একসময় এই তরুন ছড়াকারের সাথে আমার পরিচয়ও ঘটে দৈনিক সংবাদের খেলাঘর পাতার আয়োজনে নিয়মিত সাহিত্য সভায় । গোটা নব্বই দশক জুড়ে আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম । তাই দেখা সাক্ষাত তেমন একটা আর হয়ে উঠেনি ।
এক সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবচ্চ ডিগ্রী নিয়ে দেশ ছেড়ে যান সুদুর আমেরিকায় ।
এই আমেরিকায় প্রবাস জীবনেও তার লেখার গতি থেমে যায়নি । বরং গতি পেয়েছে বেশী । দুখের বিষয় হল তিনি শিশু কিশোরদের জন্য লেখা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন । মনোনিবেশ করেছেন কাব্য চর্চায় । বাংলা কবিতায় তিনি বেশ কিছু অসাধারন কাজও করেছেন । মাইকেল মধুসদনের পর বাংলা সাহিত্যে রচনা করেছেন স্বতন্ত্র সনেট ধারার । আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই একটি কাজই তাকে বাংলা কাব্য জগতে দীর্ঘকালের স্থায়িত্ব এনে দিবে ।
প্রবাসে নানান ব্যস্ততার মাঝেও তিনি দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদনা করছেন বাই-লিংগুয়াল কবিতা পত্র " শব্দ গুচ্ছ" । যা ইতোমধ্যে সিরিয়াস পাঠকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে । শুধু কি বাংলা ভাষা ভাষীদের মাঝে ?
তা কিন্তু নয় । এই " শব্দ গুচ্ছ" আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক কবিমহলেও বেশ প্রশংসা পেয়ে আসছে ।
আমাদের হাসান ভাই'র সাথে মাঝখানে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে তার কবিতা পড়তাম । কিন্তু ২০০৮ সালে এক আড্ডায় হঠাত একদিন আমার সাংবাদিক বন্ধু দীপু শিকদার বলছিলেন ,কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ বইমেলার জন্য দেশে এসেছেন ।
শুনেই আমার মনে পড়ে যায় অনেক কথা । আগ্রহ নিয়ে তাকে জিগেস করি,আপনি কি তাকে চেনেন ?
দীপু ভাই কিছু বলেন না। শুধুই হাসেন ।
আমি আবারো জিগেস করি, আপনার কাছে তার নাম্বার আছে ?
দীপু ভাই কিছু না বলে তার ফোন থেকেই হাসানভাইকে ফোন করে আমাকে ধরিয়ে দেন ।
আমি কথা বলি ।
হাসান ভাই প্রথমে রনি বলায় চিনতে পারেননি । যখনি আমার পুরো নাম বলেছি তিনি সাথে সাথে চিনে ফেলেন ।
তারপর আমি এই কথা ,সেই কথা বলে পরেরদিন দেখা করি বাংলা একাডেমির বহেরাতলার লিটিল ম্যাগ চত্বরে । বিদেশ থাকায় হাসান ভাই'র চুলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে ।একমাথা ঝাকড়া চুল ।ঠে।ঠের কোনে লেগে আছে সেই চিরচেনা দিলখোলা ,প্রানবন্ত হাসি ।
তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়মিত ফেব্রুয়ারী মাসে বইমেলায় হাসান ভাইর সাথে আমার দেখা হয়ে আসছে । আমাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে এখন অনেক বেশী জোরালো । অনেক বেশী যোগাযোগ হয় ফেসবুকের কল্যানে ।
হাসান ভাইর স্ত্রীও একজন স্বনামধন্য কবি, নাজনীন সীমন । তিনি অসাধারন কিছু গল্প লিখেছেন ,কবিতাতো বটেই । হাসান ভাইর কারনে তিনি আমার ভাবী । আবার বন্ধু দীপু ভাইর কারনে তিনি আমার বড় আপা। আমার সুবিধা মতন আমি কখনো আপা, কখনো ভাবী ডাকি । আমার ডাবল দাবী, ডাবল আত্মীয়তা ।
হা:হা:হা:হা:হা: ...কি মজা !
এইবার আমেরিকা যাব যখন ভাবছিলাম,তখন একদিন ফেসবুকে হাসান ভাইর কাছ থেকে ফোন নাম্বার চেয়ে রাখি । আমেরিকা যাব আর হাসান ভাই ,আপা-ভাবীর সাথে একবার দেখা করব না -এইটা কি করে হয় ?
আমেরিকা যাবার পর নিজস্ব কিছু কাজ থাকায় যোগাযোগ একটু দেরি করে করি । এ নিয়েও হাসান ভাই মন খারাপ করেন।
তারপর একদিন হাসান ভাইকে বলি,কাল অবশ্যই আপনাদের বাসায় যেতে চাই ।
পরের দিন হাসান ভাই শত ব্যস্ততার মাঝেও কুলিজ এভিনিউ থেকে আমাকে নিয়ে জ্যামাইকা ঘুরিয়ে দেখান । তারপর তার উডেন হ্যাভেনের বাসায় নিয়ে যান ।
সেইদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসান ভাইর বাড়িতে চমৎকার সময় কাটিয়েছিলাম । অনেক আড্ডা ,অনেক কথা হয়েছিল আমাদের । সাহিত্য,সংস্ক্রিতি, রাজনীতি কিছুই বাদ যায়নি ।আড্ডা দিতে দিতে রাত অনেক হয়ে যায় । কথা বলতে বলতে কত কিছু যে খেয়েছি তা আর এখন মনে নেই ।
সব শেষে সীমন আপার হাতের রান্না করা চমৎকার সব খাবার খেয়ে আনন্দের ঢেঁকুর তুলে আমি ফিরে আসি কুলিজ এভিনিউর সুমনের বাসায় ।অবশ্যই মাঝরাতে হাসান ভাইকে কস্ট দিয়ে তার গাড়িতে চড়ে ।
অনেকদিন মনে থাকবে এই রাতটির কথা ।