়ি। আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তুমি যাবে আমাদের বাড়িতে। আবু সালাম বলল, হ্যা আমি যাব। কিন্তু কিভাবে যাবো- আমার তো তোমার মতো ডানা নেই। পরী বলল, কোনো অসুবিধা নেই। তুমি আমার হাত ধরো। আবু সালাম পরীর হাত ধরলো। তারা আকাশে মেঘের মতো ভাসতে লাগলো। দেখতে দেখতে অনেক উপরে উঠে গেলো। বিশাল বিশাল মেঘের খন্ড গুলো চাঁদের আলোয় ঝকমক করছে! এক রকম শীতল বাতাস বইছে চারিদিকে। বেশ ভালো লাগছে আবু সালামের। পরী বলল, ভয় লাগছে। আবু সালাম বলল, একটুও ভয় লাগছে না। কারন তুমি যে আমার হাত ধরে রেখেছো।

মেঘের উপর বিশাল এক রাজপ্রাসাদ।
এত সুন্দর বাড়ি দেখে আবু সালাম মুগ্ধ! বলল, পরী তোমাদের বাড়ি তো অনেক সুন্দর। বাড়ির ফেতর পা রাখতেই পরীর বাপ মা দৌড়ে এলো। তারা পরীকে প্রচন্ড ধমক দিলেন। আবু সালামকে দেখে- বাবা মা দুইজনই প্রচন্ড রেগে গেলেন। পরীর বাবা বললেন, এই মনুষ্যকে কোথায় পেলে? তুমি পৃথিবীতে গিয়েছিলে? ছিঃ পরী। তুমি পরী হয়ে একজন মানুষ ধরে নিয়ে এলে আমাদের ভুবনে। ছিঃ। খুব খারাপ কাজ করেছো। তুমি আমার একমাত্র আদরের কন্যা। এই কাজ তুমি কি করে করলে! লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। আবু সালাম বলল, স্যার আমি দুঃখিত। দোষ আমার। পরীর কোনো দোষ নাই। আমিই পরীকে অনুরোধ করেছিলাম। আমার খুব দেখার শখ ছিলো- মেঘের উপর বাড়ি গুলো কেমন দেখতে হয়। পরীর মা রেগে গিয়ে বললেন, হয়েছে- আর ঢং দেখাতে হবে। মনুষ্যজাতি কেমন তা আমাদের জানা আছে। এরা প্রচন্ড লোভী হয়। এরা ভালো নয়। এরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করে। এরা তিলে তিলে নিজেদের পৃথিবীটা নষ্ট করে দিচ্ছে।

পরীর বাবা বলল, এই ছেলেকে বন্ধী করে রাখ হোক।
আমার সহজ সরল মেয়েকে এই ছেলে পটিয়েছে। এর শাস্তি হওয়া উচিত। আবু সালাম বলল, অনেক বলেছেন, স্যার। এবার চুপ করুন। যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছেন। মানুষের মধ্যে ভালো লোকও আছে, মন্দ লোকও আছে। সবাইকে এক কাতারে মাপবেন না। আপনাদের মধ্যেও নিশ্চয়ই ভালো জাত, মন্দ জাত আছে। শুনুন আমি লোভী নই। মিথ্যা আমি বলতে পারবো না। কোনো ভনিতা আমি করতে পারবো না। আপনার মেয়েকে আমার ভালো লেগেছে। ওকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি পরীকে বিয়ে করতে চাই। পরীর বাবা প্রচন্ড রেগে গেলেন। এক চড় বসালেন আবু সালামের গালে। বলল, হারামজাদা ফকিন্নির বাচ্চা। কত বড় সাহস আমার মেয়েকে বিয়ে করবি। এত বড় সাহস তোর হলো কি করে রে! আবু সালাম বলল, দেখুন পরী আমার কাছে ভালো থাকবে। সুখে থাকবে। আনন্দে থাকবে। এর নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি। পরীর বাপ বললেন, আর একটা কথা বললে গুলি করে মেরে ফেলব। পরী বলল, বাবা প্লীজ থামো। আমি অন্যায় করেছি। ভুল করেছি। তুমি ওকে মেরো না। ওকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দাও।

আবু সালামের ঘুম ভাঙ্গল।
সে চারপাশ দেখছে। পরীকে খুজছে। পরীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। বিছানার কাছে পরীর দেওয়া একটা আয়না পড়ে আছে। পরী বলেছিলো। আবু সালাম এই আয়নায় চাইলেই পরীকে দেখতে পাবে। অন্য কেউ আয়নায় তাকালে কিছু দেখতে পাবে না। অবশ্য নিয়ম হলো- রাত দুটোয় ঘর অন্ধকার করে আয়নায় দিকে তাকাতে হবে। তখন আয়নায় পরী এসে দেখা দিবে। আবু সালামের ধারনা, তার স্বপ্ন একদিন সত্য হয়ে দেখা দিবে। আপাতত সে তার কাজ, মানে লেখাপড়া ভালো করে করতে হবে। পরীর সাথে তো প্রতিদিন রাতে দেখা হবেই, কথা হবেই। নিজেকে সে যোগ্য করে তুলবে। তখন পরীর বাপ মা আর তাকে অবহেলা করবেন না। আবু সালামের বাপ মা বলল, কি করে আবু তোর মধ্যে কেমন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আবু সালাম বলল, পরিবর্তনটা কি পজেটিভ? হ্যা পজেটিভ। তাহলে চুপ করে থাকো। জীবনে আমি অনেক বড় হবো। নিজেকে যোগ্য করে তুলবো। তখন আর কেউ আমাকে অবহেলা করবে না। মানুষের স্বচ্ছ পবিত্র ভালোবাসা পেতে হলে- সবার আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×