somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তবলীগ জামাতের কর্মীদের ইমান ও শিরক নিয়ে ভ্রান্তি ।

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তবলীগ জামাতের কর্মীদের একটি ভুল ' সংসার কিভাবে চলবে, বা ব্যবসা দিয়ে আমার সংসার চলে ' এজাতীয় কথা বলা শিরক , ইমানের পরিপন্হি ।

আবু বকর রা: খলিফা হওয়ার পর কাপড়ের গাট্টি মাথায় নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। হজরত ওমর রা: ওনাকে ঠেকান, এই বলে: ' আপনি যদি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন তবে খেলাফতের কাজ চলবে কি ভাব ? ' জবাবে হজরত আবু বকর বলেন তাহলে আমার সংসার চলবে কি করে ? হজরত ওমর রা: খলীফে হওয়ার পর বলেন আমার জাতি জানে আমি ব্যবসা করি, এ দিয়েই আমার সংসার চলে । তোমরা আমকে খেলাফতের কাজে নিয়োজিত করেছ, এখন আমার জীবিকার কি হবে ? যেহেতু উম্মতের মাঝে ওনাদের ইমানই সবচয়ে বেশী তাই বুঝা যায় ' সংসার চলবে কি করে' এটা বলাতে ইমানের ক্ষতি হয় নি। কিন্তু অনেক কর্মীরা এটা মনতে চান না । শেষে এ কথা বলে বসেন শিরক হবে না তবে এটা তাকওয়ার খেলাপ । প্রশ্ন আসে ওনাদের তাকওয়া কি আবু বকর - ওমর থেকেও বেশী ?

দৈনন্দিন জীবনে আমরা এ জাতীয় কথা আমরা হর হামেশাই বলে থাকি । কোরাণ হাদীসেও এর প্রতি নিষেধ করা হয় নি । এসব সাধারণ কথাগুলোকে স্বাভাবিক ভাবেই নেওয়া উচিত । যেমন আমরা কারো সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করি : ভাই কেমন আছেন ? উত্তরে সাধারণত মানুষ বলে "ভাল আছি" । বা অনেক সময় বলে না ভাই"ভাল নেই" । কোন কোন উর্বর মস্তিষ্ক এর মাঝেও শিরক খুজে পান ! ওনারা বলেন " ভাল আছি" বলা যাবে না, বলতে হবে আল্লাহ ভাল রেখেছেন । " কেমন আছেন" বলা যাবে না, " আল্লাহ কেমন রেখেছেন?" বলতে হবে । অথচ হাদীসেই আছে আল্লাহর রসুল এক সাহাবীর কাচে জানতে চাইছেন "সকাল কিভাবে কাটালে "? আল্লাহর রসুল এটা জানতে চাননি " আল্লাহ তা'লা তোমার সকাল কেমন কাটালেন ?" মুলত এগুলো এক শ্রেণীর অজ্ঞ লোকের বাড়াবাড়ি । যদিও সব কর্মীরা এই জাতীয় বাড়াবাড়ি করেন না , তবুও বাড়াবাড়ি করেন এদের সংখ্যাও একদম কম না । একটা জামাতে এরকম একজন কর্মী থাকলেই বাকীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী থেকে পাশ করা আমার এক বন্ধু তিন চিল্লার জন্য বের হয়ে এক জামাতে থাকার সময় অসুস্হ হয়ে যান । বেচারা ঔসুধ খাচ্ছিলেন, আর এক উর্বর মস্তিষ্কের কর্মী তাকে ধরে বসলেন " আপনি ঔসুধ খান কেন ? ঔষুঢের কোন ক্ষমতা নেই, ঔসুধের উপর থেকে এক্কীন হটাতে হবে" , ইত্যাদী ।
প্রশ্ন জাগে বেচারা এত বছর ফার্মেসী পরে কি শিরক চর্চা করেছেন ? অথচ হাদীস শরীফে আছে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ঔষুধ আছে । মানে কি ? ঔসুধ খাওয়া শিরক ? রসুল শিরক চর্চা করেছেন ? নাকি ইমানের দূর্বলতার পথ উম্মতকে দেখিয়েছেন ?

তবীগের কর্মীরা মুসলমানদের দাওয়াত দেন " আল্লাহ খাওয়ায় - আল্লাহ পালে "। অবশ্যই আল্লাহ-ই খাওয়ান , তিনিই পালেন । আর দাওয়াত হিসেবে এটা অনেক উপকারী -ও বটে । এই দাওয়াতের দ্বারা মানুষের মনোযোগ আল্লাহর দিকে ধাবিত হবে, দুনিয়ামুখী বস্তুবাদী মানুষ কিছুটা আখেরাতমুখী হবে সেটাই কাম্য । তবে কিছু উর্বর মস্তিষ্ক এমন একটা ভাল দাওয়াতেও প্যাচ লাগিয়ে ফেলেন । তারা এখানে এসে যে ভুলটা করে ফেলেন সেটা হচ্ছে : মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথা বার্তায় তারা ভুল ধরতে শুরু করেন । যেমন আপনি বললেন " আজকে আমার বন্ধু আমাকে ফুল; প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানী খাইয়েছে " । তারা বলে বসবে : ভাই এভাবে বলি বন্ধুর মাধ্যমে আল্লাহ কাচ্চি খাইয়েছেন । কেউ কেউ আরো বাড়াবাড়ি করে: আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ খাইয়েছেন এটা বললেই নাকি শেরেক হয়ে যাবে ! অথচ হাদীসে দাওয়াত খাওয়ার দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে :" আল্লাহ যে খাইয়েছে খাওয়ান, যে পান করিয়েছে তাকে পান করান " তাহলে কি রসুল শিরক মিশ্রিত দোয়া শিখিয়েছেন? কেউ বুঝতে চাইলে বুঝা সহজ, আর বুঝতে না চাইলে কে বুঝাবে ?

আল্লাহ পাক রব , তিনি সৃষ্টি জগৎকে প্রতিপালন করেন । রব হিসেবে আল্লাহ ছাড়া কাউকে স্বীকার করা যাবে না । এখন যদি কেউ বলে বসে "ছোট বেলায় বাবা - মা আমাকে প্রতিপালন করেছেন " এটা কি শিরক হয়ে যাবে ? কেউ কেউ তো এর চেয়ে অনেক হালকা বিষয়েও শিরক খুজে পায় , অথচ পবিত্র কুরাণ শরীফে বাবা - মার জন্য যে দুয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তার অর্থ হল : হে আমাদের প্রতিপালক তাদের ( বাবা - মা) উপর রহম করেন যেমন তারা ছোট বেলায় আমাডের প্রতিপালন করেছেন । কিন্ত আমাদের কোন কোন মুবাল্লিগ ভাইরা এ জাতীয় কথা শুনলে বলেন, দিলের এক্কীন ঠিক হয় নি! কেউ কেউ বলেন অন্তরে আল্লাহর পাশাপাশি মাখলুকের এক্কীন আছে, সুতরাং এগুলোও এক প্রকার শিরক। এভাবে আমরা কত সহজেই একজন মুসলমানকে শিরকের মাঝে ফেলে দিচ্ছি, অথচ এসব দৈনন্দিন স্বাভাবিক কথাকে সঠিক অর্থে নিলে বিষয়গুলো এত কঠিন না ।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:০০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×