somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

নীলা হত্যা রহস্য

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীলাকে হত্যা করা হয়েছে।
নীলার বয়স তেইশ। সে লালমাটিয়া কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ছে। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তাম। তার মা নেই। ক্যান্সারে মারা গেছে। তখন নীলা মাত্র ইউনিভার্সিটিতে ভরতি হয়েছে। নীলা ধনী বাবার কন্যা। সমস্ত বিষয় সম্পত্তি নীলার নামে। যেহেতু নীলার বিয়ে হয়নি, তাই সমস্ত মানুষ মনে করে নীলার যার সাথে প্রেম ছিলো সে-ই তাকে হত্যা করেছে। যদি নীলা বিবাহিতা হতো তাহলে প্রথম সন্দেহ করা হতো তার স্বামীকে। এটাই বঙ্গ দেশের নিয়ম। অনেকে বলাবলি করছে নীলাকে খুন করার আগে রেপ করা হয়েছে। যে কোনো নারী ঘঠিত বিষয়ে লোকজন রেপ শব্দটা জুড়ে দিতে পছন্দ করে। বাঙ্গালীদের মানসিকতা অতি কুৎসিত।

নীলার প্রেমিকের নাম শাহেদ জামাল।
শাহেদ অত্যন্ত ভদ্র একটা ছেলে। মানবিক মানুষ। ভালো মানুষ। পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করলেও একবার জেরা করেছে। কিন্তু তাকে প্রতিদিন থানায় একবার গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। শাহেদের মন মানসিকতা ভালো নেই। সে তার সবটুকু ভালোত্ব দিয়ে নীলাকে ভালোবাসতো। শাহেদ এখন জিগাতলায় একটা মেসে থাকে। অথচ এই শহরে তাদের নিজের বাড়ি আছে। কিন্তু বাড়িতে তার সম্মান নেই। সে বেকার। তার ভাই বোনেরা এবং মা তাকে নিয়ে উপহাস করে। বাইরের মানুষের উপহাস সহ্য করা যায় কিন্তু নিজ পরিবারের সদস্যদে উপহাস সহ্য করা যায় না। তাই সে এখন মেসে থাকে। শাহেদ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

নীলা মৃত্যুর পর দেখা গেলো-
নীলা তার সমস্ত সম্পত্তি শাহেদের নামে দিয়ে গেছে। এখন শাহেদ অনেক টাকার মালিক। কোনোদিনই টাকা পয়সার উপর শাহেদ জামালের কোনো প্রকার লোভ ছিলো না। সে নীলাকে ভালোবাসে। সহজ সরল স্বচ্ছ ও পবিত্র ভালোবাসা। এই ভালোবাসার পেছনে কোনো লোভ ছিলো না, স্বার্থ ছিলো না।। পুলিশ যেভাবে তার পেছনে লেগেছে, মনে হচ্ছে তাকে ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে ছাড়বে না। শাহেদ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে আমি নীলাকে ভালোবাসি। তাকে আমি কেন খুন করবো? পুলিশ এ কথা মানতে নারাজ। পুলিশ বলছে, শাহেদ জোর করে নীলাকে দিয়ে তার সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছে। সম্পত্তি পেয়ে শাহেদ নীলাকে হত্যা করেছে। এই সমাজের পুলিশরা মিথ্যা মামলা সাজাতে ওস্তাদ। তাঁরা দিনকে রাত করে দিতে পারে।

যে রাতে নীলার মৃত্যু হলো-
সে রাতে শাহেদ গিয়েছিলো নীলার বাসায়। সেদিন বাসায় একটা অনুষ্ঠান ছিলো। শাহেদ জানতো না তাদের বাসায় অনুষ্ঠান। শাহেদ গিয়েছিলো নীলার বাবার সাথে দাবা খেলতে। সে প্রায়ই যেতো দাবা খেলতে। অনুষ্ঠানে দেখা গেলো অনেকের হাতেই মদের গ্লাস। শাহেদ মদ খায় না। সে নীলাকে বলল, আজ আমি চলি। নীলা বলল- নো নেভার। পার্টি না শেষ হওয়া পর্যন্ত যেতে পারবে না। রাতে খেয়ে তাঁরা পর যাবে। নীলা শাহেদের হাতে একটা গ্লাস তুলে দিলো। বলল, এটা ওয়াইন, খাও। নেশা হবে না। এই দেখো আমিও খাচ্ছি। এই রকম পার্টি গুলো শাহেদের পছন্দ না। সে কোনার একটা টেবিলে চুপচাপ বসে আছে। নীলাকে দেখছে। নীলা একটা নীল শাড়ি পড়েছে। নীলা যখন অন্য কোনো পুরুষের সাথে কথা বলে, তখন শাহেদের ইচ্ছা করে সেই পুরুষকে খুন করতে।

সেদিন শাহেদ রাত দশটায় পার্টি থেকে চলে আসে।
ওয়াইনে কিছু মেশানো ছিলো কিনা কে জানে! রাতে তার ঘুম ভালো হয়। সকালে পুলিশ তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো। নীলাকে খুন করা হয়েছে- একথা শুনে সে ভীষন আঘাত পায়। এই অপ্র্যতাশিত আঘাতে শাহেদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। এই হচ্ছে নীলা হত্যার বৃতান্ত। গতকাল রাতে শাহেদকে গ্রেফতার হয়। তাকে আনা হয় মিন্টু রোডের গোয়েন্দা অফিসে। সারারাত তাকে একটা নোংরা ঘরে বন্ধী করে রাখা হয়। পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। ঘরে প্রচুর মশা। আলো বাতাস নেই। ভয়ানক দূর্গন্ধ। এ পর্যন্ত শাহেদ দুবার বমি করেছে। তার মাথ কাজ করছে না। এরকম পরিবেশে সে কখনও থাকেনি। তবে বইয়ে এরকম ঘটনা সে অনেক পড়েছে। আজ যদি শাহেদের বাবা বেঁচে থাকতো, তাহলে শাহেদকে এভাবে নোংরা ঘরে শুয়ে থাকতে হতো না।

সকাল ক'টা বাজে শাহেদ জানে না।
তাকে অন্য একটা ঘরে নেওয়া হয়েছে। এই ঘরটা কিছু পরিস্কার। কোনো বাজে গন্ধ নেই। তবে এই ঘরে কোনো জানালা নেই। তার সামনে দুজন দুজন বলশালী লোক বসে আছে। তাদের চোখে মুখে কোনো মায়া-দয়া নেই। তাঁরা বলল, যা প্রশ্ন করবো তার স্পষ্ট জবাব দেবেন। এই প্রশ্নের উপর নির্ভর করবে আপনার ভবিষ্যৎ। শাহেদ বলল, এর আগে একবার আমাকে জেরা করা হয়েছে। আমি যা জানি, যেটুকু জানি- সব বলেছি। এর বাইরে নতুন কিছু বলার আমার নেই। এই কথা শুনে সামনে বসা থাকা দুজন লোকই অত্যন্ত রেগে গেলো। তাদে একজন হুকুম করলো এই শালারা আগে পিটা। ইছা মতো মার। শাহেদ বলল, এটা আইন নয়। তাঁরা আরো রেগে গেলো। পরবর্তী আধা ঘণ্টা তাঁরা শাহেদ কে মারলো। রক্তাত্ব করলো। আর বলল, দেখি তোর কোন বাপ এখন তোকে বাঁচায়। আরো কিছু খারাপ গালাগালি করলো। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

শাহেদ কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। তার ঠোঁট কেটেছে। ডান হাতের দুটা আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে। নাক দিয়ে সমানে রক্ত পড়েই যাচ্ছে। গলা দিয়ে চি চি শব্দ বের হচ্ছে। এরকম মার সে তার জীবনে খায়নি। অবাক ব্যাপার হচ্ছে এত মার খেয়েও শাহেদ অজ্ঞান হয়ে যায়নি। প্রথম প্রথম তার খুব ব্যথা লেগেছে। এরপর তার কোনো ব্যথা বোধ হয়নি। শাহেদের মনে হচ্ছে- এখন কেউ যদি তাকে এক জগ ঠান্ডা পানি তো সে পুরো জগ পানি খেয়ে ফেলতো এবং তাতেই সে উঠে বসতে পারতো। অনেকখানি শক্তি পেতো। হঠাত শাহেদ কেমন একটা তন্দ্রার মধ্যে চলে গেলো। তার কাছে মনে হলো- নীলা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে স্বচ্ছ কাঁচের জগে পানি। ঠান্ডা পানি। শাহেদ একটা হাত উঁচু করতে চাইলো কিন্তু পারলো না। তার ঘুম পাচ্ছে। হাত উঁচু করার মতো শক্তি শাহেদের নেই। নীলা বলল, স্যরি। আমি তোমাকে ভীষন বিপদে ফেলে দিলাম। তোমার কোনো ভয় নেই। আমি তোমাকে বাঁচাবো। আমি তোমার সাথে আছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×