somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাচ্চু রাজাকার মাওলানা আবুল কালাম আজাদ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরের কুখ্যাত বাচ্চু রাজাকারই এখন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। মুক্তিযুদ্ধকালীন নরঘাতক, মা-বোনের সম্ভ্রম লুটেরা, পাকি দোসর, অর্ধশত গ্রামীণ জনপদে 'মেলিটারি' নামের আতঙ্ক, খাড়দিয়ার বাচ্চু রাজাকারই এখন টেলিভিশন চ্যানেলে ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে মতামতদানকারী ফতোয়াবাজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। ফতোয়া সম্পর্কে হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ের বিরম্নদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে লিভ আবেদনকারী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ স্বাধীনতাকামী বীর বাঙালীর বিরুদ্ধে পাক হায়েনার দোসর হয়েছিল। চালিয়েছে গণহত্যা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, জায়গাজমি দখলে ফরিদপুর অঞ্চলে এক আতঙ্কের নাম বাচ্চু রাজাকার।
ফরিদপুরের দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী ও আমিনুর রহমান ফরিদ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিন হাজার বাড়ি লুণ্ঠনকারী, এক হাজার ঘরবাড়ি-দোকানে অগ্নিসংযোগকারী, মুক্তিপাগল শতাধিক মানুষ হত্যাকারী এবং শতাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম লুটেরা বাচ্চু রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ফরিদপুর শহরে চকবাজারের একটি বাড়ি দখল করে আস্তানা গেড়েছিল। সেখানেই নির্যাতিত হয়েছে অসংখ্য মা-বোন। ফরিদপুরের মানুষ এবার বাচ্চু রাজাকারের বিচার চায়।
একাত্তরে ঘোসাই পদ বিশ্বাসের নববধূ শোভা রানীর সম্ভ্রম লুটে নিয়েছিল আজকের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে খাড়দিয়ার কুখ্যাত সেই বাচ্চু রাজাকার। স্বামী-সন্তান নিয়ে জীবনমৃত শোভা এখনও নরপশুদের পাশবিকতা শরীর-মন দিয়ে অনুভব করেন। নারীর অস্তিত্বের আবরণথ সম্ভ্রম হারানোর পর একবুক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন শোভা রানী। শত চেষ্টা করেও শোভা রানী সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। একই গ্রামের নগেন বিশ্বাসের স্ত্রী দেবী বিশ্বাসেরও সম্ভ্রম লুটেছিল এই বাচ্চু রাজাকার। সেই লজ্জায়-যন্ত্রণায় গ্রাম ছেড়েছিলেন দেবী। আর কখনও গ্রামে ফিরে আসেননি। অমানবিক লোলুপতা আর পাশবিক উন্মাদনায় ফরিদপুরের ৫০ গ্রামের নারীর কাছে আতঙ্কের নাম বাচ্চু রাজাকার। কেবল নিজেই নারীর ইজ্জত লুটে নিয়েছেন তা নয়, পাক হায়েনার জন্য সুন্দরী নারীকে জোর করে সেনাক্যাম্পে পৌঁছে দিয়ে আসত এই বাচ্চু রাজাকার। কেবল ধর্ষণ নয়, নিজ হাতে হত্যাও কম করেনি। কিন্তু এই বাচ্চু রাজাকারের বয়ান এদেশের মুসলমানদের বেসরকারী টিভি চ্যানেলে শুনতে হয়।
নতিবদিয়ার দু'প্রবীণ মৎস্যজীবী নকুল সর্দার ও রঘুনাথ দত্ত জনকণ্ঠের 'সেই রাজাকার' সিরিজ প্রকাশকালে দেয়া বক্তব্যে বলেন, লুটপাট-হামলা না করার শর্তে চাঁদা তুলে তারা বাচ্চু রাজাকারকে ২ হাজার ৪শ' টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু লুটপাট বন্ধ করেনি বাচ্চু রাজাকার। গ্রামের পর গ্রাম সে লুটপাট করেছে। সুন্দরী কন্যা আর নববধূর সম্ভ্রমহানি করেছে। পুরম্নরা গ্রামের জ্ঞানেন জীবন বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পুকুরে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেও রেহাই পাননি। বাচ্চু রাজাকার সেখানেই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাচ্চুর হাতের রাইফেলের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয় ফুলবাড়িয়ার চিত্তরঞ্জন দাসকে। সেদিন চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী জ্যোৎস্না তিন মাসের অন্ত:সত্তা অবস্থায় পালিয়ে রক্ষা পেলেও মেরে ফেলা হয় তার তিন সনত্মানকে। সেই সব ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা স্মরণ করতে গিয়ে আজকের অসহায় বৃদ্ধ বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, 'আমরা হিন্দু মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু। স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবার বাচ্চু রাজাকারদের হম্বিতম্বি শুরম্ন হলে আর বিচার চাওয়ার সাহস পাইনি। কেউ বিচার করলে মরেও একটু শান্তি পেতাম। বোয়ালমারী উপজেলার কলারন গ্রামের মনিময় রায় ওরফে কৃষ্ণ বাবু একাত্তরে বাচ্চুর রাইফেলের গুলিতে গুরম্নতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন। এই বাচ্চু রাজাকারই মনিময় রায়ের বাবা সুধাংশু রায়কে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পাশের বটতলায় ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে খুন করে। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর রক্তাক্ত পিতাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠার অপরাধে (!) বাচ্চু মনিময়কেও গুলি করে। গুলিতে গুঁড়িয়ে যায় মনিময়ের ডান পা। ফরিদপুর শহরের এক বিশিষ্ট ব্যক্তির স্ত্রী বিশেষ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মুখোমুখি হন না এই ভয়েথ কখন সেই সম্ভ্রম লুটেরা বাচ্চুর ছবি দেখতে হয়!
নগরকান্দা উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খাড়দিয়া গ্রামের সালাম মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়াকে অনেকেই মাওলানা আবুল কালাম আজাদ নামে চেনেন না। যারা চেনেন, তারা একাত্তরের কুর্কীতির খবর জানেন এবং বাচ্চু রাজাকারের ওয়াজ-নসিহত শোনেন না, বরং বাচ্চু রাজাকারকে ঘৃণা করেন। সালাম মিয়ার বড় ভাই ধলা মিয়া খুন হলে খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে বাচ্চুর মা দুই শিশুসন্তানথ বাচ্চু ও হারুনকে নিয়ে আবার বিয়ে বসেন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মিয়ার সঙ্গে। সেই থেকে একাত্তর অবধি দারিদ্র্যই নিত্যসঙ্গী ছিল বাচ্চুদের। মাদ্রাসা শিৰা শেষে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল বাচ্চু। বাকপটুতার কারণে সে কলেজে খুব পরিচিতি পায়। এমন সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাক সেনাদের সঙ্গে সখ্যের কারণে তার হাতে চলে আসে অনেক অস্ত্র। আর সেই অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়ে বড় খাড়দিয়া গ্রামের বাড়িতে গড়ে তোলেন মিনি ক্যান্টনমেন্ট। গ্রাম ও আশপাশের শতাধিক যুবককে টেনে নিয়ে সে সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়। একাত্তরে খাড়দিয়া গ্রামের আশপাশের ৫০ গ্রামের মানুষ রাজাকার বাচ্চু বাহিনীর সদস্যদের জানত 'খাড়দিয়ার মেলিটারি' হিসেবেই। বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে এই 'মেলিটারি' বাহিনী একের পর এক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, খুন, ধর্ষণ চালায় তৎকালীন নগরকান্দা থানার খাড়দিয়া, ফুলবাড়িয়া, সোনাপুর, সালথা, কাগদি, বিষ্ণুদি, মাঝারদিয়া, যোগারদিয়া, উজিরপুর, পিসনাইল, কাসাইদিয়া, রাজনগর, পুরুরা; বোয়ালমারী থানার ময়েনদিয়া, শ্রীনগর, হাসামদিয়া, রাজাপুর, রাজাবিনি, হোগলাকান্দি, কালিনগর, কলারন, জয়পাশা তেলজুড়ি, পরমেশ্বরদী, ডহরনগর, তামারাজি, মোড়া, নতিবদিয়া এবং আলফাডাঙ্গা ও কাশিয়ানী থানার কয়েকটি গ্রামসহ ৫০ গ্রামে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরঘাতক বাচ্চু ও তার দুর্র্ধষ সশস্ত্রবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে হাসামদিয়ার হরিপদ সাহা, যতীন্দ্রনাথ সাহা, জিন্নাত আলী বেপারী, ময়েনদিয়ার শান্তিরাম বিশ্বাস, কলারনের শুধাংশু রায়, মাঝারদিয়ার মহাদেবের মা, পুরুরার জ্ঞানেন, মাধব, কালিনগরের জীবন ডাক্তার, ফুলবাড়িয়ার চিত্তরঞ্জন দাস, ওয়াহেদ মোল্লা, দয়াল, মোতালেবের মা, যবদুল, বাদল নাথ, আস্তানার দরবেশসহ বিভিন্ন গ্রাম-জনপদের শতাধিক মুক্তিপাগল মানুষকে। এসব হত্যাকাণ্ডের সবই ঘটিয়েছে আজকের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×