somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আমাদের শাহেদ জামাল- (আটান্ন)

০১ লা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রামের নাম মহেশপুর।
একদম আসল গ্রাম। বড় খাটি গ্রাম। এই গ্রামে কোনো পাকা রাস্তা নেই। পুরো গ্রামটা সবুজ। বৃষ্টির পরে পুরো গ্রাম হয়ে যায় গাঢ় সবুজ। যেন গাছপালা গুলো হাসছে। গ্রামের মানুষ গুলো সহজ সরল। এই গ্রামের মানুষদের মধ্যে জটিলতা কুটিলতা নেই। এই গ্রামে হতদরিদ্র কেউ নেই। সবারই জমি আছে, গাইগরু আছে। গোয়াল ঘর আছে। হাঁস মূরগী আছে। শহর থেকে লোকজন এসে গরুর দুধ, হাসমূরগীর ডিম ইত্যাদি কিনে নিয়ে যায়। দাম ভালো পাওয়া যায়া। এই গ্রামে রান্না হয় মাটির চুলায়। মাটির চুলার রান্নার স্বাদ বেশি হয়। অবাক হলেও সত্য এ গ্রামে বিদ্যুত নেই। তবে বিনেরপোতা বাজারে বিদ্যুৎ আছে। সেখান থেকেই গ্রামের লোকজন মোবাইল চার্জ করে। প্রাইমারী স্কুলে আছে। আছে একটা কলেজ। সব মিলিয়ে এই মহেশপুর গ্রামখানি শাহেদ জামালের খুব ভালো লেগেছে।

নদীর নাম বেতনা।
সুন্দর একটা নদী। বেতনা নদীর পানি একদম স্বচ্ছ। এতই স্বচ্ছ যে কুমারী মেয়েরা এই নদীর পানি দেখলে দুই হাত দিয়ে আজলা ভরে মুখ ধুয়ে নেয়। নদীতে কত রকমের নৌকা আর লঞ্চ দেখা যায়। তবে স্টিমার দেখা যায় রাতে। দিনের বেলায় কি বেতনা নদীতে স্টিমার চলে না? জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। দিনের চেয়ে রাতেবেলা মাছ বেশি ধরা হয়। শান্ত নদী। তবে ভাঙ্গন এলাকা। গেল বছর সরকার বাঁধ দিয়ে দিয়েছে, এখন নদী ভাঙ্গন বন্ধ হয়েছে। নইলে মহেশপুর গ্রাম আজ পানির নিচে তলিয়ে যেত। রশিদ নামের একলোক বাজার থেকে মাছ কিনে না। সে বরশি দিয়ে বেতনা নদী থেকে মাছ ধরে। রশিদের ভাগ্য ভালো। সে বরশি ফেললেই রুই কাতলা পেয়ে যায়। রশিদ বলে আমার বাড়ির কাছে এত বড় নদী। আমি কেন বাজার থেকে মাছ কিনতে যাবো?

সম্প্রতি শাহেদ জামাল এই বেতনা নদীর কাছে একটা বাড়ি কিনেছে।
ছোট বাড়ি। তবে উঠান আছে। উঠানে বসে বেতনা নদী দেখা যায়। শাহেদ জামালকে মহেশপুর গ্রামের সন্ধান দিয়েছে ড্রাইভার রশিদ। রশিদ দীর্ঘদিন তাদের গাড়ি চালিয়েছে। রশিদের বাড়ি এই মহেশপুর গ্রামে। বাবা মারা যাওয়ার পর শাহেদ জামাল কিছু টাকা পেয়েছে। সেই টাকা দিয়েই সে এখানে নদীর ধারে বাড়ী কিনেছে। বাড়িটা কেনার পর নিজেকে বেশ স্বাধীন মনে হচ্ছে। শহরের কোলাহল থেকে সে এখন মুক্ত। শহরে থেকে থেকে তার জীবন দুষিত হয়ে গিয়েছিলো। নির্মল বাতাস, সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বেতনা নদী। আহ! শাহেদ জামালের ইচ্ছা সে বাকি জীবনটা এই বেতনা নদীর পাড়ে কাটিয়ে দেবে। তার জীবন থেকে নীলা চলে গেছে। এই কষ্ট তাকে আমৃত্যু পোহাতে হবে। নীলার কথা মনে হলেই বড় কষ্ট হয়।

মহেশপুর গ্রামের সবাই শাহেদ জামালকে আপন করে নিয়েছে।
মহেশপুর হাই স্কুলের হেড মাস্টার তাকে বলেছে স্কুলে ছাত্রদের পড়াতে। গ্রামের লোকজন প্রায় সবাই প্রতিদিন শাহেদ জামালের কাছে আসে। গল্প করে। আপাতত রশিদ মিয়ার বাড়ি থেকেই খাবার আসছে। শাহেদ জামাল মানা করেছে, রশিদ বলেছে আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে মানা করবেন না। আপনার বাবার জন্য আজ আমাই বেঁচে আছি। শাহেদ জামাল বলেছে, তাহলে তোমাকে টাকা নিতে হবে। রশিদ বলেছে, টাকার কথা না বলে আমাকে জুতো দিয়ে দুই গালে মারেন। একথার পর আর কিছু বলার থাকে না। মহেশপুর গ্রামে একটা মসজিদ আছে। মসজিদের ইমাম বয়সে তরুন। সে শাহেদের কাছে এসে বলে বিজ্ঞানের গল্প বলুন। ইমাম বলেন, আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াসি হাজার মাইল। যদি এর বেশি বা কম হতো তাহলে কি হতো?

দিনের বেলা ভাবনা চিন্তা করার খুব একটা সময় পায় না শাহেদ।
সারাদিন গ্রামের মানুষজন আসতেই থাকে। আর দেখিতে পায় একটা মেয়ে দূর থেকে তাকে দেখছে। যেন কিছু বলতে চায়। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। ডুরে শাড়ি পরা। মাথায় দুটা লম্বা বেনী। রাতের খাওয়া শেষ করে শাহেদ জানালার কাছে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে। বড় ভালো লাগে। অন্ধকারে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না। প্রতিটা নৌকায় একটা করে হারিকেন জ্বলে। সেই আলোটকু দেখা যায়। নদীর তীরের বাতাস অতি মনোরম। কোথায় যেন পড়েছিলো শাহেদ, নদীর পারের গ্রামগুলোর মানুষ ভালো হয়। কথাটা একদম সত্যি। মহেশপুরের মানুষজন ভালো। এই গ্রাম দুষিত হয়নি। এই গ্রামে কোনো রাজনীতি নেই। হিংসা নেই। এই গ্রামের সবাই সবাইকে চেনে। এই গ্রামে না এলে সে অনেক কিছু জানতে পারতো না। আজ যদি নীলা তার পাশে থাকতো!

নীলা বলেছিলো, তুমি কি কখনও ভোর হওয়া দেখেছ?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভোর হওয়া দেখার জন্য অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। তার একটা বোট ছিলো। নৌকায় বসে রবীন্দ্রনাথ ভোর হওয়া দেখতেন। ভোর হওয়া দেখা দারুন ব্যাপার। এটা ছিলো তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। শাহেদ জামাল এখন মন ভরে ভোর হওয়া দেখবে। সে রবীন্দ্রনাথের মতোন করেই ভোর হওয়া দেখবে। নৌকায় করে। ভোরের আকাশ বাতাস মানুষকে পবিত্র করে। মহৎ করে। অজনা বিশ্বের দিকে ধাবিত করে। এখন শাহেদ জামালের হাতে অফুরন্ত সময়। এখন সে মন ভরে দেখবে, মন ভরে ভাববে। কত কিছু আছে দেখার, কত কিছু আছে ভাববার। একটা গ্রাম, একটা নদী। একটা নদীর ধারে বাড়ি শাহেদ জামালকে নতুক দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সে চনমন হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারছে তার দীর্ঘদিনের এক ঘুয়েম এবার কেটে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×