রাত ১২টার পর বিভিন্ন বাংলা চ্যানেলে কিছু অলৌকিক ধরণের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। যেখানে সব কিছুর কিসসা কাহিনী থাকে প্রায় একই রকম। বাবা, দরবেশ, পীর, সরদার, রানী, মা, হুজুর নানা ধরণের ব্যক্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখা যায়, যেখানে বলা হয়, তাদের কে ছোট বেলায় জ্বিন তুলে নিয়ে যায়। এবং জ্বিনের বাদশা তার ব্যাবহারে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়! যে ক্ষমতার বলে তিনি ভূতভবিষ্যৎ সব বলতে পারে! এসব বাবারা কিছু পাথরের আংটি দেয় বা তাবিজ যা পরলে সব বিপদ হতে দূরে থাকা যাবে, চাকরি হবে, প্রেমিকা বশে আসবে, মালিক বশে আসবে, রোগ মুক্তি হবে, মামলা জিতবে, টাকা আসবে আরো কত কি। আহ! কোন প্রেমিক তাহলে আর দেবদাস হত না, দেশে কোন ফকিরও থাকতো না। ডাক্তারেরও দরকার হত না।
তাদের এসব ভণ্ডামি বিস্তারিত জানার জন্য অনেক রাত না ঘুমিয়ে টানা বিজ্ঞাপনগুলো দেখলাম। তারা নাকি আমেরিকা, সিঙ্গাপুরের দামি লটারির নাম্বারও বলতে পারে আর যা কিনা অনেকেই পেয়েছে। এত দয়াল বাবা যে মানুষকে অর্থ বিলায়। কিন্তু বিজ্ঞাপনগুলোতে একটি মজার বিষয় লক্ষ্য করলাম। ঐসব বিজ্ঞাপনের সব বাবার ভক্ত প্রায় একই। অর্থাৎ যিনি অমুক বাবা হতে লটারি জিতেছেন তিনি আবার সমুক বাবা হতেও লটারি জিতেছেন। আরো মজার বিষয় হল, ঐসব ভক্তরা এক বিজ্ঞাপনে থাকে অস্ট্রেলিয়ায় কিন্তু আরেক বিজ্ঞাপনে থাকে দুবাই।
অনেক সময় তারা আমাদের শুনায় আশার বাণী কখনো বা নিরাশার। আশা মানুষকে উন্নত করতে, আনন্দ দিতে সহায়তা করে। কিন্তু নিরাশা হয়ে উঠে অনেক সময় মাদক ও আত্মহত্যার কারণ। নিরাশা কখনোই উন্নত হতে সহায়তা করে না। বরং চেষ্টা করা হতে দূরে রাখে।
এরা সাধারণত ধর্মের নাম দিয়েই এসব প্রতারণা করে থাকে ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে। কিন্তু আমার আশ্চর্য লাগে আমাদের মিডিয়া এবং আইন কি এতই অন্ধ যে এদের এই প্রতারণা তারা ধরতে পারছে না, বরং সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করে এদের আরো সাপোর্ট করছে।
“অদৃশ্যের কুঞ্জি তাঁহারই নিকট রহিয়াছে, তিনি ব্যতীত কেহ জানে না।” [সূরা আন-আনআমঃ ৫৯]
“যে গণকের কাছে যায় এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তার চল্লিশ দিন ও রাত্রির নামাজ গ্রহণযোগ্য হবে না।”হাফসা (রা কর্তৃক বর্ণিত এবং মুসলিম কর্তৃক সংগৃহীত। [সহি মুসলিম, খণ্ড ৪, ৫৫৪০]
“Those who earning by telling Good thing (fortune telling) is a crime “
[Manu Smriti Ch 9 Verse 258]
``You will find that astrology and all these mystical things are generally signs of a weak mind; therefore as soon as they are becoming prominent in our minds, we should see a physician, take good food and rest.''
- Swami Vivekananda
``Star-gazing and astrology, forecasting lucky or unlucky events by signs, prognosticating good or evil, all these are things forbidden.''
- Gautama the Buddha
Deuteronomy 18:10-11,"There shall not be found among you anyone that ... useth divination ... or an enchanter, or a witch."
অর্থাৎ এসব সকল ধর্মেই নিষিদ্ধ। যদি ধর্মই এসব কর্মকাণ্ডকে তবে তারা এসব করছে কিসের ভিত্তিতে? কিসের ভিত্তিতেই তারা এসব ধর্মের নাম দিয়ে চালাচ্ছে? আবার অনেক অজ্ঞ বলে এসব জ্যোতিষশাস্ত্র একটি বিজ্ঞান! না জনাব এটি বিজ্ঞান না, অপ-বিজ্ঞান। অনেকেই এই ভুলটি করে জ্যোতিষ শাস্ত্র (এ্যাসট্রোলজি) ও জ্যোতির বিজ্ঞান (এস্ট্রোনমি) এক মনে করার কারণে। জ্যোতিষী বিজ্ঞান হল মহাকাশ ভিত্তিক বিজ্ঞান। আর জ্যোতিষশাস্ত্র মহাকাশে কোন নক্ষত্র কোথায় কিভাবে কার ভাগ্য নির্ধারণ করবে তার ভবিষৎবাণী। একবিংশ শতাব্দীতে এটি খুবই হাস্যকর বিষয় যে, আমার ভাগ্য শত শত আলোকবর্ষ দূরের গ্রহ-নক্ষত্র নির্ণয় করছে। যা কখনোই বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রমাণিত করা যায় না তাই এটি বিজ্ঞানের শাখায়ও পরে না। এটি যে অবৈজ্ঞানিক তা বিজ্ঞানীরাই বহু আগেই বলেছেন। যেমন, ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে দ্য হিউম্যানিস্ট পত্রিকায় অনেক বিজ্ঞানী আনুষ্ঠানিকভাবে জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এছাড়াও উচ্চ পর্যায়ের জ্যোতিষীদের করা প্রচুর ভুল ইতিহাসে সাক্ষ্য বহন করে।
Astrologers in Indian astrology make grand claims without taking adequate controls into consideration. Saturn was in Aries in 1909, 1939 and 1968, yet the astrologer Bangalore Venkata Raman claimed that "when Saturn was in Aries in 1939 England had to declare war against Germany", ignoring the two other dates.[29] Astrologers regularly fail in attempts to predict election results in India, and fail to predict major events such as the assassination of Indira Gandhi. Predictions by the head of the Indian Astrologers Federation about war between India and Pakistan in 1982 also failed
এছাড়াও জ্যোতিষীদের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি অর্থ পুরষ্কার সহ চ্যালেঞ্জ করলে কোন জ্যোতিষী সেই চ্যালেঞ্জ পূর্ণ করার সক্ষম হয়নি। আর আপনারা যদি তাদের রাশি গণনা করার পদ্ধতি ও ইতিহাস সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করেন তবে বুঝবেন তা কতটা অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক। আশা করি এতটুক প্রমাণই যথেষ্ট তাই আমি আর ঐসব পদ্ধতি আলোচনা করছি না। তবে হ্যাঁ, কমেন্টে অনেক বিস্তারিত তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি।
এই যদি হয় কাহিনী, এসব প্রতারণা বন্ধের কি কোন আইন নেই? নাকি আইন বিশ্বাস করে জ্যোতিষশাস্ত্রে?
#সাদ
১২-এপ্রিল-১৫
#Saad
ফেসবুক