somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তার ভাল নাম অনুকূলচন্দ্র চক্রবর্তী।
তিনি 'ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র' নামে পরিচিত। ১৮৮৮ সালে বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়তপুরে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৬৯ সালে ৮১ বছর বয়সে তিনি তার আশ্রমে মারা যান। তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি অর্জন করে। তিনি সাধারন মানুষের কথা ভেবে ১৯৪৬ সালে বিহারের 'দেওঘর' এলাকায় তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপাখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। কর্মের মাধ্যমে যোগ্যতর মানুষ গড়ে তোলাই ছিলো তার লক্ষ্য। এজন্য তিনি 'সৎসঙ্গ' নামে একটা আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তার উৎসাহ ও প্রেরনায় প্রায় দুই লাখ মানুষ এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। তার কাছে দীক্ষা নেন। এদের মধ্যে আছেন- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, গুলজারীলাল প্রমুখ। তবে ভক্তরা বলে থাকেন ঠাকুরের কমপক্ষে এক কোটি ভক্ত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

অনুকূলচন্দ্র ঠাকুর মোট ৮২টি বই লিখেন।
১২টি বই লিখেছেন ইংরেজিতে। তার বইয়ের মুলকথা ছিলো- কি ভাবে মানুষ ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে, শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই মিলে মিশে থাকবে, সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে বইগুলোতে। তার শিষ্যরা তাকে ভালোবেসে 'ঠাকুর' বলে ডাকতেন। তিনি সকল মানুষকে নিয়েই ভাবতেন, সকল মানুষেরই পাশে দাঁড়াতেন। দেশভাগের পর তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে আসেন নি। তবে ঢাকা, পাবনা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে তার নামে আশ্রম ও কার্যালয় আছে। তার ভক্তরা আমেরিকাতেও তার নামে মন্দির স্থাপন করছেন। যাইহোক, ঠাকুর তার বাবা-মাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। একবার তাদের ঘরে আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। তার বাবা পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ। তখন তিনি মুড়ি বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগাড় করতেন। কলকাতা আসলেন লেখাপড়া করতে। এমন দিনও গেছে খাওয়ার পয়সা নেই তার কাছে। তিনি রাস্তার কল থেকে পানি খেয়ে থাকতেন সারাদিন। গঙ্গায় গিয়ে তিনি ধ্যান করতেন। ডাক্তার হওয়ার পর তিনি অসুস্থ মানুষদের সেবা করতেন। তার শিষ্যরা সব সময় বলতেন, ঠাকুরের কাছে থাকলে শান্তি পাওয়া যায়।

ঠাকুর- শিক্ষা, কৃষি ও শিল্প- এতিনটি বিষয়ে সব সময় জোর দিতেন।
'ইস্টভৃতি'। ইস্টভৃতি হচ্ছে- ঠাকুরের নামে এক টাকা দুই টাকা করে জমানো। সেই টাকা ঠাকুরের প্রতিষ্ঠানকে দান করতো ভক্তরা। একটাকা করে জমালেও মাসে ৩৬৫ টাকা হয়। ছাত্র বয়সেই ঠাকুর অনেক গান লিখেছেন। কবিতা লিখেছেন। এমনকি ছাত্র জীবনে নাটকে অভিনয়ও করেছেন। বাংলাদেশের পাবনাতে যে মানসিক হাসপাতাল রয়েছে সেটা এই ঠাকুরের বাপ দাদারের জায়গা। হাসপাতাল করার জন্য জায়গা দান করা হয়েছে। এই ঠাকুরের নিশ্চয়ই কিছু অলৌকিক কিছু ক্ষমতা আছে। নইলে তার এত এত শিক্ষিত ভক্ত থাকতো না। কথিত আছে, ঠাকুরের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন তার মা বললেন, চল অমুকের বাচ্চা হয়েছে, দেখে আসি। তখন ঠাকুর বললেন, আমি যাবো না। কারন এই বাচ্চা ১৮ দিন পর মারা যাবে। দেখা গেলো সত্যি সত্যি বাচ্চাটা জন্মের ১৮ তম দিনে মারা যায়। মানুষের আত্মিক উন্নতির জন্য তিনি কীর্তনদল গঠন করেন।

অনুকূলচন্দ্র ঠাকুরের কিছু বাণীঃ

১। কারও সাহায্য যখন তুমি না-পাও, তখন পিতার কাছে যাও। তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে তোমাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে। কৃতজ্ঞতা বোধ তাকতে হবে, নচেৎ অমানুষ সেই সন্তান।

২। কেউ যদি তোমার নিন্দা করে করুক, কিন্তু খেয়াল রেখো, তোমার চলন চরিত্রে নিন্দনীয় কিছু যেন কোনও ক্রমেই স্থিতিলাভ করতে না-পারে। নিন্দা ব্যর্থ হয়ে উঠবে।

৩। সংযত হও, কিন্তু নির্ভীক হও। সরল হও, কিন্তু বেকুব হয়ো না। তাই বলে দুর্বল হৃদয়ে হয়ো না।

৪। ভগবান, ঈশ্বর, ঠাকুর বললে কেমন জানি আকাশের কেউ বা শূন্য শূন্য মনে হয়, তার থেকে কৃষ্ণ বললে নিজের বা আমার কৃষ্ণ মনে হয়। তাই ভগবান, ঈশ্বর, ঠাকুর এরচেয়ে কৃষ্ণ বললেই ভাল হয়।

৫। মেয়েদের সৌন্দর্য্য বলতে আমি বুঝি মাতৃত্ব। মাতৃত্বের ভাব যদি মেয়েদের মধ্যে প্রকট না হয়, তবে তাকে সুন্দর বলা যায় না।


প্রতিবছর বাংলাদেশের পাবনাতে এই মহাপুরুষের জন্মদিন পালন করা হয়।
তার ভক্তরা ছুটে আসেন পাবনাতে। ভারত ও নেপালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের প্রায় ২০ হাজার ভক্ত আসেন। কেউ তাকে বলতেন 'প্রভু' আবার কেউ একধাপ এগিয়ে বলতেন অনুকূল আমাদের রাজা ভাই। ঠাকুর বলতেন, মানুষের দুঃখের স্থায়ী নিবারণ করতে হলে শারীরিক মানসিক ও আত্মিক এই তিন রকম রোগেরই চিকিত্‍সা দরকার। সমাজের একদল মানুষ সব সময় পক্ষে থাকে, আরেক দল থাকে বিপক্ষে। ঠাকুরের বিপক্ষে অনেক লোক ছিলো। তাঁরা বলতো ঠাকুর নারী বিদ্বেষী। ঠাকুরের নামে অসংখ্য মানুষ বদনাম ছড়িয়েছে। তাতে তার ভক্ত দলের সংখ্যা কমেনি। আমরা জানি, যুগ যুগ ধরে দেখেছি- সাধারণত ধর্ম গুরুরা হয় ধর্ম ব্যবসায়ী। তাঁরা বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়। নিজেরা আরাম আয়াশে জীবন পার করেন। নারী জড়িত অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। তবে অন্যান্য ধর্মগুরু থেকে অনুকূলচন্দ্র একদম আলাদ। বাংলাদেশের অনেক দোকানে আমি অনুকূল ঠাকুরের ছবি দেখেছি। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে মিষ্টির দোকান গুলোতে।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একজন ভাল সাহিত্যিক।
তার জনপ্রিয়তা অনেক। আমার পছন্দের লেখকদের মধ্যে একজন শীর্ষেন্দু। এই শীর্ষেন্দু ঠাকুরের ভক্ত হয়ে গেলেন। চরম ভক্ত। ঠাকুরের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে মাছ মাংস খাওয়া ছেড়ে দিলেন। তিনি ঠাকুরকে নিয়ে একটা বই'ই লিখে ফেললেন। বইয়ের নাম 'কাছের ঠাকুর'। সেই বইতে উনি লিখেছেন, উনি একবার চরম হতাশায় নিম্মজিত হয়েছিলেন। মনে মনে ভেবেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। তখন এক বন্ধুর সাথে ঠাকুরে আশ্রমে যান। তারপর শীর্ষেন্দুর সমস্ত হতাশা নাই হয়ে গেলো। ঠাকুরের অবশ্যই অলৌকিক ক্ষমতা আছে। একবার শীর্ষেন্দুর মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিলেন। তারপর ঠাকুরের কারনে আরো দশ বছর বেঁচে ছিলেন শীর্ষেন্দুর মা। 'কাছের ঠাকুর' বইটি লেখার পর শীর্ষেন্দু অনেক পাঠক হারিয়েছেন। পাঠক তার উপর হতাশ হয়ে গেছেন। বাঙালিদের অশিক্ষা ও কুসংস্কার অনেক আছে. বিশেষ করে মধ্যবিত্ত বাঙালি কিছু না পড়েই সব জানে, বইগুলিকে তাকে সাজিয়ে রাখে, আর কিছু তার জানার দরকার আছে বলে মনে করে না. এরাই বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এজন্য বাঙ্গালীরা জনম দুঃখী। ইউটিউবে অনুকূল ঠাকুরের লেখা গান আছে। ইচ্ছা হলে শুনে নিতে পারেন।

তথ্যসুত্রঃ
# আচার্য্য সতীশচন্দ্র গোস্বামী ও সৎসঙ্গ আন্দোলন
# ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র জীবনী ও কথামৃত- সুধাংশুরঞ্জন ঘোষ।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:১২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×