somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৪টি অনুগল্প

২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( গল্পগুলো ব্লগার "আমি তুমি আমরা" ভাই এর জন্য, যার অনুবাদকৃত কাহলিল জিব্রান-এর অনুগদ্যগুচ্ছ আমাকে স্পর্শ করেছিলো )
***

বিখ্যাত একজন লেখকের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন সাংবাদিক। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন- "একজন লেখকের জন্য সব থেকে কঠিন কাজ কোনটা?"

লেখক কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর দেয়ালে টাঙ্গানো তাঁর মৃত মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন- "নিজের সন্তানের জন্য এপিটাফ লেখা ।"
***

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূবে অনেকগুলো গোলাপগাছ আছে। ওখানকারই এক লাল টুকটুকে গোলাপের সাথে প্রেম হয়েছিলো দোয়েলের......

কি প্রগাঢ় প্রেম ছিলো তাদের ! প্রতিদিন দোয়েলটা এ ডাল-ও ডাল ঘুরে গোলাপকে গান শোনাতো, আর গোলাপ হাওয়ায় ভাসাতো তার ঘ্রাণ। বলতো-
"কাঁটাগুলো আমার থাক , ঘ্রাণটুকু নিও
আদর দিলাম, মায়া দিলাম, যতনে রাখিও "


গোলাপের নিবেদন দোয়েলের ছোট্ট হৃদয়টাকে ভরিয়ে তুলতো আনন্দে। উড়তে উড়তে সে কাছে গিয়ে গোলাপের নরম পাপড়িতে ডানা ছোঁয়াতো।

একদিন......

নাহিদ তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলো। প্রিয়াংকার হাত ধরে ধরে হাটলো সে গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একসময় প্রিয়াংকা ক্লান্ত হয়ে বসেছিলো একটু। নাহিদকে উজ্জ্বল গলায় বললো- "কি সুন্দর গোলাপ ফুটেছে এখানে! সুন্দর না!"

নাহিদ অল্প একটু হেসে গাছ থেকে একটা গোলাপ ছিড়ে আনলো প্রেমিকার জন্য। ওর কানে গুঁজে দিলো সুগভীর মায়ায়।

ফেরত আসার সময় দু'জনই লক্ষ্য করলো- একটা দোয়েল বিক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে উড়ছে তাঁদের ঘিরে। ব্যাকুল হয়ে ডানা ঝাপ্টাচ্ছে......

প্রিয়াংকা আনমনা গলায় বললো- "এই দোয়েলটা বোধহয় পাগল, না !"
***

নিতুর চেহারা খারাপ, এটা নিয়ে খুব দুঃখ ছিলো তাঁর। প্রায়ই আয়নায় নিজেকে দেখতো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতো- আরেকটু সুন্দর হলে কি......

এসব নিয়েই একদিন খুব মনটন খারাপ, তখন অনিক জানতে চাইলো- "সমস্যা কি?"
"মানে?"
"মানে তোর মন খারাপ কেন?"
নিতু একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, "এটা তোরা ছেলেরা কখনো বুঝবি না...... আচ্ছা দোস্ত......" নিতু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করেই বসে- "আমি কি দেখতে খুব বেশি অসুন্দর?"

অনিক হাহা করে হেসে বললো- "ও আচ্ছা, এই কাহিনী ! তুই একটা ছোট আয়না নিয়ে ঘুরিস না, ওটা বের কর। তোকে একটা জিনিস দেখাই !"
নিতু অবাক হয়ে আয়নাটা বের করে অনিকের হাতে দিলো।

খুব রোদ উঠেছিলো সেদিন। আশ্বিনের আকাশ চকচক, চকচক করছিলো নীলে। অনিক আয়নাটাকে নিয়ে আকাশের নীচে মেলে ধরলো। তারপর নরম গলায় বললো- "আয়নায় সবসময় সবকিছু দেখা যায় না। এই যে আকাশটা দেখ, এর কতটুকুই বা তোর আয়না ধারণ করতে পেরেছে ! মানুষ তো আকাশের চেয়েও বড় রে দোস্ত। যে আয়না এই ছোট্ট আকাশটাকেই ধারণ করতে পারে না, সে মানুষকে ধারণ করবে কিভাবে?"

এ ঘটনার দুই মাস পর নিতু অনিককে প্রপোজ করেছিলো। কিন্তু অনিক ফিরিয়ে দিলো। বললো- "আমি আপাতত শুধু ক্যারিয়ারের দিকেই ফোকাস করতে চাইছি রে......"

যদিও পরবর্তীতে অনিক রাফিয়ার সাথে সম্পর্কে জড়ালো। অসম্ভব সুন্দর ছিলো মেয়েটা। একবার তাকালে চোখ ফেরানো যায় না- এমন !

নিতু একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলো- অধিকাংশ ছেলেই বোধহয় সারাজীবন একটা আয়না হয়ে থাকে। গোটা আকাশ ধারণ করার মত সামর্থ্য ওদের হয় না কখনো !
***

তেলাপোকাদের সুন্দরী প্রতিযোগীতা চলছিলো। মিস তেলাপোকাভার্স। এবারে, অর্থাৎ ২০২১ সালে মিস তেলাপোকাভার্স যিনি হয়েছেন, তাঁর নাম- "#"

এক সন্ধ্যায় "#" কে দেখে রাশেদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী জেসমিন চিৎকার করে উঠলো। রাশেদ ইদানিং তাঁর স্ত্রীর প্রতি অতিরিক্ত কেয়ার দেখানোর চেষ্টা করে। তারই বহিপ্রকাশ হিসেবে স্যান্ডেলের এক বাড়িতে মেরে ফেলা হলো তেলাপোকাটাকে। জেসমিন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো- "কি বিশ্রী দেখতে একটা পোকা !"

মিস তেলাপোকাভার্স হওয়ার এক মাস পর পেপারে "#" - এর মৃত্যু সংবাদ ছাপা হয়েছিলো পরদিন।
***
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১০
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×