somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূশ সাহিত্য সম্রাটের মহাকাব্যিক জীবন

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯১০ সালের নভেম্বর মাসে রুশ সাম্রাজ্যে শীত যখন বরাবরের মতো বরফের শীতল থাবা বিছিয়ে দিচ্ছিলো, আস্তাপভো নামের এক প্রত্যন্ত রেল স্টেশন পৃথিবীর পত্রিকার পাতায় স্থান করে নিলো। সেখানে স্টেশন মাস্টারের ঘরে কয়েকদিন হয় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন একজন বৃদ্ধ লেখক; হালকা হয়ে আসা রূপালী চুল, আর একবুক সাদা দাঁড়িতে সুশোভিত মুখ, ভাসা ভাসা চোখে ফুটে আসা তীব্র অভিব্যক্তি! নিউমোনিয়ার তীব্র জরের ঘোরে তেমন কিছুই আর বলতে পারছিলেননা তিনি। কয়েকদিন আগে গভীর রাতে ঘর ছেড়েছিলেন মানুষটা। স্ত্রী সোফিয়ার সন্দেহপ্রবণতা আর তীব্র মনোমালিন্যের জেরে ত্যক্ত বিরক্ত বৃদ্ধ লেখক আটচল্লিশ বছরের পুরানো সংসার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। হয়তো সারাজীবন যে জীবনের আদর্শ লালন করতেন মনে মনে, সেই নির্জন নিঃস্তব্ধ জীবনের খোঁজে বের হয়েছিলেন! কিন্তু তা আর হলো কই! ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি, নামতে বাধ্য হলেন এই অখ্যাত গ্রামে। তার শেষ বিদায়ের ক্ষণ নির্জন, নিঃস্তব্ধ হলোনা। অসংখ্য ভক্ত ভীড় জমালেন। আর জড়ো হলেন অসংখ্য সাংবাদিক; কারো হাতে ক্যামেরা, কারো হাতে ফিল্মের রোল। তাদের কাছে এটা মিডিয়ার সবথেকে বড় খবর। অভিমানী সোফিয়া জানালা দিয়ে অসুস্থ স্বামীর দিকে উঁকি দিচ্ছিলেন; লেখকের বন্ধুরা সোফিয়াকে কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছিলোনা একদম! তাদের ফাঁকে ফাঁকে ছদ্মবেশে আনাগোণা চলছিলো সম্রাট জার নিকোলাসের গুপ্তচরদের। বৃদ্ধ মানুষটি নাকি গরীব কৃষকদের খুব স্নেহ করতেন, তাদের অধিকারের কথা বলতেন, আর তাতে সম্রাটের সন্দেহ বাড়ছিলো তার প্রতি। এই স্টেশনেই ২০নভেম্বর, ১৯১০ চিরতরে চলে গেলেন তিনি। এই মহান লেখকের নাম কাউন্ট লিও নিকোলায়েভিচ টলস্টয়।
সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মেছিলেন যে গুটিকয়েক প্রতিভাবান মানুষ, তিনি তাদের একজন। ১৮২৮ সালে রাশিয়ার এক অভিজাত জমিদার পরিবারে তার জন্ম হয়। তাদের পারিবারিক উপকথায় কথিত ছিলো সম্রাট সিজারের সময় এক রোমান অভিজাত পরিবার এইদিকে এসেছিলো, যাদের সরাসরি উত্তরপুরূষ টলস্টয়রা। অল্প বয়সে বাবা মাকে হারিয়ে আত্মীয়ের কাছে বড় হয়েছিলেন, আর ওই অল্প বয়সেই অগাধ সম্পত্তির মালিক বনে গিয়েছিলেন টলস্টয়। প্রথম জীবনে বিলাস, ব্যসন, ভোগ-লালসায় পার করেন তিনি। জুয়া খেলায় ঋণের বোঝা বেড়ে গেলে ১৮৫১ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনীর চাকুরি ছেড়ে দেন। ১৮৫৭ সালে ফ্রান্স ভ্রমণের সময় গণশাস্তির বীভৎসতা আর যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি তাকে সারাজীবন তাড়া করে বেড়িয়েছিল। তার ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিলো তখন থেকেই; কঠোর ভাবে অহিংসা নীতি গ্রহণ করেন। এই সময় থেকেই টলস্টয় সবসময় সত্য বলবেন বলে ঠিক করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬০ সালে সোফিয়ার সাথে বিয়ের পর তিনি তাকে তার ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়তে দিয়েছিলেন; যেখানে তার বিবাহপূর্ব উচ্ছৃঙ্খল জীবন ও অনেক নারীর সাথে সম্পর্কের কথা লিখা ছিলো। সোফিয়ার সাথে তাই শুরু থেকেই সম্পর্কে খানিকটা অসহিষ্ণুতা ছিলো। তারপরও বিবাহিত জীবনের প্রথম দিকে সোফিয়া সবসময় সবকাজে তার পাশে থেকেছিলেন। টলস্টয় যখন “ওয়ার এন্ড পিস”, “আন্না কারেনিনা” লেখা শুরু করলেন, সেইসব বই নিজে হাতে কপি করতেন সোফিয়া। লেখার জন্য যে স্বাধীনতা একজন লেখকের দরকার হয় তাতে সোফিয়া কখনোই হস্তক্ষেপ করেন নাই।
সম্ভবত একজন মানুষ জীবনে যা কিছু প্রত্যাশা করে তার সবই পেয়েছিলেন টলস্টয়। অভিজাত পরিবারের বিলাসী সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন আর পঞ্চাশ বছর বয়সে পৌছার আগেই সমস্ত পৃথিবীর অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিলেন। তবু কেন যেন এসবই তার কাছে অর্থহীন ছিলো, যখন তার কাছে নিজের জীবনকে অর্থহীন বলে মনে হতো। সারাজীবনে বহুবার তার জীবনে হতাশার অধ্যায়গুলো ফিরে ফিরে এসেছিলো। তাই তিনি বারবার ডুব দিয়েছিলেন লেখালিখির মধ্যে। তিনি তার মানসিক অবসাদকে কমাতে চেয়েছিলেন লেখালিখি দিয়ে, যা মূলত কোপিং হিসেব কাজ করেছিলো, তবে তা তার জন্য সম্পূর্ণ রূপে কার্যকর ছিলোনা। সাময়িক উপশম হতো মাত্র। আর গভীর একটা দুঃখবোধ তাকে সবসময়ই ঘিরে রাখতো। তাই বৈষয়িক সাফল্যের পাশাপাশি লেখক হিসেবে সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার পর এই হতাশা বা অবসাদ মনের গভীর থেকে উঠে এসে তাকে আবার আচ্ছন্ন করে ফেরেছিলো। এটা হয়েছিলো তার পঞ্চাশ বছর বয়সের আশেপাশের সময়ে। “বেঁচে থাকা উচিত” নাকি “মরে যাওয়া উচিত” অথবা “নিজেকে শেষ করে দেয়া উচিত” এই সব চিন্তাই অপ্রতিরোধ্য ভাবে তার মাথায় খেলা করতো তখন। পঞ্চাশ বছর বয়স টলস্টয়ের মনকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছিলো। তার মনে এমন ভাবনা আসতো-“কাজগুলো কেন করবো?” অথবা “কিই বা লাভ বেঁচে থেকে?”
আনা কারেনিনা লেখা শেষ হওয়ার পর থেকেই তার নিজস্ব লেখালিখি, বৈষয়িক সম্পত্তি, কামনা বাসনা নিজের কাছে সম্পূর্ণ অর্থহীন মনে হতে শুরু করেছিলো। তিনি শিল্পকে শুধু অর্থহীন নয় অপ্রয়োজনীয়ও ভাবতে শুরু করেছিলেন। সাহিত্য সৃষ্টির মাধম্যে যে সাবলাইমেশন হয়, তা সম্ভবত আর কাজ করছিলোনা। তিনি তখন দর্শন, রাজনীতি ও ধর্মে আগ্রহী হয়ে উঠেন, যা তাকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছিলো। তিনি দরিদ্র প্রজাদের প্রতি স্নেহশীল ছিলেন আগে থেকেই। এখন তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার বিরোধিতা শুরু করলেন। যা তার নিজস্ব অভিজাত সম্প্রদায় ও স্বয়ং সম্রাটকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। বৈষয়িক সম্পত্তির প্রতি অনীহা থেকে তিনি তার বইয়ের রয়ালিটিও সাধারণ মানুষের জন্য দিয়ে দিতে চাইলে সোফিয়ার সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি হয়। সোফিয়ার সাথে ঝগড়াঝাটি এমন পর্যায় পৌছায় যে তিনি গৃহত্যাগ করলেন একদিন গভীর রাতে। আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি তার অহিংসা, বৈষয়িক সম্পত্তি ত্যাগ ইত্যাদি দর্শনের ব্যাপারে ধীরে ধীরে অনমনীয় হয়ে উঠছিলেন। এমনকি সম্রাটের শাসনের বিরোধিতাও শুরু করেছিলেন শেষের দিকে।
অল্পবয়স থেকেই তার জীবনে বহুবার বিষণ্ণতার দিনগুলো ফিরে এসেছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেকে শেষ করে দেয়ার মতো ভুল করেন নাই। আত্মহননের প্রান্তসীমায় পৌছেও নিজেকে আবার জীবনের পথে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন শৈশবে শেখা ধর্মবিশ্বাসে। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌছেছিলেন, যে বিশ্বাসই জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি, যার জন্য মানুষ নিজেকে শেষ করে ফেলেনা। মানুষকে বাঁচতে হলে ধর্মবিশ্বাসের মতো একটা কিছুতে বিশ্বাস রাখতেই হবে।
তবে তার মনোজাগতিক চিন্তায় মৃত্যু বিষয়টা বারবার এসেছে। অনেকটা অবসেশনের মতো। সম্ভবত মৃত্যুকে সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করার ফল এটা; ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, প্যারীসে গিলোটিনে শিরঃচ্ছেদ, ভাই দিমিত্রির যক্ষা রোগে মৃত্যু, নিজের পাঁচ সন্তানের অকাল মৃত্যু তিনি দেখেছিলেন খুব কাছে থেকে। হয়তো ছোটবেলায় মা বাবাকে হারানো, তারপর মৃত্যুর মিছিল তার আমৃত্যু মানসিক অবসাদের কারণ ছিলো। তবে তিনি মৃত্যুকে কখনো ভয়ের দৃষ্টিতে দেখেন নাই। তিনি প্রশ্নের উওর খুজেছেন সারাজীবন- যদি মরতেই হয় তবে বেঁচে থেকে লাভ কি! এই প্রশ্নটা সারাজীবন তার মনের মধ্যে কনফ্লিক্ট তৈরী করেছিলো। এই চিন্তাগুলো সবসময়ই তার মাথায় আসতো। প্রথমদিকে টলস্টয় লেখালিখি ও কাজের মাঝে ব্যস্ত থেকে প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। প্রশ্নগুলো তাকে খুব বেশি কষ্ট দিত আর সাথে চলে আসতো অবসাদ। তবু শেষ পর্যন্ত ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাস রেখে এই কনফ্লিক্ট ও অবসাদকে মোকাবেলা করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও প্রচলিত অর্থোডক্স বিশ্বাসের সাথে মতবিরোধ ছিলো তার! বাহ্যিক আড়ম্বর ও আচারের বাড়াবাড়ি তার পছন্দ ছিলোনা কখনোই। তার জীবনটা ছিলো অনন্ত জিজ্ঞাসার এক জীবন। জীবনের অর্থ খোঁজার জন্য এমন এক অভিযাত্রা, যা তাকে ধনীর বিলাসী সন্তান থেকে পরিণত করেছিলো আধ্যাত্মিক জগতের অহিংস মতবাদের মানুষে। এই অহিংসার মতবাদ পরবর্তী কালে মহাত্মা গান্ধীকেও প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিলো। তার লেখা নিয়ে ফরাসী লেখক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার যথার্থই বলেছিলেন-“টলস্টয় শুধু লেখকই নন, একজন মনোবিজ্ঞানীও”।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৭
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×