১৯৯১ সাল। আমার বয়স আর কত হবে, ৭ অথবা ৮ বছর। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের বাসায় তখন টেলিভিশন ছিল না। আমারা প্রায়ই টেলিভিশন দেখতে আমাদের গ্রামের শেষ মাথায় ডাক্তার বাড়ি যেতাম। প্রতি শুক্রবার সকালে কার্টুন এবং বিকেলে বাংলা সিনেমা দেখাটা অনেকটা নেশার মত ছিল। যত কাজই থাক ঐ সময়টায় টেলিভিশন দেখতে যেতাম। সেজন্য প্রতি শ্রক্রবার সিনেমা দেখে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যেত। বাসায় ফেরার রাস্তায় ছিল একটা ছোট জঙ্গল। মজিদ এর বন নামে আমাদের এলাকায় পরিচিত। অনেক আগে এখানে নাকি একটা মসজিদ ছিল যেটা ভূমিকম্পে অথবা অন্য কোন কারনে মাটিতে ডেবে যায়। সেই বনের বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনী ছিল। যদিও আমি কখনও কিছু দেখি নাই। তবে এক সন্ধ্যায় মস্তবড় একটা পেঁচা দেখেছিলাম। অনুমানিক ডের-দুই ফুট লম্বা হবে। ওটার ভারে জাম গাছের ডলিটি নুইয়ে পড়েছিল। হঠাৎ মস্ত বড় কিছু একটা বুঝতে পেরে একটু ভয় পেয়েছিলাম। এসব কথা আজ থাক। আসল কথায় আসি। এই বনের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে আমার মা সম্ভব্য বিপদের আশংকায় আমার আব্বাকে বললেন একটা টেলিভিশন কিনে আনতে। আমাদের অবাক করে দিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আব্বা একটা ১৭ ইঞ্চি সাদাকালো কংকা অথবা কনিকা নামের একটি টেলিভিশন নিয়ে হাজির। আমরা তো মহাখুশি। ইচ্ছে হত সারাদিন টেলিভিশন দেখবো কিন্তু তখন বিটিভি বিকেল থেকে রাত্র পর্যন্ত অনুষ্ঠান স¤প্রচার করতো।
ভালোই চলছিল নতুন টেলিভিশন। প্রতিরাতে টেলিভিশন নিজ বাড়িতেই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই বিপত্তি দেখা দিল। নানা রকম সমস্যা আর আমার আম্মা আমাদের বকাবকি করতেন। আরে আমাদের কিদোষ। আমরা তো সমস্যা তৈরি করছি না। সমস্যা অটোমেটিক তৈরি হচ্ছে। গুরুতর সমস্যা টেলিভিশন দেখতে এত এত লোক আসত যে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই একটু আরাম করে বসায় যায়গা থাকতো না। চাপাচাপি করে বসে থাকতে হত। তাও ভালো টেলিভিশন তো দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ একদিন ছায়াছন্দ হবে সেদিন যেন লোকের ভিড় একটু বেশি। ছায়াছন্দ দেখছি হঠাৎ মট্টাস করে আম্মার সাধের খাটটি (নানা বাড়ি থেকে দিয়েছিল) গেল ভেঙ্গে। এবার তো মা আরও বিরক্ত। অবশেষে টেলিভিশন টি মা উঠানে বের করে দিলেন। পোর্টটেবল টেলিভিশন, অল্প মানুষ হলে ঘরে আর বেশি হলে উঠানে। আমরা হাসি মুখে টেলিভিশনকে পোর্টটেবল করার মাহান দ্বায়িত্ব নিলাম। যারা দেখতে আসে তাদের কারো সহায়তার এই টেলিভিশন ঘর আর উঠানে সড়ানোর কাজটি করতাম। আমরা উঠানেই মাদুর পেতে, খড় বিছিয়ে শুক্রবারের ছবি, ইত্যাদি, ছায়াছন্দ দেখতাম।
আরও একটি সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সেজন্যও মা প্রায়ই আমাদের বকাবকি করতেন। বিদ্যুত ঠিকমত না থাকায় ব্যকআপ ব্যাটারি দিয়েই অধিকাংশ সময় টেলিভিশন দেখতে হতো। এতে ব্যাটারী চার্জের খরচ এবং ব্যাটারী বাজার থেকে চার্জ দিয়ে আনা নেয়া কিঞ্চিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু যারা টেলিভিশন দেখে তাদের বললে তারার আনা নেয়ার কাজটি বেশি ভাগ সময় উৎসাহ নিয়ে করতো, তবে ধিরে ধিরে তাদের উৎসাহে ভাটা পড়তে লাগলো। এরকম নানবিধ সমস্যার মধ্যদিয়ে টেলিভিশন দেখা চলছিল।
এবার তো আর রক্ষা নেই। ভয়াবহ সমস্যা। আমি সহ আমার বড় দুই ভাই সবার প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। ভয়াভব বিপর্যয়। পাশেই এক স্যারের বাসা ছিল। আমাদের প্রতিবেশি চাচা। স্যার তো বাসায় এসে রীতিমত বকাঝকা করে গেলেন। আব্বা এবার ফিরলে আব্বাকেও জানাবেন।
কয়েকদিন পর বৃহস্পতিবার রাত্রে আব্বা আসলেন, মা আব্বাকে পরীক্ষার ভয়াবহ রেজাল্ট এর কথা বিস্তারিত বললেন, এবং পড়াশুনার একমাত্র প্রতিবন্ধক যে টেলিভিশন সেটা বুঝাতে সক্ষম হলেন। এক দিন পরে শনিবার আব্বা বিকেলে সাথে করে একজনকে বাসায় নিয়ে এলেন। লোকটি টেলিভিশটি ভালো করে দেখে আব্বার হাতে নগদ কিছু টাকা দিয়ে আমাদের প্রিয় টেলিভিশনটি নিয়ে চলে গেলেন। আমাদের চোখের সামনে, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না। বলার সুযোগ ছিল না। আব্বাও সন্ধ্যার পরপর তার গন্ত্যব ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। অতপর আমরা তিন ভাই টেলিভিশনটি হারিয়ে দুঃখে, কষ্টে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আলোচিত ব্লগ
আমাদের জাতির কপালে শনি আছে

একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে তারা বলেছে স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না, সুতরাং ভারতের অধীন হওয়ার চেয়ে পাকিস্তানের অধীন থাকা ভালো। তারা মনে করেছে অধীকাংশ নাগরিক তাদের দলে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?
হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?
জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।
জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।
মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে
আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[
স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।