-আজকে ইরা মণির জন্মদিন!!
-ইরা মণিটা আবার কে?
-ইমন আর রাফিয়ার মেয়ে!
-ইমন বিয়ে করল কবে? !!
-বিয়ে করে নাই।
-তাইলে!!!
গতকাল একটা প্রয়োজনে ভার্সিটির এক ছোট ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল। সে জানালো ইরা মণির গল্প। ইমন আর রাফিয়া ভার্সিটির সেই ছোট ভাইয়ের বন্ধু। আমি ভার্সিটিতে থাকাকালীন সময়েই দেখতাম ইমনের কাছে রাফিয়ার অদ্ভুত সব আবদার। ছোট ভাই বলতেছে, “গত বছর রাফিয়ার হঠাত মনে হল তাদের একটা মেয়ে থাকা দরকার। বিয়ে ছাড়া মেয়ে!! ক্যামনে কি? ইমন বুদ্ধি করে রাফিয়াকে বিশাল সাইজের একটা পুতুল কিনে দিল। ইমন আর রাফিয়ার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে সে পুতুলের নাম রাখা হল ইরা মনি। গতকাল ছিল সেই পুতুল কেনার এক বছর পুর্তি, মানে ইরা মণির জন্মদিন। ঘটা করে পালন করা জন্মদিনে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আমার ভার্সিটির সেই ছোট ভাইও ছিল”। আমি মনে মনে বললাম, “শুভ জন্মদিন ইরা মণি”। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে HBD লেখা জাতি, একটা পুতুলের জন্মদিন ঘটা করে পালন করছে শুনে ভাল লাগলো।
স্কুলে পড়ার সময় আমাদের ইংরেজী বইয়ে একটা চ্যাপ্টার ছিল জন্মদিন নিয়ে। চ্যাপ্টারটায় একটা ছেলের জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি লিপ ইয়ারে, মানে তার জন্মদিন চার বছর পর পর আসে। পড়ানোর সময় স্যার আমাদের কার কার জন্মদিন কবে শুনতে চাইলেন। আমি সহ আরও কয়েকজন আমাদের জন্মদিন বলতে পারলাম না। স্যার পরদিন বাসা থেকে জন্মদিন জেনে আসতে বললেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের বাপ মায়েরা জন্মদিন মনে রাখাটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। তাই আম্মাকে জিজ্ঞাস করে আমার জন্মদিন সম্পর্কে জানা গেল না। আম্মা শুধু এতটুকু বলল, আমার জন্ম রমজান মাসে। রমজান মাসের ১১ তারিখ। পরদিন ক্লাসে স্যার জন্মদিন জিজ্ঞাস করলে আমি বললাম, আমার জন্ম রমজান মাসের ১১ তারিখ। হুদাই ক্লাসের সবাই হো হো করে হাসতে লাগল। স্যার বললেন, গল্পের ছেলেটার জন্মদিন চার বছর পর পর আসে আর আমার জন্মদিন প্রতিবছর ১১ দিন আগে আসে (আরবি বছর ৩৫৪ দিনে)।
ইন্টারনেটের এই যুগে হিজরি তারিখ থেকে ইংরেজী তারিখ বের করা কি খুব কঠিন হবে? না বোধয়। আমি গুগলে সার্চ দিলাম। বিভিন্ন ক্যালেন্ডার বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। অবশ্য, তাই হওয়া উচিত, বাংলাদেশের ১১ রমজান সৌদি আরব, কিংবা আমেরিকায় একই ইংরেজী দিনে তো আসবে না। গুগলে কিছু সার্চ দিলে গুগল বরাবরই যা করে। যেটা খুঁজতেছেন শুধু অইটা বাদে বাকি সব তথ্য দিবে। এখানেও তার ব্যাতিক্রম হচ্ছে না। কিছু কিছু ওয়েবসাইট মজার মজার সব তথ্য দিচ্ছে, আজকে আমার জন্মদিন হলে আমার ১১৪০ মিলিয়ন বার হার্ট বিট হয়েছে। জন্ম থেকে কোনদিন চুল না কাটলে আমার চুল প্রায় ৩.৯৭ মিটার লম্বা হত। আরেকটা ওয়েবসাইট দেখে অবাক হলাম, আমার জন্মের দিনে আমার জন্ম ছাড়া আর কোন বিখ্যাত ঘটনাই ঘটে নাই।
জীবনে চলার জন্য আমি যে জন্মদিনটা ব্যাবহার করি ঐটা আমাদের স্কুলের শামসুল কেরানীর দেয়া। শুধু আমি কেন আমাদের স্কুলের বেশির ভাগ ছেলে মেয়ের জন্মদিন শামসুল কেরানীর দেয়া। মাঝে মধ্যে অবশ্য শামসুল আংকেল অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে ফেলতেন। যেমন, আমার সাথে একই ক্লাসে পড়া দুই ভাই বোনের বয়সের ব্যবধান করে দিয়েছেন ৩ মাস ১৬ দিন। বোঝেন অবস্থা।
গল্পের গল্পঃ
ফেসবুকের এইযুগে মানুষ এখন আর মানুষের জন্মদিন ভুলে যায়না। আমার জন্মদিন ফেসবুকে আসে না, এন্ড্রোয়েড ফোনের রিমাইন্ডারেও রাখা যায় না, তাই ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক কান্ড দুইটা মানুষ প্রতি বছর আমার জন্মদিনে ঠিকই উইশ করে। আমি নিজে আমার/তাদের জন্মদিন ভুলে গেলেও তারা আমার জন্মদিন ভুলে যায় না। দুইজনের জন্যই দোয়া আর শুভ কামনা। আরেকটা কথা ইরা মনির গল্পটা মিথ্যা না।
ছবিঃ গুগল,
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:২৩