somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাকওয়া: স্রষ্টা বলে কি আসলেই কেউ আছেন?

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
লিংক: তাকওয়া: স্রষ্টা বলে কি কেউ আছে?


বিগ-বেং থিউরি যখন কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিল না, তখন জনাব আন্দ্রেই লিন্ডে অধিকতর কার্যকর ইনফ্লেশন কসমলজিকাল থিউরি আনলেন। বললেন "বিগ-বেং সৃষ্টির সুচনা নয়। বরং ইনফ্লেশন দিয়ে সৃষ্টির সুচনা হয়েছে, আর ইনফ্লেশনের ফলে সৃস্ট শুন্যে বিগ-বেং ঘটেছে।" সুফীরা যেমন বলেন, স্রষ্টা ছিলেন গুপ্ত। তিনি স্ব-মহিমা প্রকাশ করতে চাইলেন। তিনি বললেন "হও", হয়ে গেল। আমরা শূণ্য বলতে ফাকা স্থান বুঝি,আসলে প্রকৃত শূণ্য কি তা কল্পনাও করতে পারি না।
প্রকৃত শূন্য হচ্ছে এমন অবস্থা যেখানে-
1. কোন বস্তু কণা, আলো বা কোন ধরনের শক্তি তরঙ্গও নাই।
2. স্থান(যেমন: আপনার ও মনিটরের দূরত্ব) বা কাল(সময়) নাই।
3. এমনকি এই শূন্য/শূন্যতা সম্পর্কে জানে এমন কিছু/কেহ ও নাই!
এটাকে আমরা শুন্য না বলে অনস্ত্বিত্ব বলতে পারি। এর একমাত্র বিপরীত অবস্থা হচ্ছে অস্তিত্ব। অনস্ত্বিত্বঅস্তিত্ব।

ডাইমেনশন বা মাত্রা -এর প্রচলিত অর্থ "ডিরেকশন", যার ডাইমেনশন যত বেশি তার বিস্তৃতি তত বেশি। আমাদের পক্ষে চতুর্মাত্রিক কিছু কল্পনা করা খুব কঠিন নয়, আর চেষ্টা করলে আমদের ত্রিমাত্রিক জগতে চতুর্মাত্রিক কিছু বানানোও জেতে পারে। কিন্তু দ্বিমাত্রিক কিছু বানানো কি সম্ভব? আমরা কি আসলে কোন দ্বিমাত্রিক কিছু কল্পনা করতে পারি? কাগজের তলে আকা ছবি কি আসলে দ্বিমাত্রিক? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হচ্ছি যে, "মাত্রা অর্থ ডিরেকশন বা বিস্তৃতি না হয়ে মাত্রা মানে হওয়া উচিৎ সীমানা। মাত্রা যত বেশি, তত বেশি সীমানা। আপনি ১টা ঘরে আছেন যার ২টি দেয়াল, এই ঘরের ভেতরে আরও কয়েকটি দেয়াল তুললে মনে হবে ঘর বড় হয়ে গেছে, যদিও বাস্তবে তা হয়নাই।
আমাদের মতে ডাইমেনশন মানে হচ্ছে সীমানা/প্রতিবন্ধকাত। যার ডাইমেনশন যত বেশি, সে আসলে তত সীমাবদ্ধ। ১ মাত্রার উপাদান ১টি মাত্র সীমানা, দৈর্ঘ্য, দ্বারা আবদ্ধ, যেমন সময়। ২ মাত্রার উপাদান দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ এই ২টি সীমানায় আবদ্ধ, যেমন শক্তি/বিকিরন। ৩ মাত্রার উপাদান দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা এই ৩টি সীমানায় আবদ্ধ, যেমন বস্তু। অর্থাৎ মাত্রা যত বৃদ্ধি পায়, ততই তার পরিমাপযোগ্য প্যারামিতার বারতে থাকে। আমরা ৪ মাত্রার বস্তুর প্রজেকশন করতে পারি, কিন্তু ১/২ মাত্রার কিছু কখনওই বানাতে পারি না। কারন ২ মাত্রার কিছু বানাতে হলে উচ্চতার সীমানা অতিক্রম করতে হবে। অপরদিকে ২ মাত্রার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের সাথে উচ্চতা যোগ করে ৩য় মাত্রায় পৌছান সম্ভব।
আমরা শক্তিকে ২ মাত্রার বলছি কারন অতি বিক্ষ্যাত ঝালর পরীক্ষায় দেখা যায় শক্তি বা আলো একই সাথে একাধিক ছিদ্র দিয়ে যেতে পারে। ত্রিমাত্রিক জগতে ঝালরের ছিদ্রগুলি আলাদা-আলাদা তলে অবস্থান করলেও দ্বিমাত্রিক জগতে ঝালরের ছিদ্রগুলি একই তলে অবস্থান করে, ফলে আলো একসাথে একাধিক ছিদ্র দিয়ে যেতে পারে।
সময়ের মাত্রা ১, দৈর্ঘ্য। সময় চলছে ত চলছেই। এর শুরু বা শেষ নেই, কারন শুরু বা শেষ করতে হলে ২য় আরেকটা ডাইমেনশন দরকার হবে। সময়ের দৈর্ঘের গায়ে প্রস্থ বসিয়ে তাতে শক্তি/বিকিরন আশ্রয় নেয়, আর বিকিরনের গায়ে উচ্চতা বসিয়ে বস্তু জন্ম লাভ করে।
বস্তু ভাঙ্গতে থাকলে শেষ পর্যন্ত কোয়ার্ক/ক্লার্ক পাওয়া যায়। কোয়ার্কের ভেতরে পাওয়া যায় তরঙ্গ। অর্থাৎ ২ মাত্রার শক্তি পুঞ্জীভূত হয়ে ৩ মাত্রার বস্তু গঠন করে। কিন্তু বস্তু পরস্পর যুক্ত হয়ে শক্তি গঠন করার কোন উদাহরণ পাওয়া যায় নয়া।
বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরে শক্তি/বিকিরনের প্রবাহের ১টি মাধ্যম খুজেছে। কিন্তু পায় নাই, ফলে সিদ্ধান্ত নিয়াছে যে বিকিরনের সঞ্চারনের জন্য মাধ্যম দরকার না। আসলে মাধ্যম দরকার হয়। সময় হচ্ছে সেই মাধ্যম। মহাবিশ্বের শক্তি ও বস্তু মূলত সময়ের একক মাত্রার উপরে মহাবিশ্ব/স্পেস গড়ে তুলেছে। আমরা বলি স্পেস, আসলে স্পেস হলো সময়ের ১ মাত্রার উপর বস্তু ও শক্তির শয্যা। বস্তু যত গতি লাভ করতে থাকে তত তা ৩য় মাত্রা থেকে মুক্ত হতে থাকে, এবং আলোর গতিতে বস্তু ৩য় মাত্রা থেকে পুরোপুরি মুক্তি লাভ করে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তখন ১টি মজার ঘটনা ঘটে, সময় থেমে যায়। হ্যা, শক্তির কোন বয়স থাকে না। যেমন:- গ্যাভিট্রনের কথা ধরা যাক। যে গ্র্যাভিট্রন সুর্য ও পৃথিবির আকর্ষনের জন্য দ্বায়ি, আমাদের দৃষ্টিতে তার সুর্য থেকে পৃথিবিতে আসতে ৮ মিনিট, কিন্তু গ্র্যাভিট্রনের নিজের কাছে মনে হবে যে সে সুর্য ও পৃথিবিকে একই সাথে ধরে রেখেছে।
এখন মাত্রা যদি ০ হয়? এর কোন সীমানা থকে না। অর্থাৎ এটা অসীম হয়ে যায়। "০" ডাইমেনশন বিবেচনা করলে দেখবেন এটির কোন আকার থাকতে পারে না। অর্থাৎ ০ ডাইমেনশন নিরাকার, এর আগে বা পরে কিছু হতে পারে না।
সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে আপনি ১ টা প্রশ্নে এসে আটকে যাবেন। প্রশ্নটা হচ্ছে, তার আগে কি?
০ ডাইমেনশন বিবেচনা করলে দেখবেন মাত্রা "০" বলে এটি চির বিরাজমান, আর এর কোন আকার থাকতে পারে না এটি নিরাকার। এর আগে বা পরে কিছু হতে পারে না। ধর্মে ঈশরকে নিরাকার বলা হয়েছে। কিন্তু মাত্রা "০" হলেই কেবল নিরাকার হওয়া সম্ভব।
আমরা আস্তিক-নাস্তিক সবাই স্রষ্টাকে মানুষের মত কিন্তু অতি পাওয়ারফুল কেউ বলে কল্পনা করি। এটা মানতে পারে না বলে অনেকে নাস্তিক হয়। আসলে স্রষ্টার মানুষ বা বস্তুর মত হওয়ার কি কোন কারন আছে? তিনি কি অন্যরকম কিছু হতে পারের না?
আমাদের মতে তিনি স্বয়ং ০ মাত্রা। আর ১ মাত্রার “সময়” হচ্ছে স্রষ্টার চেতনা। ফলে কোন কিছুই স্রষ্টার অগোচরে থাকতে পারে না। সৃষ্টির প্রত্যেকটা অনু-পরমানু তাঁর অনুমতি নিয়েই নরা-চরা করে।
তাহলে মানুষের বিশেষত্য কি?
মানুষের বিশেষত্য হল স্বাধিন মন! মানুষ নিয়ত করতে পারে, চেষ্টা করতে পারে। আর হাশরের ময়দানে মানুষের প্রচেষ্টা বা নিয়তের হিসাব নেয়া হবে।

মহাবিশ্ব কত বড়?
১_কাছের-তারা:

২_১০০০গুন বড় ছায়াপথ:


৩_১০০গুন-লোকাল-গেলাক্টিক-গ্রুপ


৪_১০ গুন-সুপার ক্লাস্টার_ভিরগো)


৫_ ১০গুন বড় সুপার ক্লাস্টার গ্রুপ


৬_১৪গুন বড়_অবজারভেবল-মহাবিশ্ব)


বিগ-বেং-এর ফলে সৃস্ট মহাবিশ্ব এত বড় যে বিজ্ঞানের চোখও তার পুরোটা দেখতে পারে না। তারপরও এই মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি সমূহের পারস্পরিক সুশৃংখলা অবস্থান এবং সর্বত্র বিজ্ঞানের সূত্রের একই রকম কার্যকারিতা দেখে বিস্মিত হবেন। বলতে বাধ্য হবেন যে, মহাবিশ্ব বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনায় তৈরী হয় নাই। কোন একক কেন্দ্রের ডিজাইন ও ব্যবস্থাপনায় মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে। ১জন ডিজাইনার মহাবিশ্ব তৈরি করার জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছিলেন। তারপর তিনি যেভাবে চেয়েছেন / ডিজাইন করেছেন সেভাবেই এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। সুরা মুলক: ৩- তিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন সুবিন্যস্ত ভাবে। তুমি পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে অসামঞ্জস্য দেখতে পারবে না। তারপর তুমি তোমার দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নাও, তুমি কি কোন ফাটল দেখতে পাচ্ছ?
এখন প্রকৃতি/গড/খোদা যে নামেই ডাকুন, যে স্বত্তা এই মহাবিশ্ব সৃস্টির জন্য দ্বায়ী তিনিই এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টা।

< ২. এই ডিজাইনার বা স্রষ্টা কে? কোথায় থাকেন? >
কোরআনে একটি আয়াত আছে-
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي [٢٠:١٤]
আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। (Taa-Haa: 14)
মেরাজের ঘটনার বিবরণ থেকে বোঝা যায় যে বেহেস্ত, দোজখ, আসমান, দুনিয়া, হাশর সবই সৃষ্টি-জগতের অধীন, কারণ এসব স্থানে জিবরীল(আঃ) রসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে ছিলো। কিন্তু আল্লাহর দিদারের সময় জিবরীল(আঃ) রসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে ছিলেন না। বরং বিবরণে দেখা যায় কোন কিছুতে করে রসুলুল্লাহ(সাঃ)-কে অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে যাওয়ার সাধ্য ফেরেশতা শ্রেষ্ঠ জিব্রাইল(আঃ)-এরও ছিল না। অর্থাৎ, রসুলুল্লাহ(সাঃ)-কে আল্লাহর দিদারের জন্য সৃষ্টি-জগতের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
কোরআন-এ বলা হয়েছে-
• তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়টি পর্যায়কালে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন (সূরা আল-ফুরকান ৫৯)
• তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে (সুরা বাক্বারাহ ২৫৫)
• যা কিছু নভোমণ্ডলে আছে এবং যা কিছু ভূমণ্ডলে আছে, সব আল্লাহরই। সব বস্তু আল্লাহর মুষ্টি বলয়ে। (সূরা আন-নিসা ১২৬)
উপরের আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি-জগতের বাহিরে অবস্থান করছেন।
অনেক কোরআন শরিফ তফসির কারক আলেমের মতে কোরআন-হাদিসের যেসব বিবরণে আল্লাহকে দুনিয়ায় উপস্থিত বলা হয়েছে সেখানে আল্লাহ-কে শারীরিক ভাবে নয় বরং তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে উপস্থিত বুঝান হয়েছে।

< ৩. স্রষ্টা সবই জানেন কিভাবে? >
আমরা সামনে/পিছে, কাছে/দুরে যেতে বা দেখতে পারি। বাস্তব জগতে বস্তুর ৩টি মাত্রা(dimension)- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা। এদের আমরা সহজেই মাপতে পারি, এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পারি। বিজ্ঞানের নিয়ম আমাদের স্থানের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে দেয়, কিন্তু বিজ্ঞানের নিয়ম আমাদের সময়ের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে দেয় না। ফলে আমরা অতীতকে দেখতে বা পরিবর্তন করতে পারিনা এবং ভবিষ্যৎ দেখিও না জানিও না। সময়ের কোন প্রমাণ মাপ নেই, কারণ সময়কে আমরা সরাসরি ধরতে পারি না। শুধুমাত্র সময় প্রবাহের আপেক্ষিক হিসাব রাখতে পারি। আমরা যেমন আমাদের সামনের টেবিলে রাখা জিনিষ-পত্র একবারে দেখি, আল্লাহ্ তায়ালাও সৃষ্টির শুরু(big bang) থেকে সৃষ্টির শেষ(big-crank) পর্যন্ত কবে কি হয়েছে এবং কবে কি হবে একইসাথে দেখতে পান।
আল্লাহর অবস্থান যেহেতু সৃষ্টি-জগতের সীমানার বাহিরে। সুতরাং, সৃষ্টি-জগতের (স্থান-কালের) বিজ্ঞানের নিয়ম আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে না। সময়ের সীমানায় তিনি আবদ্ধ নন, বরং তিনি সময়ের সূত্রের বাইরে অবস্থান করেন। ফলে মহাবিশ্বের কোন কিছুই তাঁর পেছনে বা অতীত /ভবিষ্যতে নয়, সবকিছুই তাঁর কাছে বর্তমান। তাই তিনি সৃষ্টি করার সাথে সাথেই জেনে গেছেন এর শেষ কী। আর তাঁর অনন্যতার নিদর্শন হিসেবে সব লিখে “লওহে-মাহফুজ”-এ রেখে দিয়েছেন।
আল্লাহ্ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের অদৃশ্য বিষয় জানেন, তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা দেখেন। (সূরা আল হুজরাত ১৮)
তাঁর জ্ঞান সীমা থেকে তারা কোন কিছুই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। (সুরা বাক্বারাহ ২৫৫)|
আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম তৈরি করেছেন এবং সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি হবে তা লিখে রেখেছেন। এই লিখে রাখা আল্লাহ-তায়ালার অনন্যতার একটি নিদর্শন। “আলেমুল গায়েব” নামের প্রমাণ। যাতে আমরা চিন্তা করে বুঝতে পারি যে আমাদের উপর ১জন আছেন যিনি সমস্ত সৃষ্টি-জগতের উপর একক আধিপত্য রাখেন।

< ৪. আল্লাহ করান না আমরা করি?>
আমরা আগেই বলেছি যে, “লওহে-মাহফুজ”-এ লিখে রাখাটা আল্লাহর অনন্যতার একটি নিদর্শন। লিখে রেখেছেন বলে ঘটনা সমূহ ঘটছে এমন নয়, বরং “আলেমুল গায়েব”বলে আল্লাহ-তায়ালা সৃষ্টি করার সাথে সাথেই জেনে গেছেন যে আমরা কে কী করব, কখন কী হবে, কিসের পরিণতি কী।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকে একটা উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন- ১ টি বাক্সে ২টি(১ জোড়া) মজা রাখলেন, এরপর চোখ বন্ধ করে ১টা মজা নিয়ে আপনার পকেট ভরলেন। এখন সাধারন ভাবে আমরা বোলব পকেটের রাখা মোজাটা ৫০-৫০ চান্স বাম বা ডান হবে। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে যতক্ষণ পর্যন্ত জোড়ার কোন ১টি মোজা পর্যবেক্ষণ করা না হবে ততক্ষণ এরা ১টা জটিল অবস্থায় থাকবে, বামও না ডানও না; এবং যেকোন ১ টা মোজা পর্যবেক্ষণ করলেই জোড়ার ২ টি মোজাই আকার লাভ করবে।
এই কথাটাই আমরা এভাবে বলতে পারি যে, আমাদের সামনে একাধিক পথ আছে, এটা করলে এই হবে, ওটা করলে ওই হবে।
সৃষ্টি করার পর বা সাথে সাথে তিনি সবকিছু জেনে গেছেন। কারন তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একসাথেই দেখতে পান।
১টা সহজ উদাহরন এভাবে দেয়া যায় যে, আপনার চোখ ও ব্রেনের দেখার ক্ষমতা ১ বিলিয়ন গুন বারিয়ে দেয়া হল আর ৩ ঘন্টার ১টা মুভির সবগুলো ফ্রেম প্রিন্ট করে আপনার সামনে দেয়ালে লাগিয়ে দেয়া হল। এখন আপনাকে মুভিটা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করলে আপনি যেমন নির্ভুল ভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন, বিষয়টা কিছুটা এরকম।
তিনি বিভিন্ন ধরনের সিচুয়েশন তৈরি করে রেখেছেন, মানুষকে দিয়েছেন চিন্তা করার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। আমরা নিজেদের মত করে সিদ্ধান্ত নেই ও কাজের প্রচেষ্টা চালাই, কিন্তু কাজ কি হবে তা পুরোপুরি আল্লাহ-তা'লার উপর নির্ভর করে। এখানে আল্লাহ্-তায়ালা কিছু প্যারামিটার দিয়ে রেখেছেন, আপনি চাইলেও কিছু কিছু কাজ করতে পারবেন না।
আর হাশরের ময়দানে মানুষকে মুলত তার প্রচেষ্টার নিয়তের হিসাব দিতে হবে।
< ৫. মানুষ সৃষ্টি উদ্দেশ্য কী? >
১- স্রষ্টা প্রথমে বিশুদ্ধ শক্তি তৈরি করেছেন।
২- তারপর এই শক্তি থেকে বস্তু বা পদার্থ তৈরি করেছেন।
৩- এরপর বস্তুর মন তৈরি করেছেন।
কোরআনে বলছেন-
অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমন ও আছে; যা থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। (Al-Baqara: 74)
এই আয়াত থকে ২ টি বিষয় বোঝা যায়- ঃ সকল বস্তুরই মন আছে; ঃ এই মন স্বাধীন নয় বরং আল্লাহ্র নির্দেশ মত বা ভয়ে চলে। এমনকি ফেরেশতারাও এর ব্যতিক্রম নয়। তারাও আল্লাহ্র নির্দেশের বাইরে কিছুই করতে পারে না।
৪- সবশেষে আল্লাহ্-তায়ালার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি - স্বাধীন মন
মানুষের মন আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি , কারণ মানুষের মনকে আল্লাহ্ তাঁর নিজের গুণাবলী ও সৃজনশীলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। একমাত্র মানুষই পারে নিজেকে আল্লাহ্ স্থানে কল্পনা করতে। শয়তানও নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করে না বরং নেগেটিভ গড হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করে, কিন্তু ইতিহাসে অসংখ্য মানুষ পাবেন যারা নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেছেন। এটা আসলে মানুষের মনের শ্রেষ্ঠত্বের নেগেটিভ একশন।
আবার অনেক আল্লাহ্ প্রেমিকও সূফী সাধকও নিজের ভেতরে আল্লাহ্র সকল বৈশিষ্ট্য দেখে, বোঝার ভুলের কারণে নিজেকে আল্লাহ (আনাল-হক) বলে দাবী করেছেন। আসলে মানুষের কেউই আনাল-হক না, বরং আল্লাহ্ দয়া করে মানুষকে তাঁর নিজের গুণাবলি ও সৃজনশীলতা দান করেছেন, মানুষকে করেছেন তাঁর প্রতিনিধি। কোরআনের ভাষায়:
(Yunus: 14) অতঃপর আমি তোমাদেরকে জমিনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি তোমরা কি কর।
(Al-Baqara: 30) আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।
(Al-An'aam: 165) তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদেরকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু।
আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি বলেছেন। আর প্রতিনিধি তাকেই বলে যে স্বাধীন ভাবে অনুপস্থিত কারো হয়ে কাজ করে। আল্লাহ্ তাঁর সবচেয়ে বড় গুন "চিন্তা করার স্বাধীনতা" বা স্বাধীন মন দিয়ে মানুষ তৈরি করেছেন। আর স্বাধীন মন এর তুলনায় সমস্ত মহাবিশ্ব মূল্যহীন। এখন আল্লাহ পরীক্ষা করতে চাইছেন যে কোন স্বাধীন মন আল্লাহ্র প্রতি অনুগত আর কোনটি আল্লাহকেই হিংসা বা অহংকার করে। আসলে আমাদের এবাদত/বন্দেগি, দান-খায়রাত, সৎকর্ম/ পরোপকার এগুলোর কোনটাই আল্লাহর দরকার নাই, এগুলো সবই আল্লাহ্র প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের বাহ্যিক রূপ। এসবের উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টি পাওয়া না হলে এর সবই অর্থহীন। আবার এবাদত/বন্দেগি, দান-খায়রাত, সৎকর্ম না করলে আপনি কখনও প্রমাণ করতে পারবেন না যে আপনিও স্রষ্টার আনুগত্য করেছেন।
আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, যে কে আল্লাহর প্রতি যে কোন পরিস্থিতিতে নিঃশর্তে অনুগত থাকে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; আর কে সুখে/দুঃখে আল্লাহকে দোষ দেয় বা অস্বীকার করে।
: আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন/সিচুয়েশন তিরি করেছেন, কোনটা সুখের কোনটা কষ্টের, কোনটা সমৃদ্ধির কোনটা দারিদ্রের, কোনটা সততার কোনটা স্বার্থপরতার। এই বিভিন্ন ধরনের সিচুয়েশনের মূল্যমানও আলাদা। কেউ হয়তো সারা জীবন ধরে দারিদ্র ও সততার মোকাবেলা করলো, আরেক জন ১ ঘণ্টা কষ্টের মোকাবেলা করে পরীক্ষা শেষ করলো( মারা গেলো )। এমন হতেই পারে যে ২য় লোকটার ১ ঘণ্টার পরীক্ষার মান ১ম লোকটার সারা জীবনের দারিদ্র ও সততার চেয়ে বেশি। আবার অন্য ১জন সমৃদ্ধি ও সততা দিয়ে এক দানশীল জীবনে পার করলো, সে কোটি-কোটি টাকা উপার্জন করে তা দান-খায়রাত করে গেলো। এখন আল্লাহই ভাল জানেন যে কোনটার মর্যাদা বেশি, ৩য় ব্যক্তির দান-খায়রাতের না ১ম লোকটার সারা জীবনের দারিদ্র ও সততার। যেমন উমর(রা.) প্রায়ই বলতেন যে আবু-বকর(রা.) এর হিজরতের সময়কার ১ রাতের বিনিময়ে সারা জীবনের সওয়াব দিয়ে দিবেন।

সুরা ফাতিহায় দেখুন-
১- সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।:= শুরুতেই আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি যে ভাল কাজের প্রশংসা আমার না আল্লাহর প্রাপ্য। এবং আল্লাহই সবার ভরন=পোষণ কারী, মহাবিশ্বের সবকিছুর নেপথ্য চালিকা শক্তি।
২- যিনি পরম করুণাময় ও মহান দয়ালু := এটাও স্বীকার করছি যে আল্লাহ করুণাময় ও দয়ালু ।
৩- যিনি বিচার দিনের মালিক := এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাক্য। এই বাক্যের অর্থ হচ্ছে, " আমরা যেমন ভাবি যে এই করলে এই হয়, অমুক খারাপ কাজ করেছে তাই সে খারাপ থাকবে, আমি ভাল কাজ করি, অন্যের টা মেরে খাই না আমি ভাল থাকবো" এরকম ধারনা ঠিক নয়। মানুষের সকল কাজ কোন এক বিচার দিবসে পরিমাপ করা হবে ও উপযুক্ত প্রতিদান দেয়া হবে। দুনিয়াতে ভাল -খারাপ যত যাই হয় তার সবই আসলে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কেউ ভাল করে খারাপ পায়, কাউ খারাপ করে ভাল পায়, আবার কেউ যেমন কর্ম তেমন কর্মফল পায়, এগুলো আসলে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করার জন্য করেন, যে, আমরা কে কোন অবস্থায় তাঁর প্রতি অনুগত থাকি বা বিরক্ত হই।
- আমরা তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি
- তুমি আমাদের সরল এ সহজ পথ দেখাও
- তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ ।
- তাদের পথ নয়,(যারা) অভিশপ্ত এবং পথহারা হয়েছে।
:= এই ৪টি বাক্যে আসলে প্রার্থনা। এই ৪টি বাক্যে দিয়ে আমরা আল্লাহকে বলছি যে "আমরা যে এবাদত করি তার উদ্দেশ্য একটাই যাতে আল্লাহ আমাদের কে তাঁর প্রতি অনুগত পথে পরিচালিত করেন, কখনও বিপথে যেতে না দেন"। এটা আসলে একধরনের রক্ষাকবচ। বিচার দিবসে আল্লাহ-তায়ালা আমাদের পাকরাও করে ফেললে যেন বলতে পারি "আমিতো দুর্বল ছিলাম আর তাই তোমার আশ্রয়ও চেয়েছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৫ রাত ১:০১
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×