somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজের চোখে না দেখে বলে বোঝানো যাবে না, রোমের সৈন্দর্য, রোমের কারুকার্য, রোমান সভ্যতা, রোমান অসভ্যতা, হাজার হাজার বছরের ইতিহাস

১৫ ই মে, ২০১০ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাদভা হতে ট্রেনে উঠলাম সকাল ৭টায় ৩৯৪ কিলোমিটার দুরে রোমের উদ্দেশ্যে। ট্রেন থেকে এবার যাবার সময়ও দেখতে দেখতে গেলাম ইতালির আকাশ, বাতাস, সূর্য উঠা, মেঘ, নদী, রাস্তা, পাহাড়, সবুজ ক্ষেত ইত্যাদি। ট্রেনে যেতে একটি বিষয় ভালোভাবে খেয়াল করলাম। রেল ক্রসিং, প্রায় চারশ কিলোমিটারে মোট রেল ক্রসিং দেখলাম ২ টি। আর বাকি সবগুলেতে সড়ক গুলিকে হয় ওভারপাস নয়তো আন্ডারপাস দিয়ে দিয়েছে। এরকম ওভারপাস ও আন্ডারপাস অতিক্রম করেছি প্রায় অর্ধশতাধিক। আর রোমের কাছাকাছি এসে পেয়েছিলাম বেশ কয়েকটি টানেল। পাহাড় কেটে এসব ট্যানেল তৈরি করেছে। সকাল ১১ টায় পৌঁছালাম রোমা টার্মিনিতে। সেখানে ৫/১০ মিনিটের মধ্যে সালেহ ভাই উপস্থিত। এরপর সালেহ ভাই দেশে মোবাইল করবে আর আমি একটু ইন্টারনেটে বসার জন্য একটি বাংলাদেশি ফোন ফ্যাক্স এর দোকানে ঢুকলাম। আমাদের দেশে ইন্টারনেট একসেস অনেক সহজ, যে কেউ ১৫/২০ টাকা দিয়ে সাইবার ক্যাফেতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। রোমে দেখালাম ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য পাসপোর্ট বা যে কোন আইডি নম্বর দিয়ে একসেস পেতে হয়। সেই ফোন ফ্যাক্স এর দোকানে সালেহ ভাই নিয়মিত যায়। আমি আমার ট্রাভেল ব্যাগটা সেখানে রাখলাম। পকেটে শুধু ক্যামেরা, পাসপোর্ট আর মানিব্যাগটি নিলাম। এই ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে গেলে কষ্টই হয়ে যেত, কমপক্ষে ৫/৬ কেজি হবে।

এরপর সালেহ ভাই সহ রোম ঘুরতে বেরিয়ে পরলাম। রোম আসলেই রোম, অন্য কোন শহারের সাথে এর তুলনা করা যায় না। নিজের চোখে না দেখে বলে বোঝানো যাবে না, রোমের সৈন্দর্য, রোমের কারুকার্য, রোমান সভ্যতা, রোমান অসভ্যতা, হাজার হাজার বছরের ইতিহাস, এই সব স্থানে ঘটেছে কত সহস্র প্রেমের ঘটনা, কত সহস্র মর্মাতিক হত্যার ঘটনা। এর আগে জার্মানীর ক্লোন শহরে একটি ক্যাথেড্রল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। রোমের প্রতিটি রাস্তার দুই পাশে যত ভবন রয়েছে সব ভবনেই যেন ঐতিহ্যের ছোঁয়া। প্রত্যেকটি ভবন সংস্কার করা, কিন্তু ডিজাইন ও উপকরণ অবিকল আগেরটাই অক্ষন্ন রেখেছে। নতুন কোন ভবন করলেও এরা তাদের ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে তৈরি করে। যেন নতুন ভবনটির আধুনিকা শহরের সৈন্দর্য নষ্ট না করে। রোম এর প্রতিটি ট্যুরিস্ট স্পটেই আছে বেশ কিছু বাংলাদেশি। কেই ফুটপাতে দোকান দিয়ে বসেছে। ট্যুরিস্টদের চাহিদা অনুয়ায়ী বিভিন্ন খেলনা, মুর্তি, শোপিস ইত্যাদি বিক্রি করছে। আবার কেউ মমি আবার কেউ যোদ্ধা সেজে দাড়িয়ে আছে উত্তপ্ত রোদে। রোদটা আমাদের দেশের মত উত্তপ্ত না হালেও যেসব পোশাক পড়ে থাকে তাতে গরম নিশ্চই লাগে। বাংলাদেশি দেখলেই বুঝা যায়। হাজার হোক দেশের মানুষ তো! আমি আবার একটু মজা করে যে কোন কিছুর দাম বাংলায় জানতে চাইতাম। এতে একটা সুবিধা হতো, বাংলাদেশি বলে আমাদের কাছে দামটা একটু কম রাখতো। মানুষের একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার কত প্রচেষ্টা। এই মানুষগুলো অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে দেশে পাঠায়। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ে। এরা এখানে কোন রকমে খেয়ে, পরে বেঁচে আছে। অনেকের হয়তো একটা রাতে ঘুমানোর ভালো ব্যবস্থা নেই। শুন্য তাপমাত্রার দেশে রোমা টার্মিনীর ফ্লোরে ঘুমায়। অনেকের হয়তো বৈধ কাগজ নেই। এর পরেও এরা আছে, জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে। এত কিছুর পরে যখন দেশে একটু ঘুরতে যায় তাদেরকে সহ্য করতে হয় ঢাকা এয়ারর্পোর্টে হয়রানি। অনেকের লাগেজ হারিয়ে যায়। অনেকেই অনেক ধরনের বিরম্বনার শিকার হয়। আমরা ১১ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক দর্শনীয় স্থান দেখলাম। আর একটি মজার বিষয় আমার কাছে মনে হয়েছে, রোমে কোন মিউজিয়ামে যেতে কোন খরচা লাগে না। অর্থাৎ টিকেট নেই। একজন পর্যটক অনেক টাকা খরচ করে রোম দেখতে যায়, সেখানে থাকে, খায়। সেজন্য হয়তো ইতালী সরকার আলাদা টিকেটের ব্যবস্থা রাখেনি।

প্যান্থেওন দেখলাম, সকল দেবতার মন্দির। দেখালাম ক্লোসিয়াম, কুইরিনাল হল, পিয়াজা ডেল পাপলো, ট্রেভি ফাউন্টেইন (ইচ্ছা পুরোনের ঝরনা) দেখলাম, এই ঝরনায় পয়সা ফেললে ইচ্ছে পুরোন হয়। এই ঝড়নার কাছেই বেশি ভিড়। ফুটপাথে শোপিসের দোকান, আর মাঝে মধ্যে দু’একজন বিদেশিদের দেখেছি যারা ভিক্ষে করছে। এদের কেই বয়স্ক আবার কেউ যুবক। এদের ভিক্ষে করার ধরণটা একটা আলাদা। ওরা অধিকাংশ ভিক্ষুক কোন না কোন যন্ত্র বাজাচ্ছে আর সামনে একটি টুপি অথবা গিটারের বক্সটি খুলে রেখেছে। টুপিতে কিংবা গিটারের বক্সে সবাই কিছু কিছু ইউরো ভিক্ষে দিচ্ছে। স্কুলে শুনেছিলাম বিদেশে গাড়ি নিয়ে গিয়ে ভিক্ষে করে। কিন্তু সেটা ঘটে বলে মনে হলো না। এখানে সরকার বেকার ভাতা দেয়, আর বয়স্কদের জন্য তো অনেক কিছু অর্ধ ফ্রি ব্যবস্থা, ট্রেনের টিকেট থেকে প্লেনের টিকেট পর্যন্ত আর যে কোন দোকানে তো বিশেষ ডিসকাউন্ট তো থাকেই। ভিক্ষে করার প্রয়োজন কেন ঠিক বুঝতে পারলাম না। হয়তো শনিবার রাতের (স্যাট্যার্ডে নাইট) পার্টিতে খরচ করার ইউরো যোগার করতেই ভিক্ষে করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১০ রাত ১২:৫৩
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×