somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রেজাউল করিম সাগর
হাড্ডি খিজিরের মত ঠোঁটকাটা হইতে চাই শেষমেশ ওসমান অরফে রঞ্জু হয়াই দিন কাটে। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছা কী আছিলো সেইটা অনুভব করার খুব শখ আছিলো, জীবনদা তো আর নাই। তার কথা মনে হইলেই শোভনার ব্যর্থ প্রেমিক, লাবণ্যের ব্যার্থ স্বামী মনে হয়।

একজন আহমদ ছফা এবং পাঠক হিসেবে আমার বিবর্তন ( আহমদ ছফার প্রতি প্রণতি)

২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-- --------------


'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' কাল রাতে আবার পড়া শুরু করি। আজ সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন পড়ে রাত দশটার দিকে শেষ হয় আহমদ ছফার জীবনে আসা দুইজন নারীকে নিয়ে লেখা তার এই জীবন বয়ান। এই বইটি ২০১৮ কিংবা ২০১৯ সালে প্রথমবার পড়া হয়। শাহরিয়ারের মৃত্যু, শামারোখের জীবনের করুণ পরিণতির ভার চেপে বসে আছে মনে সেই সাথে জাহিদ হাসান আদতে আহমদ ছফার অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস, জীবনকে দেখার অন্তর্দৃষ্টি।

.
কলেজ জীবন, ছফা আবিষ্কার
--------------
আহমদ ছফাকে প্রথম আবিষ্কার করি সম্ভবত কলেজে পড়াকালীন। কলেজের পাশেই জেলা গণগ্রন্থাগার ছিলো। ( এই গ্রন্থাগারটি নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে সেসব অন্য বিষয়)
কলেজের ক্লাসের ফাকে, প্রাইভেট পড়া থেকে আসা যাওয়ার পথে এখানে বইয়ের টানে যেতেই হত। কেননা আমার বইয়ের উৎস তখন এত ছিলোনা তাই গ্রন্থাগারেই অনেক বই পড়ে লুকিয়ে রেখে আসতাম পরেরদিন পড়বো বলে। এভাবে অনেকদিনে একটি বই শেষ করা লাগতো।
হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালই বেশি পড়া হত, পাশাপাশি জহির রায়হান, জুল ভার্নদের সাথেও পরিচয় হচ্ছে ভালোমত। কিন্তু পড়া হত ওই হুমায়ূনই বেশি। একদিন খুজতে খুজতে অদ্ভুত নামের একজন লেখকের রচনাবলী নজর কাড়লো - আহমদ ছফা। ছফা কারো নাম হতে পারে সেটা আমার সীমিত জ্ঞানের পরিধিতে অদ্ভুত লেগেছিলো। তার উপন্যাসসমগ্র নিয়ে একটা উপন্যাস শুরু করলাম যার শুরুতেই একজন লোকের নতুন নতুন ভিক্ষা করে কিছু রোজগার চেষ্টার বর্ণনা ছিলো । বর্ণনার ভঙ্গি ছিলো একাগ্র হুমায়ূন পাঠক আমার কাছে অভিনব। মানুষের মুখে মুখে কথার বিবর্তন বোঝাতে ছফা বলেছিলেন " জিহ্বার ঘষায় কথাটি বদলে গেলো" (হুবহু মনে নেই)
সেই উপন্যাসটি ছিলো 'একজন আলী কেনানের উত্থান পতন'।
.
তখন লেখার স্টাইলটা অভিনব লাগলেও হুমায়ূন পড়ার কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতে পারিনি কিংবা চাইনি হয়তো। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন এমন ছিল যারা কলেজ লাইফে শেয়ার করে প্রচুর বই পড়েছি, কবিতা পড়েছি, আবৃত্তি শুনেছি, বাংলা ব্যান্ডের গান শোনার পর একেকটা গান গাইতে গাইতে পথ হেটেছি আড্ডা দিয়েছি। এবং এর মধ্যে কয়েকজন তারুণ্যের আবেগের বশে কবিতা লেখা শুরু করেছি। সে বন্ধুদের মধ্যে আমাদের তিনজনের একটা ত্রয়ী মত ছিলো, ছফার এই উপন্যাস এর শুরুটা পড়ার পর এই নতুন আবিষ্কার (ছফা) নিয়ে বন্ধুদের বলার পর তিনজন মিলে ছফার কবিতাসমগ্র নিয়েও ঘাটাঘাটি করে দেখেছি, আমাদের মতে প্রচুর ধারালো কবিতা লেখে এই আহমদ ছফা।
ওই পর্যন্তই, হুমায়ূন আহমেদের চেনা পৃথিবী ছেড়ে বেশিদূর যাবার ইচ্ছা হয়নি কিংবা এর বাইরেও বিস্তৃত বইয়ের সন্ধান আমাদের কাছে পৌছায়নি হয়তো। এর মাঝে অবশ্য বঙ্কিম, রবীন্দ্র, শরৎ, আর্থার কোনান ডয়েল, সুকুমার রায় খানিকটা পড়া হচ্ছে। কিন্তু আহমদ ছফা নামটা আমাদের তখন পরিচিত না, আর জাফর ইকবালের মত লোককে যেভাবে চিনি আহমদ ছফাকে তার কিয়দংশও চিনিনা বলেই বুঝি আগ্রহ জমে ওঠার সময় পায়নি। সেটাই আহমদ ছফার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়তো।

.


.
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন - ছফাকে পুনরাবিষ্কার
-----------------
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পিছে দেশের নামকরা বিদ্যাপীঠে পড়ার ইচ্ছার পাশাপাশি আরেকটি কারণ ছিলো বোধ হয়-বড় শহরের বহুমুখী অভিজ্ঞতার প্রভাবে নিজের অঙ্কুরিত হঠকারী কবি প্রতিভাকে আরেকটু বড় পরিসরে গিয়ে শানিয়ে নেয়া। হলে উঠি কিছুদিনের মধ্যেই। বইটই পড়ার সুবাদে পড়ুয়া কিছু মানুষের সাথেই সখ্যতা, বই আদান প্রদান, অভিজ্ঞতা শেয়ার চলতো। ডিপার্টমেন্টের বন্ধু Tamim Hasan আমাকে 'ওঙ্কার' বইটি পড়তে দেয়। পরে কবি জসীমউদ্দীন হলের বড় ভাই Jahid Ruman ভাইয়ের কাছ থেকে 'পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরান' এবং ' যদ্যপি আমার গুরু' বই দুটি এনে পড়ি। তখনো পাঠক হিসেবে আমার 'হূমায়নী দুধদাঁত' পরেনি। ঘাটাঘাটি করে পড়া, বুঝে বুঝে সময় দিয়ে, চিন্তা করে, লেখকের দর্শন বোঝার চেষ্টা করে, লেখার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়নি তখনো। সত্যিকার অর্থে আহমদ ছফা নামের লেখকের তিন তিনটা বই পড়ার পরেও আমার 'আহমদ ছফা' মানুষটির সম্পর্কে বলতে গেলে অজ্ঞই থেকে যেতে হয়েছিলো। কেননা বইগুলো পড়া হয়েছিলো একজন হুমায়ূনি পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এবং ব্যাক্তি আহমদ ছফাকে না চিনেই। আর আহমদ ছফার মত লেখক পাঠকের কাছ থেকে যেরকম মনযোগ আর সচেতনতা দাবী করেন পাঠক হিসেবে সেরকম কোন বাড়তি পরিশ্রম করার যোগ্য কিংবা ইচ্ছুক হয়ে উঠিনি তখনো। এরপর গণরুমে থাকাকালীন 'গাভী বিত্তান্ত' বইটি পড়া হয়। বইটি কার সুবাদে পেয়েছিলাম এই মুহূর্তে মনে নাই। এই বইটি পড়ে আমার চোখ খুলে গেলো অনেকটা। আহমদ ছফা মানুষটা যে আমার জানা লেখকের গন্ডির বাইরের লোক, এই লোকটা যে কী সেটা তখন খানিকটা অনুধাবন করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের নোংরামিগুলো যেভাবে তার কলমে ফুটে ওঠে সেটা অভাবনীয় লাগে। এবং আমাদের স্বপ্নের তীর্থস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে স্বপ্নভঙ্গকালীন সময়ে এরকম কাটাছেড়া করা বইটি আমার ভালো না লেগে পারে না- এই বইয়ের প্রেক্ষাপট আমাদের স্বপ্নভঙ্গের সাথে মিলে গিয়েছিলো বলেই বোধ হয়।
গাভী বিত্তান্ত আবার পড়ি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে, মিঞা মো: আবু জুনায়েদ এবং মিঞা মো: আখতারুজ্জামান কে তুলনা করে করে, কাটাছেড়া করে পড়ি এবার।
ফার্স্ট ইয়ারে গাভী বিত্তান্ত পড়ার পর আহমদ ছফা নিয়ে আমার ঘাটাঘাটির শুরু।





ছফাতে ডুবে যাওয়া
------------- ------------
সচেতন পাঠক মহলে প্রচুর রকমের একজন জনপ্রিয় ছফাকেই আমার মত অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে পড়া দূরে থাক, নামই শোনেননি। ভার্সিটি এসে পরিচয় তো হল আহমদ ছফা নামের একজন ঠোঁটকাটা, একরোখা, মাটির কাছাকাছি বুদ্ধিজীবীর সাথে।
এরপর ছফা নিয়ে আড্ডা, গল্প, মুগ্ধতার কোন শেষ নেই। ছফা পড়া চলছে পাশাপাশি। সেকেন্ড ইয়ারে পড়াকালীন সময়টা আমার ছন্নছাড়া চলাফেরা আর জীবনানন্দীয় হতাশা, কবিতাই ধ্যানজ্ঞান আর কিছুই লাগবেনা টাইপ চিন্তাধারা থেকে ক্লাস ল্যাব বাদ দিয়ে যত নতুন লেখক সামনে আসে পড়তে শুরু করি। ফার্স্ট ইয়ারের শেষে এবং সেকেন্ড ইয়ারের শুরুতে আমার কাফকা পড়া হয়।

তো তখন সাহিত্য সমালোচনা পড়ার ঝোকও চাপে। কবিতায় তিরিশের কবিদের, জীবনানন্দের কবিতা - জীবন নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কাটে, আর এদিকে আহমদ ছফা, শহিদুল জহির আরো কেউ হয়তো ছিলো, মনে পরছেনা।
এরপর একে একে প্রায় সব উপন্যাস পড়া হয়, গল্পগ্রন্থ 'নিহত নক্ষত্র' পড়া হয়, প্রবন্ধ পড়াও চলছে পাশাপাশি কবিতাও অল্পস্বল্প।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এখানের জীবন, রাজনীতি নিয়ে লেখা পড়তে ভালো লাগবে স্বাভাবিক। কিন্তু ছফার সাবলিল গদ্যের মাঝে একটা অন্যরকম টান ছিলো। বুদ্ধির স্ফুরণ থাকলেও সেখানে সহজ সাবলিলতা নষ্ট হয়নি। প্রবন্ধের মত নিরস জিনিস পড়তেও গল্প-উপন্যাসের মত টান বোধ করি। এমন নির্মোহ সত্য বয়ান আর পাঠককে টেনে ধরে রাখার মত শক্তি ছফার প্রতি টান বাড়িয়েছে।
তার প্রবন্ধগুলিতে গল্পের মত আকর্ষণ বোধ করি প্রায়শই। বাঙালি মুসলমানের মনে দ্বন্দ্বমুখর চিন্তাভাবনা, বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাসে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের মুখোশ উন্মোচন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান এবং একে রুখতে প্রগতিশীল শক্তির চরম ব্যার্থতা উঠে এসেছে ছফার চোখা দৃষ্টিতে।
ভালোলাগা একটুও কমেনি, উত্তরোত্তর বাড়ছেই।



*ছফা উপহার
------------------
৯ খন্ডে প্রকাশিত পুরো আহমদ ছফা রচনাবলী ২০১৯ সালে উপহার দেয় সাবেক প্রেমিকা Rafia Ahmed Tuli।

.
.
ছফার কবিতা: প্রথম ছফা
-------------------------
একজন আলী কেনানে আংশিক ইশারার পর কবিতাতেই ছফার সাথে পরিচয়। ছফার জিহবার ধার প্রথম টের পাই এখানেই। কবিতায় যে চোখা প্রতিবাদের তীর আছে সেটাও টের পাই। পরে কবিতাসমগ্র নামিয়ে পড়ি কিছু কিছু। একদিন হাসপাতালে ওয়েটিংয়ে বসে ফোনে পড়ছিলাম কবিতা, একজন আগ্রহ দেখালেন কি পড়ছি, ছফার কবিতা শুনে অবাক হয়েই বললেন, 'ছফার কবিতাও আছে নাকি?'।
এরপর বুয়েটের সাহিত্য সংসদের আয়োজনে ২০১৭ সালের দিকে ছফার কবিতার উপর সলিমুল্লাহ খানের লেকচার শুনতে গিয়েছিলাম। উপভোগ্য ছিলো সেই লেকচারটি। আমি আর Azadur Rahman Shakil ১ঘন্টা আগে গিয়ে জায়গা পাইছিলাম ভালোমত সেইটা মনে আছে।

.
.



ছফার উপন্যাস: ছফায় মুগ্ধতা
------------------------------
ছফার গদ্যের সাথে তো ভালোমত পরিচয় যদ্যপি আমার গুরু এবং পুষ্প,বৃক্ষ,বিহঙ্গপুরাণ দিয়ে। ২০১৫ সালে পড়ার পর গাভী বিত্তান্ত প্রথম মরমে পশে। এরপর ছফার প্রবন্ধ পড়া হয়েছে। কিন্তু উপন্যাস আর পড়া হয়নি ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আবারো 'গাভী বিত্তান্ত'-কে প্রাসঙ্গিক মনে করি। এইবার বর্তমান ভিসির সাথে মিলিয়ে পড়ি। তারপর মনে হল অনেক দেরি হয়ে গেছে, এবার উপন্যাসগুলো পড়া যাক সব। একে একে একজন আলী কেনানের উত্থান পতন, মরণবিলাস, অলাতচক্র, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী পড়া হয়। বাকি ছিলো সূর্য তুমি সাথী; সেটাও এই কিছুদিন আগে পড়া হয়। একেকটা উপন্যাস সময়ের প্রয়োজনেই লেখা হয়েছে বোধ করি। ছফার কোন লেখাই সস্তা কিংবা বাহুল্য মনে হয় না।
আমার মনে হয় ছফার একটা বিশেষত্ব হল ছোট পরিসরে এত বিস্তৃত কিছু বয়ান করা হয় যে পুরো উপন্যাস কাউকে আগাম বলে দেবার পর যদি সে উপন্যাসটা পড়ে তাহলে মনে হবে একেবারে অজানা, অচেনা, নতুন উপন্যাস পড়ছে।
.
- একজন আলী কেনানের উত্থান পতনে স্বাধীনতার আগে পরে একজন আলী কেনান, যে গভর্নরের খাস লোক থেকে ক্রমে মাজারের পির হয়ে শেষমেষ জয় বাংলার পীর, প্রেমিক হয়ে ওঠে এই গল্পের ছায়ায় ছফা লাল সালুর মতই আরেকটি মাজারকেন্দ্রীক জীবনের ছবি আঁকেন।এই ছবি শহরের মাজারের, গ্রাম নয়। কিন্তু বিস্তৃত বয়ানে এখানে উঠে আসে গভর্নর হাউস, মাজার কেন্দ্রীক ধর্ম, সমাজ,অর্থনীতি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সমাজতন্ত্র, গ্রাম্য রাজনীতি, চর এলাকার মানুষের মনস্তত্ত্ব!
.
- গাভী বিত্তান্ত : বেশিরভাগ ছফাভক্তই পড়েছেন। এখানে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কে লাশকাটা ঘরে নিয়ে কেটেকুটে দেখানো হয়েছে। ভেতরের নোংরামি, শিক্ষক রাজনীতি বাদ যায়নি কিছুই। এই প্রেক্ষাপট আজকের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাধারণ চিত্র। আমাদের ভাগ্য যে ছফা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন না, আমলা ছিলেন না। তা হলে এই সত্য বয়ান পাওয়া সম্ভব ছিলোনা।
.
- অলাতচক্র: এই উপন্যাস আর ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই পড়ার পর বোধ করি আমাদের মুক্তি আন্দোলন নিয়ে লেখা গতানুগতিক অনেক লেখা পড়া অসম্ভব হয়ে যাবে। " ৭০ এর নির্বাচন হল, ৭ ই ভাষণ মার্চের হল, ২৫ শে মার্চের ব্ল্যাকআউট, পাকিস্তানিরা আমাদের হত্যা, ধর্ষণ করলো, আমরা ফাইট ব্যাক করলাম, জিতলাম ওরা আত্মসমর্পণ করলো। " -- এই যে একটা গতানুগতিক চর্বিত চর্বণ সবাই লিখে চলেছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, তারা নিশ্চই ভুলে গেছেন এই পোষাকী গল্পের আড়ালেও অনেক গল্প আছে, প্রশ্ন আছে, দৃষ্টিভঙ্গি আছে। অলাতচক্র পড়ার পর অনেকেরই মুখোশ খুলে যাবে, সত্য ইতিহাস বয়ান, ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে শেখা আরোও জরুরি বোধ হবেই।
*এরকম করে বলে গেলে সব উপন্যাস নিয়েই পৃষ্টার পর পৃষ্টা বলা যাবে। তাই এই কয়টা বইয়েই থামি।
.


.
ছফার প্রবন্ধ: শানিত ছুরি
---------------------
ছফার প্রবন্ধ পড়ে একদম গল্পের মত টান বোধ করি। তার বাঙালি মুসলমানের মন, বঙ্কিমচন্দ্র:শতবর্ষের ফেরারি, সাম্প্রতিক বিবেচনা:বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস, নজরুলের কাছে আমাদের ঋণ, এস এম সুলতান নিয়ে লেখা প্রবন্ধগুলি, রাজনৈতিক প্রবন্ধগুলো আমাদের ভাবনার নতুন মাত্রা দেখাবেই।
প্রত্যেকটা জটিল বিষয়ে সহজ করে লেখা এমন নির্মোহ, সৎ বয়ানে ভালো না লেগে পারেই না।
সাম্প্রতিক বিবেচনা:বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস লিখেছিলেন জাসদের মুখপত্র গণকণ্ঠ পত্রিকায়। তৎকালীন সময়ে এমন বলিষ্ঠ ভাষায় লেখা একজন মামুলি রিসার্চ স্কলারের পক্ষেই সম্ভবত সম্ভব। কেননা তার হারাবার কিছু নেই এবং লোকটি আহমদ ছফা! কাউকে না গুণে এমন করে লিখে গেছে বলেই লোকটা কোন প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও আমাদের মত তরুণ পাঠকের কাছে অতিপ্রিয় লেখক, চিন্তানায়ক হয়ে বসে থাকা সম্ভব হয়েছে তার পক্ষে। বঙ্গবন্ধু নিয়ে তার কিছু কিছু আলাপ শুনলে অনেকেরই রক্ত জ্বলে উঠতে পারে, সেটা ছফার নির্মোহ বয়ানের দোষ নয়, গুণ। দোষ কারো যদি হয়েই থাকে তাহলে যারা মুজিব কাল্ট প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে পূজি করে নিজের আখের গুছায় যারা, যারা মনে করে মুজিব সাধারণের নেতা নন, কারো ব্যাক্তিগত সম্পত্তি।

.
.



ছফার গল্প
-----------------
নিহত নক্ষত্র নামে তার একটিমাত্র গল্পগ্রন্থ পড়েছি। সেখানে বইয়ের নাম গল্পটি সবচেয়ে হৃদয় স্পর্শ করেছে। এখানেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেক্ষাপট করেই লেখা কিন্তু কিছুটা সমাজতান্ত্রিক মানসিকতা ঘেষা মনে হয়েছে। গল্পটা অসাধারণ লেগেছে যদিও।

..

সামগ্রিক ছফা
-------------------------
আমরা কেউ স্কুল কলেজের বইতে ছফা পড়িনি। পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়লেও পড়া হয়েছে অনেক পরে। কিন্তু যারা পড়েছে তাদের বেশিরভাগের মনোজগৎ এত আলোড়িত কেন করে এই লোক?
আমার মাথায় কিছু উত্তর আছে। প্রথমত ছফার কোন পিছুটান ছিলোনা বা থাকলেও সেগুলো জেদি, ছন্নছাড়া আহমদ ছফার পক্ষে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলো। কিছু হারাবার কোন ভয় তো তার ছিলোনা। ছাত্র থাকার কারণে তার বয়ান ছিলো সত্যের বেশি কাছাকাছি। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি এর ভেতরের গল্প লেখে সেখানে মিথ্যা গালগল্প আসবে কম। আসতে বাধ্য।
একটা কথা কিন্তু সত্য, 'ছফার জীবন আর লেখা দুইয়ে মিলে একটাই সরলরেখা, অনেকের মত বক্র রেখা নয়, লেখা আর জীবনের আইডিওলজি ভিন্ন ভিন্ন রেখাও নয়। এইটাই ছফার শ্রেষ্ঠত্বের পেছনের কারণ।


*সীমাবদ্ধ জ্ঞান থেকে ছফা নিয়ে আলাপ করার ধৃষ্টতা করেছি, ভূলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×