somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি লিখবেন? কিভাবে লিখবেন?

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এমন অনেকে আছেন যাদের লেখার অনেক সখ আছে, কিন্তু কি লিখবেন, তা খুঁজে পান না। এমন জ্ঞানী লোকও আছেন, যারা লেখালেখিতে অভ্যস্ত নন। লেখার পরামর্শ দিলে তারা কি লিখবেন, কিভাবে লিখবেন, শুরুটা কিভাবে করবেন তা খুঁজে পান না। তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে- সাহস করে লিখতে বসুন এবং ধৈর্য ধরে লিখে যান।

লেখার আছে বিচিত্র ধরণ। এ যেনো খাবার টেবিলে সাজানো রকমারি খাবার। কোনটি দিয়ে শুরু করবেন, তা নিজেই ঠিক করুন। প্রতিটি পাত্র থেকেই কিছু কিছু টেস্ট করে দেখুন। তারপর মন আর রুচী যে দিকে টানে, সেটা দিয়েই শুরু করুন।
পত্রিকায় লেখুন, সংবাদ তৈরী করে পাঠান, কোন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করে লিখে পাঠান। তথ্য সমৃদ্ধ ফিচার লিখুন। প্রবন্ধ লিখুন। কোন পুস্তকের সমালোচনা লিখুন। অন্য ভাষা থেকে কিছু অনুবাদ করুন। স্মৃতিকথা লিখুন। ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখুন। গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও নাটক লিখুন।

তারপর আরো এগিয়ে চলুন। কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে নিবন্ধ রচনা করুন। বই লিখুন। সামজিক সমস্যার বিবরণ ও তা সমাধানের জন্য আপনার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরুন আপনার লেখায়। আপনার আদর্শ ও মতবাদকে কেন্দ্র করে লিখুন। অন্যদের মতবাদের গঠনমূলক ও যৌক্তিক সমালোচনা লিখুন। সেরা মানুষদের জীবনী লিখুন। আত্মচিন্তা ও সমাজকে পুঁজি করে গল্প লিখুন। সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ভূগোল, ইতিহাস ও বিজ্ঞান নিয়ে লিখুন।
এভাবে সব পাত্র থেকেই কিছু খেয়ে দেখুন। আপনার রুচীই বলে দেবে, কোন খাবারটি আপনার পছন্দের। কোনটি আপনার জন্য অধিকতর মানানসই।

এভাবে লিখতে থাকুন। আস্তে আস্তে লেখা আপনার ভালো লাগবে। তখন কলমই বলে দেবে আপনি কি লিখবেন। তবে শুধু কলমের গুণেই লেখা সুন্দর হবে না। লেখার জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনাবোধ। প্রয়োজন বিখ্যাত লেখকদের লেখা অন্তরদৃষ্টি দিয়ে অধ্যায়ন ও হৃদয়ঙ্গম করা। আপনার মতাদর্শ ও রুচীবোধ যেমন, তেমন লেখকদের লেখা বেশী বেশী পড়ুন। তাহলে ঐ লেখকের বৈশিষ্ট ও ধরণের সাথে আপনার মানসিক যোগসুত্র স্থাপন হবে। কি ? এই কথাটা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে? তাহলে শুনুন, বাবা-মা যেমন হয়, সন্তানের বৈশিষ্টও তেমন হয়। একটা ছাত্রের আদব-লেহায, জ্ঞান, চাতুর্যতা, বুদ্বিমত্তা দেখে সহজেই তার বাবা-মা ও শিক্ষকের চরিত্র অনুমান করা যায়। উদাহরণ স্বরুপ- একটা ছেলে অভদ্র আচরণ করলে, আমরা তাকে বলি, “স্কুলে স্যারেরা তোকে এই শেখায়”?

তবে লিখতে গেলে সম্মুখে আছে অনেক বাঁধা। অনেক সমস্যা ও জটিলতা। এগুলো ডিঙ্গাবার দুঃসাহস কি আপনার আছে? লেখক হবার পথে কি কি বাঁধা আছে জানেন?

১. অনেক কাঠ-খড়ি পুড়িয়ে একটা লেখা তৈরী করে পত্রিকায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু লেখাটি ছাপানোর জন্য মনোনিত হয়নি।
২. লেখাটি কাউকে পড়তে দিয়েছেন কেমন হলো তা জানার জন্য। তিনি আপনার লেখাটি পড়ে বললেন, "এটি কোন লেখা হলো"? তখন নিশ্চয়ই আপনার মন ভেঙ্গে যাবে!
৩. কোন প্রকাশকের কাছে লেখা দিয়েছেন, কিছুদিন পর লেখাটি প্রকাশিত হল ঠিকই, কিন্তু তাতে আপনার নাম নেই, আছে অন্য কারো নাম!
৪. লেকাটি প্রকাশ পেয়েছে, বিক্রিও হচ্ছে হরদম, প্রকাশক লাভবান হচ্ছেন, কিন্তু আপনি বঞ্চিত।
৫. কোন প্রকাশক না পেয়ে, আপনি নিজেই বই প্রকাশ করলেন, কিন্তু বিক্রয়ের কৌশল না জানায় বইটি বিক্রয় হল না।
৬. লেখাটি প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু সরকারের বিপক্ষে যাওয়ায় তা বাজেয়াপ্ত করে আপনাকে কারাদন্ড দেয়া হল।
৭. ব্লগে লেখা প্রকাশ করেছেন কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ায়, মনোবল হারিয়ে লেখালেখি বন্ধ করে দিতে চাইলেন।


এভাবে লেখকের সামনে বহু বাধা আসতে পারে। তাই বলে লেখককে নেতিয়ে পড়লে চলবে না। সাহসিকতার সাথে সামনে অগ্রসর হতে হবে। আপনি জানেন কি? বহু লেখকের লেখা প্রথম দিকে পত্রিকায় ছাপা হত না। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই নিজের লেখা সংশোধন করতেন। ইংরেজদের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক জর্জ বার্নার্ড শ’র লেখা কোন প্রকাশকই ছাপাতে চাইতেন না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে তাকে কারাদন্ড দিয়েছিল। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। কারাগারে বসেই লিখেছেন "রাজবন্দীর জবানবন্দী"। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কবি ফররুখ আহমেদ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। লেখার অপরাধে মিশরের বিখ্যাত লেখক সৈয়দ কুতুব-কে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল।
তবু শত বাঁধা পেরিয়ে তারা হয়েছেন শ্রেষ্ঠ লেখক। লেখার মাঝে আজো বেঁচে রয়েছেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। আরো বহুকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়তন্ত্রিতে। ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তাদের নাম।

অতএব ভয় পেলে চলবে না। হাল ছেড়ে দিয়ে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না। অদম্য সাহস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে দেখুন আপনিও একদিন হতে পারবেন রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল, আল্লামা ইকবাল, ফররুখ আহমেদ, হুমায়ন আহমেদসহ বিখ্যাতদের একজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×