এরপর সালেহ ভাই সহ রোম ঘুরতে বেরিয়ে পরলাম। রোম আসলেই রোম, অন্য কোন শহারের সাথে এর তুলনা করা যায় না। নিজের চোখে না দেখে বলে বোঝানো যাবে না, রোমের সৈন্দর্য, রোমের কারুকার্য, রোমান সভ্যতা, রোমান অসভ্যতা, হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, এই সব স্থানে ঘটেছে কত সহস্র প্রেমের ঘটনা, কত সহস্র মর্মাতিক হত্যার ঘটনা। এর আগে জার্মানীর ক্লোন শহরে একটি ক্যাথেড্রল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। রোমের প্রতিটি রাস্তার দুই পাশে যত ভবন রয়েছে সব ভবনেই যেন ঐতিহ্যের ছোঁয়া। প্রত্যেকটি ভবন সংস্কার করা, কিন্তু ডিজাইন ও উপকরণ অবিকল আগেরটাই অক্ষন্ন রেখেছে। নতুন কোন ভবন করলেও এরা তাদের ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে তৈরি করে। যেন নতুন ভবনটির আধুনিকা শহরের সৈন্দর্য নষ্ট না করে। রোম এর প্রতিটি ট্যুরিস্ট স্পটেই আছে বেশ কিছু বাংলাদেশি। কেই ফুটপাতে দোকান দিয়ে বসেছে। ট্যুরিস্টদের চাহিদা অনুয়ায়ী বিভিন্ন খেলনা, মুর্তি, শোপিস ইত্যাদি বিক্রি করছে। আবার কেউ মমি আবার কেউ যোদ্ধা সেজে দাড়িয়ে আছে উত্তপ্ত রোদে। রোদটা আমাদের দেশের মত উত্তপ্ত না হালেও যেসব পোশাক পড়ে থাকে তাতে গরম নিশ্চই লাগে। বাংলাদেশি দেখলেই বুঝা যায়। হাজার হোক দেশের মানুষ তো! আমি আবার একটু মজা করে যে কোন কিছুর দাম বাংলায় জানতে চাইতাম। এতে একটা সুবিধা হতো, বাংলাদেশি বলে আমাদের কাছে দামটা একটু কম রাখতো। মানুষের একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার কত প্রচেষ্টা। এই মানুষগুলো অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে দেশে পাঠায়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ে। এরা এখানে কোন রকমে খেয়ে, পরে বেঁচে আছে। অনেকের হয়তো একটা রাতে ঘুমানোর ভালো ব্যবস্থা নেই। শুন্য তাপমাত্রার দেশে রোমা টার্মিনীর ফ্লোরে ঘুমায়। অনেকের হয়তো বৈধ কাগজ নেই। এর পরেও এরা আছে, জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে। এত কিছুর পরে যখন দেশে একটু ঘুরতে যায় তাদেরকে সহ্য করতে হয় ঢাকা এয়ারর্পোর্টে হয়রানি। অনেকের লাগেজ হারিয়ে যায়। অনেকেই অনেক ধরনের বিরম্বনার শিকার হয়। আমরা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক দর্শনীয় স্থান দেখলাম। আর একটি মজার বিষয় আমার কাছে মনে হয়েছে, রোমে কোন মিউজিয়ামে যেতে কোন খরচা লাগে না। অর্থাৎ টিকেট নেই। একজন পর্যটক অনেক টাকা খরচ করে রোম দেখতে যায়, সেখানে থাকে, খায়। সেজন্য হয়তো ইতালী সরকার আলাদা টিকেটের ব্যবস্থা রাখেনি।
প্যান্থেওন দেখলাম, সকল দেবতার মন্দির। দেখালাম ক্লোসিয়াম, কুইরিনাল হল, পিয়াজা ডেল পাপলো, ট্রেভি ফাউন্টেইন (ইচ্ছা পুরোনের ঝরনা) দেখলাম, এই ঝরনায় পয়সা ফেললে ইচ্ছে পুরোন হয়। এই ঝড়নার কাছেই বেশি ভিড়। ফুটপাথে শোপিসের দোকান, আর মাঝে মধ্যে দু’একজন বিদেশিদের দেখেছি যারা ভিক্ষে করছে। এদের কেই বয়স্ক আবার কেউ যুবক। এদের ভিক্ষে করার ধরণটা একটা আলাদা। ওরা অধিকাংশ ভিক্ষুক কোন না কোন যন্ত্র বাজাচ্ছে আর সামনে একটি টুপি অথবা গিটারের বক্সটি খুলে রেখেছে। টুপিতে কিংবা গিটারের বক্সে সবাই কিছু কিছু ইউরো ভিক্ষে দিচ্ছে। স্কুলে শুনেছিলাম বিদেশে গাড়ি নিয়ে গিয়ে ভিক্ষে করে। কিন্তু সেটা ঘটে বলে মনে হলো না। এখানে সরকার বেকার ভাতা দেয়, আর বয়স্কদের জন্য তো অনেক কিছু অর্ধ ফ্রি ব্যবস্থা, ট্রেনের টিকেট থেকে প্লেনের টিকেট পর্যন্ত আর যে কোন দোকানে তো বিশেষ ডিসকাউন্ট তো থাকেই। ভিক্ষে করার প্রয়োজন কেন ঠিক বুঝতে পারলাম না। হয়তো শনিবার রাতের (স্যাট্যার্ডে নাইট) পার্টিতে খরচ করার ইউরো যোগার করতেই ভিক্ষে করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১০ রাত ১২:৫৩