সুন্দরবন বা বাঘ ভল্লুক বাঁচলো কি মরলো সেটা আমার ভাবনার বিষয় নয়। মানুষ ভালোভাবে বেঁচে থাকছে তো! হঠাৎ ই এই বিষয়টা আমার মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা আমরা যারা রামপাল কে বিরোধিতা করে কথা বলছি তাদের ভেতরে আমরা আসলে কত ভাগ মানুষ জানি এই রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদুৎ কেন্দ্র হলে আমাদের কি কি ক্ষতি হবে বা লাভ হবে?
আজ থেকে দুতিন বছর আগে চাঁদে সাইদি সাহেবকে দেখা গেছে বলে কেউ একজন ফতোয়া দিলো। আর হুট করেই এক শ্রেনীর অসংখ্য মানুষ সেটাকে বিশ্বাস করে দেশের ভেতরে একটা বিশাল আওয়াজ তুলে বিস্ফোরন ঘটালো। কিন্তু কেউ ই জানে না আসলেই কি চাঁদে সাইদি সাহব কে দেখা গিয়েছে কি না! অথবা যিনি এই কথা প্রচার করেছেন তিনি কে বা কি তার পরিচয় সেটা ও কেউ জানে না। সেই বহুল প্রচারিত হুজুক শব্দটা আমাদের চেতনায় চরম ভাবে যে মিশে আছে সেটা অস্বীকার করার কোন সুজোগ নেই এটা সেদিন ও কিন্তু প্রমান হয়েছিলো।
আমার কাছে হঠাৎ ই মনে হলো আচ্ছা সুন্দরবনের রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদুৎ কেন্দ্র হলে আসলে আমাদের কেন বা কি কারনে ক্ষতি হবে বা লাভ হবে? এটার বিষয়ে ন্যনুতম কিছু কি আমি জানি! আমার কাছে মনে হয়েছে এই আমার মত না জানা পাবলিকের সংখ্যা প্রায় ৯৫ ভাগ যারা ঠিক হুজুগেই একটা পক্ষ নিয়ে বিতর্কে জড়াচ্ছে। অনেকে জানেই না এই রামপাল কোথায়? ঠিক তারাও দেখছি রামপাল নিয়ে কথা বলছে বা স্টাটাস দিচ্ছে! আর সেই হুজুগ শব্দটাই বার বার আমার কানের কাছে ঝিলিক মারছে।
রামপাল অনেক বড় একটা ইস্যু যা এই বিষয়ে চরম অভিজ্ঞ ছাড়া মাপকাঠি করা সম্ভব নয়। যারা পরিবেশ নিয়ে স্টাডি করে তাদেরই তো এই বিষয় বেসি ভালো জানার কথা! অথচ আমার মত আলু পটল ব্যবসায়িরাও রামপালে বিদুৎ কেন্দ্র হলে লাভ ক্ষতির বিতর্কে জাড়াচ্ছে কিন্তু কি ধরনের ক্ষতি বা লাভ হবে সেটাই জানে না! একটা বিষয় খুব খেয়াল করছি ইদানিং বিরোধিতা করাই যেনো অনেক বড় চেতনার কাজ,দেশ প্রেমের কাজ হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের বেসির ভাগ মানুষের ভেতরে! একজন রিক্সা চালক থেকে শুরু করে টপ লেভের মানুষ পর্যন্ত আমরা সবাই এই চেতনা লালন করে চলেছি।
আমি নিজেও রামপালের বিদুৎ কেন্দ্র হওয়ার বিপক্ষে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি যখন নিজেকে প্রশ্ন করেছি আসলে আমি কেন এই বিরোধিতা করছি? এই সম্পর্কে আমি কতটুকু জানি? তখন উত্তর আসছে ‘আমি আসলে কিছুই জানি না’ এই না জানা থেকে যখন আমি আরো কয়েকজন কে প্রশ্ন করলাম দেখলাম তারাও আমার মত! প্রশ্ন করলে নির্বাক বা নিরুত্তর!
বার বার চাঁদে সাঈদি সাহেবকে দেখা আর হুজুগ শব্দটা আমার কানে খুব করে বেজে চলেছে হঠাৎ ই। প্রতিটা প্রশ্নের নির্বাক উত্তর নিজেকে নিজের কাছেই হতাশ করছে। এই হতাশ শব্দটা যখন আরো দশজন মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি তখন লজ্জায় নিজেই ন্যুয়ে পড়ছি।
সুন্দরবন নিয়ে আন্দোলনটা প্রথমে কারা শুরু করেছিলো? নিশ্চয় এক শ্রেনির মানুষ বা সংগঠন যাদের তত্বই হলো সাম্রাজ্যবাদ বা ক্ষমতাকে বা সরকারে যিনি থাকেন তার বিরোধিতা করে তাদের তত্ব বা শক্তি কে প্রচার করা। যারা শ্রমজীবি আন্দোলনের কথা বলে বা সেটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অসংলগ্ন তত্ব বা ক্ষতায় যাওয়ার বিভিন্ন বামপন্থা অবলম্বন করে সেটা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া! সেই বাম রাজনীতিবীদ দের আন্দোলন যেখানে সরকার হঠানো পন্থা হিসেবে সুন্দরবন কে একটা হাতিয়ার বা ইস্যু হিসেবে তৈরি করে আন্দোলন শুরু হয়েছিলো! যা এখন পরিবেশবাদী আন্দোলনে রুপ নিয়েছে। কিন্তু তাদের ভেতরে আসলে পরিবেশ এর উপর বিশেষজ্ঞ কয়জন? প্রতিটা দল বা সংগঠনই শুধুমাত্র তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে একটা ঘটনা কে ইস্যু করে মনগড়া একটা তত্ব বা বিশ্লেষন করে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে বৃহৎ আন্দোলনের চেষ্টা করে যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল থাকে না বেসির ভাগ! বামদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনই আজ পরিবেশ আন্দোলনে রুপ নিয়েছে। আচ্ছা যিনারা রামপালে বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে তাদের ভেতরে কি বড় বড় পরিবেশ বিশারদ নেই!?
বিতর্কিত কথা বলে আমি আসলে পরিবেশটা ঘোলাটে করতে চাই না। তবে আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন এ ধরনের প্রতিটা আন্দোলনের মূল উদেশ্যই হচ্ছে সরকারকে বিতর্কিত করে তাকে ক্ষমতা থেকে নামানো! সলিট দেশ প্রেম আর দেশের প্রতি ভালোবাসার মানুষের সংখ্যা আসলে কি খুব বেসি?
আপনার কাছে হয়তো মনে হবে আমি হুদায় পাগলের মত এত বগ বগ করলাম যার কোন অর্থই নেই! কিন্তু আসলেই কি আমরা কোন ঘটনার বাস্তবতা জানার জন্য স্টাডি করে কথা বলি? স্টাডি করি না বলেই আমাদের দেশে প্রতি মাসে হুট করেই একটা ঘটনা নিয়ে মানুষের মাঝে চরম উত্তেজনা প্রতিরোধ প্রতিবাদ, লেখালিখি শুরু হয় আবার হুট করেই সেটা বন্ধ হয়ে যায়! যার পেছনে বাস্তব ঘটনা অজানা বা না জানারই প্রতিচ্ছবি বিরাজ করে। যে ৯০ ভাগ মানুষ রামপালকে না জেনে বা না বুঝে হুজগে বিতর্কে জড়াচ্ছে তারা কি এইসব বিকর্তে আগে না জড়িয়ে এই বিষয়ে একটু স্টাডি করবে?
দেশে এখন দুই শ্রেনির মানুষ আছে যার একটি হচ্ছে শুধুমাত্র রাজনীতি করে অপক্ষমতা গ্রহন করতে চায় আর এক শ্রেনির মানুষ হচ্ছে সেই রাজনৈকিত মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুল ভাল বকতে থাকে! নিরেট সচ্ছ এবং খাঁটি মানুষ বা বাঙ্গালি এখন আর এ দেশে অবশিষ্ট নেই যারা জেনে বুঝে দেশের প্রয়োজনে বিতর্কে জড়াবে।
আমার এই বক্তব্য কোন ভাবেই কিন্তু রামপালকে সাপোর্ট দেয়া নয়। আমার এই বক্তব্য সঠিক তত্ব জেনে বিতর্কে যাওয়ার অনুনয় মাত্র। দেশের সীমিত সংখ্যক মানুষ এই রামপালের বিরোধিতা করছে বলতে গেলে সেটা ৫ ভাগ। বাকি ৯৫ ভাগ কিন্তু নিশ্চুপ! তারা নিশ্চুপ বলে কিন্তু তাই নয় যে তারা একেবারেই কিছু বোঝে না! আমি ধরেই নিলাম আপনাদের আন্দোলন যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। ওখানে বিদুৎ কেন্দ্র হলে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু আজ যারা এই ধরনের আন্দোলন করছেন তারা কি কখনো বিকল্প উপায় হিসেবে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। আপনার যখন সুন্দরবনকে ইস্যু করে সভা করে বক্তৃতা দেন তখন দেখেছি আপনাদের ৯৯ ভাগ বক্তব্যই থাকে সরকার হঠানো অপচিৎকার আর আপনাদের বাম পন্থা বা বাম আন্দোলন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার দারুন প্রচেষ্টা! অথচ আপনারা আন্দোলন, সভা করছেন রামপাল কে নিয়ে! আপনাদের প্রতিটা ইস্যুর প্রধান উদেশ্য সরকারকে বিতর্কিত করে নিজেদের ক্ষমতায়ন।
একটা বাঘ মরে যদি দুজন মানুষ ভালো ভাবে বেঁচে থাকে সেটাতে নিশ্চয় আমার বা কারো কোন আপত্তি থাকবে না? আজ আপনরা শহরে বসে রামপালকে নিয়ে যে ভাবে চিল্লা চিল্লি করছেন সেখানে একটু গ্রাম অঞ্চলে গিয়ে কিছু দিন নিয়মিত বসবাস করে আসলেই বুঝতে পারবেন বাঘ বাঁচাবেন না গ্রামের মানুষ গুলো বাঁচাবেন। বিরোধিতা করা আমাদের দেশে খুব সহজ একটা কাজ কিন্তু পক্ষে মত দেয়া আমাদের দেশের মানুষের মানুষিকতা অনুযায়ী খুব কঠিন কাজ। আমাদের নৈতিকতাই হচ্ছে বিরোধিতা করতে হবে সেটা সঠিক হোক আর না হোক!
সবকিছুর পরে ও আমি রামপালে মানে সুন্দরবন ধংশ করে বিদুৎ কেন্দ্র নির্মানের পক্ষে নই। তবে আমাকে এটা ও ভাবতে হবে দেশের মানুষের ও নাগরিক সুবিধা দিতে হবে। তবে মনগড়া বা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের দেয়া লাভ ক্ষতির হিসেবের দিকে না তাকিয়ে আমাদের নিজেদের স্টাডি ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমাদের নিজেদেরকেই বুঝতে হবে বা জানতে হবে কোনটাতে ক্ষতি আর কোনটাতে লাভ। যারা রাজনীতি করে তারা শুধমাত্র তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন বিরোধি আন্দোলন করে যেটা কখনোই সাধারন মানুষের আন্দোলন নয়। এখানে তারা সাধারন মানুষকে তাদের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। এখন সময় হয়েছে নিজেদের কে সচেতন করার। কোনটাতে লাভ আর কোনটাতে ক্ষতি সেটা আমাদেরকেই বুঝে নিতে হবে। কোন রাজনৈকিত রেফারেন্স টেনে আন্দোলন বা বিতর্কে জড়ানো নিতান্তই বোকামি হবে।
সুন্দরবন, বাঘ থাকলো কি না থাকলো সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমি যদি জানতে পারি বুঝতে পারি মানুষ ভালো আছে,সুখে শান্তিতে আছে সেখানে একটা বাঘ বা সুন্দরবন বাঁচলো কি মরলো সেটা দেখার বা জানার কোন ইচ্ছা বা আগ্রহ আমার নেই। আমি বিশ্বাস করি সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই!
তবে আমার এই হাবিজাবি বক্তব্য নিতান্তই আমার চিন্তার বহিপ্রকাশ। আর এই বহিপ্রকাশকে যারা পাগলামি বা ছাগলামি বলবেন তাদের কে সবকিছু নিয়ে প্রপার স্টাডি করে বিতর্কে যাওয়ার অনুরোধ রাখছি।
মানুষ ও মানবতার জয় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৪০