১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ মায়ের দুধই শিশুর শ্রেষ্ঠ খাবার। এবার মাতৃদুগ্ধ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘দুর্যোগ মোকাবিলায়
মায়ের দুধ সর্বশ্রেষ্ঠ খাদ্য ও পানীয়’।
মায়ের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার। এ খাবারের সমকক্ষ, শ্রেষ্ঠ বা বিকল্প অন্য কোনো খাবার নেই। জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে শিশুকে
বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হয় এবং অব্যাহতভাবে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই খাওয়াতে হয়। ছয় মাস পর মায়ের দুধের
পাশাপাশি ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজনমত (ডাল, ভাত, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম বা কলিজা) একত্রে মিশ্রণ করে খিচুড়ি বানিয়ে
খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন গড়ে ৮০-১০০ মি.মি. পরিমাণ শাল দুধ তৈরি হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় অজ্ঞতাবশতঃ অনেকেই এই দুধ ফেলে
দেন। মায়ের এই দুধকে শিশুর জীবনের প্রথম টিকা হিসেবে ধরা হয়।
পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা বাকারায় ২৩৩নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন “জননীগণ তাদের সন্তানদিগকে পূর্ণ ২ বছর বুকের দুধ পান
করাইবে, যদি তাহারা বুকের দুধ দান কাল পূর্ণ করিতে চাহে।” মায়ের দুধ শিশুর জন্য স্বর্ণমানের খাবার, যার কোনো বিকল্প নেই।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জন্মের পর ১ ঘন্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হলে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা
যায়।আর যদি ৬ মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তাহলে ১৩ শতাংশ শিশুর জীবন রক্ষা পাবার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে শিশুর
পুষ্টির বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, ৯৫ লাখ শিশু তাদের বয়স ৫ বছর হবার পূর্বেই মারা যায় এবং এ মৃত্যুর ৩৫ শতাংশই ঘটে
অপুষ্টি হীনতার কারণে।
অপর এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যেসব শিশু মায়ের দুধ পান করে তাদের মানসিক বিকাশ তুলনামূলকভাবে ভালো হয় এবং তাদের আইকিউ কৃত্রিম দুধ পানকারী শিশুদের চেয়ে কম-বেশি ৮.৫ পয়েন্ট বেশি হয়। গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে, কৃত্রিম দুধে ১৬ ভাগ শিশু পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। ২৭ ভাগ শিশু শ্বাসপ্রণালির রোগে আক্রান্ত হয় আর ভিটামিন স্বল্পতাজনিত রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় ৪৮ ভাগ শিশু।
মায়ের দুধের উপকারিতা: (শিশুর জন্য)
১. শিশুটি জন্মের ১ ঘন্টার ভিতরে যদি শাল দুধ খাওয়ানো হয় তাহলে নবজাত শিশুর সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।
২. এর ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে, শিশুর শরীর সুস্থ থাকে এবং শিশুর শারীরিক বুদ্ধি ও বিকাশ যথাযথভাবে বিকশিত
হয়।
৩. মস্তিষ্কের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় টরিন থাকে মায়ের দুধে।
৪. শালদুধ খাওয়ালে শিশুর পেটের কালো পায়খানা তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হয়।
৫. এতে জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
৬. শালদুধ খাওয়ালে শিশুকে ডায়রিয়া, সেপসিস, নিউমোনিয়া, কান পাকা, মেনিনজাইটিস, একজিমা, এলার্জি,
দাঁতের অসুখ ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
৭. একমাত্র মায়ের দুধেই বুদ্ধি বিকাশের একমাত্র জীবন্ত উপাদান ডিএইচএ আছে। যা শিশুর মেধা বিকাশ করতে সহায়তা করে।
৮. শালদুধ খাওয়ালে মা ও শিশুর মধ্যে একটা অবিচ্ছেদ্য আত্মিক বন্ধন সৃষ্টি হয়।
৯. বুকের দুধে গরুর দুধের তুলনায় বেশি ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ থাকে, যা শিশুকে অন্ধত্ব ও স্কার্ভি থেকে রক্ষা করে।
মায়ের দুধের উপকারিতা: (মায়ের জন্য)
১. মায়েদের স্তন ও জরায়ুতে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
২. মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ ও মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
৩. এ ছাড়া প্রথম ৬ মাসের মধ্যে মায়ের গর্ভবতী হওয়ার আশঙ্কা ৯৮ শতাংশ কমে যায়।
৪. দ্রুত শালদুধ খাওয়ালে তা মায়ের জরায়ুর ফুল পড়তে সাহায্য করে।
৫. মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয়। ফলে মা রক্তশূণ্যতা থেকে রক্ষা পায়।
মায়ের দুধের উপকারিতা: (জাতির জন্য)
১. মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুর জন্য অতিরিক্ত খাবার কেনার প্রয়োজন হয় না। (এতে পরিবার ও সরকারের খরচ বাঁচে)
২. শিশুর ঘন ঘন অসুস্থ হবার হার অনেক মাত্রায় কমে যায়। (এতে চিকিৎসা খরচ কমে যায়)
৩. কৌটার দুধ আমদানি না করার জন্য দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়।
বি.দ্র: বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩২০০ কোটি টাকা মূল্যের গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হয়।
গুড়ো দুধের অপকারিতা:
বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, খিঁচুনি প্রভৃতি হতে পারে। অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে। মেলামিন-মিশ্রিত গুঁড়ো দুধ
পান করলে শিশুর কিডনিতে পাথর হতে পারে। লিভারকে করে দিতে পারে অচল।