somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলে ভাসা পদ্ম.........(দ্বিতীয় অংশ)......(গল্প)

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশ


৩)

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সুবর্না এক্সপ্রেসটা সিলেট স্টেশনে এসে যখন পৌঁছায় তখন রাত সাড়ে দশটার মতো বাজে। সিলেট জায়গাটা অবন্তীর কাছে খুবই অপরিচিত। খুব ছোটবেলায় বাবার সাথে একবার সে সিলেটে এসেছিলো, বড় হওয়ার পর আর আসা হয়নি, কাজেই স্টেশনে নেমেই একরাশ দুশ্চিন্তার মধ্যে ডুবে গেলো অবন্তী। তাছাড়া রাতের বেলা কোথাও একা একা চলা ফেরা করতেই ভীষণ ভয় পায় সে, বিশেষ করে তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটা যে রাতে ঘটেছিলো তার পর থেকে রাত নিয়ে তার মনের মাঝে এক ধরনের ফোবিয়া কাজ করে সবসময়। তাকে নিতে যদিও তার কোম্পানীর একজন লোক আসার কথা কিন্তু স্টেশনের চারপাশটায় তাকিয়ে বহু খোঁজাখুঁজি করেও সেই ধরনের কাউকেই দেখতে পেলো না সে। শেষে কি করবে কি করবে ভেবে ভেবে যখন অবন্তী প্রায় অস্থিরতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যাচ্ছিলো, তখনই হালকা পাতলা গড়নের ২৪/২৫ বছর বয়সের একটা ছেলে এসে তাকে জানালো যে-- সে কোম্পানীর একজন কর্মচারী, অবন্তীকে নিতে এসেছে। অবন্তী ভালো করে ছেলেটাকে দেখলো, জীবনের সেই কুৎসিততম ঘটনাটার পর থেকে কাউকেই আর সেভাবে বিশ্বাস করতে পারে না অবন্তী। সে ছেলেটার কাছে কোম্পানীর কোন পরিচয়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলো। পরে ছেলেটা যখন তার মানিব্যাগ থেকে নিজের আই.ডি কার্ডাটা বের করে দেখালো, কেবল তখনই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে ছেলেটার সাথে কোম্পানীর স্টাফ কোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো অবন্তী।

স্টাফ কোয়ার্টার বললেই একটা বাড়ির যে আঙ্গিক বিন্যাসটা মুহুর্তের মাঝেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার সাথে অবন্তীদের কোম্পানীর কোয়ার্টারের তেমন কোন মিল নেই। চারতলা একটা বাড়ি, ছয় সাত কাঠার মতো একটা বিশাল জায়গার উপর আগের শতকের ষাট সত্তর দশকের নির্মাণশৈলীর মোটামুটি একটা নমুনা হয়েই দাঁড়িয়ে আছে কিছু কিছু জায়গায় খসে যাওয়া সিমেন্টের আস্তরণ নিয়ে। এই নিঝুম রাতের আঁধারেও অবন্তী স্পষ্টই বুঝতে পারলো যে-- বাড়িটার চারপাশটা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় ঘেরা। বাড়িটার সামনের জায়গাটাকে অনেকটা উঠোনের মতো মনে হয়, পূর্নিমা রাতে মুগ্ধ নয়নে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে মায়াময়ী জোছনার খেলা দেখার জন্য জায়গাটা একেবারেই মন্দ না -বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ব্যাপারটা চিন্তা করছিলো অবন্তী, হঠাৎ তার সাথে আসা কোম্পানীর কর্মচারীটা বললো, "ম্যাডাম ঘরে চলুন, আপনাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে আবার বাসায় ফিরে যেতে হবে, অনেক রাত হয়ে গেলো।"

"হ্যাঁ চলো" বলে ছেলেটার পিছু পিছু বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো অবন্তী। তাকে কোয়ার্টারের তিনতলার উত্তর পাশের একটা ফ্ল্যাট দেয়া হয়েছে। ফ্ল্যাটটায় সর্বসাকুল্যে দুটো রুম আছে, সাথে একটা রান্নাঘর আর একটা বাথরুম। পিছনের দিকের রুমটার সাথে জরাজীর্ণ টাইপ একটা বারান্দাও আছে। অবশ্য অবন্তীর কাছে মনে হয়েছে--ঠিকঠাক মতো পরিষ্কার করা গেলে বারান্দাটা অবসরের অলস সময় কাটানোর একটা উপযুক্ত স্থান হয়ে উঠতে পারে। মাঝখানে কোম্পানীর কর্মচারীটার কাছ থেকে জরুরী কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপার জেনে নিলো অবন্তী। যাওয়ার আগে ছেলেটার কাছে নিজের জয়েনিং ব্যাপারেও কিছু তথ্য জানতে চাইলো সে। ছেলেটা বললো, অবন্তীকে ৩ নম্বর সেক্টরের ৪টা চা বাগান সুপারভাইজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ৩ নম্বর সেক্টরের ম্যানেজার তাশফিন হাসানের কাছে রিপোর্ট করতে হবে তাকে। তাশফিন হাসান গত কাল ঢাকায় চলে গেছেন তার বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে, তিনি ফিরে আসবেন আগামী পরশু সকালে। তাই কোম্পানী থেকে অবন্তীকে আগামী পরশু বিকাল ৩টায় তাশফিন হাসানের কাছে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। কথাগুলো বলেই ছেলেটা চলে গেলো। বিয়ে শব্দটা শুনে কেমন যেন আঁৎকে উঠলো অবন্তী,আজ সকাল বেলায় যে সে নিজেই নিজের বিয়ের সকল আয়োজনকে ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছে--ব্যাপারটা গত কয়েক ঘন্টায় প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো সে, তাশফিন হাসানের বড় ভাইয়ের বিয়ের কথাটা শুনে সেই কূৎসিত মুহুর্তগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো আবার তার। এতক্ষণে নিশ্চয়ই পুরো ঘটনাটা জানাজানি হয়ে গিয়েছে। বাবার জন্য খুব কষ্ট হতে লাগলো অবন্তীর। বেচারা অনেক ধুমধাম করে অবন্তীকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, বাইরের মানুষগুলোর সামনে তিনি এখন কিভাবে মুখ দেখাবেন--কথাটা ভাবতেই চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে উঠলো অবন্তীর। তার উপরে অবন্তীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা শুনে নিশ্চয়ই এতক্ষণে হাঁটে হাঁড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে মোতালেব, অবন্তীর হবু বর। মোতালেবের কথা মনে হতেই রাগে কটমট করে উঠলো অবন্তী। তিন বছর আগের সেই কাল রাত্রির পর থেকে গত তিনটা বছর অবন্তীর জীবনটাকে এক রকম দোজখখানায় পরিণত করে দিয়েছে জানোয়ারটা। শেষে কিভাবে কিভাবে যেন কি সব চাল চেলে নিজের পারিবারিক মর্যাদা আর বিত্তের প্রতাপ দেখিয়ে সবার কাছে নিজের আসল চেহারাটা আড়াল করে মোতালেব অবন্তীর বাবা মাকে এক সময় রাজিই করিয়ে ফেললো অবন্তীকে তার কাছে বিয়ে দেয়ার জন্য।কথাগুলো ভাবতেই কেমন যেন অসুস্থ বোধ করা শুরু করলো অবন্তী। সে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পিছনের রুমের বারান্দাটার একটা কোণায়। নাকে খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আসলো তার। বেলী ফুলের গন্ধর মতোই তো মনে হচ্ছে--সে ভালো করে নিচের গাছগুলোর দিকে তাকালো। অবন্তী যা ভেবেছে তাই--নিচের গাছগুলোর মধ্যে একটা গাছ বেলী ফুলের। বেলী ফুলের গাছ চেনায় তার কোন ভুল হওয়ার কথা না, কারণ বেলী ফুল অবন্তীর খুবই প্রিয়। ছেলেবেলায় তারা যে বাসাটায় থাকতো, সেটার পাশেও এমনই একটা বেলী ফুলের গাছ ছিলো। সেই থেকেই অবন্তীর বেলী ফুলের প্রেমে পড়া। তার রুমের বারান্দাতেও বেলী ফুলের একটা বনসাই আছে। বেলী ফুল নিয়ে অবন্তীর এমন পাগলামি দেখে মা মাঝে মাঝেই তাকে ভয় দেখাতেন এই বলে যে বেলী ফুলের গাছে সাপ থাকে--কথাটা মনে হতেই আপন মনে হাসতে আরম্ভ করলো অবন্তী, হঠাৎ তার হাসিটা বন্ধ হয়ে গেলো, তার এভাবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসাতে মায়ের নিশ্চয়ই এখন অনেক কস্ট হচ্ছে, কেঁদে কেটে নিশ্চয়ই এতক্ষণে দুকুল ভাসিয়ে দিয়েছেন তিনি। জীবনের চলার পথে অলক্ষেই হুট করে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা কিভাবে ঝড়ের মতো পুরো জীবনটাকে লন্ডভন্ড করে দেয়--নিজ মনে মনে ভাবতে ভাবতেই হৃদয় অবরুদ্ধ করে গুবলে উঠা বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অবন্তী।
.........................................................................(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০১
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×