somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন কালজয়ী লেখক- বিভূতি

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রামের এক স্কুলে ক্লাশ চলছে।
শিক্ষক স্কুলে নতুন জয়েন করেছেন। ছাত্ররা খুব চ্যাঁচামেচি করছিলো। শিক্ষক বললেন, চ্যাঁচামেচি বন্ধ করো। তোমরা একটা রচনা লিখো তোমাদের গ্রাম নিয়ে। ছেলেরা লিখতে শুরু করলো গ্রাম নিয়ে। তখন এক ছাত্র বলল, আমি গ্রাম নিয়ে লিখব না। আসুন আপনি আর আমি মিলে একটা উপন্যাস লিখি। উপন্যাসের নাম 'চঞ্চলা'। শিক্ষক বললেন, ফাজলামো ছাড়ো। সেই ছাত্র পুরো গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দিলো- আমি আর শিক্ষক মিলে একটা উপন্যাস লিখব। এদিকে শিক্ষক গল্প উপন্যাস লিখতে জানেন না। গ্রামের লোকজন শিক্ষককে দেখলেই জানতে চায়- আপনাদের উপন্যাস কবে বের হচ্ছে? রাগে দুঃখে শিক্ষক একটা গল্প লিখে ফেললেন। গল্পের নাম 'উপেক্ষিতা'। গল্পটি সকলের পছন্দ হয়ে গেলো।

সময়টা তখন ১৮৯৪ সাল।
ভারতবর্ষে চলছে ব্রিটিশদের শাসন। পশ্চিম বঙ্গে জন্ম নিলেন একজন লেখক। লেখকের নাম- 'বিভূতিভুষণ বন্ধোপাধ্যায়। 'পথের পাচালী'র মতো উপন্যাস লিখে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলেন। দেশ বিদেশের সাতটা ভাষায় এই উপন্যাস প্রকাশিত হলো। এই লেখকের আরেকটা উপন্যাস আছে 'ইছামতী'। আমার খুবই প্রিয়। সকলের 'ইছামতী' বইটি পড়া উচিৎ। ১৯৫১ সালে 'ইছামতী' উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। এই সমাজ শুধু যোগ্য ও দক্ষ মানুষদের মনে রাখে। যেমন বিভূতিভূষনের আরো চারজন ভাইবোন ছিলো। তাদের কেউ চিনে না। জানে না। অথচ বাংলা সাহিত্যে বিভূতি কে ছাড়া একদম অসহায়। বিভূতি যখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়েন তখন তার পিতা মারা যান।

১৯১৯ সালে বিভূতি গৌরী নামে এক কিশোরীকে বিয়ে করেন।
ভাগ্য খারাপ। বিয়ের এক বছর পর গৌরী কালা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আচমকা তীব্র অপ্রত্যাশিত আঘাতে বিভূতি জীবন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায়। একাএকা কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। এই সময় তার সাথে দেখা হয়- এক বাউলের। বাউল বললেন, তুমি হাতে কলম তুলে নাও। লিখো। যত লিখবে, তোমার জ্বালা যন্ত্রনা তত কমতে থাকবে। বিভূতি লিখতে শুরু করলেন। জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলেন। প্রথম স্ত্রী গৌরীর মৃত্যুর ২১ বছর পর বিভূতি আবার বিয়ে করলেন। পাত্রীর নাম- রমা দেবী। রমা দেবী বিভূতির লেখার দারুন ভক্ত ছিলেন। নিয়মিত চিঠি লিখতেন লেখককে। রমা দেবীই লেখককে প্রথম বিয়ের কথা বলেন। রমা দেবীকে বিয়ের করার সাত বছর পর তাদের প্রথম সন্তান দুনিয়াতে এলো। সন্তানের নাম রাখলেন- তারাদাস। ডাক নাম বাবলু।

বিভূতি তার বাড়ির নাম রাখেন গৌরীকুঞ্জ। গৌরী তার প্রথম স্ত্রী।
বলা হয়ে থাকে 'পথের পাঁচালী' বিভূতিভূষণের শ্রেষ্ঠ রচনা। এই লেখকের প্রতিটা লেখায় গাছপালা, নদী, পোকামাকড়, দারিদ্র, আশা, স্বপ্ন, মধ্যবিত্তদের জীবন, গ্রামের পরিবেশ বনর্না থাকে অতি নিখুঁত ভাবে। এই লেখক ৫৬ বৎসর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন। বিভূতিভূষন কখনও সাহিত্যিক হতে চান নি। বিএ পাশ করে স্কুলে চাকরী পেয়ে যান। তিনি চাকরীতে মন দিলেন। ভাগলপুরে বিশাল এক জঙ্গল ছিলো। এই জঙ্গল দেখে বিভূতিভূষনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। লিখে ফেললেন আরেক বিখ্যাত উপন্যাস 'আরণ্যক'। এটি ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চতুর্থ উপন্যাস। 'আরণ্যক' উপন্যাসে লেখক লিখেছেন- প্রকৃতি তার নিজের ভক্তদের যা দেন তা অতি অমূল্য দান। অনেকদিন প্রকৃতির সেবা না করিলে কিন্তু সে দান মেলে না। আর কি ঈর্যার স্বভাব প্রকৃতিরানীর— প্রকৃতিকে যখন চাহিব, তখন প্রকৃতিকে লইয়াই থাকিতে হইবে, অন্য কোনো দিকে মন দিয়াছি যদি অভিমানিনী কিছুতেই তার অবগুন্ঠন খুলিবেন না।

'তালনবমী' নামে বিভূতির একটা ছোট গল্প আছে।
অসাধারন এক গল্প। এই গল্প পড়ে আমার মতো মানুষের চোখে পর্যন্ত পানি চলে এসেছিলো। টানা ২১ বছর বিভূতি লেখালেখি করেন। এই ২১ বছরে লেখক ৫০ টি বই লিখেন। এই ৫০ বইই বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। ছোটবেলা থেকেই বিভূতি মেধাবী ছিলেন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। গোছল করতে যেতেন 'ইছামতী' নদীতে। বিভূতির মতো কোনো লেখক আজ আর নেই। এযুগের লেখকরা বই লিখেন। নিজেই নিজের বইয়ের গুণগান করেন ফেসবুকে। আদতে তাদের লেখা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে না। পাঠককে ভাবায় না, কাঁদায় না। কিন্তু এই সমস্ত লেখকরা নির্লজের মতো নিজেকে শুধু প্রচার করতে ব্যস্ত। নিজেকে প্রচার করতে গিয়ে নানান রকম ছাগলামি করে চলেছে। যা অতি হাস্যকর। সেই সাথে বিরক্তিকর।

তথ্যসুত্রঃ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্ধানে- রুশতী সেন।
আমাদের বিভূতিভূষণ- রমা বন্ধোপাধ্যায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×