( গল্পগুলো ব্লগার "আমি তুমি আমরা" ভাই এর জন্য, যার অনুবাদকৃত কাহলিল জিব্রান-এর অনুগদ্যগুচ্ছ আমাকে স্পর্শ করেছিলো )
***
১
বিখ্যাত একজন লেখকের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন সাংবাদিক। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন- "একজন লেখকের জন্য সব থেকে কঠিন কাজ কোনটা?"
লেখক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর দেয়ালে টাঙ্গানো তাঁর মৃত মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন- "নিজের সন্তানের জন্য এপিটাফ লেখা ।"
***
২
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূবে অনেকগুলো গোলাপগাছ আছে। ওখানকারই এক লাল টুকটুকে গোলাপের সাথে প্রেম হয়েছিলো দোয়েলের......
কি প্রগাঢ় প্রেম ছিলো তাদের ! প্রতিদিন দোয়েলটা এ ডাল-ও ডাল ঘুরে গোলাপকে গান শোনাতো, আর গোলাপ হাওয়ায় ভাসাতো তার ঘ্রাণ। বলতো-
"কাঁটাগুলো আমার থাক , ঘ্রাণটুকু নিও
আদর দিলাম, মায়া দিলাম, যতনে রাখিও "
গোলাপের নিবেদন দোয়েলের ছোট্ট হৃদয়টাকে ভরিয়ে তুলতো আনন্দে। উড়তে উড়তে সে কাছে গিয়ে গোলাপের নরম পাপড়িতে ডানা ছোঁয়াতো।
একদিন......
নাহিদ তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলো। প্রিয়াংকার হাত ধরে ধরে হাটলো সে গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একসময় প্রিয়াংকা ক্লান্ত হয়ে বসেছিলো একটু। নাহিদকে উজ্জ্বল গলায় বললো- "কি সুন্দর গোলাপ ফুটেছে এখানে! সুন্দর না!"
নাহিদ অল্প একটু হেসে গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিড়ে আনলো প্রেমিকার জন্য। ওর কানে গুঁজে দিলো সুগভীর মায়ায়।
ফেরত আসার সময় দু'জনই লক্ষ্য করলো- একটা দোয়েল বিক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে উড়ছে তাঁদের ঘিরে। ব্যাকুল হয়ে ডানা ঝাপ্টাচ্ছে......
প্রিয়াংকা আনমনা গলায় বললো- "এই দোয়েলটা বোধহয় পাগল, না !"
***
৩
নিতুর চেহারা খারাপ, এটা নিয়ে খুব দুঃখ ছিলো তাঁর। প্রায়ই আয়নায় নিজেকে দেখতো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতো- আরেকটু সুন্দর হলে কি......
এসব নিয়েই একদিন খুব মনটন খারাপ, তখন অনিক জানতে চাইলো- "সমস্যা কি?"
"মানে?"
"মানে তোর মন খারাপ কেন?"
নিতু একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, "এটা তোরা ছেলেরা কখনো বুঝবি না...... আচ্ছা দোস্ত......" নিতু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করেই বসে- "আমি কি দেখতে খুব বেশি অসুন্দর?"
অনিক হাহা করে হেসে বললো- "ও আচ্ছা, এই কাহিনী ! তুই একটা ছোট আয়না নিয়ে ঘুরিস না, ওটা বের কর। তোকে একটা জিনিস দেখাই !"
নিতু অবাক হয়ে আয়নাটা বের করে অনিকের হাতে দিলো।
খুব রোদ উঠেছিলো সেদিন। আশ্বিনের আকাশ চকচক, চকচক করছিলো নীলে। অনিক আয়নাটাকে নিয়ে আকাশের নীচে মেলে ধরলো। তারপর নরম গলায় বললো- "আয়নায় সবসময় সবকিছু দেখা যায় না। এই যে আকাশটা দেখ, এর কতটুকুই বা তোর আয়না ধারণ করতে পেরেছে ! মানুষ তো আকাশের চেয়েও বড় রে দোস্ত। যে আয়না এই ছোট্ট আকাশটাকেই ধারণ করতে পারে না, সে মানুষকে ধারণ করবে কিভাবে?"
এ ঘটনার দুই মাস পর নিতু অনিককে প্রপোজ করেছিলো। কিন্তু অনিক ফিরিয়ে দিলো। বললো- "আমি আপাতত শুধু ক্যারিয়ারের দিকেই ফোকাস করতে চাইছি রে......"
যদিও পরবর্তীতে অনিক রাফিয়ার সাথে সম্পর্কে জড়ালো। অসম্ভব সুন্দর ছিলো মেয়েটা। একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না- এমন !
নিতু একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো- অধিকাংশ ছেলেই বোধহয় সারাজীবন একটা আয়না হয়ে থাকে। গোটা আকাশ ধারণ করার মত সামর্থ্য ওদের হয় না কখনো !
***
৪
তেলাপোকাদের সুন্দরী প্রতিযোগীতা চলছিলো। মিস তেলাপোকাভার্স। এবারে, অর্থাৎ ২০২১ সালে মিস তেলাপোকাভার্স যিনি হয়েছেন, তাঁর নাম- "#"
এক সন্ধ্যায় "#" কে দেখে রাশেদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী জেসমিন চিৎকার করে উঠলো। রাশেদ ইদানিং তাঁর স্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত কেয়ার দেখানোর চেষ্টা করে। তারই বহিপ্রকাশ হিসেবে স্যান্ডেলের এক বাড়িতে মেরে ফেলা হলো তেলাপোকাটাকে। জেসমিন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- "কি বিশ্রী দেখতে একটা পোকা !"
মিস তেলাপোকাভার্স হওয়ার এক মাস পর পেপারে "#" - এর মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয়েছিলো পরদিন।
***
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০