জন্মদিন
আদিকালে লোকজন আদৌ জন্মদিন নিয়ে মাথা ঘামাত না । কবে কার জন্মদিন হিসাবও রাখত না কেউ । এমনকি ১৩ শতকেও মার্কো পোলো অবাক হয়ে যান এটা দেখে যে চীনারা তাদের জন্মদিন স্মরণ করতে পারে । প্রকৃতপক্ষে জ্যোতিষীচর্চার প্রভাবেই মানুষ প্রথম জন্মদিন সম্পর্কে সচেতন হয় । নিজেদের ভাগ্য গণনার জন্য জন্মদিনটা জানা তখন জরুরী হয়ে পড়ে । জন্মদিনকে ভিত্তি করেই জ্যোতিষীরা লোকজনের রাশি নির্ণয় করতেন । এবং জাতকের জন্মদিনে গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান দেখে তার ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বলে দিতেন । তবে জন্মদিনকে উপলক্ষ করে উৎসব অনুষ্ঠানের রেওয়াজ হয়েছিল খ্রিষ্ঠপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে । এ সময় পশ্চিম এশিয়ার লোকজনই জন্মদিনের উৎসব করে বেশ জাঁকজমক করে । এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পারস্যবাসীরা (বর্তমানে ইরান) । এরা পশ্চিম এশিয়া দখল করার পর যে উৎসবের আয়োজন করে সেখানেও জন্মদিনের উৎসব ছিল । খ্রীষ্ঠপূর্ব ৫ শতকের এ রকম একটি রাজকীয় উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায় বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডেটাসের বিবরণে : সারা বছর ধরে তারা যেসব উৎসব পালন করেছে তার মধ্যে জন্মদিনের উৎসবই ছিল সবচেয়ে দেখার মত । জন্মদিনের কেকের প্রচলন হয় এরও কয়েক শতক পরে । গ্রিসে চন্দ্রদেবতার পূজারীরা দেবতা আর্টেমিসের জন্মদিনে মধুমিশ্রিত গোল কেক সহযোগে পূজার আয়োজন করে । কেক-এর ওপরে একটি মোমবাতিও বসানো হয় । মোমবাতিটি চাঁদ-তারকার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল ।
প্রথম হাসপাতাল
বিশ্বের প্রথম সরকারি হাসপাতালটি তৈরি করেছিলেন যে মহতী শাসক, তার নাম আশোক । খ্রিষ্ঠপূর্ব ২৭৩ থেকে ২৩২ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতবর্ষ শাসন করেন । বুদ্ধের অহিংসনীতিকে অবলম্বন করে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক সুন্দর সাম্রাজ্য । জনগনের কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি তার রাজ্যে নানারকম জনহিতকর ব্যবস্থা চালু করেন । তারই একটি দেশের বিভিন্ন স্থানে গনহাসপাতালের প্রচলন শুরু হয় ।
ধনী-গরিব নির্বিশেষে প্রজা যেন চিকিৎসাসেবা ও নার্সের যত্ন পায় ঠিকমতো, সে জন্য তিনি ব্যবস্থা নেন । আফগানিস্থান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সব যায়গায় এই সরকারি হাসপাতালের বন্দোবস্ত করা হয় । এর আগে চিকিৎসার কাজটি হতো ডাক্তারের কক্ষে, মেডিকেল স্কুলে, ক্লিনিকে কিংবা মন্দিরে । অশোকের কারনেই একটি নির্দিষ্ট স্থানে সব ধরনের রোগী জামায়েত হয়ে চিকিৎসাসেবার সুযোগ পেলেন । উল্লেখ্য, অশোক শুধু মানুষের কথা ভেবেই ক্ষান্ত হননি । তিনি পশুক্লেশ নিবারণের জন্যও বিশেষ ধরনের পশু হাসপাতালের চালি করেছিলেন । সেখানে আহত বা অসুস্থ পশুদের চিকিৎসা করা হত যত্ন সহকারে । আজকের পশ্চিমসহ সারা দুনিয়ায় যেসব পশু হাসপাতাল আমরা দেখি, তার শুরুটা হয়েছিল সম্রাট অশোকের হাতেই ।
প্রথম আমিন শব্দের প্রচলন
ইহুদি, খ্রিষ্ঠান এবং মুসলমান তিন সম্প্রদায়ের লোকেরাই তাদের প্রার্থনার শেষে আমিন শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন । হাজার হাজার বছর ধরে এই শব্দটি চলে আসছে এবং ধর্মীয়ভাবে একটি পবিত্র শব্দ হিসেবে একটি স্বীকৃতি পেয়ে গেছে । পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন শব্দগুলোর একটি হচ্ছে আমেন বা আমিন । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এই শব্দটির উৎপত্তি কিন্তু এই তিন ধর্মের কোনোটিই থেকে হয়নি । আমেন বা আমিন শব্দটির অর্থ হচ্ছে ঈশ্বর এক । কিন্তু একেশ্বরের ধারণা কিন্তু তৈরি হয় এই ধর্মবিশ্বাসগুলো পৃথিবীতে স্থান করে নেয়ারও অনেক অনেক আগে থেকে । আমেন শব্দটির উৎপত্তি মিশরে । ৪ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে মিশরীয়রা এই শব্দটি ব্যবহার করতো এক ঈশ্বরকে বোঝানোর জন্য । মিশরে থাকাকালীন সময়ে ইহুদিরা এই শব্দটি আত্নস্থ করে নেয় । প্রাচীনকালে মিশরীয়রা জানতো না যে ঈশ্বরের সত্যিকারের নাম কি। তাই তাকে তারা বহু বিশেষণের মাধ্যমে সম্বোধন করতো ।
“তোমার সৌন্দর্য সকল হৃদয় হরণ করে,
তোমার ভালবাসা সব অস্ত্রশস্ত্রকে পরাভূত করে,
তোমার সুন্দর কাজ (অস্ত্রধরা) হাতগুলোকে দুর্বল করে দেয়,
তোমার দর্শনে সবার হৃদয় বিগলিত হয়ে যায়,
সবকিছুর স্রষ্টা তুমি একক, চারপাশে যা কিছু আছে ।”
এই লাইনগুলো খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ২ হাজার সালের দিকের একটি ধর্মগাথা থেকে নেয়া । তবে এর চাইতেও প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে । খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৪ হাজার বছর পূর্বের বিভিন্ন লেখাও পাওয়া যায় । তবে সেগুলো এই লেখাটির মতো এত ভালো সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায় নি । এসব নমুনা থেকে বোঝা যায় যে এক ঈশ্বরের ধারণা সেসময়ে বেশ ভালভাবেই স্থান করে নিয়েছিল । এই একেশ্বর অনুসারীরা বিশ্বাস করতেন যে মিশরীয় অন্য যেসব দেবদেবীরা রয়েছেন তারা হচ্ছেন এক ঈশ্বর বা সর্বেশ্বর কতৃক প্রদত্ত সীমিত ক্ষমতাধারী শক্তি ।
প্রথম চপস্টিক
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ চামচ বা আঙুল ব্যাবহার করেই খাওয়া দাওয়া করে, এই প্রচলন বা মানুষের এই রীতির ইতিহাস যে সাম্প্রতিকতম, তা নয় । বরং সত্যি হলো, প্রস্তর যুগে ‘ছুড়ি বা কাঁটাচামচ’ থাকা স্বত্বেও মানুষ আঙুল ব্যবহার করে খাওয়া দাওয়া সেরে নিত । তবে কবে থেকে মানুষ চপস্টিক দিয়ে খাওয়া শুরু করল, এর সময়টা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বের করা সম্ভব হয় নি ।
যদিও হাজার হাজার বছর পরে চপস্টিক আবিষ্কার হয়েছিল, তবুও কাঁটাচামচ আবিষ্কারের বহু আগে খাবার গ্রহনের সময় এর অন্যরকম ব্যাবহার চালু হয় । চীনের আদিবাসীরা কেন তাদের খাবার দাবার নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না এবং সবেমাত্র মুখ দিয়ে খাবার গ্রহণে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে, এমন নবীনদের জন্য তারা কেন কাঁটাচামচের চেয়েও শক্ত সরু লাঠির (চপস্টিক) ব্যবহার বাস্তবায়ন শুরু করল-এর হয়তো বিশেষ কোনো কারন রয়েছে । সম্ভবত এর আগে চপস্টিক দিয়ে খাদ্যকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলার কাজে কাঁটাচামচের মতো ব্যবহার হতে থাকে এবং দুটি চপস্টিকের একটিকে প্রথমে খাদ্যকে স্থিতাবস্থায় রাখার জন্য সহকারী হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় । এ ধরনের সঙ্গী নিরবাচনের পর বহু চপস্টিক ব্যবহারের কৌশল সহজেই সাধারণ মানুষের কাছে মানিয়ে যেতে শুরু করে ।
উত্তর পশ্চিম চীনের যে স্থানে বর্তমান আর্ন ইয়াং নামক জায়গাটি রয়েছে, সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০ থেকে ১১০০ পর্যন্ত শার্ঙ্গ রাজত্বের রাজধানী ছিল, সেখানেই সম্ভবত সর্বপ্রথম তিন সেট চপস্টিক আবিষ্কার করা হয় । এটাই চপস্টিক আবিষ্কারের আনুমানিক সময় সম্ভাব্য সময় । এ সময়ের রাজা-রাজড়ারা প্রথম প্রজন্মের মানসম্পন্ন চপস্টিক উপস্থাপন করেন । কিন্তু অব্যবহিত পরেই সম্ভবত সাধারন কাঠের চপস্টিক ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় ।
প্রথম গিটার
খ্রিস্টপূর্ব ২১৫০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে আদি মিশরে গিটার আকারের এক ধরনের যন্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায় । যদিও এর সঙ্গে বর্তমান জমানার গিটারের গঠনের কিছু অসামঞ্জস্য ছিল । এই যন্ত্রের শরীরের তুলনায় গলাটি ছিল অস্বাভাবিক লম্বা ।
বর্তমান উজবেকিস্তানের টারমেজ নামক এলাকায় ১৯০০ বছরের পুরানো একটি গিটারের চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়া যায় যেটির গঠন কার্যকারিতা বর্তমান গিটারের অনুরূপ । এ থেকে অনুমান করা হয় যে, ২ হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ার কোথাও গিটার প্রথম তৈরি হয় এবং পরে এটি পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে । আদিকালের এই গিটার সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু একটা জানা যায় নি । পশ্চিমে আসার পর গিটারের গঠন নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয় । অনেক পরিশীলিত হয়ে ওঠে এই সুরযন্ত্র । ১৯২০-এর দশকে আমেরিকায় গিটারের ওপর ইলেকট্রিক মেথড প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় । ১৯৩০-এর দশকে এর সুফল প্রথম মেলে । এ ব্যাপারে পাইওনিয়ারের ভূমিকায় ছিলেন বেশ কয়েকজন । ১৯৩০-৩১ সালে ইলেকট্রা স্ট্রিং ইনসট্রুমেন্ট কোম্পানির রিফেনবেকার গিটারকেই প্রথম ইলেকট্রিক গিটার হিসেবে ধরা হয় । ফাঁপা গোলাকার ধাবত অংশটির জন্য অনেকে এটিকে ফ্রাইং প্যান ও বলে ডাকতেন ।
প্রথম মোটরগাড়ি
মোটরগাড়ির ধারনা কিন্তু অনেক পুরনো সময় থেকেই চলে আসছে । লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এবং আইজ্যাক নিউটন উভয়েই মোটরগাড়ি বিষয়ে ভেবেছিলেন এবং সেটির একটি কাল্পনিক নকশাও এঁকে গিয়েছিলেন । ১৭৯৯ সালে প্রথম যে স্বয়ং চালিত গাড়ি উদ্ভাবিত হয় সেটি ছিল একটি সামরিক ট্র্যাক্টর, এটি আবিষ্কার করেছিলেন ফরাসি প্রকৌশলী নিকোলাস যোসেফ কাগট (১৭২৫-১৮০৪) । এই গাড়িটিকে চালানোর জন্য তিনি বাষ্পীয় ইঞ্জিন ব্যবহার করেন । এই গাড়িটির ছিল কাঠের চাকা আর এটি ঘন্টায় আড়ায় মাইল বেগে চলতে পারত ।
১৭৭০ সালে তিনি তিন চাকার একটি গাড়ি তৈরি করেন, যেটি চারজন পর্যন্ত আরোহী বহন করতে পারত । ১৮৩২ থেকে ১৮৩৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরির বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয় । এরপর গ্যাসচালিত বা অন্তরদহন ইঞ্জিন তৈরির বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয় । এগুলোর বেশ কয়েকটি ব্যর্থ হয় । তবে নিকোলাস অগাস্ট আটো ১৮৭৬ সালে সফলভাবে প্রথম অন্তরদহন ইঞ্জিন তৈরি করতে সফল হন ।
১৮৮৫ সালে গাট্টিলেব ডেইমলার এক সিলিন্ডারের চার স্ট্রোক ইঞ্জিনের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেন এবং সেটি দিয়ে বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল তৈরি করেন । ১৮৮৬ সালে ডেইমলার চার চাকার একটি ক্যারিয়েজ বা গাড়িতে ১.১ অশ্বশক্তির ইঞ্জিন লাগিয়ে প্রথম ঘোড়াবিহীন স্বয়ংচালিত গাড়ি তৈরি করেন ।
প্রথম স্বয়ংক্রিয় দরজা
আজকাল স্বয়ংক্রিয় দরজার চল আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে । আলীবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্পের মতো এখন আর চিচিং শব্দও উচ্চারন করতে হয় না । দরজার সামনে পা রাখামাত্র সেটি নিজে নিজেই নিজেকে উন্মোচন করে দেয় । আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যানে এমনটা হবে এটা আর এমনকি । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় দরজাটি কিন্তু তৈরি হয় দুই হাজার বছরেরও আগে । বিশ্বের প্রথম যে স্বয়ংক্রিয় দরজাটি তৈরি হয়, সেটি কিন্তু দোকানে ব্যবহার করা চিন্তা করে তৈরি হয়নি । বরং অদ্ভুদ ব্যপার হচ্ছে বিজ্ঞান অ ধর্মের সারকথা যে বিপরীত সাটি বোঝানোর জন্যাই বিশ্বের প্রথম স্বয়ংক্রিয় দরজাটি নির্মিত হয় । যে পাদ্রি এই স্বয়ংক্রিয় দরজাটি পরিচালনা করতেন তিনি তার বেদিতে আগুন জ্বালানোর মাধ্যমে দরজাটি খোলার ব্যবস্থা করতেন ।
ঈশ্বরকে সম্মানিত করার চিরায়ত এই প্রথাকে এইভাবে তারা আরো অভিনব করে তোলেন । যে বিজ্ঞানী এই স্বয়ংক্রিয় দরজার পরিকল্পনা করেন তিনি একটি কক্ষকে আগোচরে রাখার জন্য এই বেদিটিকে ব্যবহার করেন । যখন আগুন জ্বালানো হতো তখন ওই গুপ্তকক্ষ বা প্রকোষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যেত এবং বাতাস উত্তপ্ত হয়ে উঠত । উচ্চচাপে এই গরম বাতাসটিকে একটি পানি ভর্তি চৌবাচ্চার মধ্যে প্রবাহিত করানো হতো ।
উচ্চচাপযুক্ত এই বাতাস চৌবাচ্চার পানিকে ঠেলে আরেকটি পাত্র ফেলে দিত । এই পাত্রের সঙ্গে দরজাটি দড়ি দিয়ে সংযুক্ত থাকত । যখন পাত্রে পানি পড়ার ফলে সেটি ভারি হয়ে উঠত তখন দড়ির উপর টান পড়ত এবং দরজাটি ধীরে ধীরে খুলে যেত । এই দরজার আবিস্কর্তা ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ান হেরন । খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ শতকে । তিনি খুব সম্ভবত মিসরে বাস করতেন ।
প্রথম কল্প-উপন্যাস বা সায়েন্স ফিকশন গল্প
‘ট্র স্টোরি’ নামের এক বইয়ে লুসিয়ান নামক এক লেখক তার জীবনের কাহিনী তুলে ধরেন । এশিয়ার সামোসাটায় তার বসবাস ছিল । প্রাচীন এই রোমাঞ্চকর কাহিনীতে তিনি মহাকাশ ও অজানা সমুদ্রে ভ্রমণের কহিনী তুলে ধরেন এবং সেগুলোকে সত্যি বলে দাবি করেন । তার মহাকাশ ভ্রমণের মধ্যে চাঁদে সাতদিন কাটানোর ঘটনাও ছিল । আর অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে চাঁদে গিয়ে তিনি দেখতে পান যে তারা তারই ভাষায় (গ্রিক ভাষা) কথাবার্তা বলছে ।
তার সেই কল্পকাহিনীতে চাঁদের অদ্ভুদ সব বর্ণনা পাওয়া যায় । যেমন-চাঁদের অধিবাসীরা স্বচ্ছ প্লাস্টিক বা ধাতু দিয়ে বোনা কাপড় পরত । বাচ্চাকাচ্চা কোলে রাখার জন্য ক্যাঙ্গারুর মতো এদের শরীরে এক ধরনের থলি রয়েছে । মৃত্যুর পর তাদের দেহ বাষ্পীভূত হয়ে মিলিয়ে যেতো । তাদের চোখ এবং যৌনাঙ্গগুলো ছিল আলাদা আলাদা এবং এগুলো তারা একে অপরের সাথে অদলবদল করতে পারত । পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটছে তা সেখানে বিশেষ ধরণের পর্দায় দেখার ব্যবস্থা রয়েছে । লুসিয়ান যখন সেখানে ভ্রমণে যান সে সময়ে তারা সূর্যের আদিবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল । সূর্যের অধিবাসীরা ২০০ ফুট লম্বা পাখাওয়ালা পিঁপড়ার পিঠে চড়ে চাঁদ আক্রমণ করে আর এই উড়ন্ত পিঁপড়াদের উপর থেকে তারা চাঁদের মানুষদের ওপর বিশাল বিশাল সব মূলা ছুড়ে মারতে থাকে । চাঁদের রাজা এন্ডিমিয়ন সেখানকার স্থানীয় মাকড়সাদের ডেকে পাঠান । এই মাকড়সাগুলোর একেকটি ছিল বিশাল সব দ্বীপের সমান । তিনি এই মাকড়শাগুলোকে চাঁদ থেকে দূরবর্তী একটি তাঁরা পর্যন্ত জাল বুনতে বলেন । চাঁদের রাজা চাচ্ছিলেন এই তারাটিকে তার রাজ্যের আওতাভুক্ত করতে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে সূর্যের অধিবাসীরা জয় লাভ করে । কারন তাঁরা সূর্যের আলো বন্ধ করে দিয়ে চাঁদের অধিবাসীদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে ।
অন্যান্য লেখক যা লিখেছেন সেটিকেই ব্যঙ্গ করে লুসিয়ান তার কাহিনী লিখেন । লুসিয়ান এই প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু আমার কাছে সত্যিকারের কোনো ধরণের অভিযানের কাহিনী ছিল না, তাই আমি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এই কাহিনীটি লিখেছি ।