somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খোকন রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী

১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের স্বাধিনতার বিরুদ্বচারনকারী পাক বাহিনীর বর্র্বরতার অন্যতম দোসর ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের শীর্ষনেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধূরী । ১৯৬২ সালের ১৪ই জুলাই পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে মন্ত্রীত্ব গ্রহন করেন ফজলুল কাদের চৌধূরী । ’৬২ সালের মন্ত্রীত্বে পাকিস্তানীদের প্রতি কৃতজ্ঞ ফকা চৌধূরী এবং তার সন্তান সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধূরী মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৭১ এ আবির্ভূত হন রাজাকার হিসেবে।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে ফকা চৌধুরী এবং তার পরিবারবর্গ চট্রগামজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হন মুক্তিযোদ্বা, বুদ্বিজীবি সহ সাধারন মানুষ। বেশিরভাগ নিহত হন রাউজানে। মুক্তিযোদ্বা ডঃ মাহফুজুর রহমান তার বাঙালীর জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্রগ্রাম গ্রন্থের ৪৬৪ পুষ্ঠায় লিখেছেন,রাউজানে ফজলুল কাদের চৌধূরীর বাহিনী ব্যাপকহারে হিন্দুদের ঘরবাড়ি পোড়ায়। নতুন সিংহসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করে। রাউজানের শহীদদের মধ্যে অন্যতম হলেন আবদুল মান্নান,পঙ্কজ বড়ুয়া, জাফর আলম চৌধুরী, বিকাশ বড়ুয়া, শামসুল আলম, মুসা খান, শফিকুল আলম, রুহুল আমিন, সুবেদার আবুল কাশেম সুবেদার, সুবেদার নুরুল আমিন, সুবেদার আবুল বশর, এজাহার মিয়া প্রমুখ।
বিগলিতদন্তে হায়েনার হাসি হেসে ঘাড় বাঁকিয়ে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধূরী ওরফে খোকন রাজাকার তার পিতা মরহুম ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধূরীকে পাকিস্তানের পক্ষের উলে­খ করলেও নিজেকে দাবী করেছেন স্রেফ একজন উত্তরাধিকার হিসেবে।প্রকারান্তরে তার কথার অর্থ দাড়ায় তার পিতা স্বাধিনতা বিরোধী হলেও তিনি নন। কিন্তু ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার প্রকাশ্য ভূমিকার কথা স্মরন করলে এখনও শিউরে উঠে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
১৯৭১ এ যুদ্ধচলাকালীন সময়ে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধূরী তার ডাক নাম খোকন নামে সমধিক পরিচিত ছিল। এই খোকন নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ত। চট্রগ্রামের মুক্তিযোদ্বাদের মতে, নগর্ ীএবং রাউজানে সাকা চৌধুরী ১৯৭১ সালে রাজাকার আল বদর আল শামসদের সংগঠিত করেন। নিজে অংশগ্রহন করেন কিলার হিসেবে। তিনি এখন বিএনপি দলীয় সাংসদ। স্বাধিনতার পরপর সাকা চৌধুরী লন্ডন পালিয়ে যান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরনের পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিবর্তন ঘটলে তিনি খন্দকার মোশতাকের কৃপায় বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
স্বাধিনতাযুদ্ধকালীন সময়ে চট্রগ্রামে অগ্নিসংযোগ বুদ্বিজীবী হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধূরী। সেই সময় তার বিরুদ্বে ৪ টি মামলা দায়ের করা হয়। তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কারনে এসব মামলার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চট্রগ্রামের কৃতী সšতান,দানবীর,বুদ্বিজীবী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুন চন্দ্র সিংহ নগর আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মোজাফ্ফর আহমদ, ব্যবসায়ী ফজলুল হক সওদাগর, মুক্তিযোদ্বা ওমর ফারুক, ছাত্র দয়াল হরি বিশ্বাস প্রমুখকে হত্যার বিষয়েও তার বিরুদ্বে অভিযোগ রয়েছে।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের গুডস হিলের বাসায় মরহুম ডঃ সানাউল­াহর একমাত্র ছেলেসহ চট্রগ্রামের কয়েকশ ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করে। “গুডস হিলে স্বাধিনতার স্বপক্ষের মানুষের নির্যাতন কেন্দ্রে পরিনত হয়। মার্চ থেকে আতœসমর্পনের আগ পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের বাসায় পাকবাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য মোতায়েন থাকত।(সুত্রঃ দৈনিক বাংলা,৮ জানুয়ারী ১৯৭২)
১৯৭১ সালে বুদ্বিজীবি নতুন চন্দ্রসিংহ হত্যা এসময় বেশ আলোড়ন সৃষ্ঠি করে। যুদ্ধ শুরু হলে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যসহ ৪৭ জন অধ্যাপক পরিবার –পরিজন নিয়ে নতুন চন্দ্রসিংহের রাউজানস্থ কুন্ডেশ্বরী ভবনে আশ্রয় গ্রহন করেন। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হাটহাজারী হতে রাউজানের দিকে অভিযান শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তাদের পারবার বর্গ ভারতীয় সীমান্তের উদ্দেশ্যে কুন্ডেশ্বরী ভবন ত্যাগের প্রস্তুতি নেয় এসময় তারা নতুন চন্দ্রসিংহকে তাদের সাথে নিরাপদ ¯হানে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। এসময় তিনি একা হয়ে যান। রাউজানের নতুন চন্দ্র সিংহের ঔষধালয়,দোতলা বাড়ি এখনও আগের জায়গাতেই আছে, নেই কেবল সেই বর্ষীয়ান মানুষটি, যিনি ওই এলাকায় নির্মান করিছেলন বালিকা বিদ্যালয়, কলেজসহ নিভিন্ন সমাজসেবা মূলক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এসময় ১৯৭১ সালের ১৩ এপিল ৪টি আর্মাড ট্রাক ও দুটি জীপে করে একদল পাক হানাদারকে পথপ্রর্দশন করে কুন্ডেশ্বরী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। নতুন চন্দ্রসিংহ তার স্বভাব সুলভ অমায়িক ব্যবহার পাক সেনাবাহিনীকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়, স্কুল কলেজের বিস্তারিত বিবরন দেন। নতুন চন্দ্রসিংহের কথাবার্তায় সন্তুষ্ট হয়ে পাকিস্তানী বেলুচ ক্যাপ্টেন তার সঙ্গীসেনাদের ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়। এই সময় নতুন চন্দ্রসিংহ মন্দিরে প্রবেশ করে প্রার্থনা রত হন। এ সময় বেলুচ ক্যাপ্টেনকে পরামর্শ দেয়া হয় নতুন চন্দ্রসিংহকে মেরে ফেলার জন্য, কিন্তু তিনি ইতস্তত করেন। তার পরের কাহিনী তার ছেলে প্রফুল­ রজ্ঞন সিংহের কন্ঠেই শোনা যাক । বাবার হত্যার বর্ননা করতে গিয়ে প্রফুল­ রজ্ঞন সিংহ একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রচারিত স্বাক্ষাতকারে বলেন, প্রথমে দুই জন এসেছিল, ওরা বাবার সাথে আলাপ-টালাপ করে চলে গেল কিন্তু মারে নাই। পরে নাকি সালাউদ্দিন(সালাউদ্দিন কাদের চৌধূরী) আরেকটা দল নিয়ে আসে। ওরা ছিল পাঞ্জাবী৷ সালাউদ্দিন বলেছিল, না এটা তার বাবার আদেশ৷ এখানেই(নতুন চন্দ্রসিংহের)সবিকছু হয়েছে৷ভারতীয় সেনাবাহিনীসহ অন্যরা এসেছিল৷ অতএব নতুন চন্দ্রসিংহকে মারতে হবে৷ তখন নতুন চন্দ্রসিংহ কে টেনে হিচড়ে মন্দির থেকে বের করে এনে ওই প্রাঙ্গনে ব্রাশফায়ার করা হয়৷ ব্রাশফায়ারের পরও নাকি প্রান ছিল। তখন সালাউদ্দিন নাকি তার নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে হত্যা করে।
একই দিনে রাউজানের জগৎমল­পাড়ায় একসঙ্গে গুলি করে মারা হয় ৩৭ জনকে। এপ্রিল মাসেই রাউজানের উনসত্তর পাড়ায় একটি পুকুরের পাশে একসঙ্গে গুলি করে মারা হয় অন্তত ৭০ জন নারী পুরুষ ও শিশুকে।তাদের লাশ মাটি চাঁপা দেওয়া হয় পুকুরের পাশেই। এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শ্ ীএকজন এটিএন বাংলাকে কলেন,“পাকিস্তানের বড় নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী থাকাতে ভেবেছিলাম আমরা বেচেঁ যাব। সেখানে রাউজানেই সবচেয়ে বেশী গনহত্যা হয়েছে।” তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন,“আজ এখানে কথা বলছি-এ খবর পেলে তারা আবার অত্যাচার করতে আসবে। কারন তাদের এজেন্টরা এখানেই আছে। তারাই এখানে মেম্বার চেয়ারম্যান হয়্। এলাকায় যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন উনিও জড়িত ছিলেন। ‘৭২সালের জানুয়ারী মাসে নতুন চন্দ্র সিংহের পুত্র সত্য রজ্ঞন সিংহ পিতৃ হত্যার বিরুদ্বে ফকা চৌধুরী ও সাকা চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করেন। (মামলার নং ৪১(১)৭২ ধারা ৩০২/১২০/১৯৮ বিপিসি)।
একই দিন ১৩ই এপ্রিল’৭১ নিজের বাড়ির সামনে অব¯িহত হিন্দু পাড়ায় সাকা চৌধুরী অভিযান চালান। চিত্তরনজ্ঞন বিশ্বাসের কলেজে পড়ুয়া ছেলে দয়াল হরি বিশ্বাসকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে পরে হত্যা করা হয় ।
’৭১ এর ১৭ ই এপ্রিল সাকা চৌধুরী ২০ বালুচ রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে চট্রগ্রাম থেকে রাউজান যাওয়ার সময় হালদা নদীর উপর ¯হাপিত সাগরঘাট ব্রীজ এলাকা হতে বৃহত্তর চট্রগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মুজ্জাফর আহমেদকে অপহরন করে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়।’৭১ এর জুলাই মাসের শেষের দিকে একদিন সদ্ধ্যায় চট্রগ্রামের বিশিষ্ট কাগজ ব্যবসায়ী রাউজানের বিনাজুড়ি ইউনিয়নের লেলেঙ্গারা গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সšতান আলহাজ্ব ফজলুর হক সওদাগরকে তার জেল রোড়¯হ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে গুডস হিলে নির্যাতন চালানো হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাকা চৌধুরীকে আসামী করে রাউজান থানায় মামলা হয়।ফজলুল হক সাকা চৌধুরীর জল­াদখানায় ১ মাস বন্দী ছিলেন বলে এক সময় উলে­খ করেন।
এভাবে খোকন রাজাকারের বিরুদ্বে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ।চট্রগামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি থানায় তার বিরুদ্বে অর্ধশতাধিক মামলা হয়। তবে তিনি কোন মামলায়ই এ পর্যন্ত গেফতার হননি বা আদালতে হাজিরা দেননি। বিএনপি সরকারের আমলেই তার বিরুদ্বে দায়ের হয়েছে এক ডজনেরও বেশী মামলা। এর মধ্যে রাউজান থানায় দায়ের করা মামলা সমূহ হচ্ছে ২৩-২-৯১ ধারা ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৪২৭/৪৩৫ ও ৩০২ দন্ডবিধি,মামলা নং ৭(৯)৯১ ধারা ১৪৩/৪৩৫/৪২৭ ও ৩০৭ দন্ডবিধি মামলা নং ২২(৩-৩-৯১) ধারা ৩৬৪/৩২৩/১১৪ দন্ডবিধি। এসব মামলা সমূহের প্রাথমিক অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় চার্জশীট ও দাখিল করা হযেছে যার নম্বর ৬৪ তাং ৮-৬-৯১ চার্জশীট ৮৮(৩১-৭-৯১) । এতকীর্তি সত্তে¡ও তিনি এরশাদ সরকারের আমলে হয়েছেন স্বা¯হ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী, হয়েছেন পূর্তমন্ত্রী।এখন হতে চলেছেন বিএনপির সংসদীয় কমিটির ধারক ও বাহক।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির শীর্ষনেতা বর্তমান সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে চারটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। অপর পাঁচ অভিযোগে আরও ৭০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ ও আটকের অভিযোগে এ আদেশ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া বিএনপির কোন শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম রায়। এর আগে ৬টি মামলার রায় দেয়া হয়েছে, তাঁরা সবাই জামায়াতের শীর্ষ নেতা ছিলেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এবং বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রায়ের আদেশে বলা হয়, মানবজাতির বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অপরাধ করার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য বলে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আইনপ্রণেতা হলেও তাঁকে মনে রাখতে হবে, তিনি নিজেও আইনের উর্ধে নন।
রায়ের তিনটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- (১) বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদালতের ডেকোরাম (শালীনতা) ভঙ্গ করে অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। (২) ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা আদালতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এজলাসে উপস্থিত সবাই দাঁড়ালেও তিনি বসে থাকতেন, কোন সময়ই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি। (৩) ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের তিনি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাহেব বলে সম্বোধন করতেন। তিনি পার্লামেন্টের সদস্য হয়েও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ট্রাইব্যুনালকে নানাভাবে অবজ্ঞা করেছেন, এগুলো নিন্দনীয়। তবে এ পর্যবেক্ষণ রায়ের ক্ষেত্রে কোন প্রতিফলন ঘটবে না।
অভিযুক্ত সাকা চৌধুরীর দেয়া ডকুমেন্ট এলিবাই (অন্যত্র থাকার অজুহাতে রেহাই পাওয়া) দেয়া প্রমাণ করে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। রায়ে বলা হয়েছে, সাকা চৌধুরী বিদেশে গেছেন, এটা ঠিক নয়। মূলত একাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চন্দনপুরে সাকার জিপে আক্রমণ করেছিলেন, তাতে তিনি আহত হন। সেই আক্রমণে গ্রেনেড হামলায় গাড়িচালক নিহত হন। সাকা জখম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে যে ডাক্তার (ডা. একেএম শফিউল­াহ) তাঁকে চিকিৎসা দিয়েছিলেন, সেই ডাক্তার ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড চার্জ করেছিলেন তারাও ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষী দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, সাকা এ বিষয়েও নাটকের অবতারণা করেছেন। এমনকি তাঁকে আহত অবস্থায় যিনি হাসপাতালে এনেছিলেন সেই এএসএম মাহাবুরও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী দিয়েছেন।
উলে­খ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর এটি তৃতীয় রায়। এর আগে ট্রাইব্যুনাল-১-এ জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণা করা হয়। আর ট্রাইব্যুনাল-২ এর আগে ৪টি রায় ঘোষণা করেছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিাযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিচারপতি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি ঘটনায় সাকা চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি চার্জ ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যার দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর করে ১০ বছর কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরে বাধ্য করার মতো অপরাধে জড়িত থাকা এবং এর পরিকল্পনা করার দায়ে ২০ বছর করে ৬০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে।
প্রমাণিত যে চারটি অভিযোগে হত্যা ও গণহত্যায় ফাঁসি হয়েছে তা হলো, ৩ নম্বর অভিযোগে গহিরা শ্রী কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা, ৫ নম্বর অভিযোগে সুলতানপুরে শ্রী নেপাল চন্দ্র ও তিনজনকে হত্যা, ৬ নম্বর অভিযোগে ঊনসত্তরপাড়ায় ৬৯-৭০ জনকে গণহত্যা এবং ৮ নম্বর অভিযোগে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহমদ ও তাঁর পুত্র আলমগীরকে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।
আর প্রমাণিত অপহরণ ও নির্যাতনসংক্রান্ত অভিযোগে আনা হয়েছে, ১৭ নম্বর অভিযোগে নিজাম উদ্দিন আহম্মেদকে অপহরণ ও নির্যাতন, ১৮ নম্বর অভিযোগে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে অপহরণ ও নির্যাতন। আর এ দুই অভিযোগে সাকাকে দেয়া হয়েছে ৫ বছরের সশ্রম কারাদ-। ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাঁকে দেয়া হয়েছে ২০ বছরের কারাদ-। আর যে সব অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো ১, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৯, ২০ ও ২৩ নম্বর অভিযোগ। এ ছাড়াও যে অভিযোগগুলো নিয়ে আদালত কিছু বলেনি সেগুলো হলো ৯, ১৩, ১৫, ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগ।

মধ্যগহিরা গণহত্যা : ১৩ এপ্রিল এ সমস্ত হত্যাকা- সংঘটিত হয়। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একদল সদস্য গহিরা গ্রামে হিন্দু অধ্যুষিত পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দুদের ডাক্তার মাখল লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করে।
নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা :সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থল গহিরা শ্রী কু-েশ্বরী ঔষধালয়ে আসেন। সেখানে তাঁর নির্দেশে নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তিনি নিজে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
জগতমল­পাড়া গণহত্যা : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগীদেরসহ পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জগতমল­পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। এখানে গুলিতে ৩২ নারী-পুরুষ মারা যান।
সুলতানপুর বণিকপাড়া : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারী নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালায়। সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে এলাকার নেপাল চন্দ্র ধর, মনিন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে একত্রিত করে গুলি করে হত্যা করে।
ঊনসত্তরপাড়া গণহত্যা : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। ওই পাড়ায় পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসররা এলাকার হিন্দু নর-নারীদের স্থানীয় খিতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুরপাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে একত্রিত করে। সেখানে সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে পাকিস্তানী সেনারা নিরীহ নিরস্ত্র ও একত্রে বসানো হিন্দু নর-নারীদের ওপর ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।
সতীশ চন্দ্র পালিত : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানী সেনাসদস্য রাউজান পৌরসভা এলাকায় সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে। সতীশ চন্দ্র পালিত ওই সময় ঘরের ভেতর থেকে রেরিয়ে এসে পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে ইংরেজীতে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলে, ‘তাকে মেরে ফেলতে হবে।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যরা সতীশ চন্দ্র পালিতকে ঘরের ভেতর যেতে বলে। তিনি পেছন ফিরে ঘরের ভেতর প্রবেশ করার সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
শেখ মোজাফ্ফর আহম্মেদ হত্যা : চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফ্ফর আহম্মেদ ও তাঁর পুত্র শেখ আলমগীরসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রাইভেটকারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে হাটহাজারী থানাধীন খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড় থেকে অপহরণ করে তাদের হত্যা করা হয়।
নিজামউদ্দিন অপহরণ : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর আরও ২-৩ সহযোগীসহ পাকিস্তান সেনাসদস্যরা চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজামউদ্দিন আহম্মেদ এবং সিরাজ, ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণ করে গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ায় আগপর্যন্ত বন্দী ছিলেন।
এখলাস মিয়া অপহরণ : আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুসলিম লীগ নেতা শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃত শামসু মিয়া সহযোগী তিনজন রাজাকারসমেত চট্টগ্রাম জেলার চান্দগাঁও থানাধীন মোহারা গ্রামে আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা মোঃ সালেহউদ্দিনকে অপহরণ করে। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে মোঃ সালেহ উদ্দিনের বাম গালে একটি চড় মারে।
ঘটনার সাক্ষীরা হচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সলিমুল­াহ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালী, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের ভাতিজা গৌরাঙ্গ সিংহ ও পুত্র প্রফুল­ রঞ্জন সিংহ, শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মা, আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ (আব্বাস চেয়ারম্যান), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য মোঃ সালেহউদ্দিন, ব্যবসায়ী পরাগ ধর (ক্যামেরা ট্রায়াল), চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক ছাত্রনেতা কাজী নূরুল আফসার, মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ কমান্ডার সৈয়দ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, শহীদ পরিবারের সদস্য অরুণাংশু বিমল চৌধুরী ও তাঁর ভাতিজা আশীষ চৌধুরী, অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র দাশ, সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন আহমেদ, ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী, একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), শহীদ পরিবারের সদস্য দেবব্রত সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম জুনু, শহীদ পরিবারের সদস্য শেখ মোরশেদ আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর, শহীদ পরিবারের সদস্য অনিল বরণ ধর, মুক্তিযোদ্ধা বনগোপাল দাশ, শহীদ পরিবারের সদস্য বাবুল চক্রবর্তী বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের চৌধুরী, মোঃ সোলায়মান, ডা. একেএম শফিউল­াহ, শহীদ পুত্র পরিতোষ কুমার পালিত, শহীদ পরিবারের সদস্য সুবল চন্দ্র শর্মা, শহীদ পরিবারের সদস্য মোঃ নাজিম উদ্দিন, শহীদ পরিবারের সদস্য সুজিত মহাজন, শহীদের স্ত্রী বাসন্তী ঘোষ, মাহমুদ আলী, বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী, কামাল উদ্দিন এবং শহীদ পরিবারের সদস্য চপলা রানী। আর জব্দ তালিকার সাক্ষীরা হলেন, বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিয়া, চট্টগ্রামের রাউজান থানার জিআরও এএসআই মোঃ এরশাদুল হক, সাবেক জিআরও এসআই মোল­া আব্দুল হাই এবং চট্টগ্রামের বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের বুক শর্টার কাওসার শেখ।
এ ছাড়া অন্য চার সাক্ষী মৃত জ্যোৎস্না পাল চৌধুরী, মৃত জানতি বালা চৌধুরী ও মৃত আবুল বশর এবং ভারতে থাকা বাদল বিশ্বাসের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীকেই সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। গত ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রসিকিউশনের জেরা সম্পন্ন হয়।
অভিযোগ ১: ৪ বা ৫ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৯টার পর মতিলাল চৌধুরী, অরুণ চৌধুরী, যোগেশ চন্দ্র দে ও পরিতোষ দাস, পাচক সুনীল প্রমুখ বন্ধুগণ একত্রিত হয়ে শহীদ মতিলাল চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানাধীন রামজন লেনস্থ বাসভবনে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনারত ছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী আব্দুস সেবাহান এ বাড়িতে ঢুকে তাদেরকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে গুডসহিলে খবর দেয়। তার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই দুই ট্রাক পাকিস্তানী সৈন্য সঙ্গে নিয়ে উক্ত সোবহান বাসাটি ঘেরাও করে ফেলে এবং তাদেরকে অপহরণ করে ট্রাকে তুলে গুডসহিলে নিয়ে যায়। পাচক বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ হওয়ায় তাকে গুডসহিলের নির্যাতন কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাকি ৬ জনকে আটক করা হয়। ছাড়া পাওয়ার কিছুক্ষণ পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী উক্ত আব্দুস সোবহান মতিলাল চৌধুরীর বাসার সামনে সুনীলকে দেখতে পেয়ে সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হওয়ায় প্রমাণ বিনষ্ট করার জন্য তালোয়ার দিয়ে কোপাতে শুরু করে। কিন্তু অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে আটক করে রাখা সেই ৬ ব্যক্তির আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি, যা থেকে নিশ্চিত ধরে নেয়া যায় যে, তাদের সেখানেই হত্যা করা হয়েছে।
অভিযোগ ২: ১৩ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একদল সদস্য গহিরা গ্রামে হিন্দু-অধ্যুষিত পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে নিরীহ নিরস্ত্র হিন্দুদেরকে ডাক্তার মাখল লাল শর্মার বাড়িতে জড়ো করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সদস্যরা ব্রাশফায়ার করে তাদেরকে হত্যা করে। সেখানে যাদের গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্চবালা শর্মা, সুনীল শর্মা, মতিলাল শর্মা, দুলাল শর্মা। আহতদের মধ্যে মাখন লাল শর্মা মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হয়ে ৩-৪ দিন পর মারা যান। জয়ন্ত কুমার শর্মা পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে কয়েক বছর পর মারা যান।
অভিযোগ ৩: ১৩ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরী পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থল গহিরা শ্রী কু-েশ্বরী ঔষধালয়ে আসেন। ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-মালিক শ্রী নূতন চন্দ্র সিংহের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপস্থিতিতে পাকিস্তানী সেনারা ৫-৭ মিনিট কথাবার্তা বলে চলে যায়। চলে যাবার আনুমানিক ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পুনরায় পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে কু-েশ্বরী ভবনে প্রবেশ করে। ঐ সময় শ্রী নূতন চন্দ্র সিংহ বাড়ির ভিতরে মন্দিরে প্রার্থনারত ছিলেন। আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে মন্দিরের ভিতর থেকে টেনে-হিঁচড়ে সামনে নিয়ে আসেন। এবং উপস্থিত পাকিস্তানী সেনাদের উদ্দেশে বলেন যে, ‘একে হত্যা করার জন্য বাবার নির্দেশ আছে।’ অতঃপর নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করার জন্য আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উপস্থিত পাকিস্তানী সেনা সদস্যদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন। সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানী সেনারা কু-েশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে ব্রাশফায়ার করে। গুলিবিদ্ধ নূতন চন্দ্র সিংহ মাটিতে পড়ে ছটফট করা অবস্থায় আসামি সাকা চৌধুরী নিজে তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
অভিযোগ ৪: ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সালে সকাল ১০.৩০ থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী স্থানীয় সহযোগীদেরসহ পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হিন্দু-অধ্যুষিত জগৎমল­পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। ঘটনার দিন সাকা চৌধুরীর দু’জন সহযোগী আব্দুল মাবুদ ও অপর একজন জগৎমল­পাড়ায় সেখানকার হিন্দু নর-নারীদের সবাইকে কথিত এক শান্তি মিটিংয়ে অংশগ্রহণের আহŸান জানান। তাদের কাথায় বিশ্বাস করে এলাকাবাসী সবাই কিরণ বিকাশ চৌধুরীর বাড়ির আঙ্গিনায় একে একে জড়ো হতে থাকে। তখন তাদেরকে একত্রিত করে বসানো হয়। অতঃপর সাকার উপস্থিতিতে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এখানে গুলিতে ৩২ নারী-পুরুষ মারা যান। যাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন, তেজেন্দ্র লাল নন্দী, সমির কান্তি চৌধুরী, অশোক চৌধুরী, সীতাংশু বিমল চৌধুরী, প্রেমাংশু বিমল চৌধুরী, কিরণ বিকাশ চৌধুরী, সুরেন্দ্র বিজয় চৌধুরী, চারুবালা চৌধুরাণী, নিরুবালা চৌধুরাণী, প্রভাতী চৌধুরী, রাজল²ী চৌধুরাণী, কুসুম বালা চৌধুরাণী, যতীন্দ্র লাল সরকার, হীরেন্দ্র লাল সরকার, প্রভাতী সরকার, দেবেন্দ্র্্র লাল চৌধুরী, রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী, অজিত কুমার চৌধুরী, পরিতোষ চৌধুরী, ভবতোষ চৌধুরী, গোপাল চৌধুরী, রানী বালা চৌধুরাণী, মঞ্জুর চৌধুরী, ঝিনু চৌধুরী, রুনু চৌধুরী, দেবু চৌধুরী, স্বপন চৌধুরী, ফনীভূষণ চৌধুরী, মধুসূদন চৌধুরী, বিপিন চৌধুরী, কামিনি রুদ্র, অনন্ত বালা পাল (নিরুবালা)।
অভিযোগ ৫: একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বেলা অনুমানিক ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কতিপয় অনুসারীকে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে হামলা চালায়। সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার পূর্বে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে সুলতানপুর গ্রামের বণিকপাড়ার লোকজনের নিকট পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর প্রশংসা করে কাউকে বাড়ি না ছাড়ার জন্য প্ররোচনা চালায়। স্থানীয় লোকজন পরিপূর্ণ আস্থা স্থাপন না করতে পেরে নারী শিশুদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়। সেনাসদস্যরা বাণিকপাড়ায় প্রবেশ করে ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে এলাকার নেপাল চন্দ্র ধর, মনিন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনিল বরণ ধরকে একত্রিত করে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ ৬: একাত্তরের ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টা থেকে ৫টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী হিন্দু জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার জন্য রাউজানের ঊনসত্তর পাড়ায় সশস্ত্র অভিযান চালায়। উক্তপাড়ায় পাকিস্তানী সেনা ও তাদের দোসররা এলাকার হিন্দু নর-নারীদের স্থানীয় ক্ষিতিশ মহাজনের বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে শান্তি মিটিংয়ের নামে একত্রিত করে। অতঃপর সাকা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে পাকিস্তানী সেনারা নিরীহ, নিরস্ত্র ও একত্রে বসা হিন্দু নর-নারীদের ওপর ব্রাশফায়ার করে তাদের হত্যা করে। এদের মধ্যে রয়েছেন চন্দ্র কুমার পাল, তারা চরণ পাল, বাবুল মালী, গোপাল মালী, সন্তোষ মালী, বলরাম মালী, অভিমুন্য পাল, পাখী বালা পাল, বেনী মাধব পাল, ধীরেন্দ্র পাল, বিরজা বালা পাল, হিমাংশু পাল, সতীশ চন্দ্র, সুপ্রিয় পাল, দুর্গাচরণ পাল, শান্তিবালা পাল, নিকুঞ্জ বিহারী পাল, বলরাম পাল, শ্রীরাম পাল, ফনীন্দ্র পাল, তারাপদ পাল, পুনিল বিহারী পাল, নিকুঞ্জ পাল, নকৃল পাল, হেমন্ত কুমার পাল, স্বপন কুমার সেন, ধীরেন্দ্র লাল চৌধুরী, নির্মল চৌধুরী, মধুসূদন চৌধুরী, শান্তিপদ চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, বাবুল চৌধুরী, কৃষ্ণ চৌধুরী, রঞ্জিত কুমার রুদ্র, মনীন্দ্র চৌধুরী, জ্যোৎস্না বালা চৌধুরী, প্রীতি কণা চৌধুরী, মণিকুন্তলা চৌধুরী, কৃষ্ণা রানী চৌধুরী, মিলন দে, শ্রীপতি চৌধুরী, উপেন্দ্র লাল ঘোষ, মনোরঞ্জন ঘোষ, প্রতিমা দাস, জুনু ঘোষ, বাদল চৌধুরী এই ৫০ জনের লাশ গ্রামবাসী শনাক্ত করে।
অভিযোগ ৭: ১৪ এপ্রিল ১৯৭১, দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পাকিস্তানী সেনা রাউজান পৌরসভা এলাকায় সতীশ চন্দ্র পালিতের বাড়িতে প্রবেশ করে। সতীশ চন্দ্র পালিত ঐ সময় ঘরের ভিতর থেকে রেবিয়ে এসে পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে ইংরেজীতে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলে যে, তাকে মেরে ফেলতে হবে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যরা সতীশ চন্দ্র পালিতকে ঘরের ভিতর যেতে বলে। তিনি পেছন ফিরে ঘরের ভিতর প্রবেশ করাকালে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং তার লাশ কাঁথা-কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে তাতে পাউড়ার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।
অভিযোগ ৮: ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ১১টা। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফ্ফর আহম্মদ তার পুত্র শেখ আলমগীরসহ পরিবারের কতিপয় সদস্যকে নিয়ে প্রাইভেট কারযোগে চট্টগ্রামের রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে হাটহাজারী থানাধীন খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি তিন রাস্তার মোড়ে সকাল অনুমান ১১টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে থাকা পাকিস্তানী দখলদার সৈন্যরা তাদের প্রাইভেট গাড়িটি অবরোধ করে। তারা শেখ মোজাফ্ফর আহম্মেদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আটক করে স্থানীয় আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তাদের আত্মীয়স্বজন পরিচিত সূত্রে চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানাধীন রহমতগঞ্জ গুডসহিলে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে শেখ মোজাফ্ফর আহমদ এবং তার পুত্র শেখ আলমগীরকে মুক্ত করার অনুরোধ করেন। ফজলুল কাদের চৌধুরী বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। এবং আলোচনার এক পর্যায়ে এও বলেন যে, ‘বিষয়টি সালাউদ্দিন কাদেরের ব্যাপার। দেখি কি করা যায়।’ ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ফলে শেখ মোজাফ্ফর আহম্মদ ও শেখ আলমগীরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ ৯ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে এপ্রিলের মাঝামাঝি দু’টি বড় ট্রাকযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালীতে আসে। একখানা জীপে করে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একই সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানাধীন সিও অফিসস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে আসে। ঐ দুটি ট্রাক একই থানাধীন কদুরখিল গ্রামে যাওয়ার সময় মুন্সীর হাটের শান্তিদেবকে ধরে নিয়ে আসে। তাকে থানার উত্তর পার্শ্বে বাণিকপাড়ায় গুলি করে হত্যা করে। অনতিদূরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তখন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। শান্তিদেবের লাশ ঐ সময় কে বা কারা নিয়ে যায়। ঐ সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারের সদস্যরা বণিকপাড়ার রামবাবুর ঘর-বাড়ি, কদুরখিল হিন্দুপাড়া লুটপাট করে।
অভিযোগ ১০ : ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী সাকা চৌধুরীর সঙ্গে ডাবুয়া গ্রামে মানিক ধরের বাড়িতে এসে তার জীপ গাড়ি ও ধান ভাঙ্গার কল লুট করে নিয়ে যায়। মানিক ধর সাকা চৌধুরীসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে থানায় মামলা দায়ের করে।
অভিযোগ ১১ : ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সকালবেলা কনভেনশন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী ও আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী মুসলিম লীগের লোকজন তাদের নির্দেশেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং মুসলিম লীগ সমর্থক রাজাকার খয়রাতি, জহির এবং জসিমকে নিয়ে একযোগে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ যোগসাজশে ও চক্রান্তে চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী থানাধীন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা শাকপুরা গ্রামে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে হিন্দুদেরকে হত্যা করা হয়। শাকপুরা প্রাথমিক স্কুলের নিকটবর্তী জঙ্গলে ও ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে নির্বিচারে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে নিহতদের মধ্যে ৫২ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়।
এছাড়া আক্রমণকারীরা শাকপুরা গ্রামের দারোগার মাঠে নিয়ে নিকুঞ্জ চৌধুরী, অরবিন্দ রায়, ফনিন্দ্র শীল, প্রাণহরি শীল, নিকুঞ্জ শীল, ধনঞ্জয় চৌধুরী, নগেন্দ্র শীল, প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টার সুখেন্দু বিকাশ নাগ, বিশ্বেশ্বর আচার্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। উপরোক্ত হত্যাকা- ছাড়াও শাকপুরা এলাকায় যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় তিন শতাধিক লোককে হত্যা করা হয় যাদের সেখানে মাটিচাপা দিয়ে সমাধিস্থ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে শাকপুরা প্রাইমারী স্কুলের নিকটবর্তী পুকুরপাড়ে রাস্তার পাশে শাকপুরা গ্রামের নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এবং তার সহযোগীদের হাতে নিহত ৭৬ জনের নাম উলে­খ রয়েছে। এরা হলো ফয়েজ আহম্মদ, জালাল আহম্মদ, হাবিলদার সেকেন্দার আলী, আমীর হামজা, আবুল হাশিম, আব্দুল মতিন, হাবিবুর রহমান (লেদু), আহাম্মদ ছফা, অরবিন্দ রায়, নিকুঞ্জ রায়, ধীরেন্দ্র লাল দে, ফনিন্দ্র লাল শীল, নিকুঞ্জ শীল, প্রাণহরি শীল, নগেন্দ্র লাল শীল, দীবেশ চৌধুরী, গৌরাঙ্গ প্রসাদ চৌধুরী, বিশু চৌধুরী, গৌরাঙ্গ নন্দী, তপন নন্দী, ডাক্তার মধুসূদন চৌধুরী, রঘুনন্দন চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, সুখেন্দ্র বিকাশ নাগ, রবীন্দ্র লাল চৌধুরী, উপেন্দ্র লাল চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, বিশ্বেশ্বর আচার্য, দয়াল হরি আচার্য, কামিনী শুক্ল দাস, যোগেন্দ্র লাল শুক্ল দাস, দেবেন্দ্র শর্মা, যতীন্দ্র লাল সেন, ধুর্জ্জটি বড়ুয়া, প-িত রমেশ চন্দ্র বড়ুয়া, রতন চৌধুরী, প্রিয়তোষ চৌধুরী, চন্দন চৌধুরী, নিরঞ্জন চৌধুরী, হরিরঞ্জন চৌধুরী, দীলিপ চৌধুরী, মিলন বিশ্বাস, সুবল বিশ্বাস, ব্রজেন্দ্র লাল চৌধুরী, গোপাল চৌধুরী, ধীরেন্দ্র চৌধুরী, রমনী চৌধুরী, গৌরাঙ্গ চৌধুরী, দয়াল নাথ, রাখাল সিংহ, মনমোহন চক্রবর্তী, শশাঙ্ক ঘোষ, সুখেন্দ্র বিকাশ চৌধুরী, ধীরেন্দ্র লাল চৌধুরী, বরদা চরণ চৌধুরী, মনিন্দ্র লাল খাস্তগির, বঙ্কিম চন্দ্র সেন, সাধন ঘোষ, গৌরাঙ্গ চৌধুরী, ধনঞ্জয় কৈবত্য, নলিনী কৈবত্য, সমিত রঞ্জন বড়ুয়া, নারায়ণ চৌধুরী, যতীন্দ্র লাল দাস, মনিন্দ্র লাল দাস, রমেশ চৌধুরী, ডাক্তার সুখেন্দ্র বিকাশ দত্ত, প্রদীপ কান্তি দাস, রায় মোহন চৌধুরী, হরিপদ চৌধুরী, অমল চৌধুরী, ডাক্তার পূর্ণ চরণ, মদন কাুমার দাস।
অভিযোগ ১২ : ৫ মে সকাল সাড়ে ১০টায় সাকার উপস্থিতিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী রাউজান থানায় জ্যোতিমল­ গ্রামে গুলি করে বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরী রাখাল, বিভূতি ভূষণ চৌধুরী, হিরেন্দ্র লাল চৌধুরীকে হত্যা করে।
অভিযোগ ১৩: ১৯৭১ সালের ১৫ মে বাদমাগরিব অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে তাদের সহযোগী শান্তি কমিটির সদস্য অলি আহম্মদ (মইন্যাপাড়া, উত্তর হালি শহর, উত্তর গেট এলাকায় রায় মোল­ার জামাতা) পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ঘাসিমাঝির পাড় এলাকায় উপস্থিত হয়ে এলাকার লোকজন আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূতভাবে তাদের বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠ যোগসাজশে ও চক্রান্তে আক্রমণ করে লুটপাট, ছয়জনকে গুলি করে হত্যা, দু’জনকে গুরুতর আহত এবং অন্তত ৫ মহিলাকে ধর্ষণ করে। নিহতরা হলেন নুরুল আলম, আবুল কালাম, জানে আলম, মিয়া খাঁ, আয়েশা খাতুন, সালেহ জহুর। গুলিতে আহতরা হলেন, মুন্সী মিয়া, খায়রুল বাশার।
অভিযোগ ১৪ : ১৯৭১ সালের ২০ মে বিকেল অনুমান ৪টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে তার সহযোগী কয়েক রাজাকার সদস্য পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন পথেরহাটের কর্তারদীঘির পাড়ে মোঃ হানিফের বাড়িতে যায়। তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করছিলেন। মোঃ হানিফের স্ত্রী এবং অন্যরা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্মীয় নাজমা খাতুনের মাধ্যমে মোঃ হানিফকে গুডসহিল নির্যাতন কেন্দ্র থেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে।
নাজমা খাতুন গুডসহিল থেকে ফেরত এসে তাদেরকে জানায় যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মোঃ হানিফকে ছাড়ার জন্য এক হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। ফলে মোঃ হানিফ গুডসহিল নির্যাতন কেন্দ্র থেকে আর ফেরৎ আসেনি। মুক্তিপণের টাকা না দিতে পারার কারণে মোঃ হানিফকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ১৫ : ১৯৭১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি শেখ মায়মুন আলী চৌধুরী তার ভাগ্নিজামাই মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জস্থ বাসায় ছিলেন। ঘটনার দিন কয়েক বন্ধুসহ চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানাধীন চন্দনপুরস্থ ক্যাপ্টেন বখতিয়ারের বাসভবনে গল্পগুজবরত অবস্থায় থাকাকালীন আনুমানিক বিকেল ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে দু’টি ট্রাকে পাকিস্তানী সেনাসদস্যসহ বে-সামরিক পোশাকে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সমেত এসে বাসাটি ঘেরাও করে। এর পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ও নিয়ন্ত্রাণাধীন ও পরিচালনাধীন গুডসহিল নির্য়াতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও ফজলুল কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পরনের জাঙ্গিয়া ছাড়া সকল কাপড়চোপড় খুলে ফেলে হাত-পা বেঁধে তাকে দৈহিক নির্যাতন করা হয়।
অভিযোগ ১৬ : ১৯৭১ সালের ৭ জুন রাজাকার মাকসুদুর রহমান ও আসামির পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান সেনাসদস্যদের সহযোগিতায় জামালখান রোড থেকে ওমর ফারুককে ধরে নিয়ে গিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন গুডসহিলের চর্টার সেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে আটকাবস্থায় তাকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ১৭ : ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার আরও ২-৩ জন সহযোগীসহ পাকিস্তানী সেনাসদস্যরা চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পোড়োবাড়ী থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নিজামউদ্দিন আহম্মেদ এবং সিরাজ, ওয়াহেদ ওরফে ঝুনু পাগলাকে অপহরণ করা হয। অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেজর গজনফরের নেতৃত্বে ঘণ্টা দেড়েক তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। অতঃপর সেদিন রাত ১১/১২টার দিকে নিজামউদ্দিন ও সিরাজকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে গিয়ে কারারুদ্ধ করা হয় সেখানে তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ায় আগ পর্যন্ত বন্দী ছিলেন।
অভিযোগ ১৮ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন ভোর আনমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুসলিম লীগ নেতা শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃত শামসু মিয়া সহযোগী তিনজন রাজাকারসমেত চট্টগ্রাম জেরার চান্দগাঁও থানাধীন মোহারা গ্রামে আব্দুল মোতালেব চৌধুরীর বাড়িতে যায়, সেখানে গিয়ে তারা মোঃ সালেহ উদ্দিনকে অপহরণ করে। এর পর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গাড়িতে নিয়ে তাকে গুডসহিলে চর্টার সেলে নেয়া হয়। বাড়ির বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে থাকা ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীও উপিস্থিত ছিলেন। ঐ সময় সালেহ উদ্দিনকে উদ্দেশ করে ফজলুল কাদের চৌধুরী জানতে চান, তিনি সালেহ উদ্দিন কিনা। এ কথা বলতে বলতে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে মোঃ সালেহ উদ্দিনের বাম গালে সজোরে একটি চড় মারে।
অভিযোগ ১৯ : ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে হাটহাজারীর নেয়ামত আলী রোডস্থ সাহেব মিয়ার বাড়ি (রজমান টেন্ডলের বাড়ি) ঘেরাও করে তার দু’ছেলে নূর মোহাম্মদ ও নূরুল আলমকে অপহরণ করে। এর পর রশি দিয়ে বেঁধে গুডসহিলে চর্টার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা তাদের অপর ভাই মাহবুব আলমের সন্ধান পায়।
আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নূর মোহাম্মদ ও নূরুল আলমকে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে গুডসহিলের নির্যাতন কেন্দ্রে থেকে ছেড়ে দেয়।
অভিযোগ ২০ : ২৭/২৮ জুলাই ৩-৪টার দিকে রাজাকার বাহিনী আকলাচ মিয়াকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর তাকে গুডসহিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।
অভিযোগ ২১ : ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ৫/৭ তারিখের দিকে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার বিনাজুরি গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী একই জেলার কোতোয়ালি থানাধীন জেল রোডে অবস্থিত নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাগজের দোকানে যান। সেখান থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ৩-৪ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয।
অভিযোগ ২২ : ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষদিকে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে মো: নুরুল আনোয়ার চৌধুরীকে অপহরণ করা হয়। আসামি ্সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার সহযোগী আল শামস বাহিনীর সদস্যরা মৃত আশরাফ আব্দুল হাকিম চৌধুরীর বাসভবন ৪১২ স্ট্রান্ড রোড সদরঘাট, থানা ডবলমুরিং জেলা চট্টগ্রাম থেকে অপহরণ করে গুডসহিলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মোঃ নুরুল আনোয়ারের কাছ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
অভিযোগ ২৩ : ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালে সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টার সময় আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, মুসলিম ছাত্র পরিষদের সভাপতি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আল শামস কমান্ডার হামিদুল কবির চৌধুরী প্রকাশ খোকা, মাহবুব, সৈয়দ ওয়াহিদুর আলম গং চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানাধীন ৪০ আব্দুস সাত্তার রোড এলাকায় এম সলিমুল­াহর একজন হিন্দু কর্মচারীকে মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগের ভিত্তিতে মারধর করতে থাকে। তাদের অভিযোগ হলো উক্ত হিন্দু কর্মচারী বিহারীদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। এম সলিমুল­াহ এতে বাধা দিলে তাকে গুডস হিলে নির্যাতন সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সারারাত নির্যাতন শেষে তার আত্মীয়দের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ মামলায় সফলভাবে প্রমাণিত হয়েছে, অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় পরিকল্পিতভাবে অংশ নিয়েছেন এবং তাই তাঁকে তাঁর ও তাঁর সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত বর্বর নিষ্ঠুরতায় সরাসরি অংশগ্রহণ এবং উপস্থিতির জন্য অভিযুক্ত করে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়া হলো।অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ১৯৭৩-এর আইসিটি আইনের ৩(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত অভিযোগ নম্বর ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৭ ও ১৮-এ নয়টি মানবতাবিরোধী ও নরহত্যা সম্পৃক্ত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হলো।মৌখিক ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে এ মামলায় সফলতার সঙ্গে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি চট্টগ্রামেই উপস্থিত ছিলেন এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের সহযোগিতায় নিরস্ত্র বেসামরিক নারিকদের ওপর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা চালিয়েছেন সক্রিয়ভাবে এবং তাঁর এ বর্বরতার উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। তাই তাকে নরহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হলো।অভিযোগ নম্বর ৩-এ অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুরোধে এবং তার সক্রিয় অংশগ্রহণে পাকিস্তান দখলদার বাহিনী কু-েশ্বরী হার্বাল ফ্যাক্টরিতে হামলা চালায় এবং ফ্যাক্টরির মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করে

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনাল র্কর্তৃক হত্যা ও গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া বিএনপির শীর্ষ নেতা সাকা বাহিনীর (নিজস্ব বাহিনী) প্রধান স্বঘোষিত ব্রিগেডিয়ার সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ।৭ নম্বর অভিযোগ থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হলো। ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হলো। মাত্র এক মিনিটেই সাকার রায় ঘোষণা শেষ করেন। রায়কে কেন্দ্র করে সুপ্রীমকোর্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল, প্রসিকিউটরবৃন্দ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন। সাকার ফাঁসির রায় বহাল থাকায় এবার তাঁর দ- কার্যকরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষা শুরু হলো। রায় কার্যকর করতে আরও তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। প্রথমত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ। দ্বিতীয়ত রিভিউ আবেদন। আপীল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করলে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন। উলে­খ্য, আপীল বিভাগে এটাই প্রথম বিএনপির কোন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদ- বহাল রাখা হলো।
এদিকে রায় ঘোষণার সময় সবার আগে এসে প্রথম বেঞ্চে আসন নেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার পাশে বিএনপিপন্থী অন্য কোন আইনজীবীকে দেখা যায়নি। পরে শুধু এসেছেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও তানভীর আহমেদ আল আমীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উলে­খ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি প্রমাণিত হয়। ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে সাকাকে মৃত্যুদন্ড-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আপীল বিভাগ তা বহাল রাখেন। ৭ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপীল বিভাগ। ২ ও ৪ নং সাকাকে ট্রাইব্যুনাল ২০ বছরের কারাদ- প্রদান করেন। সেটা আপীল বিভাগ বহাল রেখেছেন। অন্যদিকে ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাকাকে ৫ বছর করে কারাদ- প্রদান করা হয়। আপীল বিভাগ সেটাও বহাল রেখেছেন।৭ নম্বর অভিযোগ থেকে আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে খালাস দেয়া হলো। ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হলো। মাত্র এক মিনিটেই সাকার রায় ঘোষণা শেষ করেন। রায়কে কেন্দ্র করে সুপ্রীমকোর্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল, প্রসিকিউটরবৃন্দ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন। সাকার ফাঁসির রায় বহাল থাকায় এবার তাঁর দ- কার্যকরে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষা শুরু হলো। রায় কার্যকর করতে আরও তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। প্রথমত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ। দ্বিতীয়ত রিভিউ আবেদন। আপীল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করলে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন। উলে­খ্য, আপীল বিভাগে এটাই প্রথম বিএনপির কোন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদ- বহাল রাখা হলো।
এদিকে রায় ঘোষণার সময় সবার আগে এসে প্রথম বেঞ্চে আসন নেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার পাশে বিএনপিপন্থী অন্য কোন আইনজীবীকে দেখা যায়নি। পরে শুধু এসেছেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও তানভীর আহমেদ আল আমীন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উলে­খ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি প্রমাণিত হয়। ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগে সাকাকে মৃত্যুদন্ড-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আপীল বিভাগ তা বহাল রাখেন। ৭ নম্বর অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ২০ বছর কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগ থেকে আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপীল বিভাগ। ২ ও ৪ নং সাকাকে ট্রাইব্যুনাল ২০ বছরের কারাদ- প্রদান করেন। সেটা আপীল বিভাগ বহাল রেখেছেন। অন্যদিকে ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে সাকাকে ৫ বছর করে কারাদ- প্রদান করা হয়। আপীল বিভাগ সেটাও বহাল রেখেছেন।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:১৫
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×