পৌরসভার চাকুরী পেয়েছি। সেদিন আমি তৃতীয় দিনের মত অফিস করিছলাম। নতুন বসায় জায়গা পেয়েছি, বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যা ছিল সেটাও ঠিক করে নিয়েছে। সরাদিন মোটামুটি গোছগাছ করলাম। দিনের বেশ কিছু সময় বৃষ্টি হলো। তুমুল বৃষ্টি। জেলা স্কুলের মাঠ পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল। দিন শেষে একটা মিটিং হওয়ার কথা ছিল। মেয়র স্যার থাকতে বলেছিলেন। সেজন্য অপেক্ষা করছিলাম। এর মধ্যে শুনলাম আজকে আর মিটিং হবে না। পরে রের হলাম পৌরসভা থেকে। গেটের কাছেই একটা রিকশা অনেক্ষন থেকে দাঁড়িয়ে ছিল।
স্যার কোথায় যাবেন?
আমি বললাম সার্কিট হাউজ যাব।
চলেন স্যার।
আমিও উঠে পরলাম। সে আমাকে নিয়ে আসছিল আর পৌরসভা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলছিল। আমার কথাও শুনলো আমি নাকি বড় কর্মকর্তা নতুন এসেছি সে শুনেছে। আমি তার কথা শুনছিলাম। তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল সে পৌরসভার অনেক খবর জানে। সেজন্য হঠাৎ মনে হলো সে আবার পৌর সভার কর্মচারী নাতো? আমি সত্যি সত্যি তার কাছে জানতে চাইলাম বিষটি? সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো জি স্যার। আমি পৌরসভার ড্রাইভার। গার্বেজ ট্রাক এবং রোড রোলার চালাই। এবার সত্যি মনটা খারাপ হয়ে গেল। একজন মানুষ একটা সরকারী চাকুরী করে। দিনে পৌরসভার ডিউটি করে। কিন্তু বেতন নিয়মিত হয় না সেজন্য সে এই বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। রিকশা চালায়। এটা হয়তো এখানকার পৌরসভার সবার কাছে সহজ ও স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমার কাছে কেন জানি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। পৌরসভা একটা সরকারী স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমি যতদুর দেখেছি এর আয় এত কম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যে আয় হওয়ার কথা সেটা নিশ্চই হয় না সেজন্য বেতনের এই সমস্যা।
সেই আমাকে বলছিল আগে একজন বড় স্যার ছিলেন, তিনি অত্যন্ত কড়া মানুষ ছিলেন। তার সময়ে কখনও বেতন সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন হচ্ছে। তখনতো পৌরসভার আয় আরও কম ছিল, এখন তো আরও অনেক বেড়েছে। তার পরেও আমাদের বেতন দেয়ার সময় বলে পৌরসভার আয় নেই। আমাকে বলার সময় হয়তো সে ভাবছিল আমি সেই লোকের মত বড় কর্মকর্তা, কিন্তু আমি তো অত বড় কর্মকর্তা নই যে তার বেতন আবার নিয়মিত করতে পারবে। আমার সেই ক্ষমতাও নেই।