somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের টেলিভিশন

২১ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯১ সাল। আমার বয়স আর কত হবে, ৭ অথবা ৮ বছর। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের বাসায় তখন টেলিভিশন ছিল না। আমারা প্রায়ই টেলিভিশন দেখতে আমাদের গ্রামের শেষ মাথায় ডাক্তার বাড়ি যেতাম। প্রতি শুক্রবার সকালে কার্টুন এবং বিকেলে বাংলা সিনেমা দেখাটা অনেকটা নেশার মত ছিল। যত কাজই থাক ঐ সময়টায় টেলিভিশন দেখতে যেতাম। সেজন্য প্রতি শ্রক্রবার সিনেমা দেখে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যেত। বাসায় ফেরার রাস্তায় ছিল একটা ছোট জঙ্গল। মজিদ এর বন নামে আমাদের এলাকায় পরিচিত। অনেক আগে এখানে নাকি একটা মসজিদ ছিল যেটা ভূমিকম্পে অথবা অন্য কোন কারনে মাটিতে ডেবে যায়। সেই বনের বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনী ছিল। যদিও আমি কখনও কিছু দেখি নাই। তবে এক সন্ধ্যায় মস্তবড় একটা পেঁচা দেখেছিলাম। অনুমানিক ডের-দুই ফুট লম্বা হবে। ওটার ভারে জাম গাছের ডলিটি নুইয়ে পড়েছিল। হঠাৎ মস্ত বড় কিছু একটা বুঝতে পেরে একটু ভয় পেয়েছিলাম। এসব কথা আজ থাক। আসল কথায় আসি। এই বনের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে আমার মা সম্ভব্য বিপদের আশংকায় আমার আব্বাকে বললেন একটা টেলিভিশন কিনে আনতে। আমাদের অবাক করে দিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আব্বা একটা ১৭ ইঞ্চি সাদাকালো কংকা অথবা কনিকা নামের একটি টেলিভিশন নিয়ে হাজির। আমরা তো মহাখুশি। ইচ্ছে হত সারাদিন টেলিভিশন দেখবো কিন্তু তখন বিটিভি বিকেল থেকে রাত্র পর্যন্ত অনুষ্ঠান স¤প্রচার করতো।

ভালোই চলছিল নতুন টেলিভিশন। প্রতিরাতে টেলিভিশন নিজ বাড়িতেই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই বিপত্তি দেখা দিল। নানা রকম সমস্যা আর আমার আম্মা আমাদের বকাবকি করতেন। আরে আমাদের কিদোষ। আমরা তো সমস্যা তৈরি করছি না। সমস্যা অটোমেটিক তৈরি হচ্ছে। গুরুতর সমস্যা টেলিভিশন দেখতে এত এত লোক আসত যে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই একটু আরাম করে বসায় যায়গা থাকতো না। চাপাচাপি করে বসে থাকতে হত। তাও ভালো টেলিভিশন তো দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ একদিন ছায়াছন্দ হবে সেদিন যেন লোকের ভিড় একটু বেশি। ছায়াছন্দ দেখছি হঠাৎ মট্টাস করে আম্মার সাধের খাটটি (নানা বাড়ি থেকে দিয়েছিল) গেল ভেঙ্গে। এবার তো মা আরও বিরক্ত। অবশেষে টেলিভিশন টি মা উঠানে বের করে দিলেন। পোর্টটেবল টেলিভিশন, অল্প মানুষ হলে ঘরে আর বেশি হলে উঠানে। আমরা হাসি মুখে টেলিভিশনকে পোর্টটেবল করার মাহান দ্বায়িত্ব নিলাম। যারা দেখতে আসে তাদের কারো সহায়তার এই টেলিভিশন ঘর আর উঠানে সড়ানোর কাজটি করতাম। আমরা উঠানেই মাদুর পেতে, খড় বিছিয়ে শুক্রবারের ছবি, ইত্যাদি, ছায়াছন্দ দেখতাম।
আরও একটি সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সেজন্যও মা প্রায়ই আমাদের বকাবকি করতেন। বিদ্যুত ঠিকমত না থাকায় ব্যকআপ ব্যাটারি দিয়েই অধিকাংশ সময় টেলিভিশন দেখতে হতো। এতে ব্যাটারী চার্জের খরচ এবং ব্যাটারী বাজার থেকে চার্জ দিয়ে আনা নেয়া কিঞ্চিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু যারা টেলিভিশন দেখে তাদের বললে তারার আনা নেয়ার কাজটি বেশি ভাগ সময় উৎসাহ নিয়ে করতো, তবে ধিরে ধিরে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়তে লাগলো। এরকম নানবিধ সমস্যার মধ্যদিয়ে টেলিভিশন দেখা চলছিল।

এবার তো আর রক্ষা নেই। ভয়াবহ সমস্যা। আমি সহ আমার বড় দুই ভাই সবার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। ভয়াভব বিপর্যয়। পাশেই এক স্যারের বাসা ছিল। আমাদের প্রতিবেশি চাচা। স্যার তো বাসায় এসে রীতিমত বকাঝকা করে গেলেন। আব্বা এবার ফিরলে আব্বাকেও জানাবেন।
কয়েকদিন পর বৃহস্পতিবার রাত্রে আব্বা আসলেন, মা আব্বাকে পরীক্ষার ভয়াবহ রেজাল্ট এর কথা বিস্তারিত বললেন, এবং পড়াশুনার একমাত্র প্রতিবন্ধক যে টেলিভিশন সেটা বুঝাতে সক্ষম হলেন। এক দিন পরে শনিবার আব্বা বিকেলে সাথে করে একজনকে বাসায় নিয়ে এলেন। লোকটি টেলিভিশটি ভালো করে দেখে আব্বার হাতে নগদ কিছু টাকা দিয়ে আমাদের প্রিয় টেলিভিশনটি নিয়ে চলে গেলেন। আমাদের চোখের সামনে, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না। বলার সুযোগ ছিল না। আব্বাও সন্ধ্যার পরপর তার গন্ত্যব ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। অতপর আমরা তিন ভাই টেলিভিশনটি হারিয়ে দুঃখে, কষ্টে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×