somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জর্ডান ও লেবাননে বাংলাদেশী নারী শ্রমিকের মৃত্যু যন্ত্রনা !

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী গৃহ শ্রমিকরা জর্ডান বিমান বন্দরে পৌছার পর তাঁদেরকে স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসের লোকেরা বিমান বন্দর থেকে রিসিভ করে রিক্রিটিং এজেন্সির অফিস নিয়ে যায়। রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস নেয়ার পর সেখানে তাঁদেরকে বাসা বাড়ীতে কাজে পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত ঐ অফিসেই থাকতে হয়। রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস কারাগারের মতো। চার দিকের দেয়াল অনেক উচু। জানালা গ্রীল এবং গেট সর্বক্ষণ তালাবদ্ধ।

রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস থেকে জর্ডানিয়ানরা মেয়েদেরেকে বাসা-বাড়ীর কাজের জন্য নিয়ে যায়। এই জন্য জর্ডানিয়ানরা রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসকে কম-বেশী জর্ডানিয়ান দিনার ১৬০০/ (এক হাজার ছয়শত) সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা ১,৬০,০০০/ (এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা) পরিশোধ করে থাকে। এই চুক্তিটি জর্ডানিয়ান ব্যক্তি এবং রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসের মধ্যে বলবৎ থাকে -যার মেয়াদ দুই বছর।


কাজের লোকের প্রতি গৃহকর্তার এবং অন্যান্যদের ব্যবহার ঃ
গৃহকর্তা গৃহকর্মীকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েটিকে অবহিত করেন তাকে জর্ডানিয়ান দিনার ১৬০০/ (এক হাজার ছয়শত) সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা ১,৬০,০০০/ (এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা) দিয়ে এজেন্সি অফিস থেকে কিনে এনেছেন। তাকে বাড়ীর সকল কাজ করতে হবে। গৃহকর্তা বাড়ীর সকলের নিকট কাজের মেয়েটিকে অতি তাচ্ছিল্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ভাষা না জানার কারণে তখন থেকেই মেয়েটিকে নীরবে অতি তীব্র ধরণের তাচ্ছিল্য এবং অপমান সহ্য করতে হয়।

ফজরের আজানের সাথে সাথেই ঘুম থেকে উঠতে হয় এবং বিরতিহীনভাবে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। দুপুরের পর অথবা রাত দশটার দিকে ঘুমে ঝিমিয়ে পড়লে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে। বাড়ীর মালিক কাজের মেয়েটিকে কবুজ (বাংলা ভাষায় রুটি) ছাড়া অন্য কিছু খেতে দেয় না। রুটির সাথে কোন তরকারী নাই। এই রুটি খেতে অনীহা প্রকাশ করলে মারধর করে। শাররীক নির্যাতন করে। সবচেয়ে জঘন্যতম কর্মটি হচ্ছে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা এবং শরীরের মধ্যে তিনমাস মেয়াদী জন্মনিয়ন্ত্রক ইনজেকশান পুশ করে। বাড়ীর মালিক, মালিকের ছেলে, ছেলের বন্ধুরা এবং বাড়ীর মালিকের স্ত্রীর ভাই এ অনৈতিক কর্ম করতে মেয়েটিকে বাধ্য করে।

গত রমজানের ২৭ তম রজনীতে লাভলী নামের এক বয়স্ক কাজের লোককে বাড়ীর মালিক বিবস্ত্র করে তার এলাকায় ঘুরিয়েছে। বিষয়টিতে আম্মান শহরে কাজের মেয়েদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। কাজের লোকটি বাংলাদেশ দূতাবাসে বিষয়টি জানালেও বিচার তো দুরের কথা বরং তাকে এজেন্সি অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এজেন্সি অফিসে তাঁকে মারধোর এবং অনৈতিক কর্ম করে পূণরায় আগের মালিকের বাসায় প্রেরণ করা হয়েছে। জর্ডানে প্রায় ৯ মাস শীত থাকে। শীতে পানি দিয়ে কাজ করার সময় হাতে ঠান্ডা লাগে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে হাড্ডির ভিতরে ইনফেকশন হয়। চিকিৎসা করাতে না পারলে এতে হাড্ডির ভিতর স্থায়ী ইনফেকশন শুরু হয়। বাড়ীর মালিকরা কাজের মেয়েদের চিকিৎসা করায় না।


গত ফেব্রুয়ারী ২০১৩ মাসে এক কাজের মেয়ে এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আম্মান শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় চলন্ত গাড়ীর নীচে ঝাপ দেওয়ার চেষ্টা করলে উপস্থিত লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে যায়। উপস্থিত লোকজন মেয়েটিকে ট্যাক্সি ভাড়া করে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়। দূতাবাস থেকে কোন বিচার পাওয়া যায় নাই। বরং উল্টো কঠোর ধমকা-ধমকি করে এজেন্সি অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ পর্যন্ত অনেক মেয়ে আত্বহত্যা করে মারা গিয়েছে। এদের সঠিক হিসাব নাই। বাংলাদেশ দূতাবাসের ভিতরেও বিচার প্রার্থী নির্যাতিত কাজের মেয়েদের অবলা পশুর মতো কাদঁতে দেখা যায়। নির্যাতিত/ক্ষতিগ্রস্থ এসব অসহায় কাজের মেয়েদের গগনবিধারী চীৎকার/হাহাকার এবং ভয়াবহ আর্তনাদে উপস্থিত লোকেরাও হতবাক হয়ে যান।

কাজের মেয়েরা দেশে জমিজমা বিক্রি করে এবং অর্থ ধার করে জর্ডানে এসেছে। তাদের কথা বিদেশে এসে মহাভুল করেছি। এমন ভুল জীবনে হয় নাই। বুঝতে পারি নাই। বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাইলে জর্ডানের ১৬০০ দিনার এজেন্সি অফিসে জরিমান দিয়ে এবং নিজ থেকে বিমানের টিকেট দিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাসের ভিতরে বা দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় অসহায় মেয়েদের একদিনও নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা নাই। যেখানে ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ,ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসে তাদের শ্রমিকদের দূতাবাসে রাখার জন্য সেইফ হাউজ করে রেখেছে। দূতাবাস থেকে এসব মেয়েদের আত্বীস্বজনের নিকট ফোন করতে দেয়া হয় না। কাজের মেয়েদের মাসিক বেতনের পরিমাণ ১৫০ মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় জর্ডানিয়ান দিনার ১০৬ (একশত ছয়) মাত্র।

জর্ডান একটি টুরিষ্ট কান্ট্রি। সারা বৎসরই এখানে টুরিষ্টরা আসে। টুরিষ্ট ব্যবসা জর্ডানের আসল ব্যবসা। সারা জর্ডানে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব আবাসিক হোটেলগুলিতেও কাজের মেয়েদের সরবরাহ করা হয়। আকাবা সমুদ্র বন্দরের আবাসিক হোটেলগুলিতে এর মাত্রা খুব বেশী।
জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়া শীত প্রধান দেশ। অক্টোবর মাস থেকে শীত শুরু হয় এবং মার্চ মাস পর্যন্ত প্রচন্ড শীত থাকে। বাংলাদেশের নারী গৃহ শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলিতে গৃহকর্মীর কাজে আসা মোটেও নিরাপদ নয়। সকল নারী গৃহশ্রমিকরা এই বিষয়টি গভীর সর্তকতার সাথে চিন্তা করে দেখবেন।

দেশের আদম বেপারীরা সুন্দর সুন্দর কথা বলে। গার্ডেনে কাজ দিবে। স্কুলে কাজ দিবে । বিউটি পার্লারে কাজ দিবে ইত্যাদি । কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। বিষয়টি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী , ভয়াবহ করুণ ও বেদনাদায়ক।

যখন কোন নারী গৃহশ্রমিক এসব হৃদয়স্পর্শী বিপদে নিক্ষিপ্ত হন, তখন কেবল তিনিই বিষয়টি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারেন । তখন আর কিছু করার উপায় থাকে না। এসব অবস্থার শিকার হয়ে বাংলাদেশে অনেক মেয়েদের সংসার নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের কাজের মেয়েরা জর্ডানে বাসা বাড়ীর কাজে আসতে চাইলে উপরোক্ত বিষয়সমুহ গভীরভাবে চিন্তা করে দেখবেন । বস্তুতঃ বাসা বাড়ীর কাজের জন্য নারী গৃহ শ্রমিকদের জর্ডানে আসা মোটেও নিরাপদ নয়।

লেবাননেও বাংলাদেশী নারী গৃহ শ্রমিকরা ভয়াবহ দুর্দশায় রয়েছে। ধর্ষনের শিকারগ্রস্ত অনেক মেয়েদের বাচ্চা হওয়ার পর ডাষ্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। বাচ্চাদের গায়ে কাপড়ের মধ্যে বাংলায় লেখা থাকে ”ইহা বাংলাদেশী বাচ্চা”। যদি কেহ নিয়ে পালতে চান; নিয়ে যেতে পারেন। নতুবা কুকুর ইদুরের খাবারে পরণিত হয়। অতএব, বাসা বাড়ীতে কাজ করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশী কাজের মেয়েরা নিজদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেরাই ভেবে দেখবেন
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×