১)আরব দুনিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ বাহরিন। বাহরিন মানে ‘দুই সমুদ্রের মধ্যবর্তী এলাকা’। দেশটির আয়তন মাত্র ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার। সেটা কত বড়? সিকিমের আয়তনের দশ ভাগের এক ভাগ। কিন্তু, সে দেশে মাথাপিছু জাতীয় আয় ভারতের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি।
২) আরব দুনিয়ার আর একটা ছোট দেশ কুয়েত। এই দেশে বিপুল পেট্রোলিয়াম রয়েছে। ১৯৩০ সাল নাগাদ এই পেট্রোলিয়াম প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৬১ সালে ব্রিটেনের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পরে এই দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্প বিপুল হারে বাড়তে আরম্ভ করে। এই দেশের সরকারি ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে পেট্রোলিয়াম থেকে, আর দেশের মোট রফতানির ৯৫ শতাংশই পেট্রোলিয়াম। কুয়েত এখন আরব উপদ্বীপে অন্যতম উন্নত দেশ।
৩) টলেমি যখন তাঁর তৈরি আরব উপদ্বীপের মানচিত্রটি প্রকাশ করেন, তখন প্রথম বার ‘কাতারা’ নামটি বিশ্বের নজরে আসে। বিশ্বাস করা হয়, আজকের কাতার দেশটি এই কাতারা থেকেই এসেছে। প্রতিবেশী দেশগুলির মতোই কাতারের অর্থনীতির মেরুদণ্ডও প্রাকৃতিক তেলের ভাণ্ডার। কিন্তু, তেলের খনি আবিষ্কার হওয়ার আগে এই দেশের অর্থনীতি প্রধানত মাছ ধরা এবং সমুদ্রে মুক্তোর সন্ধান করা ছিল। সেই সময় আরব অর্থনীতি প্রধানত এর ওপরই নির্ভর করত। ১৯২০ এবং ১৯৩০-এর দশকে, যখন জাপানের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপায়ে মুক্তো তৈরি করার পন্থা আবিষ্কার করে ফেললেন, তখন স্বভাবতই আরব অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছিল। ১৯৪০-এর দশক থেকে আরব দুনিয়ার অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম-নির্ভর হয়ে ওঠে।
৪) এখন আরব উপদ্বীপে (পেনিনসুলা) মোট সাতটি দেশ আছে— বাহরিন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইয়েমেন আর সৌদি আরব। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দেশ সৌদি আরব। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন সৌদি আরব আর ইয়েমেনে। এই দেশগুলির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ অবশ্য অভিবাসী, মানে যাঁরা অন্য দেশ থেকে এসে এই দেশে বসবাস করছেন। যেমন, সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ সে দেশের নাগরিক নন। আর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ৮৯ শতাংশ মানুষই ভিন দেশের!
৫) সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সাতটি রাজ্য বা আমিরশাহির সংগঠন। এই আমিরশাহিগুলি হল: আবু ধাবি, দুবাই, শারজা, আজমান, উম অল-কুয়াইন, রস অল-খাইমা এবং ফুজাইরা। দুবাই গোটা দুনিয়ায় ক্রেতাদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, আর শারজা ক্রিকেটের বিতর্কিত কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ৮০ শতাংশেরও বেশি জায়গা আবু ধাবির অন্তর্গত। এখানে ১৯৫৮ সালে তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু ১৯৭১ সালে ইংরেজরা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেই তেল বিক্রির লাভের পরিমাণ খুব উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। কিন্তু তার পর থেকে দেশটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে। আজ, মাথাপিছু রাষ্ট্রের সম্পদের পরিমাণের নিরিখে আবু ধাবি বিশ্বের এক নম্বর।
৬) আরব দুনিয়ার বৃহত্তম দেশটি বিশ্বের এক নম্বর পেট্রোলিয়াম রফতানিকারকও বটে। আর, এই দেশেই রয়েছে মুসলিম ধর্মের পবিত্রতম দুই শহর— মক্কা আর মদিনা। ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত সৌদি আরবের বেশির ভাগ মানুষই ছিলেন বেদুইন। কিন্তু এখন ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ দিব্যি থিতু হয়ে গুছিয়ে বসেছেন। এর কারণ সে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বস্তুত, হিসেব বলছে, প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ বিদেশ থেকে সৌদি আরবে গিয়ে সে দেশেই পাকাপাকি ভাবে থেকে গিয়েছেন।