somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- (সাতান্ন)

২১ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহবাগ থেকে মিছিলটা দোয়েল চত্তত্বের দিকে যাচ্ছিলো।
নারী পুরুষ কিসব দাবী দাওয়া নিয়ে মিছিল করছে। লম্বা মিছিল। মিছলের লোক গুলোকে খুব হিংস্র মনে হছে। জনতা খেপে গেছে কেন শাহেদ জামাল বুঝতে পারছে না। পহেলা বৈশাখের আনন্দ মিছিল ছাড়া আর কোনো মিছিল সাহেদ জামালের ভালো লাগে না। সে আগে জানলে এই এলাকায় আসতো না। মিটিং মিছিল তার ভালো লাগে না। সে নিরীহ মানুষ। শান্তি প্রিয় মানুষ। দেখতে দেখতে মিছিল শাহেদ জামালের সামনে চলে এসেছে। শাহেদ জামাল ফুটপাতে দাড়িয়ে মিছিল দেখছে। মিছিলটা চলে গেলে শাহেদ জামাল হাঁটা শুরু করবে। সে যাবে পাবলিক লাইব্রেরী। তার একটা বই দরকার। সুন্দর ঝলমলে একটা দিন। এরকম দিনে মিছিল করতে হয় না।

লম্বা মিছিল, শেষ হচ্ছে না। এত লোক কোথা থেকে জড়ো করলো!
শাহেদ জামাল একবার ভাবলো সে মিছিলের সাথে মিশে যাবে কিনা। মিছিলটা হয়তো প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে। সেও মিছিলের সাথে তাল মিলিয়ে চিৎকার করবে। দাবী মানতে হবে। নইলে সচিবালয় ঘেরাও করা হবে। আগুন জ্বলবে। রাজপথ রক্তের নদী হবে। দাবী মানতে হবে। শাহেদ জামাল মনে মনে ভাবছে এভাবে মিছিল করলে কি সরকার তাদের দাবী মেনে নিবে? ঠিক এই সময়- আশেপাশে কোথাও দুম দুম করে শব্দ হলো। বোমা ফাটলো। চারিদিকে ধোয়া দিয়ে ভরে গেছে। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। লোকজন সব পাগলের মতো আচরণ করছে। যেন অজানা অদেখা মৃত্যু তাড়া করেছে।

মিছিলের উত্তেজিত জনতা দৌড়াচ্ছে।
শাহেদ জামাল কি করবে বুঝতে পারছে না। সে কোন দিকে দৌড়াবে? আরো কয়েকটা বোমা ফাটলো। ধোঁয়ায় কিছুই ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না। সবাই ছুটছে। ভাগ্য খারাপ, শাহেদ জামাল দৌড় দিতে গিয়ে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে ফুটপাতে পড়ে গেলো। তার হাটু ও কনুই কাছে ছিলে গেছে। রক্ত পড়ছে। ভীষণ জ্বলছে। শাহেদ জামাল উঠতে পারছে না। লোকজন তার উপর দিয়েই দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে। আশেপাশে কোথাও গোলাগুলি হচ্ছে। কারা করছে গোলাগুলি? একটা বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকজন বাস থেকে নামার সুযোগ পর্যন্ত পায়নি। কে লাগালো বাসে আগুন? এগুলো কি পূর্ব নির্ধারিত ছিলো?

পুলিশ পাগলের মতো আচরন করছে।
যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই সমানে পেটাচ্ছে। চারিদিকে কালো ধোঁয়া। চোখ জ্বলছে। বোমা ফাটার শব্দ, গুলির শব্দ, লোকজনের চিৎকার, পুলিশের খতরনাক আচরন। শাহেদ জামালকে এসব কিছুই স্পর্শ করছে না। সে জ্বলন্ত বাসটার দিকে চেয়ে আছে। বাসের ভেতর একটা মেয়ে বসে আছে। সে ভয়ে কাঁপছে। মেয়েটা দেখতে সহজ সরল সুন্দর। মুখটা ভীষন মায়াময়। শাহেদ জামাল দৌড়ে জ্বলন্ত বাসে উঠে পড়লো। দেখলো মেয়েটার শরীর ভয়ে শক্ত হয়ে আছে। সে নড়তে পারছে না। মেয়েটার পাশের সিটে একলোক গুলি খেয়েছে। তাঁরা সারা শরীর রক্তে মাখামাখি। লোকটা মনে হয় মরে গেছে। মরাকে বাঁচিয়ে লাভ নেই। মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে।

শাহেদ জামাল মেয়েটাকে বলল- আমার হাত ধরুন।
কোনো ভয় নেই। আমি আপনাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছি। মেয়েটা কোনো কথা বলল না। তবে কাঁদছে। শাহেদ জামাল মেয়েটার হাত ধরে টেনে বাস থেকে বের করলো। তারপর দুজন দৌড়াতে শুরু করলো। কথা নেই, বার্তা নেই- হঠাত শুরু হলো বৃষ্টি! বৃষ্টির মধ্যেই শাহেদ আর মেয়েটি দৌড়াচ্ছে। এই বৃষ্টিটার বোধহয় দরকার ছিলো। পুলিশ যে কাজ করতে পারেনি, বৃষ্টি সে কাজ করে দিলো। মুহুর্তের মধ্যে রাস্তা খালি হয়ে গেলো। মিছিলের লোকজন সব নিরাপদ স্থানে চলে গেলো। বাসের আগুন বৃষ্টিতে নিভে যেতে শুরু করলো। মেয়েটার হাত ধরে দৌড়াতে শাহেদ জামালের ভালো লাগছে। সে দৌড়ে ভালো। স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতায় সে সব সময় প্রথম হতো।

সন্ধ্যা ঘনায়মান। বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। তবে একেবারে থেমে যায়নি।
শাহেদ জামাল আর মেয়েটি কাটাবন গিয়ে থামলো। শাহেদ বলল, আর ভয় নেই। আপনি এখন বাসায় চলে যান। মেয়েটা হাপাতে হাঁপাতে বলল, আমার খুব ভয় করছে। আমি একা বাসায় যেতে পারবো না। প্লীজ আপনি আমাকে বাসায় পৌঁছে দিন। কিছু পথ হেঁটে আর কিছু পথ রিকশা করে শাহেদ জামাল মেয়েটাকে তার বাসায় নামিয়ে দিলো। শাহেদ জামাল তার মেছে ফিরলো রাত নয়টার কিছু পরে। সে অনেক সময় ধরে স্নান করলো। আজ মেসে খিচুড়ি রান্না হয়েছে। সুন্দর গন্ধ বের হয়েছে। খিচুড়ির সাথে ডিম আর বেগুন ভাজা। চমৎকার খাবার। গরম গরম খুচিড়ি আর বেগুন ও ডিম ভাঁজার তুলনা হয় না।

এই ঘটনার দশ দিন পরের কথা।
লালমাটিয়া কলেজের সামনে মেয়েটার সাথে শাহেদ জামালের হঠাত দেখা। মেয়েটাই প্রথমে শাহেদ জামালকে দেখে দৌড়ে এলো। বলল, আমাকে চিনেছেন? আমার নাম নীলা। সেদিন আপনি আমাকে বড় বিপদ থেকে বাচিয়েছেন। এমনকি আমার বাসায় পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। অথচ আমি গাধী মেয়ে আপনাকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দেইনি। এমনকি এক কাপ চা অফার করিনি। নীলা আর শাহেদ একটা রেস্টুরেন্টে বসলো। তাদের সামনে চা। চা ঠান্ডা হচ্ছে। সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। তাঁরা গল্প করে যাচ্ছে। নাকি প্রেম? এভাবেই তো প্রেম ভালোবাসা হয়। হয়ে যায়। আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন শাহেদ আর নীলার পরিচয় হলো কি করে? তাদের জন্য আজ শাহেদ আর নীলার পরিচয় পর্ব।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২৩ রাত ১১:৩০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×