somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিকিটাকা! ফুটবল নয়, সাহিত্য আলাপ!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চটজলদি নিজের জ্ঞান বাড়াতে হলে এই ধরণের বই খুব বড় উপকার করবে। লেখকের সাহিত্য সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনা অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানা যায়। সেই সাথে লেখক যদি হন বিভিন্ন দেশ ভ্রমণপিপাসু তাহলে সেইসব দেশেরও এমন সব বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে যেটা সাধারণ ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে পাবেন না। যেমনঃ কোন দেশে কোথায় পুরনো বইয়ের দোকান আছে, সেসব দোকানে কী ধরণের বই পাওয়া যায় সেটা আমি ঢাকার ছোট্ট এক চিপায় বসে জেনে গেলাম এই বইয়ের সৌজন্যে!

এখনতো লেখকদের সাথে আড্ডা উঠেই গেছে, আজীজ মার্কেট কেন্দ্রিক সাহিত্যিক আড্ডা আজ রূপকথার গল্প। ওয়াসি আহমেদের সাথে খোশ আড্ডা যদি কখনও দেয়া যেতো, সেই অভাব পূরণ করে দেয়ার মতো একটা বই।

আড্ডার ঢংয়ে পড়তে গিয়েই জানতে পেরেছি বিশ্বের বড় বড় উপন্যাসগুলো কতশত বার প্রকাশ করার আগে রিজেক্ট হবার কাহিনী। বিশেষ করে নারনিয়ার মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় উপন্যাস ৭০০ বার রিজেক্ট হয়েছে। গন উইথ দ্য উইন্ডের মতো উপন্যাস ৩৮ বার রিজেক্ট হয়েছিলো। সেই সাথে জানাতে চাই গন উইথ দ্য উইন্ড মার্গারেট মিচেলের লেখা একমাত্র উপন্যাস। যেটাও লিখেছিলেন স্বামীর কটুক্তির জবাব দিতে। মার্গারেটের স্বামী খোঁচা মেরে বলেছিলেন, "এতো যে পড়ো, কোনদিন এক লাইন লিখতে দেখি না।" তবে গন উইথ দ্য উইন্ড প্রকাশের এতো হ্যাপা থেকেই কি উনি আর কিছু লিখেননি, সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। হালের হ্যারি পটার নিয়েও এই কাহিনী আছে। তবে সবচেয়ে মজা লেগেছে প্রকাশকরা যখন ছাপাতে না চেয়ে উলটো লেখককে উপন্যাস কেন ছাপার অযোগ্য সেটার বিশাল বয়ান দিয়ে চিঠি পাঠাতো। এর মধ্যে হেমিংওয়েকে পাঠানো চিঠিটা ছিলো সবচেয়ে মারাত্মক। কী পরিমাণ ভুল জাজমেন্ট নিয়ে থাকেন প্রকাশকরা সেটা নিয়ে মজার একটা চ্যাপ্টার। তাওতো সেসব উপন্যাস প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশকদের এমন অযাচিত জাজমেন্টের কবলে আরও কতো মাস্টারক্লাস লেখা আলোর মুখ দেখেনি তা কেইবা বলতে পারে?

ওয়াসি আহমেদ এই বইতে একজন লেখক কতো কম লিখে সময়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন তার ভালো আলোচনা চালিয়েছেন মাঝেমাঝেই। এই আলোচনা শুরু করেছিলেন বিপ্লব দাশকে নিয়ে। আমি নিজে বিপ্লব দাশকে চিনতাম না। লেখকও বলেছেন বিপ্লব দাশ আজ অজানা প্রায়, এবং কোন আড্ডায় তাকে সেভাবে স্মরণ করা হয় না। কিন্তু লেখার কায়দা কৌশলে বিপ্লব দাশ কতোটা স্বতন্ত্র লেখক ছিলেন তার তুলনা দিতে গিয়ে বলেছেন, "আমাদের কথাসাহিত্যে তার পূর্বসূরী নেই।" বিপ্লব দাশের এমন স্বতঃস্ফূর্ত প্রশংসা আমার মনে তার লেখা পড়ার ইচ্ছে উস্কে দিয়েছে।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বেলাতেও সেই একই বিষয় দেখলাম। খুব কম লিখেছেন ইলিয়াসও, কিন্তু যে প্রভাব রেখে গেছেন সাহিত্যে তা ডিঙানোর সাধ্য কারও নেই। তবে ওয়াসি আহমেদের হতাশাটা অন্য জায়গায়, তিনি জানাচ্ছেন উপযুক্ত অনুবাদকের অভাবে বিশ্ববাসী জানতে পারছে না আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শক্তিশালী সাহিত্য সম্পর্কে। শুধু কি ইলিয়াস? বাংলায় এরকম কয়েকডজন উপন্যাস রয়েছে যা বিশ্ববাসীর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এই সম্পর্কে কয়েকদিন আগে বইমেলার লেখক মঞ্চে কবি সাখাওয়াত টিপুর বক্তব্য জুড়ে দিতে চাই। তিনি বলেছিলেন, "বাংলা একাডেমির যেসব নিজস্ব কাজ রয়েছে সেগুলো তারা করে না। বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে বিশ্বের কাছে অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটা তাদেরই করা উচিত। তাদের একটা অনুবাদক টিম রয়েছে, কিন্তু তারা আসলে কী করে, আদৌ কিছু অনুবাদ করে কীনা আমার জানা নেই।"

নোবেল পুরষ্কার নিয়ে লেখক বেশ একহাত নিয়েছেন। নোবেল কমিটি কীভাবে রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে টলস্টয় চেকভ, বোর্হেস, কাফকার মতো সাহিত্যিকদের পুরষ্কার বঞ্চিত করেছে সেসব সম্পর্কে সুন্দর বর্ণনা আছে, যেগুলো আমার মতো সাধারণ পাঠকদের অজানা। নোবেল কমিটির এই চ্যাপ্টার পড়তে পড়তে বাংলা একাডেমির পুরষ্কার নিয়েও আমার মুচকি হাসি চলে আসছে। বোধহয় পৃথিবীতে পুরষ্কার প্রদান কমিটির পারফেকশন বলে কিছু নেই। সবখানে ভেজাল, আর সবখানেই তারা প্রচুর অযোগ্য লোককে পুরষ্কার দিয়ে, পরে যোগ্য দুয়েকজনকে দিয়ে ব্যালেন্স করে। ব্যাপারটা চুরি করে পাপ কমানোর আশায় মসজিদ মন্দিরে দান করার মতো আরকি!

লেখকের আগে ওয়াসি আহমেদ আগে একজন পাঠক। এর বিস্তারিত আলোচনা পেয়েছি "পাঠ বদলে যায়" এবং "উত্তরাধিকার-এর শহী কাদরী" চ্যাপ্টারে। পাঠ বদলে যায় চ্যাপ্টারে নিজেকে খুব বেশি রিলেট করতে পেরেছি। পাঠকের মৃত্যু যেমন হয় তেমনি কোন এক লেখা এখন পড়ে ভালো না লাগলেও পরবর্তীতে ঠিকই একসময় ঐ লেখার মর্মে প্রবেশ করি আমরা। পাঠ বদলের এই সময়টা নিয়ে ওয়াসি আহমেদের আলোচনার ভঙ্গী খুবই চমৎকার।

প্রতিটা চ্যাপ্টারে এতো সব চমকপ্রদ তথ্য এবং অভিজ্ঞতার ঝুলি লিখে দিয়েছেন যে, এই বই পড়ে এখন সবচেয়ে বেশি আগ্রহ জাগাচ্ছে লেখক ওয়াসি আহমেদ কবে আত্মজীবনি লিখবেন? অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এমন একজন লেখকের আত্মজীবনি হবে আরও রোমাঞ্চকর সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বই সম্পর্কে লিখতে বসে আরেকটি বই লেখার ইচ্ছে নেই। আলাপ এখানেই শেষ করতে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×