somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

অনেক আকাশ

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকের সন্ধ্যাটা এত সুন্দর কেন?
রাস্তায় বের হয়েই কেমন অন্য রকম লাগছে। মেস বাড়ি থেকে বের হতেই এক রিকশাচালক কাছে এসে থামলো। আমি রিকশায় উঠে বসলাম। অথচ আমার কোথাও যাওয়ার নেই। পকেটে মাত্র একশ' টাকা আছে। রিকশাচালক বলল, স্যার কোথায় যাবেন? আমি বললাম, একশ' টাকা দিয়ে যতটকু যাওয়া যায়, ততটুকু নিয়ে যাও। রিকশাচালক আমাকে পনের মিনিট পর অন্ধকার একটা রাস্তায় নামিয়ে দিলো। আমিও নেমে গেলাম। রিকশাচালককে কিছু বললাম না। সে আমায় ঠকিয়েছে। আমার ধারনা ছিলো সে কমপক্ষে আমাকে আধাঘণ্টা রিকশায় নিয়ে ঘুরবে। যাইহোক এটা কোনো বিষয় না। আমাকে রাত আট টায় যেতে হবে হাসপাতালে। ছোট চাচা অসুস্থ। খবর পাঠিয়েছেন। এরপর রাত দশটায় যেতে হবে কমলাপুর রেলস্টেশন। মেজো মামা খুলনা থেকে ঢাকা আসছেন। তিনি কেন আসছেন আমি জানি না। আত্মীয়স্বজন থাকলেও জ্বালা। না থাকলে জ্বালা।

একলোক রাস্তায় দাড়িয়ে বেলপুরি বিক্রি করছে।
চ্যাপ্টা পুরির উপর ঘুমনি দিচ্ছে। সাথে পেঁয়াজ মরিচের কুচি। তারপর শশা কুচি। শেষ না। আরো আছে। টক দিচ্ছে। শুকনো মরিচের গুড়ো ঘুমনির উপরে দিয়ে দিচ্ছি। লোকজন বেশ আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে। কেউ কেউ পার্সেল নিয়ে যাচ্ছে। চার পিছ বিশ টাকা। বেলপুরির পাশেই বিক্রি হচ্ছে- ঝাল মুড়ি। লোকজন ভিড় করে খাচ্ছে। এই ঝালমুড়িতে আলুর দমও দেওয়া হচ্ছে। ডিম দেওয়া হচ্ছে। এক ধরনের বিশেষ ঝোল দেওয়া হচ্ছে। লোকজন বেশ আগ্রহ নিয়ে খাচ্ছে। ঝালমুড়িওলার পাশে আছে হালিম বিক্রিতা। লোকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি সুন্দর হালিম খাচ্ছে। ছোট এক বাটি ৬০ টাকা। জমজমাট অবস্থা। একলোক বিক্রি করছে শরবত। চিনি ছাড়া শরবত। শুধু লেবু আর বিট লবন। খাবেন? আমি বললাম, আমার কাছে টাকা নেই। লোকতা বলল টাকা লাগিবে না। এমনিই খান। ফ্রি। আমি ফ্রি শরবত খেলাম। খারাপ না। চলে। শরবত বিক্রেতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

বদ রিকশাওলা আমাকে নামিয়ে দিয়েছে সেগুন বাগিচা।
এখন আমাকে হেঁটে হেটে পান্থপথ যেতে হবে, গ্রীন লাইট হাসপাতালে। কিন্তু আমার এখন একটুও হাঁটতে ইচ্ছা করছে না। পাঠাও বা উবারে করে যে যাবো সেই উপায় নেই। পকেট ফাঁকা। এমন সময় একটা গাড়ি আমার সামনে এসে থামালো। গাড়ি চালাচ্ছে একটা মেয়ে। মেয়েটা সুন্দর। বলল, পান্থপথ কোন দিক দিয়ে গেলে ভালো হবে? আমি মেয়েটাকে বললাম, আমি পান্থপথ যাচ্ছি। মেয়েটা বলল, উঠে বসুন। আমি মেয়েটার পাশে বসে পড়লাম। আসলেই মন থেকে কিছু চাইলে পাওয়া যায়। আল্লাহ মানুষের মনের সৎ ইচ্ছা গুলো কোনো না কোনো ভাবে পূরন করে দেন। এই জন্যই আল্লাহপাক পবিত্র গ্রন্থে বলেছেন, আমার কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? না অস্বিকার করি না। কেন অস্বীকার করবো? আমাদের জীবন সহজ ও সুন্দর করে দেওয়ার জন্য- আল্লাহ প্রেরিত পুরুষদের পাঠিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল আর আমাদের প্রিয় নবীজি দুনিয়াতে না এলে আল্লাহ্‌ এই দুনিয়াই সৃষ্টি করতেন না।

ছোট চাচার অবস্থা খুব খারাপ।
ডাক্তার বলে দিয়েছেন- এখন তাদের হাতে কিছু নাই। সব আল্লাহর হাতে। আমি চাচার পাশে বসলাম। চাচা আমার একটা হাত ধরলেন। চাচার সারা শরীরে নানান রকম যন্ত্রপাতি লাগানো। আমার এই চাচা বিরাট বদ। সারাটা জীবন শুধু মামলা মকদ্দমা করেছেন। গ্রামের দরিদ্র ও অসহায় পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করছেন। তাদের জমি দখল করে নিয়েছেন। এত এত জমি দিয়ে তিনি এখন কি করবেন? এখন তো মরতে বসেছেন। চাচা আমাকে থেমে থেমে বললেন, আমার কোনো সন্তান নেই। আমার সমস্ত জমি ও বিষয়আষয় আমি তোমার নামে লিখে দিয়েছি। যার বর্তমান বাজারদর দেড় কোটি টাকা তো হবেই। আমি বললাম, চাচা আমার কিছু লাগবে না। আমি বেশ ভালো আছি। চাচা বললেন, আমি জানতাম তুমি এই কথাই বলবে। যাইহোক, তুমি আর মেসে থেকো না। ঢাকার ধানমন্ডিতে আমার একটা ফ্লাট আছে। তুমি সেখানে থাকো। একটা বিয়ে করো। আমি ফিরে আসার সময় চাচা বললেন, বাবা শাহেদ আমি মানুষ খারাপ। অনেক পাপ করেছি জীবনে। কিন্তু আমি তোমাকে অত্যাধিক স্নেহ করি। ভালোবাসি। এটা সত্যি।

গ্রীন লাইট হাসপাতাল থেকে বের হলাম।
এখন যেতে হবে কমলাপুর। মামা আসছেন। সমস্যা নেই। এখন আমার পকেট ভরতি টাকা। চাচা জোর করে পকেটে অনেক গুলো টাকা গুজে দিয়েছেন। রাস্তায় জ্যাম থাকার কারনে কমলাপুর গিয়ে পৌছালাম সাড়ে দশটায়। সব সময় ট্রেন লেট করে আজ আমি আমি লেট করেছি। মামা দাঁড়িয়ে আছেন। মামার শরীর অনেক রুগ্ন হয়ে গেছে। মামা আমাকে দেখে বললেন, কই আমাকে তো কদমবুসি করলি না। শহরে থেকে থেকে থেকে আদব লেহাজ সব ভুলে গেলি! আমি মামাকে কদমবুসি করলাম। মামা বললেন, গতকাল রাতে তোকে স্বপ্নে দেখলাম। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই ট্রেনে চেপে বসলাম। যাই ভাগ্নে কে দেখে আসি। তোর মামি বলল, দুটা দিন পড়ে যেতে। মেয়েছেলের বুদ্ধি কাঁচা হয়। মেয়েছেলের কথা মতো চললে সর্বনাশ। ভাগ্নে বউ এর কোথায় চলবি না। আমি বললাম, মামা চলেন। নিশ্চয়ই আপনি অনেক ক্লান্ত। মেসে এসে মামা বললেন, তোর মেসে থাকাটা আমার পছন্দ না। আমি আমি এসেছি, সাথে করে তোকে নিয়ে যাবো। বিয়ে দেবো। তোর জন্য নতুন ঘর তুলেছি। মেয়েও দেখে রেখেছি। মেয়ের নাম জিনাত।

মামা গোছল করলেন। ক্বাযা নামাজ পড়লেন।
তারপর খেয়ে ঘুম দিলেন। আমি ব্যলকনিতে এসে সিগারেট ধরালাম। লতা নামের মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে। যার নাম আমি দিয়েছিলাম বনজ্যোস্না। দেবপযানি খালে যাকে চুমু খেয়েছিলাম। লতাকে খুঁজে বের করেই বা কি হবে? আমার তো নীলা আছে। অনেকদিন নীলার সাথে দেখা হয় না। আগামীকাল যাবো নীলাদের বাসায়। কিন্তু নীলার বাপ কবি নজরুল কলেজের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল জলিল সারাদিন বাসায় থাকেন। এই শালা আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকান। চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলেন। এতদিন পর নীলার সাথে দেখা হবে। একটু হাত ধরবো, খুব কাছাকাছি দাড়াবো। প্রেম ভালোবাসার কিছু কথা বলব, তা না। আব্দুল জলিল সাহেব এক মুহুর্তের জন্যও সামনে থেকে যাবেন না। তুই বুড়া মানুষ। দুপুরে খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দে। একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমা। একমাত্র আব্দুল জলিলের জন্যই নীলাদের বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না। আকাশের অবস্থা ভালো না। বৃষ্টি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৫
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×