somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বালিকার গল্প

০৭ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একটা ছোটগল্প লিখে ফেলার ট্রাই মারছি। প্লট পুরানো। সবার জানা। :D


বালিকা তখন কেবল কলেজে উঠি উঠি করছে। হাতে অফুরন্ত সময়। বাসায় আর কত বসে থাকা যায়! ঘুরাঘুরিও তেমন করা হয় না। কোচিং নিয়ে ব্যস্ততা নামের ফাঁকিবাজি। কোচিং করতে যেয়েই একজনের সাথে পরিচয় হয়ে গেলো। ছেলেটাই ছোক ছোক করছিল। কিন্তু বোকা বালিকাটা বুঝেও কেন জানি ছেলেটাকে প্রশয় দিল। কোচিং এর ক্লাসের ফাকে ফাকে হাল্কা গল্পগুজব চলতে থাকে। এক বান্ধবী বুদ্ধি দিল নেটের লাইন নেবার জন্য। বালিকার আস্তে আস্তে হাতেখড়ি হলো ইন্টারনেট জগতের সাথে। তারপর শুরু হলো এমএসএনের ধুমধারাক্কা ইউজ। বালিকা কেমন যেন এক ঘোরের জগতে চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। বাস্তব জগত আর ভার্চুয়াল জগতের তফাত তার মাথায় থাকে না। এরপর একদিন এমএসএনেই ছেলেটা তাকে ভালোলাগার কথা জানায়। বালিকা তার সদ্য আসা যৌবনের ধাক্কায় ভেসে গেলো ছেলেটার তীব্র আহবানে। বলে দিল তার মনের সব কথা অকপটে।

এরপর কয়েকমাস কেটে গেলো আর তাদের সাহসও বাড়তে থাকে। শুরু করে তারা বাইরে দেখা করা। শুরু হলো নতুন আসা পিজা হাট, ধানমন্ডির দোকানগুলোতে তাদের নিয়মিত আনাগোনা। নিয়ম হয়ে দাঁড়ায় মেয়েটির অনেক রাত করে বাসায় ফেরা। বাবা মায়ের চোখ রাঙ্গানি সে অবহেলায় উড়িয়ে দেয় ছেলেটার জন্য। ছেলেটা বেশ বেহায়া ছিল, ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে মেয়েটার উপর অধিকার ফলাতো। পাগল সেই বালিকা কেন জানি অধিকার ফলানোটা পছন্দ করত। বাড়াবাড়ি হয়ত কিছু সময়ের জন্য হয়ে যেত মাঝে মাঝে। মেয়েটার মৃদু কিছু প্রতিবাদ টেকে না ছেলেটার উন্মাদনার কাছে। মেয়েটি স্বপ্নে দেখে সেদিন থেকে দশ বছর পরে তারা কি করবে। মনে মনে হয়ত সে ভেবে নিত তাদের ছেলেমেয়ের নাম!

এইভাবে স্বপ্নের আকাশে ভাসতে ভাসতে বছর পাড় হয়ে যায়। বোকা বালিকা কিভাবে জানি টের পায় ছেলেটা আর তাকে তেমন পছন্দ করে না। তাকে সময় দেয় না। এমএসএনেও ছেলেটাকে তেমন পাওয়া যায় না। এর মধ্যে বালিকা বেশ ভালো একটা কলেজে চান্স পেয়ে গেছে। পড়াশোনা, নতুন জায়গার স্বপ্ন তাকেও একটু হড়কে দেয়। ছেলেটা মাঝে মাঝে বালিকাকে ফোন দেয়। কিন্তু আর দেখা তেমন করে না। করলেও মেলা অজুহাত আর শুধু সুযোগ নেয়া। বেবিট্যাক্সিতে ঘোরার জন্য, রিক্সায় ঘন্টা ভাড়া করে চলার জন্য ছেলেটার উৎসাহ খুব বেশি দেখা যেত। বোকা মেয়েটা প্রতিবাদ করলেও ছেলেটার কথা ভুলে যেতে পারে না। তার ফ্রেন্ডরা তাকে চেষ্টা করে ছেলেটার কাছ থেকে সরানোর কিন্তু বোকা মেয়েটার মাথায় শুধু সেই ভন্ডটার কথাই ঘুরে ফিরে আসে।

এমনি করে আরো এক বছর গেলো। অবশেষে হঠাৎ একদিন ছেলেটি বালিকাকে তার অপারগতার কথা জানিয়ে বিদায় নেয়। বালিকা বোঝানোর ফেরানোর চেষ্টা করে অনেক। কিন্তু তাকে খুঁজে পায় না কোথাও। একেবারেই উধাও হয়ে গেছে।

আজ বহুদিন পরে যৌবনের শেষ প্রান্তে এসে ছেলেটির মনে পড়ে তার হারানো সেই দিনগুলোর কথা। বালিকার গায়ে গা লাগিয়ে বেবিট্যাক্সিতে বসে থাকার কথা। বালিকাকে ধমক দিয়ে বিশেষ ভঙ্গিতে মাপ চাওয়ার কথা। বালিকাকে দেয়া তার স্বপ্নের কথা, বালিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার কথা। কিন্তু তার অহংবোধ তার অ্যারোগেন্ট মনোভাব তাকে যেতে দিল না বালিকার কাছে। অবশেষে ধুসর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের এপিটাফে সে লিখে যেতে চায়

হয়ত একদিন ফিরে আসবে সে
লক্ষীছাড়া এই পাগলের কাছে
ভুলটুকু মুছে দিয়ে
কষ্টটুকু আদরে ঢেকে!
হয়ত এই নশ্বর জীবনে নয়!
কিন্তু ছেলেটি তার দাবী ছাড়বে না!


আর বালিকা তার ছোটবেলার এইসব কথা মনে পড়লে এখন বিরক্ত হয়। চিন্তা করে কেন এত বোকা ছিল সে! আর পাশে শোয়া ছোট্ট বাবুটার গায়ে কাঁথাটা ঠিকমত জড়িয়ে দেয়!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৭:০৯
২৮৬টি মন্তব্য ২৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×